গাড়ির ডিলাররা আজ হবু খদ্দেরদের ভার্চুয়াল রিয়্যালিটির মাধ্যমে নতুন গাড়ি দেখাচ্ছেন৷ গাড়ি ডিজাইন করার কাজেও ভিআর প্রযুক্তি অপরিহার্য হয়ে উঠেছে৷
বিজ্ঞাপন
গাড়ি বাণিজ্যে ভার্চুয়াল রিয়্যালিটি
03:06
আউডি-র আর-এইট স্পোর্টস কার: মডেলটির সবচেয়ে সরল সংস্করণের দাম পড়ে এক লাখ ছেষট্টি হাজার ইউরো৷ এ ধরনের গাড়ি তো আর সর্বত্র কিনতে পাওয়া যায় না৷ বার্লিনের আউডি-সিটি শো-রুমে আর-এইট মডেলটিকে অন্তত ডিজিট্যালি দেখা সম্ভব – ভার্চুয়াল রিয়্যালিটি হিসেবে৷
ঘরে বসেই বানানো যায় নতুন মডেলের গাড়ি
কোনো গাড়ি বানানো হয়েছে নিজের বাগানে৷ কোনোটি আবার নিজের ঘরে বসে এক ঘণ্টার মধ্যেই বানিয়ে বেরিয়ে পড়া যায় বেড়াতে৷ ছবিঘরে দেখুন এমন অভিনব এবং মজার পাঁচটি গাড়ি৷
ছবি: DW
সবচেয়ে কম গতির মজার এক গাড়ি
এই গাড়ির নাম ফারাডি ফারফাল্লা এফএফএক্স৷ এটি তৈরি করেছেন হানেস লাঙ্গেডার নামের এক শিল্পী৷ শিল্পী মনের মাধুরি মেশাতে গিয়ে গাড়িতে গ্যাস পেডালের জায়গায় তিনি ব্যবহার করেছেন বাইসাইকেলের পেডাল৷ গাড়ির মূল কাঠামোটা তৈরি করেছেন কার্ডবোর্ড দিয়ে৷ দেখতে ভালো এবং পরিবেশবান্ধব৷ তবে অনেকের মতে এটি গাড়ির-দুনিয়ায় সবচেয়ে মন্থর গতির, ফলে ব্যস্ত রাস্তায় এ গাড়ি চালাতে গেলে যানজট প্রায় অবশ্যম্ভাবী৷
ছবি: DW
ঘরেই বানান নতুন মডেলের গাড়ি
তিন বছর আগে ইটালির ওএসভেহিক্যাল কোম্পানি নিয়ে আসে এমন চমৎকার এক সুযোগ৷ অনলাইনে নির্দিষ্ট কয়েকটি মডেলের গাড়ি অর্ডার দিলে অনতিবিলম্বে বাড়ি পৌঁছে যাবে সব যন্ত্রপাতি, সেগুলো দিয়ে নিজের হাতে বানান গাড়ি এবং এক ঘণ্টার মধ্যেই স্টার্ট দিয়ে বেরিয়ে পড়ুন৷ ট্যাবি ইভিও মডেলের এই গাড়িটির দাম ১১০০ ইউরো বা ১২,৩৩০ ডলার৷
ছবি: www.osvehicle.com
সস্তায় দামি গাড়ি
ইটালির বডি শপ ব্যবসায়ী মোরেনো ফিলান্ডির দামি স্পোর্টস কারের খুব শখ৷ কিন্তু সাধ থাকলেও সেরকম গাড়ি কেনার সাধ্য নেই৷ তাই মার্সেডেস এসএল মডেলের একটি গাড়ি কিনে চারটি বছর নিজে খেটেখুটে তৈরি করেছেন এই স্পোর্টস কার৷
ছবি: DW
দ্য কসমর্টন
এটি তৈরি করেছেন ব্রিটিশ কার্পেন্টার পল বেকন৷ সময় লেগেছে ১৮ মাস৷ গাড়িটি দেখে চোধ ধাঁধিয়ে যায় অনেকের৷ অনেকেরই মনে হয়েছে, এটি যেন কোনো সায়েন্স ফিকশন মুভির জন্য তৈরি৷
ছবি: Imago/S. Geisler
বিমান থেকে গাড়ি
এই গাড়িটির ইঞ্জিন ৭৫০ অশ্বশক্তির৷ অনেকেই শুনে অবাক হতেন৷ পরে যখন জানতেন এটিতে জুড়ে দেয়া হয়েছে ১৯২০ সালের একটি বিমান এবং ১৯০৭ সালের একটি রেসিং কারের ইঞ্জিন, তখন বিস্ময়ের স্থান নিত কৌতূহল৷ এত শক্তিশালী ইঞ্জিনের গাড়ি না জানি কত গতিতে চলে! তবে ‘দ্য ব্রুটাস’ নামের এই গাড়ি সর্বোচ্চ গতিতে চললে কাছে থাকা বিপজ্জনক৷ স্টার্ট নেয়ার সময় নাকি আগুনের হলকা দেখা যায় এবং ছোটে বিকট শব্দ করে!
