1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ভারত-বাংলাদেশের বন্ধন অটুট থাকবে: মোদী

অনিল চট্টোপাধ্যায় নতুন দিল্লি
২৮ মার্চ ২০১৭

এই দু'দেশের সম্পর্ক সময়ের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ, তাই তার নড়চড় হবে না৷ প্রধানমন্ত্রী মোদী তাঁর ‘মন কি বাত' বেতার ভাষণে এই মর্মেই বাংলাদেশকে বন্ধুত্বের জোরালো বার্তা দেন৷ শেখ হাসিনার দিল্লি সফরের মুখে যা খুবই তাৎপর্যপূর্ণ৷

নরেন্দ্র মোদী ও শেখ হাসিনা
ছবি: Getty Images/AFP/M. Uz Zaman

সব সংশয় ও দোলাচল কাটিয়ে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দিল্লি আসছেন আগামী ৭ই এপ্রিল৷ গত রবিবার মাসিক ‘মন কি বাত' বা ‘মনের কথা' শীর্ষক বেতার ভাষণে বাংলাদেশের ৪৬তম স্বাধীনতা দিবসকে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী মোদী অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের ঐতিহাসিক জয়ের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেন, ভারত চিরদিনই বাংলাদেশের এক শক্তিশালী সহযোগী দেশ হয়ে থাকবে৷ শুধু তাই নয়, বাংলাদেশের শান্তি, নিরাপত্তা এবং উন্নয়নের লক্ষ্যে দেশটির সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করে যাবে ভারত৷

বলা বাহুল্য, শেখ হাসিনার দিল্লি সফরের ঠিক মুখে বন্ধুত্বের এই জোরাল বার্তা দক্ষিণ এশিয়ার ভূ-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন দিল্লির কূটনৈতিক মহল৷ এ সফর দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের নব মূল্যায়ন ঘটতে পারে বলে ধারণা তাঁদের৷ শুধু তাই নয়, এতে করে পারস্পরিক দেোয়া-নেওয়ার একটা রোডম্যাপ তৈরি হতে পারে বলে আশা৷ আর সেজন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রকে কূটনৈতিক আদান-প্রদান চলেছে লাগাতার৷

মোদী সরকার চায় এবারের দিল্লি সফরে শেখ হাসিনা সাফল্যের কিছু তোফা যেন সঙ্গে নিয়ে যেতে পারেন৷ অর্থাৎ বাংলাদেশের আগামী নির্বাচনে সেটা যাতে শেখ হাসিনা কাজে লাগাতে পারেন৷ যদিও এই রোডম্যাপের প্রধান কাঁটা তিস্তা জলবণ্টন চুক্তি ইস্যু৷ সেটা কি এই যাত্রায় চূড়ান্ত করা সম্ভব হবে?  প্রশ্ন সেটাই৷ অনেকে মনে করছেন, এ বিষয়ে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যেভাবে তাঁর অবস্থানে অনড়, তাতে চুক্তিতে শীলমোহর পড়ার বিষয়ে সংশয় রয়ে গেছে৷ তাঁর অভিযোগ, রাজ্যকে পাশে না নিয়ে মোদী সরকার তিস্তা চুক্তি চূড়ান্ত করতে চলেছে৷ তৃণমূল কংগ্রেস সরকার সেটা কোনোমতেই ‘সেট' হতে দেবে না৷ গত সোমবার সংসদে তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায় সতর্ক করে দেন, রাজ্যের স্বার্থ বিকিয়ে প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে জলবণ্টন চুক্তি সামিল হওয়া সম্ভব নয়৷ সেই দেশ যত বড় বন্ধু দেশই হোক না কেন৷

তৃণমূল নেত্রীর মতে ১৯৯৬ সালের গঙ্গা জলবণ্টন চুক্তির ফলে হলদিয়া বং ফরাক্কা বন্দরের নাব্যতা কমে গেছে৷ বড় বড় জাহাজ ঢুকতে পারছে না৷ শুখা মরশুমে, কেন্দ্র-রাজ্য সম্পর্ক নানা দিক থেকেই এখন তলানিতে এসে ঠেকেছে৷ মোদীর বিরুদ্ধে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তর্জন-গর্জনে সমানে চলেছে, যদিও নোট বদল কাণ্ড নিয়ে তৃণমূল নেত্রীর আক্রমণে মোদী সরকারের গায়ে আচঁড়টি পর্যন্ত লাগেনি৷

