1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ভারত থেকে ফেরার অপেক্ষায় বাংলাদেশের ৭৮ নাবিক

১২ ডিসেম্বর ২০২৪

ওড়িষা রাজ্য পুলিশকে উদ্ধৃত করে ভারতের সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, ৭৮ জনকেই ফেরত পাঠানোর উদ্যোগ শুরু হয়েছে৷

Fischerdorf auf der Insel Dubla
ট্রলার এবং ছোট ছোট নৌকা নিয়ে বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরতে যান বাংলাদেশের জেলেরা৷ ছবিটি দুবলার চর থেকে তোলা৷ ফাইল ফটো৷ ছবি: DW/M. M. Rahman

বাংলাদেশের ৭৮ জন নাবিককে আটক করেছে ভারতীয় কোস্টগার্ড৷ তবে ওড়িষা রাজ্য পুলিশকে উদ্ধৃত করে ভারতের সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, ৭৮ জনকেই ফেরত পাঠানোর উদ্যোগ শুরু হয়েছে৷ গত তিন মাসে বাংলাদেশেও ৯৫ জন ভারতীয় নাবিককে আটক করা হয়৷

বুধবার ভারতীয় কোস্টগার্ড তাদের হাতে আটক বাংলাদেশি ফিশিং ট্রলারের ৭৮ নাবিকের ছবি প্রকাশ করে৷ এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে তারা দাবি করে, ভারতীয় জলসীমার মধ্যে মাছ ধরার সময় ৭৮ জন নাবিকসহ দুইটি ফিসিং ট্রলার আটক করা হয়৷

সোমবার সকালে  ফিশিং ট্রলার ও নাবিকদের আটক করে নিয়ে যায় ভারতীয় কোস্ট গার্ড৷

বাংলাদেশের সমূদ্র পরিবহণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কমোডর মোহাম্মদ মাকসুদ আলম ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘পরররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশের কোস্ট গার্ডের মাধ্যমে ভারতীয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ হচ্ছে৷ নাবিক ও ফিশিং ট্রলার দুইটি বাংলাদেশের জলসীমা থেকেই ভারতীয় কোস্টগার্ড আটক করে নিয়ে যায়৷''

ভারতীয় কোস্ট গার্ড তাদের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজ ও এক্স হ্যান্ডেলে যে তিনটি ছবি প্রকাশ করেছে তার একটি ছবিতে দেখা গেছে, ট্রলারের ডেকের ওপর বেশ কয়েকজন নাবিক মাথার পেছনে হাত দিয়ে হাঁটু গেড়ে বসে আছেন৷ তাদের পেছনে সশস্ত্র অবস্থায় ভারতীয় কোস্টগার্ডের সদস্যরা দাঁড়িয়ে আছেন৷ আরেক ছবিতে দেখা গেছে, সাগরে ট্রলার দুটি পাশাপাশি নিয়ে যাওয়া হচ্ছে৷ অন্য ছবিতে দেখা গেছে, একটি ট্রলার জেটিতে ভেড়ানো হয়েছে৷

‘ভারতীয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ হচ্ছে’

This browser does not support the audio element.

ট্রলার দুটির মালিক প্রতিষ্ঠানের ভাষ্য, এফভি মেঘনা-৫ ও এফভি লায়লা-২ বাংলাদেশের জলসীমায় খুলনার হিরণ পয়েন্টে মাছ ধরছিল৷ ওই অবস্থায় সোমবার সকালে বোটে উঠে নিয়ন্ত্রণ নিয়ে বোটসহ নাবিকদের নিয়ে যায় ভারতীয় কোস্টগার্ডের সদস্যরা৷ এফভি মেঘনা-৫-র মালিক প্রতিষ্ঠান সি অ্যান্ড অ্যাগ্রো লিমিটেড ও এফভি লায়লা-২-এর মালিক প্রতিষ্ঠান এস আর ফিশিং লিমিটেড৷ লায়লা-২ বোটে ৪২ জন এবং মেঘনা-৫-এ ৩৭ জন ছিলেন৷ এই ৭৯ জনের মধ্যে একজন আগেই নেমে গেছেন৷

