শারীরিক দিক থেকে মানুষ ও পশুর শরীরের সঙ্গে কি খুব বেশি পার্থক্য রয়েছে? বিজ্ঞানীরা সম্প্রতি ভালুকের শরীরে এমন কিছু বৈশিষ্ট্য খুঁজে পেয়েছেন, যার রহস্য ভেদ করলে সম্ভবত মানুষেরও উপকার হতে পারে৷
বিজ্ঞাপন
স্টকহোমের চিড়িয়াখানায় বিশ্বের সেরা হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ, কিডনি বিশেষজ্ঞ ও পশু চিকিৎসকরা মিলিত হয়েছেন৷ ভিয়েনার পশু চিকিৎসক ইওহানা পাইনার ও বোস্টনের হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ বারবারা ন্যাটারসন-হরোভিৎস ভালুকের গুণাগুণ দেখে মুগ্ধ৷
স্টকহোমের কিডনি বিশেষজ্ঞ পেটার স্টেনভিংকেলও সেই দলেই পড়েন৷ ভালুক হাইবারনেশন বা শীতকালীন ঘুমের সময় শুধু সন্তানের জন্মের পর তাকে স্তন্যদান করে না, প্রায় ছয় মাসের জন্য এই প্রাণী মলমূত্র ত্যাগ না করেই থাকতে পারে৷ অথচ এর ফলে কিডনির কোনো রোগ হয় না৷ পশু চিকিৎসক হিসেবে ইওহানা পাইনার মনে করিয়ে দেন, ‘‘হাইবারনেশনের সময় ভালুকের অসাধারণ বৈশিষ্ট্য দেখা যায়৷ যেমন পেশির ভর কমে না, শরীরে মূত্র তৈরি হয় না, হাড়গোড়ের ঘনত্ব দুর্বল হবার বদলে বরং শক্তিশালী হয়ে ওঠে৷ কিডনিরও কোনো ক্ষতি হয় না৷''
এর ফলে পেটার স্টেনভিংকেলের মতো কিডনি বিশেষজ্ঞদের কৌতূহল আরও বেড়ে গেছে৷ তিনি বলেন, ‘‘কিডনির ডাক্তার হিসেবে জানতে অবাক লাগে যে ভালুকের শরীরে কিডনি রোগীদের মতো কোনো জটিলতা দেখা যায় না৷ অস্টেওপোরোসিস, হাড়ের ক্ষয়ের কোনো লক্ষণ নেই৷ শুধু পেশির সামান্য ক্ষয় হয়৷ অ্যাথরোসক্লেরোসিসেরও কোনো চিহ্ন নেই৷ অথচ দীর্ঘস্থায়ী কিডনির রোগ থাকলে মানুষের মধ্যে এমনটা প্রায়ই দেখা যায়৷''
ইঁদুরের কাছ থেকে শিখছেন চিকিৎসকেরা
মানুষের মনের নানা দিকের নতুন সব তথ্য উন্মোচন করছে ইঁদুর নিয়ে করা একটি গবেষণা৷ বিস্তারিত ছবিঘরে...
ছবি: Imago/CTK Photo
নতুন গবেষণা
বিভিন্ন প্রাণীর মানসিক আচরণ পরীক্ষা করতে আলোন চেনের নেতৃত্বে একদল গবেষক ইঁদুরদের পর্যবেক্ষণ করা শুরু করেছেন৷ নিউরোবায়োলজিস্টদের এই দলের কাজ হচ্ছে কিছু ইঁদুরকে বিভিন্ন দলে ভাগ করে তাদের আচরণ লক্ষ্য করা৷ বিজ্ঞানীদের বিশ্বাস, এই গবেষণা থেকে বেরোবে নতুন তথ্য৷
ছবি: Axel Griesch, Max-Planck-Institut für Psychiatrie
কোথায় হচ্ছে এই গবেষণা?
মিউনিখ শহরের মাক্স প্লাঙ্ক ইন্সটিটিউট অফ সাইকিয়াট্রি ও ইসরায়েলের রেহভোট শহরের ভাইসমান ইন্সটিটিউট অফ সায়েন্সের দুটি গবেষণাগারে চলছে এই গবেষণা৷ সম্প্রতি, ৯ নভেম্বর, এই গবেষণার প্রাথমিক ফলাফল প্রকাশিত হয় ‘নেচার’ পত্রিকায়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M. & A. Rowe
কী জানা যাচ্ছে এখন পর্যন্ত?
গবেষণা চালু হবার কয়েক দিনের মাথায় দেখা যায়, প্রায় ৬০ রকমের আচরণে ব্যস্ত ইঁদুরগুলি৷ এর মধ্যে রয়েছে নিজের প্রয়োজনে অন্য ইঁদুরের সাথে নম্র ব্যবহার করা, খাবার ভাগাভাগি করা, লুকানো ও নতুন জায়গা আবিষ্কার করতে চাওয়ার মতো আচরণ৷
ছবি: picture-alliance/Wildlife/A.Visage
নম্বর পাচ্ছে ইঁদুর!
