আর্জেন্টিনার গাউচো-রা যেমন বিখ্যাত, তেমনি বিখ্যাত আর্জেন্টিনার বিফ, যা জার্মানির অফিস ক্যান্টিনগুলোতেও সার্ভ করা হয়ে থাকে৷ কিন্তু সেই বিফ-এর জন্য যে পরিমাণ পশুপালন দরকার, তা-তে কি পরিবেশের ক্ষতি হয় না?
বিজ্ঞাপন
দক্ষিণ এশীয় এলাকায় গোচারণ সংক্রান্ত পরিস্থিতি
একটু পুরনো পরিসংখ্যান বলছে, মঙ্গোলিয়ায় গোচারণভূমি জমির ৮০ শতাংশ, চীনে ৪৩ শতাংশ, এমনকি ইরানে ২৩ শতাংশ, কিন্তু এশিয়ার অধিকাংশ দেশে সাত শতাংশের কম৷ ভারতে ঐ পরিমাণ হলো চার শতাংশ, বাংলাদেশে আরো কম – কিন্তু নেপালে ১২ শতাংশ৷ ওদিকে এশিয়ায় পশুপালনের পরিমাণ খুব কম নয়; বিশেষ করে ভারত, চীন, পাকিস্তান, বাংলাদেশ বা ইন্দোনেশিয়ায় বেশিই বলা চলে৷ অথচ এই সব দেশে ‘কমিউনাল গ্রেজিং ল্যান্ড' বা গরু চরানোর সাধারণ জমি, ভারতে যাকে পঞ্চায়েতের জমি বা ‘গৌচর' বলা হয়ে থাকে – তা ক্রমেই কমে আসছে৷ একদিকে জবরদখল; অন্যদিকে সরকারি তরফে ভূমিহীন কৃষকদের মধ্যে বণ্টন; সেই সঙ্গে ক্রমেই আরো বেশিমাত্রায় গোচারণ৷ এর ফলে ধীরে ধীরে একটা সংকট সৃষ্টি হতে চলেছে৷
জার্মানরা মাংস খেতে বেশি ভালোবাসেন
জার্মানরা প্রায় প্রতিদিনই মাংস খায় যদিও ডাক্তারদের মতে, কেউ দিনে ১০০ গ্রামের বেশি মাংস খেলে তাঁর হৃদরোগের ঝুঁকি এবং পাকস্থলীর ক্যানসারের ঝুঁকি বেড়ে যায়৷
ছবি: aquariagirl1970 - Fotolia.com
প্রতিদিন মাংস
জার্মানদের খাবারের তালিকায় প্রায় প্রতিদিনই মাংস থাকা চাই৷ মাংস রান্না বা সেদ্ধ অবস্থায়, এছাড়া সসেজ, সালামি, হ্যাম – কোনো না কোনোভাবে তাঁদের খাবার টেবিলে থাকে মাংস৷ তবে অতিরিক্ত মাংস খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য ভালো নয় এবং এতে নানা সমস্যা দেখা যায়, সে কথা জেনেও তাঁরা মাংস পছন্দ করেন৷
ছবি: picture-alliance/landov
সপ্তাহে ৬০০ গ্রাম মাংস
একজন প্রাপ্তবয়স্ক জার্মান গড়ে দিনে ১৫০ গ্রাম মাংস খান, অর্থাৎ সপ্তাহে যা ১০০০ গ্রামেরও বেশি৷ অথচ ডাক্তাদের মতে, একজন মানুষ সপ্তাহে ৬০০ গ্রাম মাংস খেতে পারেন এবং এর বেশি খাওয়া একেবারেই উচিত নয় যদি সে মাংস ‘রেড মিট’ হয়৷ গরু, ছাগল, শূকর, ভেড়া এবং ঘোড়ার মাংসকে ‘রেডমিট’ বলা হয়৷
ছবি: Fotolia/stockcreations
ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ায়
ডাক্তারদের মতে, কেউ দিনে ১০০ গ্রামের বেশি ‘রেডমিট’ খেলে তাঁর হৃদরোগের ঝুঁকি এবং পাকস্থলীর ক্যানসারের ঝুঁকি বেড়ে যায়৷ সে তুলনায় সাদা মাংস, অর্থাৎ মুরগি বা পাখির মাংস খেলে ঝুঁকি অনেক কম৷
ছবি: picture alliance/dpa
পরিমিত পরিমাণ
মাংসতে রয়েছে প্রোটিন, আয়রন এবং ভিটামিন ‘বি’৷ জার্মানির পট্সডাম রেব্র্যুক-এর খাদ্য গবেষণা ইন্সটিটিউটের পুষ্টি বিশেষজ্ঞ ড.গিজেলা ওলিয়াস বলেন, রেডমিট হৃদরোগ এবং পাকস্থলীর ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ায় ঠিকই৷ তবে মাংসের তৈরি সসেজ কিন্তু এই ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয় আরো বেশি৷
ছবি: picture alliance/chromorange
প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত মিটকাটার
জার্মান মাংসের দোকানের কর্মীরা প্রায় সকলেই প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত৷ এখানে যে কোনো জায়গায় কাজ করতে গেলে সে বিষয়ে প্রশিক্ষণ থাকতে হয় – তা সে মাংস কাটার কাজ হোক, অথবা অন্য কোনো কাজ৷
ছবি: DW
গ্রিল মাংস
আগুনে পোড়ানো বা গ্রিল করা রসালো মাংস দেখতে যেমন লোভনীয়, তেমন খেতেও দারুণ মজা৷ তাই গ্রীষ্মকালে জার্মানরা প্রায়ই গ্রিল পার্টির আয়োজন করেন, যেখানে প্রচুর পরিমাণে মাংস খাওয়া হয়৷
ছবি: DW/K.Sacks
আরো গ্রিল
নানাভাবে বিভিন্ন পশুর বিভিন্ন অংশের মাংস গ্রিল করা হয়৷ তবে জার্মানরা বেশিরভাগই গ্রিল করেন শূকরের মাংস৷ এসব লোভনীয় গ্রিল দেখে কারো কি মনে থাকার কথা যে, একজন মানুষের দিনে মাত্র ১০০ গ্রাম মাংস খাওয়া উচিত?