ছবি: picture alliance/dpa/Auto & Technik Museum Sinsheim
5 ছবি1 | 5
প্রশিক্ষণার্থী ইয়াকব মার্টেন্স এই প্রথমবার ভার্চুয়াল রিয়্যালিটি চশমা পরেছেন৷ এভাবে তিনি গাড়িটাকে ভিতর ও বাইরে থেকে পরীক্ষা করতে পারবেন – এবং বিভিন্ন ধরনের পরিস্থিতিতে৷ ইয়াকব অভিজ্ঞতা হল, ‘‘ধীরে ধীরে শুরু করতে হয়, যাতে ব্যাপারটা ধাতস্থ হয়৷ তারপর একসময় ওর ভিতরে ঢুকে যাওয়া যায় – নিঃসন্দেহে একটা দারুণ অভিজ্ঞতা, গাড়িটাকে ভার্চুয়াল রিয়্যালিটির মাধ্যমে একেবারে নিজের চোখের সামনে দেখা৷''
আউডি-র লক্ষ্য হল, গ্রাহকরা যাতে তাদের পছন্দ মতো খুঁটিনাটি বদলে নিয়ে নিজেদের মনের মতো গাড়ি সৃষ্টি করতে পারেন৷
আউডি-সিটির মার্কেটিং প্রধান মানফ্রেড ককমান বললেন, ‘‘ভার্চুয়াল রিয়্যালিটির ফলে গ্রাহকরা আরো ঘন ঘন শো-রুমে আসবেন, এছাড়া গাড়িতে বাড়তি ফিচার বিক্রি বাড়বে বলে আউডি আশা করছে৷ সব আউডি ডিলারের পক্ষে তো আর সব মডেল স্টকে রাখা সম্ভব নয়৷''
এই ডিলারশিপে নাকি আগের চেয়ে ২৫ শতাংশ বেশি ফিচার বিক্রি হচ্ছে – যদিও শীঘ্রই সব ডিলারশিপে ভার্চুয়াল রিয়্যালিটি চশমা থাকবে, কাজেই তা থেকে কোনো বিশেষ সুবিধা পাওয়া যাবে না বলে সেলসম্যানদের ধারণা৷
সেলস থেকে ডিজাইন
ডাইমলার কোম্পানিতে কর্মীরাই ভিআর প্রযুক্তি ব্যবহার করছেন, যেমন স্টুটগার্টে ডাইমলারের ডিজাইন সেন্টারে৷ নিজেদের ডিজাইন করা এক আগামী পৃথিবীতে ডাইমলারের ডিজাইনার আর ইঞ্জিনিয়াররা ভার্চুয়াল রিয়্যলিটি চশমা পরে পরীক্ষা করে দেখছেন, চালকবিহীন এফও-১৫ যানটি থেকে কী ধরনের আলোক ও শব্দসংকেত দিয়ে পথচারীদের সতর্ক করা যেতে পারে৷
জার্মানির গর্ব ‘অটোবান’
জার্মানি হলো দুনিয়ার একমাত্র দেশ, যেখানে মোটরওয়েতে কোনো স্পিড লিমিট নেই - যদি না আলাদা কোনো নির্দেশনা থাকে৷
ছবি: DW/Maksim Nelioubin
নাম ‘অটোবান’
অটোবানে শুধু গাড়ি চলতে পারে৷ অটোবানে ঘণ্টায় ৬০ কিলোমিটারের নীচে গাড়ি চালানোর নিয়ম নেই (যদি না নির্দেশ দেওয়া থাকে)৷ অটোবানে সাইকেল, মোপেড বা ট্রাক্টর
চালানো নিষেধ৷ এবং স্বভাবতই অটোবানে কোনো ট্রাফিক লাইট থাকে না৷
ছবি: picture-alliance/dpa
প্রথম অটোবান
কোলন আর বন শহরের মধ্যে ‘এ ৫৫৫’ অটোবানটি তৈরির কাজ শুরু হয় ১৯২৯ সালে৷ কোলনের মেয়র কনরাড আডেনাউয়ার তা উদ্বোধন করেন ১৯৩২ সালে৷ ১৯৩৩ সালে হিটলার ক্ষমতায় এসে দাবি করেন, অটোবান তৈরির পরিকল্পনা তাঁর মাথাতেই প্রথম এসেছিল৷
