করোনার জন্য বেশ কয়েকটি দেশের নাগরিকদের আপাতত চীনে ঢোকা নিষিদ্ধ করল শি জিনপিং সরকার। তার মধ্যে ভারত এবং বাংলাদেশও আছে।
বিজ্ঞাপন
বৃহস্পতিবার চীন একটি নতুন নোটিস জারি করেছে। তাতে বলা হয়েছে করোনার কারণে আপাতত বেশ কয়েকটি দেশের নাগরিকদের চীনে ঢুকতে দেওয়া হবে না। বৈধ ভিসা থাকলেও তাঁরা ঢুকতে পারবেন না। যার মধ্যে ভারত এবং বাংলাদেশও আছে। এ ছাড়াও যুক্তরাজ্য, বেলজিয়াম, ফ্রান্সের মতো দেশগুলিকেও তালিকায় রাখা হয়েছে।
ভারত এবং বাংলাদেশে চীন দূতাবাসের ওয়েবসাইটে সম্পূর্ণ নোটিসটি আপলোড করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, ৩ নভেম্বরের আগে যে সমস্ত নাগরিকদের ভিসা দেওয়া হয়েছিল, আপাতত তা বৈধ বলে ধরা হবে না। তাঁরা এখন চীনে যেতে পারবেন না। ৩ নভেম্বরের পরে যদি কাউকে ভিসা দেওয়া হয়ে থাকে, তা হলে তিনি চীনে যেতে পারবেন। আরো একটি বিষয় স্পষ্ট করে দেওয়া হয়েছে ওই নোটিসে। কূটনৈতিক কারণে, দুই দেশের সম্পর্কজনিত কারণে অথবা বিশেষ কোনো বিষয়ে যদি কাউকে চীনের ভিসা দেওয়া হয়ে থাকে, তা হলে তিনিও সংশ্লিষ্ট দেশে চীনের দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন এবং প্রয়োজনে যাত্রা করতে পারেন।
দুই দশকে নতুন যত ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব
গোটা বিশ্ব এখন করোনা ভাইরাস বিরুদ্ধে লড়ছে, যার শুরুটা হয়েছিল গত বছরের ডিসেম্বরে চীন থেকে৷ গত প্রায় দুই দশকে ছড়িয়ে পড়া নতুন কয়েকটি ভাইরাস নিয়ে এই ছবিঘর৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Center for Disease Control
বার্ড ফ্লু (এইচ৫এন১)
১৯৯৭ সালে হংকংয়ে এইচ৫এন১ ভাইরাস ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছিল৷ তারপর ২০০৩, ২০০৬, ২০০৭ ও ২০০৮ সালে এশিয়ার আরো কয়েকটি দেশে এই ভাইরাসের প্রকোপ দেখা দেয়৷ ২০০৩ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত ৬৩০ জন বার্ড ফ্লুতে সংক্রমিত হয়েছেন এবং ৩৭৫ জন মারা গেছেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
নিপাহ ভাইরাস
১৯৯৮ সালে মালয়েশিয়ার পাংকর দ্বীপের ছোট্ট শহর কামপুং তেলুক নিপাহতে নতুন একটি ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব হয়৷ পরের বছর ওই শহরের নামে ভাইরাসটির নামকরণ হয় নিপাহ৷ এই ভাইরাসে আক্রান্তদের মৃত্যুর আশঙ্কা ৫৪ শতাংশ৷ ২০১৮ সালে ভারতের কেরালায় এই ভাইরাস সংক্রমণে অন্তত ১৬ জনের মৃত্যু হয়৷ ২০১৩ সালে বাংলাদেশে নিপাহ ভাইরাসে অন্তত ১০ জন মারা যান৷
