সুনামগঞ্জের প্লাবিত এলাকা থেকে এখনও বন্যার পানির দাগ মুছেনি, তার মধ্যেই টানা ভারী বৃষ্টিতে ফের আতঙ্কে দিন কাটছে বাসভাসিদের৷ আবহাওয়ার পূর্বাভাস বলছে, বৃষ্টির এ ধারা অব্যাহত থাকতে পারে৷
বিজ্ঞাপন
আশ্রয়কেন্দ্র ছেড়ে কিছু মানুষ বাড়িঘরে ফিরে গেলেও এখনও বিশুদ্ধ খাবার পানি আর খাবারের সংকটের কারণে সরকারি-বেসরকারি ত্রাণ কাজ চলছে জোরকদমে৷ পানি না নামায় অনেক মানুষ এখনও আশ্রয়কেন্দ্রেই রয়েছে৷
এর মধ্যেই জেলায় মঙ্গলবার রাত থেকে বুধবার সকাল পর্যন্ত টানা বৃষ্টি হয়েছে৷ আবহাওয়ার পূর্বাভাস বলছে, এ ধারা অব্যাহত থাকতে পারে৷ ভারতের আসাম ও মেঘালয়ে বর্ষণ হচ্ছে৷
ডয়চে ভেলের কনটেন্ট পার্টনার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন সিলেট আবহাওয়া কার্যালয়ের সহকারী আবহাওয়াবিদ আনিসুর রহমান বলেন, ‘‘আগে থেকেই মঙ্গলবার থেকে বৃষ্টিপাত হবে এই পূর্বাভাস ছিল৷ আগামীকাল ও পরশুও বৃষ্টি হবে৷”
‘‘এই সময়ে উজানে বৃষ্টিপাত হচ্ছে তবে আগের মতো টানা ভারী বর্ষণ হচ্ছে না৷ আগামী মাসের শুরু থেকেই ধীরে ধীরে বৃষ্টি কমে আসবে৷’’
সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জহিরুল ইসলাম বলেন, ‘‘ভারতের মেঘালয় ও সুনামগঞ্জে ভারী বর্ষণ হচ্ছে ফলে পানি কিছুটা বাড়ছে৷ বর্ষণ অব্যাহত থাকলে আরও পানি বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে৷”
তিনি আরও জানান, সুনামগঞ্জ পয়েন্টে সুরমা নদীর পানি ৭.৪৪ মিটার থেকে বেড়ে গত ৪৮ ঘণ্টায় ৭.৬৬ মিটার উচ্চতায় প্রবাহিত হচ্ছে৷ যদিও এখনও বিপৎসীমার ১৪ সেন্টিমিটার নিচে আছে৷
‘‘বুধবার সকাল ৯টায় সুরমা নদীর পানি ছাতক পয়েন্টে ৮.৯৪ মিটার উচ্চতায় রয়েছে; তার মানে বিপৎসীমার ৮৩ সেন্টিমিটার উচ্চতা দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে৷ গত ১৫ দিন ধরেই ছাতকে সুরমা নদীর পানি বিপৎসীমার উপর দিয়েই প্রবাহিত হচ্ছে৷’’
গত ৪৮ ঘণ্টায় এই পয়েন্টে পানি বেড়েছে ৩৬ সেন্টিমিটার৷ অপরদিকে সুরমা নদীর পানি সুনামগঞ্জের ষোলঘর পয়েন্টে ৭.৪৪ মিটার থেকে বেড়ে গত ৪৮ ঘণ্টায় ৭.৬৬ মিটার উচ্চতায় প্রবাহিত হচ্ছে৷ এই পয়েন্টে বিপৎসীমা ৭.৮০ মিটার অর্থাৎ, এখানে এখনও বিপৎসীমার ১৪ সেন্টিমিটার নিচে আছে পানি৷
তাছাড়া সীমান্ত নদী যাদুকাটা ও পুরাতন সুরমা নদীর পানিও গত দুদিন ধরে বাড়ছে বলে পাউবো জানিয়েছে৷
বন্যায় বিপর্যস্ত সুনামগঞ্জ
সুনামগঞ্জে শতাব্দীর ভয়াবহ বন্যার কারণে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে কয়েক লাখ মানুষ। অতিবৃষ্টি এবং ভারতের চেরাপুঞ্জির পার্শ্ববর্তী অঞ্চল হওয়ার কারণে সুনামগঞ্জসহ আশেপাশের অঞ্চলগুলোর বন্যা পরিস্থিতি চরম আকার ধারণ করেছে।
ছবি: Mortaza Rashed/DW
ত্রাণের জন্য আশ্রয়কেন্দ্রের সামনে অপেক্ষা
