ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের বার্ষিক প্রতিবেদন বলছে, অন্তর্ভূতিমূলক উন্নয়ন সূচকে বাংলাদেশ অনেকটাই পেছনে ফেলেছে ভারত ও পাকিস্তানকে৷ দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশের মধ্যে কেবল নেপালই বাংলাদেশের চেয়ে এগিয়ে৷
বিজ্ঞাপন
উদীয়মান অর্থনীতির দেশ হিসেবে সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ৩৪৷ দক্ষিণ এশিয়ার বাংলাদেশের অন্যান্য প্রতিদ্বন্দ্বী অর্থনীতিগুলোর মধ্যে ভারতের অবস্থান৬২, পাকিস্তানের ৫২ ও শ্রীলঙ্কার ৪০৷
সূচকে বাংলাদেশের স্কোর ৩ দশমিক ৯৮, পাকিস্তানের ৩ দশমিক ৫৫ ও ভারতের ৩ দশমিক ০৯৷ তবে ৪ দশমিক ১৫ পয়েন্ট নিয়ে এ তালিকায় ২২তম অবস্থানটি নেপালের৷ শুধু দক্ষিণ এশিয়া নয়, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার প্রতিদ্বন্দ্বীদের অনেকের চেয়েও ভালো করেছে বাংলাদেশ৷ পেছনে ফেলেছে ইন্দোনেশিয়া ও ফিলিপাইন্সকে৷ তবে খুব কাছাকাছি আছে ভিয়েতনাম ও ক্যাম্বোডিয়া৷
যেসব বিষয় বিবেচনা করা হয়েছে
সোমবার প্রকাশিত হওয়া বার্ষিক এই সূচক তৈরিতে ১০৩টি দেশের অর্থনীতির তিনটি পৃথক স্তম্ভ বিবেচনায় আনা হয়েছে৷ সেগুলো হলো, প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়ন, অন্তর্ভূক্তিমূলক অর্থনীতি এবং প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে সমতা বিধান৷
এ বিষয়ে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম জানিয়েছে, ‘‘দেশগুলোর জীবনমান কেমন, পরিবেশ কতটা টেকসই এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য কতটা সুরক্ষা নিশ্চিত করা হয়েছে– এসব বিষয় বিবেচনায় রেখে সূচক তৈরি করা হয়েছে৷
সবার ওপরে নরওয়ে
১০৩টি দেশকে দু'ভাগে ভাগ করে সূচক প্রকাশ করা হয়েছে৷ ২৯টি উন্নত দেশ নিয়ে একটি এবং বাকি ৭৪টি উদীয়মান অর্থনীতির দেশ নিয়ে আরেকটি শ্রেণিভুক্ত করা হয়েছে৷
সুইজারল্যান্ডের একেকজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের সম্পদের পরিমাণ গড়ে ৫ লক্ষ ৬১ হাজার ৯০০ ডলার৷ ফলে টানা ১৬ বছর ধরে বিশ্বের সেরা ধনীর খেতাব ধরে রেখেছে সুইসরা৷ বিশ্বের একজন নাগরিকের গড় সম্পদের চেয়ে ১১ গুণ বেশি সম্পদ আছে একজন সুইস নাগরিকের৷
ছবি: K.-U. Häßler - Fotolia
তারপর আছে..
তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে আছে যুক্তরাষ্ট্র৷ একজন মার্কিন নাগরিকের সম্পদের পরিমাণ গড়ে ৩ লক্ষ ৪৪ হাজার ৭০০ ডলার৷ এরপরই আছে ব্রিটিশরা৷ তাদের মানুষ প্রতি সম্পদের পরিমাণ গড়ে ২ লক্ষ ৮৮ হাজার ৮০০ ডলার৷
ছবি: Getty Images
জার্মানির অবস্থান
শীর্ষ তালিকায় জার্মানির নাম নেই৷ তবে আবাসন সম্পদের দাম বাড়ায় অনেক জার্মান নাগরিকের ব্যক্তিগত সম্পত্তির পরিমাণ বেড়েছে বলে জানিয়েছে জার্মান বার্তা সংস্থা ডিপিএ৷
ছবি: Daniel Roland/AFP/Getty Images
ধনীর সংখ্যা
সারা বিশ্বে প্রায় ৩৩ মিলিয়ন মানুষ আছেন যাঁদের সম্পদের পরিমাণ এক থেকে ৫০ মিলিয়ন ডলারের মধ্যে৷ এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের ধনী আছেন ৪৫ শতাংশ৷ আর ইউরোপ থেকে আছেন ৩০ শতাংশ৷ চীনের ৫ শতাংশ নাগরিক এই গ্রুপের সদস্য৷
ছবি: Getty Images
সুপার ধনীদের কথা
ব্যাংকের হিসেবে সুপার ধনী তাঁরা, যাঁদের সম্পদের পরিমাণ ৫০ মিলিয়ন ডলারের বেশি৷ বিশ্বে এখন এমন মানুষের সংখ্যা ১ লক্ষ ৪০ হাজার ৯০০ জন৷ এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক আছেন ৭০ হাজার ৪০০ জন, চীনের ১১ হাজার আর জার্মানিতে এমন ধনী আছেন ৬ হাজার ১০০৷
ছবি: AP
ধনীর পর এবার দরিদ্রের হিসাব
বিশ্বের প্রতি চার জন দরিদ্র মানুষের মধ্যে তিন জন এশিয়া ও আফ্রিকার দেশগুলোতে বাস করে বলে প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/N. Seelam
6 ছবি1 | 6
উন্নত দেশগুলোর সূচকে নরওয়ে সবার ওপরে৷ প্রথম আটটি দেশই ইউরোপের৷ নয় নম্বর স্থানটি অস্ট্রেলিয়ার দখলে৷ জার্মানি আছে ১২ নম্বরে৷ যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান ২৩৷ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে কেবল দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপান উন্নত দেশের তালিকায় জায়গা পেয়েছে৷
চীন নেই উন্নত দেশের কাতারে
চীন যে শুধু উন্নত দেশের কাতারেই নেই, তা নয়, উদীয়মান অর্থনীতির শ্রেণিতে দেশটির অবস্থান ২৬৷ এ বিষয়ে ফোরামের ব্যাখ্যা হলো, যদিও গেল পাঁচ বছরে ৬ দশমিক ৮ ভাগ জিডিপি ও ৬ দশমিক ৭ ভাগ উৎপাদনশীলতা প্রবৃদ্ধি হয়েছে, তারপরও অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের জায়গায় পিছিয়ে পড়েছে দেশটি৷
উদীয়মান দেশগুলোর তালিকায় সবার ওপরে আছে লিথুয়ানিয়া৷
সূচকে বাংলাদেশ
যেসব অর্থনৈতিক সূচক বিবেচনা করে আইডিআই বা অন্তর্ভূক্তিমূলক উন্নয়ন সূচকটি তৈরি করা হয়েছে, তার মধ্যে জিডিপি প্রবৃদ্ধির ব়্যাঙ্কিংয়ে বাংলাদেশের অবস্থান ৬৪৷ ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের হিসেবে এদেশে প্রবৃদ্ধি সূচকের মধ্যে মাথাপিছু আয় ১০৩০ ডলার, শ্রম উৎপাদনশীলতা ৭৮৩৩ ডলার, আয়ুষ্কাল ৬২ দশমিক ৪ বছর ও কর্মসংস্থান ৫৯ দশমিক ৭ শতাংশ৷ এছাড়া অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনীতি সূচকের মধ্যে অসাম্য ৩৯ দশমিক ৫ শতাংশ, দারিদ্র্য ৫৯ দশমিক ২ শতাংশ ও সম্পদের বিরতণ ৫৭ দশমিক ৯ শতাংশ৷
