জার্মান এক অধ্যাপিকাকে নিয়ে কয়েকদিন বেশ আলোচনা হলো৷ তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ, এক ভারতীয় ছাত্রকে তিনি শুধু দেশটিতে ‘ধর্ষণ বেড়ে যাওয়ার' কারণে ইন্টার্নশিপের সুযোগ দেননি৷পরে নিন্দার মুখে ভুল স্বীকার করে ক্ষমা চেয়েছেন তিনি৷
বিজ্ঞাপন
‘ইন্ডিয়া'জ ডটার' নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা থিতিয়ে পড়ার আগেই ভারতের এক ছাত্রের ইন্টার্নশিপের আবেদন প্রত্যাখ্যান করে সংবাদ শিরোনামে চালে আসেন আনেটে বেক-সিকিঙার৷ ভারতে জার্মানির রাষ্ট্রদূত মিশায়েল স্টাইনার তাঁর কঠোর সমালোচনা করায় অবশেষে নিজের ভুল স্বীকার করে ক্ষমাও চেয়েছেন জার্মান এই অধ্যাপিকা৷
লাইপসিশ বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োকেমিস্ট্রির অধ্যাপিকা আনেটে বেক-সিঙারের বিরুদ্ধে অভিযোগ, ভারতে ধর্ষণ বেড়ে যাওয়ার কারণে এক ছাত্রকে জার্মানিতে ইন্টার্নশিপ করতে দেননি তিনি৷ এ খবর চোখে পড়া মাত্রই চিঠি লিখে বেক-সিকিঙারকে একরকম ভর্ৎসনাই করেন ভারতস্থ জার্মান রাষ্ট্রদূত মিশায়েল স্টাইনার৷ চিঠিতে তিনি লিখেছেন, ‘‘আমি জানতে পেরেছি, শুধু ‘ভারতে ধর্ষণ সমস্যা'-র কারণ উল্লেখ করে আপনি একটি ছেলেকে ইন্টার্নশিপের সুযোগ দেননি৷ আমি কঠোরভাবে আপত্তি জানাচ্ছি৷ একটা কথা খুব পরিষ্কারভাবে বলে দিতে চাই আর তা হলো, ভারত ধর্ষকের দেশ নয়৷''
ভারতে ধর্ষণ বেড়েছে এ কথা অস্বীকার করেননি স্টাইনার৷ ভারত সরকারও কখনো তা অস্বীকার করে না৷ তবে কোনো দেশের কোনো সমস্যার কারণে সে দেশের কোনো নিরপরাধ মানুষকে কোনো অধিকার থেকে বঞ্চিত করার পক্ষে কি কোনো যুক্তি দাঁড় করানো যায়? আনেটে বেক-সিকিঙার কোনো যুক্তি দেখাননি৷ বরং নিজের ভুল স্বীকার করে বলেছেন, ‘‘আমার কথায় যাঁদের মনে আঘাত লেগেছে তাঁদের প্রত্যেকের কাছে আন্তরিকভাবে ক্ষমা চাই৷''
ছোট পোশাক পরাই কি ধর্ষণের কারণ?
ভারতে প্রতিদিন অন্তত ৯২ জন নারী ধর্ষণের শিকার হন৷ যখনই এ ধরনের কোন মামলা আদালতে উঠেছে তখন প্রথম যে প্রশ্নটি সামনে এসেছে তা হলো, ধর্ষণের শিকার ঐ নারী কি ধরনের পোশাক পরেছিলেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
যুগের সাথে পোশাক
যুগে যুগে পোশাকের ধরনে পরিবর্তন এসেছে৷ আদিমকালে ছিল পশুর চামড়া, গাছের ছাল আর এখন রয়েছে নানা ধরনের পোশাক৷ বর্তমানে দেশ, সংস্কৃতি, সমাজ ব্যবস্থা, কাজের ধরন, অনুষ্ঠান, পছন্দ ও ফ্যাশানের ভিত্তিতে বহু ধরনের পোশাক পরে থাকেন নারীরা৷
ছবি: AP
শরীর প্রদর্শন মানেই কি ধর্ষককে আমন্ত্রণ?