ছবি: Getty Images/AFP
সার্স
সিভিয়ার একিউট রেসপিরেটরি সিনড্রোম (সার্স) ভাইরাসের প্রথম প্রাদুর্ভাব হয় চীনে৷ ২০০২ ও ২০০৪ সালে এশিয়ার কয়েকটি দেশে সার্স ভাইরাস মারাত্মক আকারে ছড়িয়ে পড়ে৷ আট হাজারের বেশি মানুষ আক্রান্ত হন, মারা যান প্রায় ৭৭৪ জন৷ ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হলে ভয়াবহ শ্বাসকষ্ট হয়৷ তবে ২০০৪ সালের পর এই ভাইরাসে প্রাদুর্ভাবের খবর আর পাওয়া যায়নি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Reynolds
সোয়াইন ফ্লু
২০০৯ সালে প্রথম বিশ্বজুড়ে এইচ১এন১ ভাইরাসের প্রকোপ দেখা যায়৷ শূকরের ফ্লুর সঙ্গে লক্ষণ মিল থাকায় একে সোয়াইন ফ্লু নাম দেওয়া হয়৷ এখন পর্যন্ত বিশ্বের ১১ থেকে ২১ শতাংশ মানুষ এ ফ্লুতে আক্রান্ত হয়েছেন৷ দেড় লাখ থেকে প্রায় ছয়লাখ মানুষের মৃত্যু হয়েছে৷ ঢাকায় নতুন বছরে সোয়াইন ফ্লু ছড়িয়ে পড়ার খবর শোনা গেলেও আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা৷
ছবি: AP
মার্স (মিডলইস্ট রেসপিরেটরি সিনড্রোম)
এটি সার্স ভাইরাস গোত্রেরই একটি ভাইরাস৷ ২০১২ সালে প্রথম সৌদি আরবে এই ভাইরাসের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়৷ দেশটিতে মার্সে আক্রান্ত প্রায় ৩৫ শতাংশ মানুষ মারা যান৷ উট থেকে এই ভাইরাস মানবদেহে ছড়ায় বলে ধারণা করা হয়৷ হাঁচি, কাশি ও সংস্পর্শের মাধ্যমে মানুষ থেকে মানুষেও ছড়ায়৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo
করোনা ভাইরাস
চীনের উহান প্রদেশে গত ডিসেম্বর থেকে করোনা ভাইরাস প্রকোপ শুরু হয়৷ পরবর্তীতে তা ছড়িয়ে পড়ে গোটা বিশ্বে৷
ছবি: Getty Images/AFP/STR
বৈশ্বিক মহামারি
২০২০ সালের শুরু থেকেই ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে বিভিন্ন দেশে৷ এক পর্যায়ে বৈশ্বিক মহামারি ঘোষণা করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা৷ এশিয়া থেকে ইউরোপ হয়ে এখন অ্যামেরিকা রয়েছে করোনা আক্রান্ত দেশগুলোর শীর্ষে৷ সারা বিশ্বে এরিমধ্যে দুই লাখের বেশি মানুষের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে রহস্যময় ভাইরাসটি৷
ছবি: Getty Images/L. DeCicca
প্রতিষেধক নেই
এখনও করোনার কোন প্রতিষেধক আবিস্কার হয়নি৷ তবে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ৷ কয়েকটি উদ্যোগ বেশ খানিকটা এগিয়েছে৷ মানব শরীরে কিছু সম্ভাব্য টিকার পরীক্ষা নিরীক্ষাও শুরু হয়েছে৷ তবে সেগুলো কার্যকারিতা নিশ্চিত হতে আরো বছর খানেক সময় লাগতে পারে৷
