1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ভারতে সীমান্ত রক্ষায় নারী

পায়েল সামন্ত কলকাতা
২৭ জুন ২০১৭

সীমান্ত এলাকায় ভারতীয় ভূখণ্ডে শান্তি বজায় রাখতে বিএসএফ-এর হাতিয়ার এখন নারী বাহিনী৷ ফলে নারী চোরাচালানকারীদের ধরা সহজ হচ্ছে৷ পুরুষ জওয়ানদের হাতে নারী নিগ্রহের অভিযোগ কমেছে৷ উর্দিধারী নারী দেখে ভরসা পাচ্ছেন গ্রামীণ রমনীরা৷

Indien Grenzsoldatinnen an der Grenze zu Pakistan
সীমান্ত পাহারায় নারী বিএসএফছবি: Getty Images/AFP/N. Nanu

ভারতে সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ-এ মহিলা জওয়ান নিয়োগ নিয়ে এক সময় প্রচুর বিতর্ক হয়েছিল৷ রাজস্থানের জয়সলমীর থেকে ২০০ কিলোমিটার দূরে শাকিরওয়ালা সীমান্তে বিএসএফের প্রথম মহিলা কনস্টেবল নিয়োগ করা হয়৷ তার অনেক পরে পশ্চিমবঙ্গে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে মহিলা জওয়ান নিয়োগ শুরু হয়েছিল৷ সেটাও প্রায় সাত বছর আগের কথা৷ এ জন্যও কম ঝামেলা হয়নি৷ কিন্তু বর্তমানে সীমান্তবাসীরাই স্বাগত জানিয়েছেন এই  পদক্ষেপকে৷ ২০ থেকে ২৫ বছরের তরুণীরা আজ পশ্চিমবঙ্গের সীমান্তে কাঁধে তুলে নিয়েছেন রাইফেল৷ এই মহিলা জওয়ানদের জন্যই সীমান্তের নানা অশান্তির আবহের মধ্যে দু'দণ্ড স্বস্তি পেয়েছেন গ্রামবাসীরা৷ বিএসএফের সঙ্গে তাঁদের নিত্য অশান্তি আর টানাপোড়েনের দিন আর নেই!

তল্লাশি ও হয়রানির অভিযোগের পাশাপাশি বিএসএফের সঙ্গে গ্রামবাসীদের বিরোধের অন্যতম কারণ ছিল ভাষাগত সমস্যা৷ ভিনরাজ্যের জওয়ানদের সঙ্গে সীমান্তের মানুষের ভাষার মিল না থাকায় প্রায়ই তাঁরা অমানবিক আচরণের মুখে পড়তেন বলে অভিযোগ৷ জীবিকার কারণে সীমান্ত-রেখা পার হতে গিয়ে কৃষক, মৎসজীবীদের কারণে-অকারণে হতে হতো হেনস্থার শিকার৷ মহিলাদের মারধরের অভিযোগও প্রায়ই শোনা যেত৷ সে সব নিয়ে দাঙ্গা-হাঙ্গামা, রাস্তা অবরোধ বা বিএসএফ ক্যাম্প ঘেরাও ছিল নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা৷ খবরের কাগজে ফলাও করে প্রকাশিত হতো সেসব খবর৷ সীমান্ত অঞ্চলের সাংসদরা লোকসভায় বিএসএফের অত্যাচারের বর্ণনা দিতেন তীব্র ধিক্কার জানিয়ে৷

পরিস্থিতি এখন পাল্টেছে নদিয়া, মুর্শিদাবাদ, মালদহ, দুই চব্বিশ পরগনার সীমান্তে বিএসএফে প্রায় ছয়শ'র বেশি প্রমীলার যোগদান গ্রামবাসী ও বিএসএফের সম্পর্ক সহজ করেছে৷ পশ্চিমবঙ্গের বাঙালিদের পাশাপাশি ত্রিপুরা, পাঞ্জাব, উত্তরপ্রদেশ, বিহারের মহিলারাও যোগ দিয়েছেন৷ আগেকার তিক্ততা ভুলে গিয়ে সীমান্তের গ্রামবাসীরা এখন অনেক সহজেই মিশতে পারছেন জওয়ানদের সঙ্গে৷ বাঙালিদের সঙ্গেই শুধু গল্পগুজব নয়, সীমান্তবাসীরা হিন্দি শিখছেন অন্যান্য প্রদেশের মহিলা জওয়ানদের কাছ থেকে৷

অনেক গ্রামবাসীর মতে, মহিলা জওয়ান নিয়োগের ফলে মহিলাদের তল্লাশিতে খুব সুবিধা হয়েছে৷ আগে চোরাচালানের সন্দেহ হলেও বিএসএফ নারীঘটিত ঝামেলার আশঙ্কায় তা এড়িয়ে যেত৷ এখন মহিলা জওয়ানরা স্বচ্ছন্দে সন্দেহভাজন মহিলাদের তল্লাশি করতে পারছেন৷ গ্রামবাসীদের সীমান্ত লাগোয়া দৈনন্দিন সমস্যার কথা শুনে তাঁরা নিজেরাই কম্যাডান্টদের সঙ্গে কথা বলে মীমাংসা করার ব্যবস্থা করে দিচ্ছেন৷

বিএসএফের তরফ থেকে এতদিন এমন সহযোগিতার উদ্যোগ সীমান্তবাসীরা দেখতে পাননি৷ তাই স্বাভাবিকভাবেই তাঁরা এখন খুশি৷ শুধু সীমান্ত নয়, গ্রামের আনাচে-কানাচেও থাকে সীমান্তরক্ষীদের পাহারা, চেকপোস্ট৷ সেগুলির পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় একজন নারীকে দেখতে পেলে আর বুক কেঁপে ওঠে না৷ চেকিংয়ের নামে ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড় করিয়ে রাখা হতো৷ মহিলা জওয়ানরা আসার পর সেই প্রবণতা কিছুটা কমেছে৷

‘সত্যিই পুরুষের হাতে নারীরা পুরোপুরি নিরাপদ নন’

This browser does not support the audio element.

