ভারত, বাংলাদেশে রেমালের তাণ্ডব, এলাকা প্লাবিত, মৃত ছয়
২৭ মে ২০২৪রেমালের ফলে সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, পটুয়াখালী, বরগুনা-সহ বাংলাদেশের উপকূলের জেলাগুলিতে প্রবল গতিতে হাওয়া বইতে শুরু করে। তার গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ৯০ থেকে ১২০ কিলোমিটার। এর প্রভাবে বিভিন্ন এলাকায় জলোচ্ছ্বাস হয়।
বরগুনার আমতলীতে জোয়ারের জলে বাঁধ ভেঙে গেছে। প্রাথমিকভাবে জানা গেছে, রেমালের তাণ্ডবে বাংলাদেশ ও ভারত মিলিয়ে ছয়জনের মৃত্যু হয়েছে। ভারতে চারজনের এবং বাংলাদেশে দুই জনের মৃত্যু হয়েছে।
ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে বিভিন্ন জায়গায় প্রবল বষ্টি হচ্ছে। দুই দেশে বেশ কিছু জায়গায় বিদ্যুতের খুঁটি পড়ে যাওয়ায় অনেক এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ ছিন্ন হয়ে গেছে।
সাতক্ষীরার শ্যামনগরে বাড়ি থেকে আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার সময় পড়ে গিয়ে ৬৫ বছর বয়সি শওকাত মোড়ল নামের এক ব্যক্তি মারা যান। গাবুরা ইউনিয়নের নাপিতখালী গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
এছাড়া জোয়ারের জলে ভেসে গিয়ে ২৪ বছর বয়সি শরীফুল ইসলামের মৃত্যু হয়েছে। পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার ধূলাসর ইউনিয়নের কাউয়ারচর এলাকায় এই ঘটনা ঘটেছে।
বরগুনার তিনটি নদী বিপদসীমার উপর দিয়ে বইছে। পরশুনিয়ার বাঁধ ভেঙে গেছে। পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় বাঁধের উপর দিয়ে জল বইছে। কক্সবাজারে জোয়ারের জলে অনেক এলাকা প্লাবিত হয়েছে।
রাজধানী ঢাকায় সকালে দমকা হাওয়ার সঙ্গে বৃষ্টি হচ্ছে।
পশ্চিমবঙ্গের অবস্থা
পশ্চিমবঙ্গেও দক্ষিণ ২৪ পরগনায় বাঁধ ভেঙেছে। প্রবল জলোচ্ছ্বাস হয়েছে। কলকাতায় রাতে ঝোড়ো বাতাসের সঙ্গে প্রবল বৃষ্টি হয়েছে। সোমবার সকালেও বিমান চলাচল বন্ধ ছিল। সাড়ে আটটার পর তা শুরু হয়। শিয়ালদহ দক্ষিণ শাখাতে ট্রেন চলাচল শুরু হয়নি।
রেমাল দুর্যোগে কলকাতায় ৫১ বছর বয়সি সাজিবের মৃত্যু হয়েছে। সাজিবের ছেলে বন্ধুর বাড়িতে গিয়ে আইপিএল ফাইনাল দেখতে গেছিলেন। ঝড়-বৃষ্টি শুরু হওয়ার পর তাকে বাড়িতে নিয়ে আসতে যান তিনি।
বৃষ্টি বেড়ে যাওয়ায় এন্টালির বিবির বাগানে তিনি একটি বাড়ির নিচে আশ্রয় নেন। তখনই তার উপর বাড়ির কার্নিশ ভেঙে পড়ে ও তার মৃত্যু হয়।
মৌসুনি দ্বীপে রেণুকা মণ্ডল নামে এক নারীর গাছ চাপা পড়ে মৃত্যু হয়েছে।
পূর্ব বর্ধমানের মেমারিতে কলাগাছে বিদ্যুতের তার জড়িয়ে গিয়েছিল। সেই কলাগাছ কাটতে গিয়ে প্রথমে একজনের মৃত্যু হয়। তাকে বাঁচাতে গিয়ে তার ছেলেরও মৃত্যু হয়েছে।
সোমবার সকালে বৃষ্টি একটু কমলেও কলকাতার অনেক রাস্তায় জল জমে আছে। কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম বলেছেন, মোট ৫২টি গাছ পড়েছে। কয়েকটি রাস্তায় জল জমে আছে। এখন বৃষ্টি কমলেও পরে আবার হতে পারে। ক্যামাক স্ট্রিটে একটি পাঁচিল ভেঙেছে।
কলকাতা থেকে ডিডাব্লিউর প্রতিনিধি গৌতম হোড় জানাচ্ছেন, রোববার বিকেল থেকেই কলকাতায় বৃষ্টি শুরু হয়। রাত যত বাড়ে ততই বৃষ্টির দাপট বাড়ে। শুরু হয় ঝোড়ো হাওয়া। রাত দশটার পর থেকে ঝড় ও বৃষ্টি প্রবল হয়। গভীর রাত পর্যন্ত ঝড়-বৃষ্টির তাণ্ডব চলতে থাকে। সোমবার সকালেও আকাশ পুরো মেঘলা। ঝোড়ো হাওয়া থেমেছে। তবে মাঝেমধ্যে বৃষ্টি হচ্ছে।
আবহাওয়া অফিস থেকে জানানো হয়েছে, এখন ক্রমশ দুর্বল হচ্ছে রেমাল। তবে রেমালের প্রভাবে কলকাতায় ১৪৪ মিলিমিটার, ডায়মন্ড হারবারে ৯৪ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে।
উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনায় রেলামের তাণ্ডব ছিল সবচেয়ে বেশি। প্রবল বৃষ্টি ও ঝড় হয়। বিভিন্ন জায়গায় গাছ পড়েছে। বাড়ি ভে্ঙেছে। ফ্রেজারগঞ্জের বিডিও বলেছেন, ''কিছু মাটির বাড়ি ভেঙে গেছে। সাহেবখালি ও রূপখালিতে প্রভাব ছিল বেশি। ঝড়ের ক্ষমক্ষতি হয়েছে। সব জায়গা থেকে খবর সংগ্রহ করছি। তারপর ক্ষয়ক্ষতি কতটা হয়েছে তা জানা যাবে।''
ডিডাব্লিউর প্রতিনিধি স্যমন্তক ঘোষ জানিয়েছেন, রোববার দীঘা ও আশপাশের সমুদ্র উত্তাল হয়ে ওঠে। সোমবার সকালেও সমুদ্রে জলোচ্ছ্বাস আছে। রোববার দুপুরের পর থেকে সমুদ্রের ধার খালি করে দেয়া হয়। কাউকে আর আসতে দেয়া হয়নি। সোমবার সকালে তাদের আবার সমুদ্রের কাছে আসতে দেয়া হয়। তবে কাউকে সমুদ্রে নামতে দেয়া হয়নি বা কাছে যেতে দেয়া হয়নি।
বকখালির ফ্রেজারগঞ্জে সকালেও ঝড়ো হাওয়া ছিল। সারা রাত ঝড় ও বৃষ্টি হয়। সকালে কিছুক্ষণ বৃষ্টি থামলেও পরে আবার তা শুরু হয়। বেশ কিছু গাঝ ভেঙেছে। মিটার ঘর ভেঙেছে। তবে যেহেতু মানুষকে সরকারি আশ্রয় শিবিরে নিয়ে য়াওয়া হয়েছিল, তাই তারা সেখানে নিরাপদে ছিলেন।
জিএইচ/এসজি(পিটিআই, এবিপি আনন্দ, প্রথম আলো)