রোববার ভারতে এসে পৌঁছেছেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রধান উরসুলা ফন ডেয়ার লাইয়েন। সোমবার তার মোদীর সঙ্গে বৈঠক হওয়ার কথা।
বিজ্ঞাপন
এই প্রথম ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রধান ভারত সফরে এলেন। দুই দিনের সফরে একাধিক বিষয়ে তিনি কথা বলবেন বলে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রাণালয় সূত্রে জানানো হয়েছে। তবে বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, এই সময়ে উরসুলার ভারত সফর কূটনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে আলোচনায় ইউক্রেন প্রসঙ্গ উঠে আসবে বলে তাদের ধারণা।
জাতিসংঘ জলবায়ু প্রতিবেদন: আশা ও শঙ্কার তথ্য
জাতিসংঘের জলবায়ু বিজ্ঞান প্যানেলের প্রতিবেদনে দেখা গেছে, কার্বন নির্গমন এখনও বেড়ে চলেছে৷ দ্রুত ব্যবস্থা না নেয়া হলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে৷ ছবিঘরে থাকছে প্রতিবেদনের কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য৷
ছবি: Martin Meissner/AP/picture alliance
কার্বন নিঃসরণ বাড়ছে
পৃথিবীতে এখনও কার্বন নিঃসরণ কমেনি৷ ভূমি ব্যবহারের পরিবর্তন হিসাবে ধরলে ২০১৯ সালে ৫৯ গিগাটন কার্বন নিঃসরণ হয়েছে৷ ২০১০ সালের ৫২ দশমিক পাঁচ গিগাটনের তুলনায় এ পরিমাণ বেড়েছে ১২ শতাংশ৷ অর্থাৎ গত এক দশকে কার্বন নিঃসরণ প্রতি বছর এক দশমিক তিন শতাংশ হারে বেড়েছে৷ তবে ভালো খবর হচ্ছে, আগের দশকে এ হার ছিল দুই দশমিক এক শতাংশ৷ ফলে আগের দশকের চেয়ে গত দশকে নিঃসরণ কমেছে৷
ছবি: Oliver Berg/dpa/picture alliance
গ্রিনহাউজ গ্যাস চেম্বারের পথে
শিল্প বিপ্লব পরবর্তী যুগে তাপমাত্রা বৃদ্ধি দেড় ডিগ্রি সেলসিয়াসের কম রাখতে উচ্চাভিলাষী পদক্ষেপ নেয়ার সুপারিশ করেছে জাতিসংঘের জলবায়ু প্যানেল৷ বর্তমান নির্গমণের পরিসংখ্যান অনুযায়ী কোনো পদক্ষেপ না নেয়া হলে তাপমাত্রা তিন দশমিক দুই ডিগ্রি বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে৷ বিভিন্ন দেশের জাতীয় পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলেও তাপমাত্রা বৃদ্ধি সীমিত রাখা সম্ভব হবে না বলে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে প্রতিবেদনে৷
ছবি: J. David Ake/AP/picture alliance
জ্বালানি ও নির্মাণ
তাপমাত্রা বৃদ্ধি দেড় ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে সীমিত রাখতে হলে ২০৩০ সালের মধ্যে সব গ্রিন হাউজ গ্যাস নির্গমণ অর্ধেক এবং ২০৫০ সালের মধ্যে কার্বন নিঃসরণ শুন্যের কোঠায় নামিয়ে আনতে হবে৷ এর মানে, ২০৫০ সালের মধ্যে বিশ্বে ৯৫ শতাংশ কয়লা, ৬০ শতাংশ তেল এবং ৪৫ শতাংশ গ্যাস কম ব্যবহার করতে হবে৷ একই সঙ্গে ভবন নির্মাণে পরিবেশবান্ধব উপকরণের ব্যবহার বাড়াতে হবে৷
ছবি: Hasan Jamali/AP Photo/picture alliance
অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি সীমিতকরণ