সুনামগঞ্জ সদরের সরকারী জুবিলী উচ্চ বিদ্যালয়ের নৌবাহিনীর অস্থায়ী ক্যাম্পের সামনে সারাদিনই ভিড় করতে দেখা যায় বন্যাদুর্গত মানুষদের। নবীনগর থেকে ৪ দিন আগে আসা শেফালী হালদার জানান, বন্যার কারণে তাঁরা ঘর-বাড়ি ছেড়ে শহরে আশ্রয় নিয়েছেন। এখানে ত্রাণ দেওয়া হচ্ছে লোকমুখে এমন কথা শুনে আসলেও এখানকার কর্মকর্তারা বলছেন এখানে কোনো ত্রাণ দেওয়া হয় না।
ছবি: Mortaza Rashed/DW
‘অবলা প্রাণী কিছু কইতে পারছে না’
সুনামগঞ্জের বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার ফতেপুর ইউনিয়নের তাহের আলী বলেন, ‘‘আমরার সবার বাড়িত অই গবাদিপশু আছে। বন্যাত আমরা তেমন খাইতে পারছি না, পানি খায়া থাকোন লাগসে। কিন্তু গবাদি পশু তো অবলা প্রাণী, কিছু কইতে পারছে না, অগো খাইতেও দিতে পারছি না, তাইনেরে নিয়া বিরাট বিপদও আছলাম।’’
ছবি: Mortaza Rashed/DW
শুধু বাসার ছাদ দেখা গেছে
সুনামগঞ্জ জেলার জামালগঞ্জ উপজেলার বালিঝুড়ি গ্রামের রেণোদা বিশ্বাস জানান, বন্যা শুরু হলে রাতেই ঘরে পানি ঢুকে যায়। ভয়ে পরিবার নিয়ে কোনোমতে বাড়ি ছেড়ে নিকটবর্তী আশ্রয়কেন্দ্রে যান তাঁরা। একদিন পর নৌকায় করে বাড়ি দেখতে এসে দেখতে পান, শুধু বাড়ির ছাদ দেখা যাচ্ছে, বাকি অংশ পানির নীচে।
ছবি: Mortaza Rashed/DW
সব ধরনের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন ছিল
সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার আনোয়ারপুর গ্রামের সেলিম মিয়া জানান, বন্যার শুরুর পরপরই বিদ্যুৎ ও মোবাইলের নেটওয়ার্ক চলে যাওয়ায় যেসকল আত্মীয়স্বজন শহরে কিংবা পাশের গ্রামেই থাকেন, তাদের কারো সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। এই দুর্যোগে কে কেমন আছে এ নিয়ে সবাই খুবই চিন্তিত ছিল।
ছবি: Mortaza Rashed/DW
বসতবাড়ি ভেঙে গেছে
সুনামগঞ্জের শনির হাওরের সাব্বির আহমেদ ও মো. আকাশ জানান, বন্যার স্রোতে তাদের টিনের বাসা পুরোপুরি ভেঙে গেছে। সেটি নতুনভাবে বানানো ছাড়া উপায় নেই আর। তাদের গ্রামের অনেকের বাসাবাড়ির চিহ্নটুকুও নেই।
ছবি: Mortaza Rashed/DW
ফসলের জমিতে ১০ ফুট পানি
সুনামগঞ্জ জেলার বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার অনন্তপুর গ্রামের সগির আলী জানান, তাঁর বসতবাড়ির সামনে যতদূর দেখা যায়, ফসলি জমি ছিল। অন্যান্য বছর জাদুকাটা নদী ও পার্শ্ববর্তী হাওরের পানি বাড়লেও এবছরের বন্যায় ফসলি জমি তলিয়ে গেছে কমপক্ষে ১০ ফুট পানির নীচে।
ছবি: Mortaza Rashed/DW
আবার ফেরত যাচ্ছেন আশ্রয়কেন্দ্রে
সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার বারোংকা গ্রামের হযরত আলী জানান, একটি ট্রলার ভাড়া করে আশ্রয়কেন্দ্রে থেকে বাড়িতে ফেরত গিয়েছিলেন। গিয়ে দেখেন সেখানে এখনো কোমর সমান পানি। অনেকের বাড়ির পানি নামলেও তার বাসারটা এখনো না নামায় আবার আশ্রয়কেন্দ্রে ফেরত যাচ্ছেন তারা।
ছবি: Mortaza Rashed/DW
বসতবাড়ি ডুবে যাওয়ায় সড়কে আশ্রয়
সিলেট-সুনামগঞ্জ সংযোগ সড়কের মদনপুর নামক স্থানে দেখা যায়, সেখানে কিছুদূর পরপর রাস্তায় পলিথিন দিয়ে অস্থায়ী তাঁবু বানিয়ে অবস্থান করছেন শতশত পরিবার। স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, এরা সবাই বন্যাদুর্গত এলাকা থেকে এসেছেন এবং এখানে খুবই মানবেতর জীবনযাপন করছেন।
ছবি: Mortaza Rashed/DW
ত্রাণ পর্যাপ্ত না
ত্রাণ কার্যক্রমে অংশ নেওয়া একটি বেসরকারি দাতব্য সংস্থার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন স্বেচ্ছাসেবক বলেন, ‘‘আমরা সুনামগঞ্জে বন্যার শুরু থেকেই ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনা করছি। প্রতিদিন লক্ষ লক্ষ টাকার ত্রাণ দিচ্ছি, কিন্তু তবু দিয়ে শেষ করতে পারছি না। আসলে এত মানুষের চাহিদা মেটানো খুবই কঠিন, কোনো উদ্যোগই যথেষ্ট না।’’
ছবি: Mortaza Rashed/DW
‘সাত-আট দিনে শুধু আজকে ত্রাণ পেলাম’
বন্যায় সুনামগঞ্জ জেলার অন্যতম ক্ষতিগ্রস্ত উপজেলা তাহিরপুরের নয়ানগর গ্রামের পরীবানু জানান, সকালে একটা দল এসে কিছু শুকনো খাবার দিয়ে গেছে, আর এখন রান্না করা খাবার পেলেন তারা। শহর থেকে প্রত্যন্ত অঞ্চল হওয়ায় তাদের এদিকে এর আগে ত্রাণ দিতে কেউ আসেননি।
ছবি: Mortaza Rashed/DW
দূরদুরান্ত থেকে নৌকায় ত্রাণ নিতে আসছেন
সরকারি এবং বেসরকারি উদ্যোগে বিভিন্ন ত্রাণবাহী ট্রলার অথবা স্পিডবোট নদীর মাঝামাঝি থাকাতেই লোকমুখে শুনে অনেকেই দূর থেকে নৌকা নিয়ে ত্রাণবাহী নৌকার কাছে চলে আসছেন। তবে বৈষম্য হতে পারে এই ভেবে কাউকেই এভাবে ত্রাণ দেওয়া হয়নি।
ছবি: Mortaza Rashed/DW
আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে মানবেতর জীবনযাপন
সুনামগঞ্জ জেলার বিশ্বম্ভরপুর, তাহিরপুর, জামালগঞ্জ, শিবগঞ্জ, শনির হাওর এলাকাগুলোর আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে ঘুরে দেখা যায় সেখানকার বন্যা উপদ্রুত মানুষেরা মানবেতর জীবনযাপন করছেন। ছোট একটি ঘরে ১০-১৫ জন বসবাস করছে। খাবারের সংকটের পাশাপাশি বিদ্যুৎ না থাকায় খাবার পানিরও সংকট তৈরি হয় সেখানে।
ছবি: Mortaza Rashed/DW
‘চকির উপ্রে চকি দিয়া থাকসি’
সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার নয়ানগর গ্রামের রুবিয়া আক্তার বলেন, ‘‘আমরার পরিবারে ৬ জন মানুষ। আমরা আশ্রয়কেন্দ্রে যাইতাম পারছি না। ঘরই চকির উপরে চকি দিয়া কোনরকম বাইচা আছিলাম। বন্যার স্রোতে বাড়ির সামনে পিছে ভাইঙ্গা লইয়া গেসে।’’
ছবি: Mortaza Rashed/DW
