শুরুতে প্রায় সব ভূমিকাতেই অযোগ্য ভাবা হয়েছে তাঁকে৷ কিন্তু সমালোচকদের মুখ বন্ধ করতে বেশি সময় নেননি সৌরভ গাঙ্গুলি৷ ভারত এমন একজনকে যোগ্য সম্মান দিতে পেরেছে৷ বাংলাদেশ পারবে কবে?
বিজ্ঞাপন
ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড বিসিসিআই-এর সভাপতি হচ্ছেন সৌরভ গাঙ্গুলি৷ বাঙালি বলে সৌরভকে নিয়ে নতুন করে গর্ব করছেন অনেকেই৷ বিসিসিআই-র সাবেক সভাপতিদের দীর্ঘ তালিকায় বাঙালির নাম আগেও বেশ কয়েকবার এসেছে৷ ভারতের হয়ে দাপটে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলা প্রথম ব্যক্তি হিসেবেও যে সৌরভ এই দায়িত্ব পেতে চলেছেন তা-ও নয়৷
আসলে বিসিসিআই অনেকদিন ধরেই এক ধরনের নেতৃত্ব-সংকটে ছিল৷ জগমোহন ডালমিয়ার মৃত্যুর পর থেকেই সংকটের শুরু৷ তারপর শশাঙ্ক মনোহর দায়িত্ব নিলেও এক বছরের বেশি টিকতে পারেননি৷ অনুরাগ ঠাকুর এক বছর আর সিকে খান্না দুই বছরের জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সভাপতি হয়ে ‘ঠেকার কাজ'ই চালিয়েছেন৷ একই দায়িত্বে আপাতত ১০ মাস থাকছেন সৌরভ৷ এ সময়ের মধ্যেই ভারতীয় ক্রিকেটের জন্য ভালো কিছু করে দেখাতে হবে৷
কাজটা কঠিন আর সৌরভ গাঙ্গুলী তো কঠিনকে জয় করে অভ্যস্তই৷ সে কারণে তাঁর কাছে সবার প্রত্যাশা একটু বেশি৷ বাংলার ক্রিকেটার থেকে ভারতীয় দলে জায়গা পাকা করতে কী লড়াইটাই না লড়েছিলেন! প্রাথমিক ব্যর্থতায় হতাশ হয়েছিলেন অনেকে৷ প্রশ্ন উঠেছিল দলে থাকার যোগ্যতা নিয়ে৷ চার বছর পর আবার (১৯৯৬) সুযোগ পেয়েই লর্ডস টেস্টে দারুণ এক সেঞ্চুরি! সেটা ছিল প্রথম জবাব৷
১২ বছরের ক্যারিয়ারে আরো বহুবার সমালোচনায় বিদ্ধ হয়েছেন৷ কখনোই থেমে থাকেননি সৌরভ৷ ভারতীয় দলের প্রথম বাঙালি অধিনায়ক হয়ে দেশকে এগিয়ে নিয়েছেন আরো৷এক সময়ের সমালোচকেরাও এখন তাঁর প্রশংসায় মুখে ফেনা তোলেন৷ হবেই তো, ভারতীয় ক্রিকেটের বদলে যাওয়ার শুরু তো তাঁর হাত ধরেই!
ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন অব বেঙ্গলের প্রধান হয়ে প্রশাসক হিসেবে নিজেকে প্রমাণ করেছেন ক্রিকেট বিশ্বের ‘দাদা'৷ এখন আরো বড় ময়দানে ‘দাদাগিরি' কেমন হয় সেটাই দেখার৷
তবে ভালো ক্রিকেটার ভালো প্রশাসকও হলে তাঁর হাতে দেশের ক্রিকেট সবচেয়ে বেশি নিরাপদ৷ বিসিবি আগের কোনো সভাপতির মধ্যে এই সমন্বয়টা পায়নি৷
প্রশ্ন হলো, বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) কবে পাবে এমন সমন্বয়?