ভারতে বেশিরভাগ ধর্ষণ মামলায় দেখা গেছে, ধর্ষিতা সালোয়ার কামিজ বা শাড়ি পরেছিলেন৷ অর্থাৎ যাকে বলা হয় ভারতীয় নারীর আদর্শ পোশাক, সে ধরনের পোশাকই তাঁরা পরেছিলেন৷ অর্থাৎ এ জরিপ থেকেই প্রমাণিত হচ্ছে যে, শরীর প্রদর্শন না করে বা তথাকথিত ‘আধুনিক’ পোশাক না পরেও শ্লীলতাহানির শিকার হচ্ছেন নারীরা৷
ছবি: Reuters
আইনের ভয় নেই
২০১৩ সালে এক জরিপে দেখা গেছে যে, এশীয় প্রশান্ত মহাসাগরীয় দেশগুলোতে প্রতি চারজনের মধ্যে একজন পুরুষ জীবনে অন্তত একবার কোনো নারীকে ধর্ষণ করেছে৷ এর মধ্যে বেশিরভাগ পুরুষকেই কোনো আইনি ঝামেলা পোহাতে হয়নি৷
ছবি: Fotolia/DW
ধর্ষণ যখন বিনোদনের মাধ্যম
ভারতের উত্তর প্রদেশে ধর্ষণের ঘটনা বেড়েই চলেছে৷ এর কারণ হিসেবে পুলিশ নারীদের উপর পশ্চিমা সংস্কৃতির প্রভাব, মেয়েদের মোবাইল ব্যবহার ও ছোট পোশাক পরিধানকে উল্লেখ করেছে৷ নারীদের নিরাপত্তা দিতে পুরোপুরি ব্যর্থ পুলিশ বলেছে, সেখানকার পুরুষরা তাদের বিনোদনের অভাব পূরণ করছে ধর্ষণের মাধ্যমে৷
ছবি: dapd
নারীদের দাবিয়ে রাখার হাতিয়ার
রাস্তা, অফিস বা যে কোনো পাবলিক প্লেসে পুরুষের যৌন হয়রানির শিকার হচ্ছেন নারীরা৷ বিশেষ করে পুরুষতান্ত্রিক সমাজ হওয়ায় নারীদের দাবিয়ে রাখতে পুরুষরা ধর্ষণকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে৷
ছবি: UNI
পরিচিতদের দ্বারাই বেশি ধর্ষণ
২০১৩ সালে ভারতের ন্যাশনাল ক্রাইম ব্যুরোর রিপোর্ট বলছে, সে বছর ১০০ জন ধর্ষণের শিকার নারীর মধ্যে ৯৮ জন এমন ব্যক্তিদের দ্বারা ধর্ষিত হয়েছেন, যারা তাঁদের পরিচিত৷ আদালতে যেসব মামলা ওঠে, বা গণমাধ্যমে যেসব ঘটনা প্রকাশ পায় সেগুলো বেশিরভাগই বাইরের লোকের হাতে৷ ফলে পরিচিত ব্যক্তি দ্বারা ধর্ষণের ব্যাপারটি ধামাচাপা পড়ে যায়৷
ছবি: Reuters/Ahmad Masood
যৌন নিগ্রহ সর্বত্র
ভারতে জন্মের আগে ভ্রুণের লিঙ্গ নির্ধারণ বেআইনি হলেও, খুব সাধারণ ঘটনা৷ ফলে পৃথিবীর আলো দেখতে পাওয়া মেয়েদের সংখ্যা এত কম যে, সমাজে নারী-পুরুষের অনুপাতে হেরফের হয়৷ এছাড়া বাল্যবিবাহ, কম বয়সে মা হওয়া, সন্তান জন্ম দিতে গিয়েও মৃত্যুবরণ করছেন নারীরা৷ পরিবারের ভেতরেও চলে যৌন নির্যাতন এবং ধর্ষণ৷ এরপরও কি আপনারা ধর্ষণের জন্য পোশাককে দায়ী করবেন?
ছবি: picture-alliance/dpa
7 ছবি1 | 7
তবে এর পাশাপাশি আনেটে বেক-সিকিঙার জানিয়েছেন, কথিত ছাত্রকে ভারতে ধর্ষণ বেড়ে যাওয়ার কারণে নয়, আসলে তাঁর ল্যাব পূর্ণ হয়ে যাওয়ার কারণেই ইন্টার্নশিপের সুযোগ দেয়া সম্ভব হয়নি৷ তিনি আরো জানান, প্রশ্নোত্তরের ওয়েবসাইট ‘কোরা'-য় এ সম্পর্কে যা লেখা হয়েছে, তা পুরোপুরি ঠিক নয়৷ কোরা-য় লেখা হয়েছিল, কথিত ছাত্রকে সুযোগবঞ্চিত করার কারণ উল্লেখ করতে গিয়ে আনেটে বেক-সিকিঙার বলেছেন, ‘‘আমি ভারতের কোনো ছেলেকে ইন্টার্নশিপের সুযোগ দেই না৷ প্রায়ই শুনি ভারতে ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে৷ ধর্ষণকে তো আমি সমর্থন করতে পারি না৷''
স্টাইনারের কড়া চিঠির পর ক্ষমা প্রার্থনার সময় আনেটে বেক-সিকিঙার দাবি করেছেন, জার্মান এবং ভারতীয়দের এক সম্মীলনে তিনি ধর্ষণ সম্পর্কে কিছু কথা বলেছিলেন, সেই কথাগুলোই ছাত্রের প্রসঙ্গে মিলিয়ে প্রচার করেছে কোরা৷