আশ্রয়কেন্দ্রে জায়গার সংকট
সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার আনোয়ারপুর গ্রামের জ্যোৎস্না বেগম জানান, বন্যার পানি বিপদজনকভাবে বাড়তে থাকায় স্বামী-সন্তানসহ কাছের এক আশ্রয়কেন্দ্রে গিয়েছিলেন তারা। কিন্তু আগে থেকে আশ্রয়কেন্দ্রটি মানুষের জায়গা হচ্ছিল না। তাই তারা আবার নিজ বসতবাড়িতে ফেরত এসেছেন।
ছবি: Mortaza Rashed/DW
ভ্রাম্যমাণ রান্নাঘর
বন্যায় সিলেট ও সুনামগঞ্জের বিভিন্ন এলাকা দূরবর্তী হওয়ায় নদীপথে একদিনে ফেরত আসা যায় না। তাই যেসব বেসরকারি উদ্যোগে ত্রাণ দেওয়া হচ্ছে, তারা ট্রলারেই রান্নার ব্যবস্থা করে নিয়েছেন। তারা টাটকা রান্না করা খাবার বন্যা উপদ্রুত এলাকার পরিবারগুলোর মাঝে বন্টন করে দিচ্ছেন।
ছবি: Mortaza Rashed/DW
15 ছবি1 | 15
পাউবোর আবহাওয়া ও বন্যা সতর্কীকরণ কেন্দ্রের বরাত দিয়ে নির্বাহী প্রকৌশলী জহিরুল ইসলাম বলেন, ‘‘গত ২৪ ঘণ্টায় ছাতকে ১৭৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত এবং সুনামগঞ্জ সদরে ১৯৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে৷ এ ছাড়া উজানেও ভারী বর্ষণ হচ্ছে৷ এ কারণে পানি বাড়ছে৷’’
এদিকে মঙ্গলবার রাত থেকে বুধবার ভোররাত পর্যন্ত সুনামগঞ্জে ভারী বর্ষণের ফলে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন ভয়াবহ বন্যায় বিপর্যস্ত মানুষ৷ বিভিন্ন এলাকার ভেসে ওঠা রাস্তাঘাট আবারও কিছুটা প্লাবিত হয়েছে৷
সুনামগঞ্জ হাওরের কৃষি ও কৃষক রক্ষা সংগ্রাম পরিষদের সদস্য সচিব অধ্যাপক চিত্তরঞ্জন তালুকদার বলেন, গত ১৬ জুন রাতের ভয়াবহ বৃষ্টি, ঝড় ও বজ্রপাত আমাদের ভিতরে চরম আতঙ্ক সৃষ্টি করে গেছে৷ আমরা দেখেছি, কয়েক ঘণ্টায় সবকিছু চোখের সামনে ডুবে গিয়ে মানুষকে অসহায় করে গেছে৷
‘‘এখন এই সময়ে বৃষ্টি ও ঝড় হলে আমাদের বুক কাঁপে৷ কয়েকদিন আগে বন্যা মোকাবেলার কোনো প্রস্তুতি ছিল না৷ প্রশাসনের উচিত শক্ত প্রস্তুতি রাখা৷’’
এদিকে সুনামগঞ্জের ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, এখনও ২৯৫টি আশ্রয়কেন্দ্রে ৬৪ হাজার বানভাসি মানুষ আছেন৷ যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবেলায় প্রশাসনের প্রস্তুতি রয়েছে৷
এনএস/কেএম (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)
কোম্পানীগঞ্জে বন্যাদুর্গতদের বেঁচে থাকার লড়াই
সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ছয়টি ইউনিয়নের প্রায় পৌনে দুই লাখ মানুষ এখনো পানিবন্দি। গত দুই দিনে বৃষ্টি কমলেও তাতে বন্যা পরিস্থিতির খুব বেশি উন্নতি হয়নি৷
ছবি: Rashed Mortaza/DW
প্লাবিত গ্রামের পর গ্রাম