ছবি: picture-alliance/Yonhap
8 ছবি1 | 8
গত জুন মাস থেকে ভারতের সঙ্গে চীনের তীব্র বিরোধ চলছে। লাদাখে দুই দেশের মধ্যে সংঘাত হয়েছে। এরপর বিভিন্ন মহলে আলোচনা শুরু হয়েছে কিন্তু এখনো পর্যন্ত কোনো দেশই সমাধানসূত্রে পৌঁছতে পারেনি। অন্য দিকে সীমান্তে একের পর এক সংঘাতের ঘটনা ঘটেছে। এই পরিস্থিতির মধ্যেও কোনো দেশই অন্য দেশে যাওয়ার বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা জারি করেনি। ফলে বৃহস্পতিবার চীনের দূতাবাসের নোটিস দেখে বিতর্কের পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছিল। কিন্তু ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় স্পষ্ট করে দেয়, এর সঙ্গে সাম্প্রতিক সংঘাতের কোনো সম্পর্ক নেই। শুধু ভারত নয়, একাধিক দেশের ক্ষেত্রেই নতুন নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে চীন এবং তা কেবলমাত্র করোনার কারণেই। চীনের পক্ষ থেকেও জানানো হয়েছে, এই নিষেধাজ্ঞা সাময়িক। দূতাবাসের ওয়েবসাইটেই পরবর্তী নোটিস দেওয়া হবে।
করোনা সংক্রমণে যুক্তরাষ্ট্রের পরেই ভারত
মোট করোনা সংক্রমণে ব্রাজিলকে পেছনে ফেলে দিলো ভারত৷ এখন শুধু যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থাই ভারতের চেয়ে খারাপ৷ বিস্তারিত ছবিঘরে...
ছবি: Getty Images/Y. Nazir
দৈনিক সর্বোচ্চ নতুন সংক্রমণ
পরপর তিনদিন মোট সংক্রমণ ৯০ হাজার ছাড়িয়েছে ভারতে, যা বিশ্বে সর্বোচ্চ দৈনিক সংক্রমণ৷ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, গত একমাস ধরেই বিশ্বে সর্বোচ্চ দৈনিক সংক্রমণের রেকর্ড গড়ছে ভারত৷
ছবি: Reuters/A. Dave
গ্রামাঞ্চলেও বাড়ছে সংক্রমণ
এতদিন ভারতে সংক্রমণ বেশি ছিল শহরাঞ্চলে৷ কিন্তু এখন আস্তে আস্তে বদলাচ্ছে চিত্র৷ দিল্লির জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের গণস্বাস্থ্য বিষয়ের অধ্যাপক রাজীব দাশগুপ্ত বলেন, ‘‘বর্তমানে সংকটটা দুই ভাগেই৷ শহরাঞ্চলে সংক্রমণ কমার কোনো লক্ষণ নেই, গ্রামাঞ্চলেও বাড়ছে সংক্রমণ৷’’
ছবি: picture-alliance/AP Photo/R. S. Iyer
মৃত্যু এবং সুস্থ হওয়ার হার
সরকারী পরিসংখ্যান বলছে, ভারতে এ পর্যন্ত ৭১ হাজার ৬৪২ জনের মৃত্যু হয়েছে করোনায়৷ পাশাপাশি, প্রায় ৩৩ লাখ মানুষ সেরে উঠেছেন৷ সরকার বলছে, দেশের ‘টেস্ট-ট্র্যাক-ট্রিট’ নীতির কারণে মৃত্যুহার নিয়ন্ত্রণে রাখা গেছে৷ সারা ভারতে মোট আক্রান্তের ৭৭ শতাংশ সুস্থ হয়েছেন৷
ছবি: Reuters/F. Mascarenhas
পরীক্ষা কত?