শুধু জিডিপি প্রবৃদ্ধিকে অর্থনীতির উন্নয়ন মাপকাঠি আর বলতে চাইছে না ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম৷ তারা বলছে, এটি একটি স্বল্পমেয়াদী হিসেব এবং এতে অর্থনীতিতে অসাম্য তৈরি হয়৷
দাভোসে জড়ো হচ্ছেন ৭০ সরকারপ্রধান
এদিকে, সুইজারল্যান্ডের দাভোসে দ্বিতীয় দিনের মতো চলছে ওয়ার্ল্ড ইকনোমিক ফোরামের বার্ষিক সম্মেলন৷ এ বছরের বিষয় হল, চিড় ধরা বিশ্বে অংশগ্রহণমূলক ভবিষ্যৎ তৈরি৷
সেরা দশ দুর্নীতির দেশ, সবচেয়ে কম দুর্নীতির দেশ
এক সময়ের দুর্নীতির বিশ্বচ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ এবার হয়েছে ১৩তম৷ চলুন দেখা যাক ট্র্যান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল (টিআইবি)-র প্রতিবেদনে এবার কোন কোন দেশ আছে দুর্নীতির সেরা দশে আর কোন দশটি দেশে এখন দুর্নীতি সবচেয়ে কম৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Antonisse
৮ থেকে ১০ নম্বরে কঠিন লড়াই
টিআইবি-র এবারের প্রতিবেদন অনুযায়ী, সমান ১৮ পয়েন্ট করে পাওয়ায় সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত দশটি দেশের তালিকায় ৮ নাম্বার থেকে ১০ নাম্বার পর্যন্ত স্থানে রয়েছে উজবেকিস্তান, লিবিয়া এবং ইরিত্রিয়া৷
ছবি: picture alliance/AP Photo
দুর্নীতির সপ্তম স্বর্গে তুর্কমেনিস্তান
উজবেকিস্তান, লিবিয়া এবং ইরিত্রিয়ার চেয়ে মাত্র এক পয়েন্ট কম হওয়ায় দুর্নীতিতে সেরা দশটি দেশের মধ্যে সপ্তম স্থানে রয়েছে তুর্কমেনিস্তান৷
ছবি: DW
ইরাকের দুরবস্থা
যুদ্ধ, হানাহানির মাঝে ইরাকে দুর্নীতিও চলছে পুরোদমে৷ তাই ১৬ পয়েন্ট নিয়ে তারা এখন দুর্নীতিতে সেরা দেশগুলোর মধ্যে ষষ্ঠ স্থানে৷
ছবি: Reuters
পঞ্চম স্থানে দক্ষিণ সুদান
ইরাকের পরেই রয়েছে সদ্য স্বাধীন দেশ দক্ষিণ সুদান৷ তারা পেয়েছে ১৫ পয়েন্ট৷
ছবি: Getty Images/AFP/T. Karumba
আফগানিস্তান দুর্নীতিরও স্থান
দুর্নীতিরও স্থান না হলে আফগানিস্তান কি আর ১২ পয়েন্ট নিয়ে বিশ্বের চতুর্থ সেরা দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ হতো?
ছবি: Getty Images/AFP/S. Marai
দক্ষিণ সুদানের চেয়ে দুর্নীতিতে এগিয়ে সুদান
সুদান থেকে আলাদা হয়ে দক্ষিণ সুদান শুধু মানচিত্রেই নয়, দুর্নীতিতেও কিছুটা ব্যবধান দেখাতে পেরেছে৷ দক্ষিণ সুদান যখন সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত দেশগুলোর মধ্যে পঞ্চম স্থানে, সুদান তখন ১১ পয়েন্ট নিয়ে তৃতীয়৷ দুর্নীতিতে এগিয়ে থাকা তো আর ভালো কথা নয়!