বিসিবি সভাপতির পদে মাশরাফি, সাকিব, মুশফিক বা অন্য কোনো ক্রিকেটারকেও একদিন দেখা যাবে, এমন আশা কি আমরা করতে পারি? বাংলাদেশ কি সেই পথে এগোচ্ছে? অনিল কুম্বলে, রবি শাস্ত্রীরা অবসরের পর জাতীয় দলের কোচও হতে পারেন৷ বাংলাদেশে কি তার জন্যও তৈরি হচ্ছে?
বাঁয়ের জাদুকর
কম্পিউটারের মাউস, ক্যামেরা, স্কুলের ডেস্ক চেয়ার, নানা দিক দিয়েই বঞ্চিত ‘ন্যাটা’রা৷ কিন্তু নতুন এক গবেষণায় দেখা গেছে খেলাধুলায় হয়তো তারা একটু বেশিই সুবিধা পেয়ে থাকেন৷ আজকের ছবিঘর বিশ্বখ্যাত কিছু বাঁয়ের জাদুকরকে নিয়ে৷
ছবি: Getty Images/A. Davidson
সাকিব আল হাসান
সাকিবের কথা আর নতুন করে বলার কী আছে! একের পর এক সাফল্য আর রেকর্ড ভাঙা ম্যাচ খেলে নিজেকে অন্য কাতারে নিয়ে গেছেন শুধু বাংলাদেশের না, বিশ্বের সেরা এই অলরাউন্ডার৷ টি-টোয়েন্টি, ওডিআই ও টেস্ট— এই তিন ফরম্যাটেই একইসময়ে নাম্বার ওয়ান অলরাউন্ডার হওয়া প্রথম ও একমাত্র ক্রিকেটারের নাম সাকিব৷ ব্যাটে-বলে এমন টানা নৈপুন্য অনেকদিন দেখেনি ক্রিকেট বিশ্ব৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. Uz Zaman
ওয়াসিম আকরাম
জরিপ যেই করুক, সর্বকালের সেরা বোলারদের তালিকায় পাকিস্তানের ওয়াসিম আকরামের নাম সবার ওপরের দিকেই থাকবে৷ কিন্তু বাঁহাতি ফাস্ট বোলারদের সেরা বাছাইয়ে ওয়াসিম আকরামের বিকল্প নেই৷ বলে রাখা ভালো, ওয়ানডে ক্রিকেটের ইতিহাসে ৫০০ উইকেটের সীমা পেরোনো প্রথম বোলার এই বাঁহাতি৷
ছবি: AP
সৌরভ গাঙ্গুলি
শুধু সর্বকালের সেরা ব্যাটসম্যানদের একজন নয়, আধুনিক ভারতীয় ক্রিকেটের সেরা অধিনায়ক হিসেবেও বিবেচনা করা হয় বাঙালি সৌরভকে৷ একদিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচের ক্যারিয়ারে ১১ হাজারের বেশি রান করেছেন বঙ্গ বিভূষণ উপাধি পাওয়া এই ক্রিকেটার৷ বাঁহাতে ব্যাট করলেও বোলিং অবশ্য তিনি ডান হাতেই করতেন৷
ছবি: AP
মার্টিনা নাভ্রাতিলোভা
চেকোস্লোভাকিয়ায় জন্ম নেয়া এই মার্কিন টেনিস তারকা লন টেনিস জগতের এক কিংবদন্তী৷ টানা ৩৩২ সপ্তাহ সিঙ্গেলসে এবং রেকর্ড ২৩৭ সপ্তাহ ডাবলসে ওয়ার্ল্ড নাম্বার ওয়ান ছিলেন তিনি৷ শুধু তাই নয়, ২০০ সপ্তাহের বেশি দুই ফরম্যাটেই শীর্ষ স্থান ধরে রাখা একমাত্র টেনিস খেলোয়াড় এই বাঁহাতি তারকা৷
ছবি: Reuters/H. Mckay
মনিকা সেলেস