বাংলাদেশ নৗ পরিবহণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কমোডর মোহাম্মদ মাকসুদ আলম ডয়চে ভেলেকে জানান, ‘‘দুই দেশের কোস্টগার্ডের মধ্যে একটি অ্যারেঞ্জমেন্ট আছে৷ সেখানে যোগাযোগ হচ্ছে৷ আর জলসীমা তো সুনির্দিষ্টভাবে তাৎক্ষণিকভাবে চিহ্নিত করা যায় না৷ সেক্ষেত্রে সতর্ক করা হয়৷ সেটা না করে তারা নিয়ে গেছে৷ তারা এখন আইনগত প্রক্রিয়া শুরু করেছে৷ তাই এখন আমরা আমাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে যোগাযোগ করছি৷ আরেকটি বিষয় হলো, বোটের মালিক পক্ষ আইনগত দিক দিয়ে কীভাবে এগোবে, সেটা দেখা হচ্ছে৷''

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘ভারতীয় কোস্টগার্ডের  প্রকাশিত ছবি আমি দেখেছি৷ আটকদের মাথার পেছনে হাত দিয়ে হাঁটু গেড়ে বসিয়ে রাখা হয়েছে৷ আমরা তাদের কাছ থেকে সম্মানজনক আচরণ আশা করি৷ আর আমাদের সমুদ্রসীমার মধ্য দিয়েই তাদের ধরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে৷''

জাল নয়, ছিপ দিয়ে ধরা মাছের কদর

04:35

This browser does not support the video element.

এফভি লায়লা-২-এর মালিক প্রতিষ্ঠান এস আর ফিশিং লিমিটেডের বাণিজ্যিক কর্মকর্তা মিন্টু কুমার সাহা বলেন, ‘‘আটকের সময় আমাদের নাবিকরা ওয়্যারলেসে তাৎক্ষণিকভাবে জানিয়েছে যে, ট্রলার আমাদের সীমার ভিতরেই ছিল৷ ভারতের সীমা থেকে পাঁচ নটিক্যাল মাইল ভিতরে ছিল৷ ভারতীয় কোস্ট গার্ড এগিয়ে এসে ট্রলারে উঠে কন্ট্রোল নিয়ে নেয়, এরপর তারা একরকম জিম্মি করেই নিয়ে যায়৷ মাস্টারসহ আমাদের ট্রলারে ৪২ জন ছিলেন৷''

‘‘আমরা সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি৷ এটা এখন দুই সরকারের মধ্যকার বিষয়৷ আটক নাবিকদের স্বজনরা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন৷ তারা আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন,’’ বলেন তিনি৷

আর এফভি মেঘনা-৫-এর মালিক প্রতিষ্ঠান সি অ্যান্ড অ্যাগ্রো লিমিটেডের সিইও সুমন সেন ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমরা আমাদের নাবিকদের সঙ্গে কথা বলতে পেরেছি৷ তাদের ট্রলার থেকে নামিয়ে নৌ পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে৷ আমাদের ট্রলারে মোট ৩৭ জন ছিলেন৷’’

‘‘তারা যে ছবি প্রকাশ করেছে, তাতে নাবিকদের যেভাবে ছবি তোলা হয়েছে, তা গ্রহণযোগ্য নয়৷ তারা তো অপরাধী নয়৷ তারা বৈধ অনুমতি নিয়েই মাছ ধরছিলেন৷ আর ট্রলার আমাদের  সীমার মধ্যেই ছিল৷ এখন বল ভারতের কোর্টে৷ শক্তি তাদের, তাই তারা তাদের মতো বলছে,'' বলেন তিনি৷