গত ২৪ ঘন্টায় সাত লাখ ২০ হাজার মানুষের করোনা পরীক্ষা করা হয়েছে৷ এখন পর্যন্ত, প্রায় পাঁচ কোটি করোনা পরীক্ষা করা হয়েছে ভারতে৷
ছবি: Reuters/F. Mascarenhas
তবুও ‘আনলক’
জুলাই মাস থেকে ধাপে ধাপে লকডাউনের পর ‘আনলক’ শুরু হয়েছে ভারতে৷ দীর্ঘদিন পর দিল্লিতে চালু হয়েছে মেট্রো পরিষেবা, দেশে চালু হয়েছে রেল, বিমান পরিষেবাও৷ খুলে গেছে বেশ কিছু মুক্তমঞ্চ, পাব, শপিংমলও৷ বলা হচ্ছে, থমকে যাওয়া অর্থনীতিকে চাঙ্গা করে তুলতেই এসব পদক্ষেপ৷
ছবি: picture-alliance/NurPhoto/H. Bhatt
অর্থনীতিতে করোনার প্রভাব
করোনা সংকটে বড় ধাক্কা খেয়েছে ভারতের অর্থনীতি৷ দেশের জিডিপি কমেছে প্রায় ২৪ শতাংশ৷ ফিনানশিয়াল টাইমস বলছে, করোনাকালে ভারতে প্রায় দেড় কোটি মানুষ কর্মসংস্থান হারিয়েছেন৷ ফোর্বস মার্শালের চেয়ারম্যান নওশাদ ফোর্বস বর্তমান অবস্থাকে দেশের সবচেয়ে খারাপ অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বলে মনে করছেন৷
ছবি: Imago Images/ZUMA Wire/A. Vaishnav
যুক্তরাষ্ট্রেও বাড়ছে...
ব্রাজিলকে পেছনে ফেলে সংক্রমণের দিক থেকে দ্বিতীয় স্থানে ভারত৷ যুক্তরাষ্ট্রে সংক্রমণ ৬২ লাখ, মৃত্যু এক লাখ ৯৩ হাজারের কাছাকাছি৷ ৪১ লাখ জন সংক্রমিত নিয়ে ব্রাজিল ভারতের চেয়ে পিছিয়ে থাকলেও সেখানে এ পর্যন্ত করোনায় মৃত্যু হয়েছে এক লাখ ২৬ হাজার জনের৷ অন্যদিকে রয়টার্সের জানাচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রের ২২টি রাজ্যে নতুন করে সংক্রমণ বাড়ছে৷ ফলে সেখানেও পরিস্থিতি আরো খারাপের দিকে যেতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/K. Willens
7 ছবি1 | 7
ইউরোপ এবং অ্যামেরিকায় করোনার দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হয়েছে। ইউরোপে রেকর্ড মাত্রায় সংক্রমণ বাড়ছে। অ্যামেরিকাতেও করোনার প্রকোপ বেড়েছে। তুলনায় ভারতের সংক্রমণ কিছুটা নিয়ন্ত্রণে এসেছে। দুই সপ্তাহ আগেও ভারতের দৈনিক সংক্রমণ ৯০ হাজারের কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছিল। গত এক সপ্তাহে তা কমে দৈনিক ৫০ হাজারের আশপাশে এসে ঠেকেছে। সুস্থ হয়ে ওঠার হারও আগের চেয়ে বৃদ্ধি পেয়েছে। বাংলাদেশেও করোনা নিয়ন্ত্রণেই রয়েছে।
চীনে সেই অর্থে দ্বিতীয় ঢেউ এখনো সে ভাবে পৌঁছয়নি। কোনো কোনো এলাকায় নতুন করে করোনার সংক্রমণ ঘটলেও তা আগের মতো নয়। তবুও ঝুঁকি নিতে চাইছে না চীন। সে কারণেই নতুন এই সিদ্ধান্ত বলে মনে করা হচ্ছে।
ভারত এবং বাংলাদেশের বহু কর্মী চীনে কাজ করেন। এই নিষেধাজ্ঞার জন্য তাঁদের কাজ করতে যেতে অসুবিধা হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। চীন জানিয়েছে, যাঁদের রেসিডেন্ট পারমিট রয়েছে, তাঁরাও এই সময়ে যাত্রা করতে পারবেন না। এর ফলে ভারত এবং বাংলাদেশের অনেকেই সমস্যায় পড়তে পারেন।