চলতি বছরের প্রথম ১৫ দিনে ভারত থেকে অন্তত ১৩০০ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে৷ মিয়ানমারে জোর করে পাঠানো হতে পারে– এমন আশংকায় তাঁরা বাংলাদেশে চলে এসেছেন৷
বিজ্ঞাপন
গত দুই সপ্তাহ ধরে রাখাইনে আবারও উত্তেজনা বিরাজ করছে৷ এর মধ্যে রোহিঙ্গাদের জোর করে সেখানে পাঠাচ্ছে ভারত, যা ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দিয়েছে৷ জাতিসংঘ এবং মানবাধিকার সংস্থাগুলোর অভিযোগ, আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে রোহিঙ্গাদের বিপজ্জনক পরিস্থিতির মধ্যে ঠেলে দিচ্ছে নয়া দিল্লি৷
তবে ভারত জাতিসংঘ শরণার্থী কনভেনশনে স্বাক্ষর করেনি৷ ২০১৮ সালে ভারতের বিভিন্ন স্থান থেকে ২৩০ জন রোহিঙ্গাকে আটক করা হয়৷ সেদেশের কট্টরপন্থি হিন্দুরা বরাবরই রোহিঙ্গাদের সেদেশ থেকে বের করে দেয়ার দাবি জানিয়ে আসছে৷
এসব বিষয়ই ভারতে থাকা রোহিঙ্গাদের ভীতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে৷ আর সে কারণেই তাঁরা বাংলাদেশে চলে যাচ্ছে৷ বাংলাদেশে ইতোমধ্যে ১০ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা অবস্থান করছে৷
বাংলাদেশের ইন্টার সেক্টর কো-অরডিনেশন গ্রুপ আইএসসিজি-র মুখপাত্র নয়না বোস সংবাদ সংস্থা এএফপিকে জানিয়েছেন, ‘‘৩ জানুয়ারি থেকে ভারত থেকে রোহিঙ্গাদের আসা শুরু হয়েছে৷ প্রায় তিনশ' পরিবারের অন্তত ১৩শ' মানুষ বুধবার পর্যন্ত এসেছে৷’’
এই ১৩শ' জনকে জাতিসংঘের ট্রানজিট সেন্টারে রাখা হয়েছে৷ ইউএনএইচসিআর-এর মুখপাত্র ফিরাস আল খতিব জানিয়েছেন, ‘‘তাদের সংস্থা এ ব্যাপারে খোঁজখবর রাখছে৷’’ অন্তত ৪০ হাজার রোহিঙ্গা বর্তমানে ভারতে অবস্থান করছে বলে জানিয়েছে সেদেশের পুলিশ৷
গত সপ্তাহে বেশ কয়েকজন রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশে পাঠিয়েছে সৌদি আরব৷ বাংলাদেশের অবৈধ পাসপোর্ট ব্যবহার করে তারা ঐ দেশে গিয়েছিল বলে গ্রেপ্তার করে তাদের বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হয়৷
এপিবি/এসিবি (এএফপি, এপি)
রোগ সারাতে ‘ফেইথ হিলার’এর কাছে রোহিঙ্গারা
‘ফেইথ হিলার’ হচ্ছেন তাঁরা, যাঁরা দোয়া-কালাম পড়ে রোগ সারিয়ে তুলতে পারেন বলে অনেকে বিশ্বাস করেন৷ অনেক রোহিঙ্গা তাঁদের কাছেই রোগ সারাতে যান৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/A. Qadri
স্বপ্নে পাওয়া শক্তি
তাঁর নাম আবুল কালাম৷ মিয়ানমারের এই রোহিঙ্গা ২০১২ সালে বাংলাদেশে আসেন৷ সেই থেকে তিনি কক্সবাজারে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের অসুখ হলে তাঁদের ‘ফেইথ হিলিং’-এর মাধ্যমে রোগ নিরাময়ের চেষ্টা করে আসছেন৷ এই শক্তি স্বপ্নে পেয়েছেন বলে বার্তা সংস্থা এপি’র কাছে দাবি করেছেন তিনি৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/A. Qadri
পানি পড়া
ছবিতে আবুল কালামের সামনে এক বোতল পানি দেখা যাচ্ছে৷ দোয়া পড়ে ঐ পানিতে তিনি ফুঁ দেবেন৷ সেই পানি পান করলে রোগীর বুক ব্যথা ভালো হয়ে যাবে বলে তাঁর দাবি৷ প্রতিদিন গড়ে পাঁচজন রোগী পান কালাম৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/A. Qadri
বিশ্বাসই ভরসা
রোহিঙ্গাদের মধ্যে আবুল কালামের মতো লেকদের কাছে যাওয়ার প্রবণতা অনেক দিন ধরেই আছে৷ শারীরিক কিংবা মানসিক যে সমস্যাই হোক না কেন, বেশিরভাগ রোহিঙ্গার বিশ্বাস ফেইথ হিলারের কাছে গেলে সমাধান পাওয়া যাবে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/A. Qadri
কারণ দু’টি
কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শিবিরে কাজ করা মনোচিকিৎসাবিদ অনিতা সাহা (ছবি) বলছেন, দুটি কারণে রোহিঙ্গারা ফেইথ হিলারের কাছে যান৷ এক, মিয়ানমারে তাঁরা আধুনিক চিকিৎসা সুবিধা থেকে বঞ্চিত ছিলেন৷ দুই, বিজ্ঞানসম্মত চিকিৎসা ব্যবস্থার প্রতি তাঁদের অবিশ্বাস৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/A. Qadri
খ্রিষ্টান বানিয়ে দেয়া হবে!
অনেক শরণার্থী মনে করেন, কলেরা, ডিপথেরিয়ার মতো রোগের টিকা নিলে তাঁরা তাঁদের ইসলামি বিশ্বাস হারিয়ে ফেলবেন এবং তাঁদের ধর্মান্তরিত করে খ্রিষ্টান ধর্মে নিয়ে যাওয়া হবে৷ এছাড়া মানসিক সমস্যার ক্ষেত্রে তাঁদের ধারণা, এটি শয়তানের কাজ৷ ‘ফেইথ হিলার’রা প্রার্থনার মাধ্যমে সেই শক্তি মোকাবিলা করতে সক্ষম বলে মনে করেন অনেক রোহিঙ্গা৷
ছবি: picture-alliance/W. Maye-E
বিশ্বাসে পরিবর্তন আসছে
কক্সবাজারে শিবিরে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের চিকিৎসা দিতে দেশি-বিদেশি অনেক সংস্থা কাজ করছে৷ তাঁদের মাধ্যমে আধুনিক চিকিৎসা সম্পর্কে জানতে পেরে রোহিঙ্গাদের মনে এই পদ্ধতির প্রতি আস্থা জন্মাচ্ছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/A. Qadri
মেয়ের জন্য চিকিৎসা
আলি নেসা তাঁর টিনএজ মেয়ের সমস্যা নিয়ে চিন্তিত৷ বেশ কয়েকজন ফেইথ হিলারের কাছে গিয়েও কাজ হয়নি৷ তাই এখন তিনি একজন চিকিৎসকের কাছে যেতে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন৷