উষ্ণতা বৃদ্ধি দুই ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে আটকে রাখতে এমন সব পদক্ষেপ নিতে হবে যার ফলে বিশ্বের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি সীমিত করবে৷ ২০৫০ সালের মধ্যে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এক দশমিক তিন থেকে দুই দশমিক সাত শতাংশ পর্যন্ত নেমে আসবে৷ তবে উষ্ণায়ন কমাতে পারলে সামগ্রিক অর্থনৈতিক সুবিধা এটি কাটিয়ে উঠতে পারবে বলে প্রতিবেদনে আশা প্রকাশ করা হয়েছে৷
ছবি: Bilal Hussein/AP Photo/picture alliance
জীবনযাপনে পরিবর্তন
বিশ্বের তাপমাত্রা কমাতে জনগণের জীবনধারা এবং আচরণের পরিবর্তন আনতে হবে৷ এ লক্ষ্যে বিভিন্ন দেশের সরকারকে ভ্রমণ কমাতে বাড়ি থেকে কাজকে উৎসাহিত করা, সাইকেল চালানো এবং গাড়ির ব্যবহার কমিয়ে হাঁটতে উৎসাহ দেয়া, বা মাংস খাওয়ার চেয়ে উদ্ভিদ-ভিত্তিক খাবারের প্রচার করার মতো ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশও করা হয়েছে প্যানেলের প্রতিবেদনে৷
ছবি: Stanislav Krasilnikov/TASS/dpa/picture alliance
আশার সংবাদ
প্রতিবেদনে কিছু আশার কথাও তুলে ধরা হয়েছে৷ পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি দিন দিন আরো সহজলভ্য ও সাশ্রয়ী হয়ে উঠছে৷ ২০১০ সালের তুলনায় সৌরশক্তির এক ইউনিটের দাম এখন ৮৫ শতাংশ কম, বায়ুশক্তির দাম কম ৫৫ শতাংশ৷ কিছু দেশে জ্বালানি নীতির পরিবর্তন করায় পুনর্ব্যবহারযোগ্য জ্বালানি এবং বৈদ্যুতিক যানের ব্যবহার বেড়েছে, বন উজাড়ের হার কমেছে৷
ছবি: COMISION FEDERAL DE ELECTRICIDAD/HANDOUT/dpa/picture alliance
6 ছবি1 | 6
রোববার এনার্জি নিয়ে বহু কথা বলেছেন ইইউ প্রধান। নতুন দিল্লির এনার্জি অ্যান্ড রিসোর্সেস ইনস্টিটিউটে দীর্ঘ বক্তৃতা দিয়েছেন তিনি। কথা বলেছেন ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে।
উরসুলা জানিয়েছেন, ইউরোপ জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে অত্যন্ত চিন্তিত। ক্লাইমেট নিউট্রালিটির লক্ষ্যে তারা এগোচ্ছে। কিন্তু একা ইউরোপ কিছু বদলাতে পারবে না। সকলকে এগিয়ে আসতে হবে। ভারত সফরে এবিষয়ে প্রশাসনের কর্তাদের সঙ্গে তিনি কথা বলবেন বলে জানিয়েছেন। পাশাপাশি ছাত্রছাত্রীদেরও এ নিয়ে সরব হতে হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
জলবায়ু ছাড়াও ভারত এবং ইউরোপের বাণিজ্য সম্পর্ক নিয়ে একাধিক বৈঠক করার কথা তার। আলোচনায় বসার কথা ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করর সঙ্গে। ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র অরিন্দম বাগচী টুইট করে উরসুলাকে স্বাগত জানিয়েছেন।
তবে সোমবার মোদীর সঙ্গে তার বৈঠকের দিকেই তাকিয়ে কূটনীতিকরা। ইউক্রেন যুদ্ধে এখনো সরাসরি রাশিয়ার বিরোধিতা করেনি ভারত। জাতিসংঘে এবিষয়ে এখনো পর্যন্ত ভারত ভোট দেয়নি। অন্যদিকে রাশিয়ার কাছ থেকে তেলও কিনছে মোদীর সরকার। এই পরিস্থিতিতে অ্যামেরিকা এবং ইউরোপ উদ্বেগে। সে কারণেই একের পর এক বিশ্বনেতা ভারত সফরে আসছেন বলে মনে করছেন কূটনীতিবিদদের একাংশ। এবং সে কারণেই উরসুলা-মোদী বৈঠক গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।