ছবি: DW/M. Nelioubin
কোনো গতিসীমা নেই
জার্মানি বিশ্বের একমাত্র দেশ যেখানকার মোটরওয়ের একটা বড় অংশে কোনো গতিসীমা নেই৷ তবে সাধারণভাবে ঘণ্টায় ১৩০ কিলোমিটার গতিতে গাড়ি চালানোর পরামর্শ দেওয়া হয়৷ অটোবান মেরামতি, অটোবানে ঢোকা কিংবা বেরনোর রাস্তা, দুর্ঘটনা ঘটার বর্ধিত আশঙ্কা ইত্যাদি কারণে অবশ্য কিছুক্ষেত্রে গতিসীমা নির্ধারিতও থাকে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/G. Breloer
১৩,০০০ কিলোমিটার অটোবান
জার্মানির সব অটোবান জোড়া দিলে ক্যালিফোর্নিয়ার স্যান ডিয়েগো থেকে জার্মানির হামবুর্গ অবধি রাস্তা তৈরি হয়ে যাবে৷ জার্মানিতে ‘এ ৭’ অর্থাৎ সাত নম্বর অটোবানই সবচেয়ে দীর্ঘ, মোট ৯৬৩ কিলোমিটার৷
ছবি: Imago/J. Huebner
নামের আগে ‘এ’
‘এ’ হলো অটোবান কথাটির আদ্যক্ষর৷ তার সঙ্গে যুক্ত হয় একটি সংখ্যা, এই দু’য়ে মিলে অটোবানের নাম, যেমন ‘এ ৮’৷ আন্তঃ-জার্মানি গুরুত্বপূর্ণ অটোবানগুলির নম্বর ১ থেকে ৯-এর মধ্যে হয়; আঞ্চলিক অটোবানগুলি দুই সংখ্যার, যেমন বার্লিন আর হামবুর্গের মধ্যে ‘এ ২৪’৷ আরো ছোট অটোবানগুলি তিন সংখ্যারও হতে পারে৷ উত্তর-দক্ষিণ অটোবানগুলি সাধারণত বেজোড় আর পশ্চিম-পুবেরগুলি জোড় সংখ্যার হয়ে থাকে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Strauß
মোটরওয়ে, না রানওয়ে?
পরিভাষায় বলে হাইওয়ে স্ট্রিপ, অর্থাৎ দূরপাল্লার রাস্তার এমন একটা অংশ, যেখানে ছোটখাট বিমান অবতরণ করতে পারে৷ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় অটোবানকে এভাবে কাজে লাগানো হয়েছিল; ঠাণ্ডা লড়াইয়ের আমলে উভয় জার্মানিতেই এ ধরনের অটোবান ল্যান্ডিং স্ট্রিপ প্রস্তুত করা হয়েছিল৷
ছবি: picture-alliance/dpa/D. Karmann
যানচলাচল বাড়া মানেই যানজট
জার্মান অটোমোবাইল ক্লাব এডিএসি’র পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০১৫ সালে জার্মানির অটোবানগুলিতে ৫,৬৮,০০০ যানজট হয়, যার মোট দৈর্ঘ্য ছিল প্রায় ১১ লাখ কিলোমিটার৷ জ্যামে আটকা পড়ে মানুষজনের ৩,৪১,০০০ ঘণ্টা সময় নষ্ট হয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/D. Friederichs
অটোবানে গাড়ি দুর্ঘটনা মানে...
