সোমবার সকাল থেকে শুরু হওয়া ভারী বর্ষণের কারণে সৃষ্ট ভূমিধসে রাঙ্গামাটিতে অন্তত ৬৪ জন প্রাণ হারিয়েছেন বলে জানা গেছে৷ এছাড়া বান্দরবানে ছয় ও চট্টগ্রামে ৩০ জন নিহত হওয়ার খবর জানাচ্ছে কর্তৃপক্ষ৷
বিজ্ঞাপন
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের উপ সচিব জি এম আবদুল কাদের বাংলাদেশ সময় মঙ্গলবার রাত পৌনে ৯টায় ডয়চে ভেলের কনটেন্ট পার্টনার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, পাহাড় ধসের ঘটনায় দুই সেনা কর্মকর্তাসহ ৯৪ জনের লাশ উদ্ধারের খবর তারা পেয়েছেন।
“আমরা নিয়মিত জেলা পর্যায়ে যোগাযোগ রাখছি। নিহতের সংখ্যা একশ ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।”
মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণ কক্ষকে উদ্বৃত করে একই সময়ে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম জানিয়েছে, চট্টগ্রামে মারা গেছেন ৩০ জন। তাদের মধ্যে ২২ জন পাহাড় ধসে এবং বাকিরা গাছচাপায় মারা যান। এছাড়া রাঙ্গমাটিতে ৫৮ জন ও বান্দরবানে ছয় জনের লাশ উদ্ধার করেছেন উদ্ধারকর্মীরা। তবে ওই সময় পর্যন্ত স্থানীয় কর্মকর্তারা রাঙামাটিতে ৬৪ জন, চট্টগ্রামে ৩০ জন এবং বান্দরবানে সাতজন নিহতের খবর নিশ্চিত হওয়া গেছে৷
রাঙ্গামাটিতে নিহতদের বেশিরভাগই আদিবাসী৷ ভারতের সীমান্তের কাছে একটি প্রত্যন্ত এলাকায় তাঁরা বাস করতেন৷ ভূমিধসের ঘটনা যখন ঘটে তখন তাঁরা ঘুমিয়ে ছিলেন বলে জানিয়েছেন জেলার পুলিশ প্রধান সৈয়দ তারিকুল হাসান৷
এই জেলায় নিহতদের মধ্যে চারজন সেনাসদস্যও রয়েছেন৷ সশস্ত্র বাহিনীর মুখপাত্র লেফটেন্যান্ট কর্ণেল রশিদুল হাসান এএফপিকে বলেন, ‘‘মানিকছড়িতে ঘটা আরেক ভূমিধসের পর রাস্তাঘাট পরিষ্কার করতে সেখানে সেনাসদস্যদের পাঠানো হয়েছিল৷ দ্বিতীয় ভূমিধসে তাঁরা প্রাণ হারান৷’’
ঢাকা আবহাওয়া অফিস মঙ্গলবার সকালে জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় তারা রাঙ্গামাটিতে ৩৪৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছেন৷ মঙ্গলবারও সেখানে বৃষ্টি হবে বলে পূর্বাভাসে জানানো হয়েছে৷
এদিকে, বান্দরবানে ভূমিধসে একই পরিবারের তিন শিশুসহ ছয়জন নিহত হয়েছেন৷
এছাড়া চট্টগ্রামে ২৩ জনের প্রাণ যাওয়ার কথা জানিয়েছে এএফপি৷ তবে জেলার পুলিশ প্রধান রেজাউল মাসুদ জার্মান বার্তা সংস্থা ডিপিএকে ২৭ জন নিহত হওয়ার তথ্য দিয়েছেন৷ রাতে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম বলছে, এই সংখ্যাটি ৩০ জন৷
উল্লেখ্য, চট্টগ্রামে এক দশক আগে ভূমিধসে একটি পুরো গ্রাম ঢেকে গিয়ে কমপক্ষে ১২৬ জনের মৃত্যু হয়েছিল৷
আরও ভূমিধসের আশংকায় চট্টগ্রামের পুলিশ মাইকিং করে পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসকারীদের অন্যত্র সরে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছে৷
জেডএইচ/এসিবি (এএফপি, ডিপিএ)
শ্রীলঙ্কায় ভূমিধস নিয়ে ৩০ মে’র এই ছবিঘরটি দেখতে পারেন৷
শ্রীলঙ্কায় ভয়াবহ বন্যা ও ভূমিধস