যুগোস্লাভিয়া ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হয়ে লন টেনিস খেলেছেন মনিকা সেলেস৷ ১৯৯০ সালে মাত্র ১৬ বছর বয়সে সর্বকনিষ্ঠ খেলোয়াড় হিসেবে ফ্রেঞ্চ ওপেন জিতে রেকর্ড করেন মনিকা৷ ২০ বছর হওয়ার আগেই তার ঝুলিতে জমা হয় আটটি গ্র্যান্ড স্ল্যাম শিরোপা৷ ১৯৯৩ সালে এক ম্যাচ চলাকালে তার ওপর নয় ইঞ্চি ধারালো ছুরি নিয়ে আক্রমণ করে বসেন এক ব্যক্তি৷ দুই বছর পর ফিরে এলেও আর আগের মতো উজ্জ্বল হয়ে উঠতে পারেননি মনিকা সেলেস৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Campbell
রাফায়েল নাদাল
এখনও দুর্দান্ত ফর্মে খেলে চলেছেন বাঁহাতি এই টেনিস তারকা৷ এই মুহূর্তে পুরুষ এককে অবস্থান করছেন দ্বিতীয় স্থানে৷ এখন পর্যন্ত ১৮টি গ্র্যান্ড স্ল্যাম শিরোপা জিতেছেন নাদাল৷ এটিপি ট্যুর মাস্টার্সের ১০০০-এর ৩৫টি শিরোপা জিতে করেছেন রেকর্ড৷
ছবি: Reuters/K. Pfaffenbach
মোহাম্মদ আলী
মোহাম্মদ আলীর সম্পর্কে আর নতুন করে কীই বা বলা যেতে পারে? ভক্তরাই আদর করে তাকে ডাকতেন ‘দ্য গ্রেটেস্ট’৷ বিংশ শতাব্দীর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এবং ইতিহাসের সেরা বক্সার হিসেবে বিবেচনা করা হয় মোহাম্মদ আলীকে৷ হেভিওয়েট বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ তিনবার পুনরুদ্ধার করা একমাত্র বক্সার তিনি৷ ভিয়েতনাম যুদ্ধের বিরোধিতা করে সেনাবাহিনীতে যোগ না দেয়ায় সাজা পেলেও, এ অবস্থান অনেকের কাছেই তাকে প্রতিষ্ঠা করেছেন সম্মানের আসনে৷
ছবি: picture alliance/UPI
লিওনেল মেসি
ইতিহাসের সবচেয়ে দুর্ভাগা ফুটবলার মনে করা হয় আর্জেন্টাইন এ খেলোয়াড়কে৷ ভক্তদের কাছে ‘ভিনগ্রহের খেলোয়াড়’ হিসেবে পরিচিতি পাওয়া মেসি ক্লাবের পক্ষে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স দেখালেও তেমন কিছু এনে দিতে পারেননি নিজের দেশকে৷ স্প্যানিশ ক্লাব বার্সেলোনার হয়ে খেলে লা লিগা, উয়েফাসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক শিরোপা জিতেছেন৷ কিন্তু দেশের পক্ষে ২০০৮ সালে অলিম্পিকে সোনাই তাঁর ক্যরিয়ারের সর্বোচ্চ অর্জন৷
ছবি: Reuters/U. Marcelino
দিয়েগো মারাদোনা
যেকোনো বিবেচনায় ফুটবলের ইতিহাসের সর্বকালের সেরাদের একজন মারাদোনা৷ ফিফার ঘোষণা করা বিংশ শতাব্দীর সেরা ফুটবলারের স্বীকৃতিতে মারাদোনার সঙ্গে অবশ্য ভাগ বসিয়েছিলেন আরেক কিংবদন্তি পেলেও৷ বাম পা দিয়ে দুর্দান্ত খেললেও হাতের ব্যবহারেও কম ছিলেন না এই লেজেন্ড৷ ১৯৮৬ বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে তাঁর বাঁহাত দিয়ে করা গোলটি এত বছর পরও জোগায় বিতর্কের রসদ৷