এবারের বন্যায় কোম্পানীগঞ্জের শতাধিক গ্রাম এবং কয়েকশ হেক্টর আবাদি জমি পানিতে তলিয়ে গেছে। ভেসে গেছে মাছের ঘের। উপজেলার ছয়টি ইউনিয়নের সব গ্রামই পানির নীচে তলিয়ে গেছে বলে জানান জনপ্রতিনিধি এবং স্থানীয় বাসিন্দারা।
ছবি: Rashed Mortaza/DW
মসজিদ ডুবেছে, নামাজ হচ্ছে সড়কে
সিলেট-কোম্পানীগঞ্জ সড়কের বর্নি এলাকায় গিয়ে দেখা গেল, সেখানে সড়কে ওয়াক্তের নামাজ এবং মৃতের জানাজার নামাজ পড়া হচ্ছে। স্থানীয় বাসিন্দা আবুল কাশেম জানান, সড়কের পাশেই তাদের মসজিদ থাকলেও বন্যার পানিতে মসজিদটি ডুবে যাওয়ায় গত তিন দিন যাবত রাস্তাতেই নামাজ পড়তে হচ্ছে।
ছবি: Rashed Mortaza/DW
এখনো আছে বন্যার পানির চিহ্ন
কোম্পানীগঞ্জের দক্ষিণ রণিখাই ইউনিয়নের আন্দুরাকান্দি গ্রামে পানির উচ্চতা কমলেও এখনো সেখানে হাঁটু পানি। তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র সাব্বির মোল্লা তাদের ঘরের দেয়ালে পানির দাগ দেখিয়ে জানায়, পানি নেমেছে দুই দিনে প্রায় দেড় হাত, ঘরে পানি না থাকলেও উঠানে এখনো পানি আছে।
ছবি: Rashed Mortaza/DW
আরেক আতঙ্ক সাপ
উত্তর ও দক্ষিণ রণিখাই ইউনিয়নের মধ্যবর্তী একটি খাল পার হওয়ার সময় দেখা যায় একটি সাপ সাঁতরে উঁচু জায়গায় ওঠার চেষ্টা করছে। স্থানীয় ট্রলারের মাঝি হাবিবুর রহমান জানান, বন্যায় অনেক বাসাতেই সাপের দেখা মেলে। অনেক সাপ বিষধর আবার অনেকগুলো নির্বিষ।হাওরে দেখা মেলা সাপটি বিষধর দাবি করে স্থানীয়রা বলেন এটিকে তারা ‘আলোদ সাপ’ নামে চেনেন।
ছবি: Rashed Mortaza/DW
বাড়িতে ফেরা শুরু
সিলেট অঞ্চলে মে মাসে বন্যা হলেও গত ১৬ জুন আকস্মিক বন্যাতে এ অঞ্চলের মানুষ হতবিহ্বল হয়ে পড়েন। তাৎক্ষণিকভাবে ঘরবাড়ি ছেড়ে কোনোমতে প্রাণে বাঁচেন তারা। তবে গত দুইদিনে পানি কমতে শুরু করায় অনেকেই এখন বাড়িতে ফিরছেন।
ছবি: Rashed Mortaza/DW
চাল, ডাল পচছে
দক্ষিণ রণিখাই ইউনিয়নের আন্দুরাকান্দি গ্রামে ট্রলার থেকে নেমে দেখা গেল, এক বাড়ির উঠানে চৌকিতে আলু, পেঁয়াজ এবং নানা ধরনের শুকনো খাবার রোদে শুকাতে দেওয়া হয়েছে। পাশে বসে থাকা রমজান আলী জানান, বন্যার সময় অনেক কিছুই পানিতে থাকায় পচে যাওয়ার দশা হয়েছে, তাই বাড়িতে ফিরেই সেগুলো শুকাতে দিয়েছেন।
ছবি: Rashed Mortaza/DW
নিজ দায়িত্বেই আশ্রয়কেন্দ্রে
কোম্পানীগঞ্জের দক্ষিণ রণিখাই ইউনিয়নের ওয়ার্ড মেম্বার আবদুর রহমান বলেন, ‘‘বন্যার শুরুতে আমাদের তেমন কিছু করার ছিল না। মানুষ নিজ দায়িত্বেই আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে গিয়েছে। সরকারি ত্রাণ আসছে, আমরা জনপ্রতিনিধিরা এতদিন যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন ছিলাম, তবে সোমবার থেকে আমরা সমন্বয় করে সাধারণ মানুষকে সাহায্য সহযোগিতা করছি।’’
ছবি: Rashed Mortaza/DW
ভারতে আশ্রয় নেয়া গরু...