...একাধিক গাড়ির পর পর এসে ধাক্কা লাগার সম্ভাবনা৷ এ ধরনের সবচেয়ে ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটে ১৯৯০ সালের অক্টোবর মাসে, যখন ঘন কুয়াশার মধ্যে ১৭০টি গাড়ির ‘পাইল-আপ’ হয়: প্রাণ হারান দশজন, আহত হন ১২৩ জন৷ ২০০৯ সালেও ২৫৯টি গাড়ির এভাবে একসঙ্গে ধাক্কা লাগে, কিন্তু আশ্চর্য, সেবার কেউ প্রাণে মারা যাননি৷
ছবি: picture alliance/dpa/S. Iwersen
টোল ট্যাক্স
২০০৫ সাল থেকে জার্মানিতে ভারী লরি ও ট্রাকের জন্য ‘টোল’ আদায় করা শুরু হয়েছে৷ ইউরোপের নানান দেশ থেকে বিপুল সংখ্যক ট্রাক জার্মানির অটোবান হয়ে ট্রানজিট করে, যার ফলে জার্মান অটোবানের রক্ষণাবেক্ষণের খরচ বাড়ে৷ সেটা উশুল করার জন্য ‘টোল’ বসানোর সিদ্ধান্ত নেন জার্মান সরকার৷
ছবি: picture-alliance/dpa
অটোবানের সুবিধা
মুখ্য চ্যানেলগুলোর পাশে বিপদে-আপদে গাড়ি দাঁড় করানোর জায়গা থাকে৷ কয়েক কিলোমিটার পর পর থাকে এমার্জেন্সি টেলিফোন৷ প্রত্যেক ২০ থেকে ৪৫ মিনিট ড্রাইভের পর পাওয়া যায় (অটোবানের লাগোয়া) একটি পেট্রোল পাম্প, যেখানে টয়লেট, মোটেল ও রেস্টুরেন্টেরও ব্যবস্থা থাকে৷
ছবি: DW/Maksim Nelioubin
10 ছবি1 | 10
মার্সিডিজ ডিজাইনার মার্ক ননেনমাখার বললেন, ‘‘ভার্চুয়াল রিয়্যালিটি হল প্রায় বাস্তব পরিস্থিতিতে আমাদের ধ্যানধারণাগুলো পরীক্ষা করার একটা দারুণ সুযোগ৷ দূর থেকে, একটা দ্বিমাত্রিক স্ক্রিন ব্যবহার করে৷ অথচ কীভাবে যেন তা বাস্তব বলে মনে হয়৷''
ডিজাইনাররা বিভিন্ন মডেলের ভিতরটা ডিজাইন করার জন্যও ভিআর প্রযুক্তি ব্যবহার করে থাকেন৷ এ পর্যন্ত শুধুমাত্র একটি লোকেশানেই পরিবর্তনগুলো করা এবং দেখা সম্ভব৷ ডাইমলার ডিজিটাল ডিজাইন-এর প্রধান ভেরা স্মিট বললেন, ‘‘আপাতত আমাদের সামনে একটা বিরাট চ্যালেঞ্জ হল, সারা বিশ্বে আমাদের যে বিভিন্ন স্টুডিও আছে – ক্যালিফর্নিয়ায়, চীনে ও জার্মানিতে – সেগুলিকে কীভাবে সিনক্রোনাইজ করা যায়৷ যুক্তরাষ্ট্রে আমাদের স্টুডিও-য় ডিজাইনাররা ভিআর চশমা চোখে দিয়ে জার্মানির পরিবেশ দেখতে চান৷ তখন আমাদের রদবদল করতে হয়৷''
ভেরা স্মিট যতো শীঘ্র সম্ভব বিশ্বব্যাপী ডাইমলারের স্টুডিও নেটওয়ার্কটিকে সিনক্রোনাইজ করতে চান৷ দৃশ্যত ভার্চুয়াল রিয়্যালিটি শীঘ্রই ডাইমলার গ্রুপের অন্যান্য বিভাগেও চালু হতে চলেছে৷