ভারতীয় কোস্ট গার্ডের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ভারতীয় জলসীমার মধ্যে মাছ ধরার কাজে নিয়োজিত ৭৮ জন জেলেসহ দুটি বাংলাদেশি ফিশিং ট্রলার আটক করা হয়েছে৷

ভারতীয় উপকূলরক্ষী জাহাজ অমোঘ আইএমবিএল বরাবর টহলরত অবস্থায় ভারতীয় সামুদ্রিক অঞ্চলের মধ্যে সন্দেহজনক কার্যকলাপ শনাক্ত করেছে বলেও দাবি তাদের৷ ওই জাহাজটি অননুমোদিত মাছ ধরার কাজে নিয়োজিত বাংলাদেশের দুইটি ফিশিং ট্রলার আটক করেছে৷ জাহাজ দুটিকে এফভি লায়লা-২ এবং এফভি মেঘনা-৫ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে৷ দুটি ট্রলারই বাংলাদেশে নিবন্ধিত এবং দুই ট্রলারে ৪১ ও ৩৭ জন ক্রু ছিলেন৷

ট্রলার দুইটি ও নাবিকদের আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার জন্য ভারতের ওড়িশ্যা রাজ্যের জগৎ সিংহপুর জেলার পারাদ্বীপে নিয়ে যাওয়া হয়েছে৷

অন্যদিকে অক্টোবর ও নভেম্বর মাসে বাংলাদেশের জলসীমায় অবৈধভাবে অনুপ্রবেশের অভিযোগে তিনটি ঘটনায়  ৯৫ জন ভারতীয় জেলেকে আটক করা হয়েছে৷ জব্দ করা হয়েছে মাছসহ পাঁচটি ভারতীয় পতাকাবাহী ফিশিং ট্রলার৷

১৬ অক্টোবর বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশের জলসীমায় প্রবেশ করে মাছ শিকারের অভিযোগে বাংলাদেশ নৌবাহিনী ভারতীয় পতাকাবাহী দুটি ফিশিং ট্রলারসহ ৩১ জেলেকে আটক করেভ তাদের পটুয়াখালি জেলার কলাপাড়া থানায় হস্তান্তর করা হয়৷ কলাপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জুয়েল ইসলাম জানান, ‘‘আটক ভারতীয় জেলেদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে৷ আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানোর পর তারা এখন কারাগারেই আছেন৷’’

‘নাবিকদের যেভাবে ছবি তোলা হয়েছে, তা গ্রহণযোগ্য নয়’

This browser does not support the audio element.

এরপর ১৮ অক্টোবর বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশের জলসীমায় অনুপ্রবেশ করে মাছ শিকারের অভিযোগে আরো  ৪৮ ভারতীয় জেলেকে আটক করে বাংলাদেশের নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ড৷ তখন ভারতীয় তিনটি মাছ ধরার ট্রলারও জব্দ করা হয়৷  তাদের মংলা থানায় হস্তান্তর করা হয়৷

সবশেষ গত ২১ নভেম্বর রাতে মোংলা বন্দরের অদূরে ফেয়ারওয়ে বয়া সংলগ্ন গভীর সাগর থেকে কোস্টগার্ড সদস্যরা ভারতীয় পতাকাবাহী একটি ফিশিং ট্রলার ১৬ ভারতীয় জেলেসহ আটক করে৷ আটকের পর ১৬জনকেই মোংলা থানায় হস্তান্তর করা হয়৷ পরে তাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়৷

বাগেরহাটের মোংলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আনিসুর রহমান ডয়চে ভেলেকে জানান, ‘‘দুইটি ঘটনায় আটক জেলেদের বিরুদ্ধে থানায় দুইটি মামলা হয়েছে৷ আমাদের কাছে হস্তান্তরের পর আদালতের মাধ্যমে তাদের কারাগারে পাঠানো হয়৷ তারা কারাগারেই আছেন৷’’

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