অন্য ইঁদুরের প্রতি ব্যবহার কেমন, তা নির্ধারণ করে দিচ্ছে কত নম্বর পাবে একটি ইঁদুর৷ এই নম্বরের ভিত্তিতে আলাদা আলাদা বিভাগে বিভক্ত করা হয় ইঁদুরদের৷ প্রাপ্ত নম্বরের ভিত্তিতে তৈরি করা হয়েছে ‘পার্সোনালিটি স্কেল’ বা ব্যক্তিত্ব নির্ণায়ক মান৷ এই মান বলে দিতে পারে কোন ইঁদুরের মানসিক অবস্থা কেমন৷ নম্বর থেকে জানা যাচ্ছে কোন ইঁদুর অবসাদগ্রস্ত, মানসিক বিকারগ্রস্ত বা কোন ইঁদুরটি চাপা বা খোলা মনের৷
ছবি: Colourbox/G. Dolgikh
মানুষের মনের খোঁজও আছে
বিজ্ঞানী দলের এক সদস্য ডঃ ওরেন ফোরকোশ জানান, এই ধরনের গবেষণার ফলাফলের সাথে শিশুদের মনোজগতের অনেক মিল পাওয়া যায়৷ এই গবেষণা শিশুদের নিয়ে করা গেলে তা বলে দিতে পারে শিশুর মধ্যে কোন ধরনের মানসিক আচরণের ঝোঁক রয়েছে৷
ছবি: Imago/CTK Photo
মানসিক রোগের জন্য নতুন পথ
ডঃ ফোরকোশ মনে করছেন, ব্যক্তিনির্দিষ্ট এসব তথ্যের উপর ভিত্তি করে মনোবিজ্ঞানীরা কোনো এক নির্দিষ্ট ব্যক্তির প্রয়োজনীয় চিকিৎসার পথ বের করতে পারবেন৷ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, বিশ্বের মোট ৩০ কোটি মানুষ অবসাদগ্রস্ত৷ তাদের চিকিৎসায় এই নতুন ধরনের ‘পার্সোনালাইজড থেরাপি’ বা ব্যক্তিনির্দিষ্ট চিকিৎসা কাজে লাগতে পারে৷
২০০৫ সালে বিষয়টি প্রথম চোখে পড়েছিল৷ লস অ্যাঞ্জেলেস শহরের চিড়িয়াখানা এক হৃদরোগ বিশেষজ্ঞকে ডাক দেয়৷ তিনি হৃদযন্ত্রের সমস্যা থাকা বিভিন্ন প্রাণীর চিকিৎসা শুরু করেন৷ সে সময়ে চিড়িয়াখানার নিজস্ব পশু চিকিৎসক তাঁকে সরাসরি প্রাণীদের পরীক্ষা না করার অনুরোধ করেছিলেন৷ কারণ সে ক্ষেত্রে আচমকা মানসিক চাপের কারণে হৃদযন্ত্র বন্ধ হয়ে প্রাণীর মৃত্যু হতে পারে৷ হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ হিসেবে বারবারা ন্যাটারসন-হরোভিৎস বলেন, ‘‘বহু দশক ধরে প্রাণীদের ক্ষেত্রে ‘ক্যাপচার মাইয়োপ্যাথি' নিয়ে জল্পনাকল্পনা রয়েছে৷ নব্বইয়ের দশকের শেষে মানুষের ক্ষেত্রে এমন রোগ নির্ণয় করা হয়েছিল৷ অর্থাৎ অনেক দশক ধরে এ বিষয়ে অভিজ্ঞতা ও জ্ঞান অর্জনের সুযোগ নষ্ট হয়েছে৷ কারণ আমরা নিজেদের পশু হিসেবে দেখি না৷ প্রাকৃতিক জগতে আমরা পশুদের মর্যাদা কমিয়ে দেই৷''তিনি একাই এমন আদানপ্রদানের সন্ধান করছেন না৷ পেটার স্টেনভিনকেল ও ইওহানা পাইনারও তাঁর সঙ্গে কিডনির রোগ নিয়ে গবেষণা চালাচ্ছেন৷ তাঁরা চিড়িয়াখানার ভালুক এবং প্রকৃতির কোলে মুক্ত ভালুকের কিডনি ও রক্ত পরীক্ষা করেছেন৷ তাঁরা জানতে পেরেছেন, যে মুক্ত ভালুকের খাদ্যাভ্যাস অন্যরকম হয়৷ চিড়িয়াখানার ভালুকের তুলনায় সেগুলির স্বাস্থ্যও বেশি ভালো থাকে৷ কিন্তু সব ভালুকেরই কিডনির অবস্থা মোটামুটি ভালো৷