কোম্পানীগঞ্জ উত্তর রণিখাই ইউনিয়নের বিজয়পাড়ুয়া হাওড়া গ্রামের নাজির আহমেদ জানান, সপ্তাহখানেক আগে আকস্মিক বন্যা শুরু হলে তিনি তার পোষা তিনটি গরু ভারতের মেঘালয়ের পাহাড়ের নীচে বেঁধে রাখেন। পানি কিছুটা কমায় গরুগুলোকে তিনি বাড়িতে নিয়ে আসছেন৷
ছবি: Rashed Mortaza/DW
ত্রাণ বিতরণ
এবারের বন্যায় এখন পর্যন্ত সরকারি পর্যায়ের চেয়ে বিভিন্ন কর্পোরেট সংস্থা, বেসরকারি সংগঠন এবং ব্যক্তিগত উদ্যোগে ত্রাণ বিতরণই বেশি দেখা গেছে।
ছবি: Rashed Mortaza/DW
এখনো অনেক বাড়িঘর পানির নীচে
কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার উত্তর রণিখাই ইউনিয়নের বাসিন্দা এবং ট্রলারের মাঝি হাবিবুর রহমান জানান, অনেক বাড়িঘর থেকে পানি নেমে গেলেও যেগুলো একটি নিচু জমিতে ছিল, সেগুলো এখনো ছাদ সমান পানিতে। এখন বাড়ির ছাদ কিছুটা দেখা গেলেও বন্যার শুরুতে এগুলো চোখে দেখাই যায়নি।
ছবি: Rashed Mortaza/DW
গবাদিপশু নিয়ে বিপত্তি
সিলেটে আগে কখনো এমন বন্যা দেখেননি জানিয়ে বেতমুরা গ্রামের রণদা বিশ্বাস বলেন, ‘‘হুট করে বন্যার পানি ঢুকে পড়ায় আমরা ভয় পেয়ে যাই। বন্যার অভিজ্ঞতা না থাকায় সবার বাড়িতে নৌকাও নেই। আমরা কোনোমতে ছোট ডিঙ্গি নৌকায় উঠতে পারলেও গরু-ছাগলকে তো তোলা যায় না। খুব বিপদে ছিলাম আমরা সবাই।’’
ছবি: Rashed Mortaza/DW
আশ্রয়কেন্দ্রে হুড়োহুড়ি
উত্তর রণিখাই ইউনিয়নের রায়পুর গ্রামের রায়পুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রায় ২০টি পরিবার আশ্রয় নিয়েছে। ত্রাণ দেওয়ার ট্রলার কাছে ভিড়তেই ত্রাণ নিতে হুড়োহুড়ি লেগে যায়। এ অবস্থা সব আশ্রয়কেন্দ্রেই দেখা যায় বলে জানান ত্রাণ বিতরণে অংশ নেওয়া নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক স্বেচ্ছাসেবী।
ছবি: Rashed Mortaza/DW
ঘর উঁচু করেও লাভ হয়নি
উপজেলার উত্তর রণিখাই ইউনিয়নের বিজয়পাড়ুয়া হাওড়া গ্রামের বাসিন্দা আসমা বেগম বলেন, ‘‘আমাদের বসতবাড়ি অন্য অনেকের চেয়ে উঁচু করেই বানিয়েছিলাম, কিন্তু আমাদের বাড়িতেও ছাদ সমান পানি ছিল। এদিকে এভাবে বন্যা হবে আমাদের কারো ধারণাতেই ছিল না।’’
ছবি: Rashed Mortaza/DW
পানি নামছে
সিলেটের কোম্পানীগঞ্জের বঙ্গবন্ধু হাইটেক পার্ক এলাকার নিচু অংশ থেকে পানি পশ্চিম দিকে নেমে যাচ্ছে। তবে বৃষ্টি না হলে বন্যার পানি পুরোপুরি নামতে আরো হয়ত ১৫-২০ দিন লাগতে পারে বলে বলছেন স্থানীয়রা। তারা জানান, নদী এবং জলাশয়গুলো ভরে যাওয়ায় বন্যার পানি আটকে আছে, নামতে পারছে না দ্রুত।
ছবি: Rashed Mortaza/DW
সেনাবাহিনীর তৎপরতা
বন্যার পানিতে আটকে পড়া মানুষদের উদ্ধারে সিলেট এবং সুনামগঞ্জের বিভিন্ন উপজেলায় সেনাবাহিনীর ৭০০ জন সদস্য গত ১৭ জুন থেকে ব্যস্ত রয়েছেন। সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় সেনাবাহিনীর একটি স্পিডবোটকে ত্রাণ কার্যক্রম শেষে ক্যাম্পে ফিরে যেতে দেখা যায়।