সীমান্তরক্ষী হিসেবে মহিলা জওয়ানদের নিয়োগকে নারীর ক্ষমতায়ন হিসেবে দেখছেন পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সন সুনন্দা মুখোপাধ্যায়৷ তিনি মনে করেন, ‘‘সব ক্ষেত্রেই নারীরা অবদান রাখছে৷ তাহলে সীমান্ত রক্ষাই বা বাদ যাবে কেন? পুরুষের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সব কাজই তারা করছে৷ তাই এই সিদ্ধান্ত খুবই সময়োপযোগী৷’’

তাহলে কি পুরুষের হাতে নারীরা ততটা নিরাপদ নন? সে কারণেই আজকের একুশ শতকে দাঁড়িয়ে সীমান্তে নারীদের নিয়োগ করতে হচ্ছে? নারীবাদী সুনন্দার বক্তব্য, ‘‘সত্যিই পুরুষের হাতে নারীরা পুরোপুরি নিরাপদ নন৷ আমাদের ইতিহাস-পুরাণ দেখলে সেটা বোঝা যাবে৷ আর একজন জওয়ানের ক্ষেত্রে বড় ব্যাপার তাঁর পৌরুষ৷ এই জায়গা থেকেই নারীর প্রতি বিদ্বেষ মনের গহনে জমে থাকে৷ সেটাই হিংসার আকারে প্রকাশিত হয়৷’’

এই সিদ্ধান্ত আরও একটা কারণে জরুরি বলে মনে হয়েছে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সন সুনন্দা মুখোপাধ্যায়ের৷ তিনি বলেন, ‘‘গ্রামীণ মহিলারা যৌন হেনস্থার ভয় বেশি পান৷ সে ক্ষেত্রে নারীরক্ষীদের সম্পর্কে ভয় একেবারেই দূর হয়ে যাবে৷ ঘরের বাইরে বেরোনোর ক্ষেত্রে আতঙ্ক থাকবে না৷ আর যা-ই হোক, একজন মহিলার দ্বারা তাঁদের যৌন হেনস্থার সম্ভাবনাটা নেই, এটা তাঁরা বুঝবেন৷’’

‘এই নিয়োগের ফলে সেই পুরুষতান্ত্রিক মনোভাব থেকে বেরিয়ে আসা গিয়েছে’

This browser does not support the audio element.

রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক বিশ্বনাথ চক্রবর্তীও সীমান্তে নারী নিয়োগকে ইতিবাচক হিসেবেই দেখছেন৷ তাঁর কাছে এটা পুরুষতান্ত্রিকতার বিরুদ্ধে জয়৷ বিশ্বনাথ চক্রবর্তীর ভাষায়, ‘‘পুরুষই শুধু নিরাপত্তা দেবে, এমন একটা ভাবনা আমরা যুগের পর যুগ থেকে লালন-পালন করে চলেছি৷ এই নিয়োগের ফলে সেই পুরু্যতান্ত্রিক মনোভাব থেকে বেরিয়ে আসা গিয়েছে৷ এটা এক দিক থেকে নারীর ক্ষমতায়ন তো বটেই৷’’ এর কার্যকরী প্রভাব হিসেবে চোরাচালানের প্রসঙ্গ তুলে অধ্যাপক বলেন, ‘‘বিপুল সংখ্যক মহিলাকে সীমান্ত দিয়ে চোরাচালানের কাজে ব্যবহার করা হয়৷ এর একটাই লক্ষ্য, পুরুষ জওয়ানরা যেন সন্দেহ হলেও যথাযথভাবে মহিলাদের তল্লাশি করতে না পারেন৷ সন্দেহের বশে তল্লাশি করলে বিতর্ক হতে পারে৷ তাই বিশ্বনাথ চক্রবর্তী মনে করেন, নারীর মাধ্যমে চোরাচালান রুখতে পারেন নারী জওয়ানরাই৷ তাঁরা স্বচ্ছন্দে তল্লাশিও চালাতে পারেন৷ এর ফলে চোরাচালানকারীরা বেশ ভয় পাবে৷ অন্যদিকে, নিরপরাধ গ্রামীণ মহিলারাও নারী জওয়ানের তল্লাশির মুখে পড়তে ভয় পাবেন না৷

নারী জওয়ানদের নিয়োগে গ্রামবাসীরাও স্বস্তি পেয়েছেন বৈকি! নদিয়ার করিমপুর সীমান্তের বাসিন্দা, কলকাতার একটি বেসরকারি সংস্থার কর্মী স্বপ্না নায়েক বলেন, ‘‘এখন মেয়েরা অনেকটা ভরসা পেয়েছে৷ আগে গরু চড়াতে গেলেও ভয়ে ভয়ে থাকতে হতো৷ গ্রামে যখন উর্দি পরে বন্দুক হাতে মহিলাদের দেখা পাওয়া যায়, তখন থেকে পাড়াগাঁয়ের মেয়েরা অনেকটাই নিরাপদ বোধ করে৷’’

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