ছবি: getty / C. Bouroncle
উত্তর কোরিয়া আর সোমালিয়া
সমাজতন্ত্র কায়েমের পথে হোঁচট খেয়ে প্রায় মুখ থুবড়ে পড়লেও দুর্নীতিতে খুব এগিয়েছে উত্তর কোরিয়া৷ আফ্রিকার দারিদ্র্য জর্জরিত দেশ সোমালিয়াও কম যায় না৷ ৮ পয়েন্ট করে নিয়ে এই দুই দেশই আছে প্রথম ও দ্বিতীয় স্থানে৷
ছবি: picture alliance/dpa/R. Sinmun
সবচেয়ে কম দুর্নীতির দেশ ডেনমার্ক
নারীর জন্য সবচেয়ে ভালো দেশ হওয়ার পর, এবার সবচেয়ে কম দুর্নীতির দেশও হয়েছে ডেনমার্ক৷ স্ক্যান্ডিনেভিয়ান এই দেশ পেয়েছে ৯২ পয়েন্ট৷
ছবি: Reuters/N. Ahlmann Olesen
দ্বিতীয় নিউজিল্যান্ড, তৃতীয় ফিনল্যান্ড
সবচেয়ে কম দুর্নীতির দেশগুলোর মাঝে নিউজিল্যান্ড ৯১ পয়েন্ট নিয়ে আছে দ্বিতীয় স্থানে আর ৮৯ পয়েন্ট পেয়ে ফিনল্যান্ড দ্বিতীয় স্থানে৷
ছবি: picture alliance / Robert Harding
চতুর্থ স্থানে সুইডেন
আরেক স্ক্যান্ডিনেভিয়ান দেশ সুইডেনও কম দুর্নীতিগ্রস্থ দেশগুলোর মাঝে খুব ভালো অবস্থানে৷ তাদের পয়েন্ট ৮৭, অবস্থান চতুর্থ৷
ছবি: DW/T. Mehretu
নরওয়ে আর সুইজারল্যান্ডে সমতা
৮৬ পয়েন্ট করে পেয়েছে নরওয়ে আর সুইজারল্যান্ড৷ ফলে দেশ দু’টি আছে পঞ্চম এবং ষষ্ঠ স্থানে৷
ছবি: EBU
একের হেরফেরে সাত থেকে দশ
সবচেয়ে কম দুর্নীতিগ্রস্ত দশ দেশের তালিকায় সপ্তম থেকে দশম স্থানে আছে যথাক্রমে সিঙ্গাপুর, নেদারল্যান্ডস, লুক্সেমবুর্গ এবং ক্যানাডা৷ সপ্তম থেকে দশম, অষ্টম, নবম ও দশমে মাত্র এক পয়েন্ট করে ব্যবধান৷ সিঙ্গাপুরের ৮৪, নেদারল্যান্ডসের ৮৩, লুক্সেমবুর্গের ৮২ এবং ক্যানাডার পয়েন্ট ৮১৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Antonisse
12 ছবি1 | 12
এবারের শীর্ষ বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অংশ নেবার কথা আছে, যদিও এবারের বিষয়টি ট্রাম্পের ‘অ্যামেরিকা ফার্স্ট' নীতির বিরোধী৷
তবে আয়োজকরা আশা করছেন যে, এতে ট্রাম্প অংশ নেবেন৷ সম্মেলনে তাঁর একটি বিশেষ বক্তৃতা দেয়ার কথা রয়েছে৷
ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের প্রেসিডেন্ট বোর্গে ব্রেন্ডা সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘‘আমাদের পুরো বৈশ্বিক সিস্টেমটিই ভেঙে পড়ার মুখে৷ আমাদের মধ্যে সহযোগিতার অভাব রয়েছে৷ কিন্তু ইতিবাচক হলো যে, পরিবর্তন আসছে৷ ''
এ বছর যে ৭০ জন সরকার প্রধান যোগ দিচ্ছেন এ ফোরামে, তাঁদের মধ্যে রয়েছেন জার্মানির আঙ্গেলা ম্যার্কেল, ফ্রান্সের এমানুয়েল মাঁক্রো, যুক্তরাজ্যের টেরেসা মে ও ভারতের নরেন্দ্র মোদী৷ ফোরামের উদ্বোধনী বক্তব্যটি দেবেন নরেন্দ্র মোদী৷
দাভোসে বাংলাদেশ দলের নেতৃত্ব দেবেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী ও তথ্য প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক৷