গত ১৪ বছরের মধ্যে ভয়াবহ বন্যা আর ভূমিধসে বিপর্যস্ত শ্রীলঙ্কার ৬ লাখ মানুষের জীবন৷ বন্যায় এ পর্যন্ত ১৮৩ জন প্রাণ হারিয়েছে৷ লাখো মানুষ বিশুদ্ধ পানির অভাবে দিন কাটাচ্ছে৷
ছবি: picture-alliance/AP/E. Jayawardena
প্রাণহানি
ভয়াবহ বন্যা ও ভূমিধসে এ পর্যন্ত ১৮৩ জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে শ্রীলঙ্কার কর্তৃপক্ষ৷ এখনো নিখোঁজ ১১০ জন৷ ২০০৩ সালের মে মাসে ভয়াবহ মৌসুমী ঝড়ে ২৫০ জন প্রাণ হারিয়েছিল, ১০ হাজার ঘর-বাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছিল৷
ছবি: picture-alliance/Photoshot
৬ লাখ মানুষ গৃহহীন
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কেন্দ্র জানিয়েছে, ৬ লাখ মানুষকে অন্যত্র সরিয়ে নিতে হয়েছে৷ বন্যা ও ভূমিধসে ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়ে গৃহহীন অনেক মানুষ৷
ছবি: Getty Images/AFP/L. Wanniarachchi
পানিবাহিত রোগ ছড়িয়ে পড়ার আশংকা
দেশটির দক্ষিণাঞ্চলের মানুষকে কুমিরের আতঙ্কে দিন কাটাতে হচ্ছে৷ কারণ, ঐ এলাকাটি বন্য প্রাণির অভয়ারণ্য হিসেবে পরিচিত৷ সেখানে বন্যার পানি ঢুকে পানিবাহিত রোগ ছড়িয়ে পড়ার আশংকাও দেখা দিয়েছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/I. S. Kodikara
বিশুদ্ধ পানির অভাব
শ্রীলঙ্কার পানি সরবরাহ মন্ত্রী জানিয়েছেন, ক্ষতিগ্রস্ত ৪০ শতাংশ মানুষের বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের ব্যবস্থা নেই৷ তাই যেসব কূপ বন্যার পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, সেগুলোকে অবিলম্বে পরিষ্কার করাটা ভীষণ জরুরি হয়ে পড়েছে৷ পানি সরবরাহ কেন্দ্রগুলো বন্যার পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেছে বলে জানান তিনি৷
ছবি: Getty Images/AFP/I. S. Kodikara
ত্রাণ কাজে সেনাবাহিনী
ত্রাণ কাজে সহায়তা করছে সেনাবাহিনী৷ সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা কালুতারা, রত্নাপুরা, গল এবং মাতারায় ক্ষতিগ্রস্তদের খাবার ও প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম দিচ্ছে তারা৷
ছবি: Reuters/D. Liyanawatte
আবহাওয়ার উন্নতি
ঘূর্ণিঝড় মোরা বাংলাদেশে আঘাত হানায় মঙ্গলবার থেকে শ্রীলঙ্কার আবহাওয়া কিছুটা উন্নতির দিকে৷ তবে গত ২৪ ঘণ্টায় দেশটির বিভিন্ন অঞ্চলে কয়েক দফায় বৃষ্টিপাত হয়েছে৷
ছবি: Imago/Xinhua
আন্তর্জাতিক ত্রাণ
শ্রীলঙ্কায় আন্তর্জাতিক সহায়তা পৌঁছাতে শুরু করেছে৷ ভারত দু’টি জাহাজে করে ত্রাণ পাঠিয়েছে৷ আজই পৌঁছাবে তৃতীয় জাহাজটি৷ জাতিসংঘ জানিয়েছে, তারা পানির কন্টেইনার, পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট এবং টারপুলিন পাঠাবে৷ আর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে, তারা ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোতে তারা চিকিৎসা সহায়তা দেবে৷ জাপান ভ্রাম্যমাণ জেনারেটর এবং ত্রাণ কাজে বিশেষজ্ঞদের একটি দল পাঠাবে বলে জানিয়েছে৷