ছবি: DW/K.Sacks
দামে সস্তা
গরু বা খাসির মাংসের তুলনায় শূকরের মাংস দামের দিক দিয়ে অনেক সস্তা৷ আর সেজন্যই হয়ত শূকরের মাংস জার্মানিতে বেশি খাওয়া হয়ে থাকে৷ এবং সেটা হয়ে থাকে নানাভাবেই!
ছবি: picture alliance / Fotoagentur Kunz
পাউরুটির সাথেও মাংস
জার্মানরা সকালের নাস্তা বা রাতে রুটির সাথেও মাংসের সসেজ বা মাংসের স্লাইস খান৷ এছাড়া, বিভিন্ন দোকানে, ক্যাফেতে নানা ধরনের রুটির মধ্যে ‘স্যান্ডউইচ’ আকারে মাংস ভরে খাবারও চল আছে জার্মানিতে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
ড্যোনার কাবাব
জার্মানিতে অনেক তুর্কি রেস্তোরাঁ আছে এবং এসব রেস্তোরাঁর বেশিরভাগ খাবারই মাংস দিয়ে তৈরি৷ বিশেষ করে ‘ড্যোনার কাবাব’ তরুণদের কাছে বেশ প্রিয়৷ এটা একরকম পাতলা রুটির মধ্যে সবজি এবং গ্রিল করা মাংস দিয়ে তৈরি করে হয়৷ বলা বাহুল্য, জার্মানিতে ৪০ লাখ মুসলমানের বাস, যাঁদের মধ্যে বেশিরভাগই এসেছেন তুরস্ক থেকে৷
হালাল মাংস
জার্মানিতে তুর্কি দোকানগুলোতে হালাল মাংসও পাওয়া যায়৷ সেসব দোকানে বিভিন্ন দেশ থেকে আসা মুসলমানসহ জার্মানরাও মাংস কেনেন৷
ছবি: aquariagirl1970 - Fotolia.com
11 ছবি1 | 11
তা থেকে বাঁচার উপায়
‘রিহ্যাবিলিটেশন অফ ডিগ্রেডেড কমিউনাল গ্রেজিং ল্যান্ড' – অর্থাৎ সাধারণের জন্য গোচারণের জমির পুনর্বাসন নাম দিয়ে বিশ্বের নানা দেশে, নানা মহাদেশে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলেছে৷ আইব্রাউ পিট, অর্থাৎ ওপরের দিকে উঁচু, শক্ত ঘাস বসানো জল চোঁয়ানোর খাদ কেটে, কিংবা লাইভ ফেন্সিং, অর্থাৎ বিদ্যুৎ দেওয়া তারের বেড়া বসিয়ে, অনেক পন্থাতেই গরু চরানো নিয়ন্ত্রণ করার প্রচেষ্টা চলেছে৷ মূল লক্ষ্য হলো, গরু চরানোর ফলে প্রায় নেড়া মাঠে পরিণত হওয়া জমিতে আবার ঘাস, ঝোপঝাড় গজানোর ব্যবস্থা করা৷ মেইনটেন্যান্স খুব শক্ত নয়: ঝোপঝাড় মাঝেমধ্যে কেটে পানি যাওয়ার পথগুলো খোলা রাখা, সবই বর্ষা নামার আগে৷ তবে মানুষ আর সেই অনুপাতে পশুপালন বৃদ্ধি একটা সমস্যা থেকে যাচ্ছে৷ মনে রাখতে হবে, এ সব এলাকায় পশুপালন মানুষের জীবিকার একটা বড় অঙ্গ৷ ফলে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলিতে গৃহপালিত পশুদের সংখ্যা জনসংখ্যার সমান কি তার চেয়ে একটু বেশি৷