মোদী সরকার আর কী কী তুলে দিতে পারেন ঢাকাকে? জল বিবাদ দু'দেশের প্রধান সমস্যা৷ এই প্রসঙ্গে সমুদ্র বিজ্ঞানী সুগত হাজরা ডয়চে ভেলেকে গঙ্গার ভাঁটির দিকে গঙ্গা বেসিন উন্নয়ন প্রকল্পের কথা বলেন৷ বলেন বেসিনের ভাটির দিকে যেখানে উভয় দেশের সমস্যাগুলি অভিন্ন, সেখানে বেসিন-ভিত্তিক যৌথ ম্যানেজমেন্ট গড়ে তোলার কথা৷ তাঁর মতে, এতে সুন্দরবন এলাকার বিকাশ ত্বরান্বিত হবে৷ তিস্তা, গঙ্গার বিকল্প হিসেবে ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে আরও যে ৫৪টি অভিন্ন নদী আছে৷ সেইসব নদীর জলের ভাগ বাঁটোয়ারায় সহমত গড়ে তোলা৷ ভারতের সীমান্ত সড়ক পথে বাংলাদেশি পণ্য চলাচলের সুবিধা, বাংলাদেশকে অতিরিক্ত বিদ্যুৎ সরবরাহ করাসহ অবকাঠামো গড়ে তোলা, সন্ত্রাস দমনে সহযোগিতা বাড়ানো, ঢাকা-কলকাতার মধ্যে যাতায়াতকারী মৈত্রি এক্সপ্রেসকে বাতানুকুল করা ইত্যাদি৷ মোটকথা, দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক যাতে স্রেফ তিস্তা চুক্তির ওপর নির্ভরশীল না হয়৷

ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক এগিয়ে নিয়ে যেতে ঢাকার আন্তরিকতায় ঘাটতি নেই৷ তা সে জঙ্গি দমন হোক, অর্থনৈতিক সহযোগিতা হোক বা সাংস্কৃতিক৷ সাম্প্রতিককালে ভারতকে যেটা সবথেকে বেশি ভাবিয়ে তুলেছে, সেটা হলো চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের মাখামাখি, বিশেষ করে প্রতিরক্ষা সহযোগিতার ক্ষেত্রে৷ বেইজিং দু'টি সাবমেরিন দিচ্ছে ঢাকাকে, মাত্র ২১ কোটি ডলার৷ প্রথমটি ইতিমধ্যেই সরবরাহ করা হয়েছে আর পরেরটিও সরবরাহের মুখে৷ শুধু তাই নয়, বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা বাহিনীর আধুনিকীকরণেও প্রধান ভূমিকা নিতে চলেছে বেইজিং৷ বিশ্লেষকরা মনে করেন, ভারতকে চারপাশ থেকে ঘিরে রাখার এটা কৌশলগত অভিসন্ধি চীনের৷ অথচ ভৌগলিক দিক থেকে বাংলাদেশের তিন দিক ভারতের সঙ্গে সংলগ্ন৷ জলপথেও বাংলাদেশের বিপদের কোনো আশঙ্কা নেই৷ কাজেই সাবমেরিন কেনার খুব একটা যুক্তি নেই৷ দ্বিতীয়ত এর ভূ-রাজনৈতিক উদ্দেশ্য, দিল্লি ও ঢাকার মধ্যে একটা অবিশ্বাসের বাতাবরণ তৈরি করা৷ তৃতীয়ত, দক্ষিণ এশিয়ায় চীন তার আধিপত্য বিস্তার করতে মরিয়া৷ চীন-পাকিস্তান বাণিজ্যিক করিডর তার অন্যতম নজির৷

কয়েক মাস আগে ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী মনোহর পারিকর ঢাকায় যান৷ দৃষ্টি আকর্ষণ করেন ভারতের দিক থেকে বিষয়টির সংবেদনশীলতার প্রতি হাসিনা সরকারের৷ দ্বিপাক্ষিক সামরিক সহযোগিতা বাড়ানোর ওপর জোর দেন৷ সামরিক সরঞ্জাম সরবরাহে ভারতের আগ্রহের কথা জানান৷ এ জন্য উদার শর্তে ঋণ দিতে রাজি দিল্লি৷ শেখ হাসিনার দিল্লি আসার আগে প্রতিরক্ষা সহযোগিতার খুঁটিনাটি বিষয়ের ‘ফিনিশিং-টাচ' দিতে ভারতের সেনাপ্রধান হরিশ রাওয়াত ঢাকা যাচ্ছেন আগামী বৃহস্পতিবার৷

কী মনে হয় বন্ধু, তিস্তা চুক্তি কি শেষ পর্যন্ত হবে? আপনার মতামত লিখুন নীচের ঘরে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