সম্ভবত ভালুকের খাদ্যাভ্যাস এ ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা পালন করে৷ সব ভালুকের অন্ত্রেই গবেষকরা খুবই স্বাস্থ্যকর গাট ফ্লোরা বা ব্যাকটেরিয়ার উন্নত বাস্তুসংস্থান খুঁজে পেয়েছেন৷ প্রায় ৮০ শতাংশ ভালুকই নিরামিষাশী৷ অর্থাৎ এই প্রাণী অনেক পরিমাণ ঘাসপাতা, উদ্ভিদের অংশ ও বেরি জাতীয় ফল খায়৷ পেটার স্টেনভিংকেল বলেন, ‘‘ভালুক বিশাল পরিমাণ খেতে পারে, প্রায় সবই খায়৷ তবে বিলবেরি ও লিংগনবেরি এই প্রাণীর প্রিয় খোরাক৷ বিশেষ করে আগস্ট ও সেপ্টেম্বর মাসে ভালুক যে বিশাল পরিমাণ বেরি খায়, তার বিপাকীয় প্রভাব আছে বলে আমার ধারণা৷ অন্যান্য গবেষণা থেকে আমরা জানি, যে হাড়ের জন্য এটা উপকারী এবং এর ফলে হৃদযন্ত্রের স্বাস্থ্যেরও উন্নতি হয়৷''
গ্রীষ্মের শেষ ভাগে ভালুক দিনে প্রায় দুই লাখ বেরি খায়৷ গবেষকদের ধারণা, বেরি ফলের লাল বা নীল রংয়ের জন্য অ্যান্থোসায়ান নামের যে পদার্থ দায়ী, সেটির কারণেই মুক্ত ভালুকদের কিডনির স্বাস্থ্য এত ভালো৷ সেই পদার্থ মানুষের হৃদযন্ত্র ও রক্ত সঞ্চালন সংক্রান্ত রোগ প্রতিরোধ করতে পারে বলে ধারণা করা হয়৷
নিকোলেটা রেনৎস/এসবি
ইউরোপের দারুণ কিছু চিড়িয়াখানা
দৃষ্টিভঙ্গি এবং ব্যবস্থাপনার গুণে সব কিছুই ভিন্ন মাত্রা পায়৷ ইউরোপের কিছু চিড়িয়াখানা দেখলেও সে-কথা মনে হয়৷ ছবিঘরে থাকছে এমন কিছু চিড়িয়াখানার কথা, যেগুলো বারবার দেখতে ইচ্ছে করে৷
ছবি: picture-alliance/ZB/A. Lander
টিয়ারপার্ক হাগেনবেক
জার্মানির হামবুর্গের এই চিড়িয়াখানাটির প্রতিষ্ঠাতা কার্ল হাগেনবেক৷ তাই এর নামও টিয়ারপার্ক হাগেনবেক৷ জার্মান ভাষায় টিয়ার মানে প্রাণী৷ এক সময় বিশ্বের সব চিড়িয়াখানাতেই খাঁচায় পুরে রাখা হতো প্রাণীদের৷ ১৯০৭ সালে হাগেনবেকই প্রথম বেষ্টনীতে ঘেরা পরিখায় প্রাণীদের রাখা শুরু করেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/D. Bockwoldt
জুম এরলেবনিসভেল্ট
জার্মানির আরেক শহর গেলজেনকির্শেনের এই চিড়িয়াখানাটিতে রয়েছে একদিনে আলাস্কা, আফ্রিকা বা এশিয়ার আদলে গড়া প্রাকৃতিক পরিবেশে অনেক প্রাণী দেখার সুযোগ৷
ছবি: picture-alliance/dpa/R. Weihrauch
বার্লিনের জুয়োলজিক্যাল গার্ডেন
জার্মানির এই চিড়িয়াখানায় রয়েছে এক হাজার তিনশ প্রজাতির ২০ হাজারেরও বেশি প্রাণী৷ ওপরের ছবির মেরু ভালুকের ছানাটি এই চিড়িয়াখানার অন্যতম আকর্ষণ৷ ওর নাম হ্যার্থা৷ বার্লিনের ফুটবল ক্লাব হ্যার্থা বার্লিন থেকেই ওর নাম রাখা হয়েছে হ্যার্থা৷ ওর স্পন্সরও হ্যার্থা বার্লিন৷ ভালুক ছানা হ্যার্থাও এখন ফুটবল খেলে৷ চিড়িয়াখানায় গেলেই দেখবেন ও ফুটবলে লাথি মেরে মেরে ঘুরে বেড়াচ্ছে৷
ছবি: Imago/A. Hilse
আলভেটার জু
জার্মান ভাষায় আলভেটার মানে সব আবহাওয়া৷ মিউনিখের এই চিড়িয়াখানা শীত-গ্রীষ্ম সব মৌসুমেই ঘুরে দেখার সুব্যবস্থা রয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/B. Thissen
হাইমাট-টিয়ারপার্ক ওল্ডারডিসেন
এই চিড়িয়াখানাটিও জার্মানিতে৷ বিলেফেল্ডের এই চিড়িয়াখানা ২৪ ঘণ্টা খোলা থাকে এবং এর ভেতরে যেতে কোনো টিকিট কাটতে হয় না৷
ছবি: picture-alliance/dpa/F. Gentsch
টিয়ারগার্টেন শ্যোনব্রুন
বিশ্বের সবচেয়ে প্রাচীন চিড়িয়াখানা অস্ট্রিয়ার ভিয়েনা শহরের এই টিয়ারগার্টেন শ্যোনব্রুন৷ ১৭৫২ সালে প্রতিষ্ঠিত এ চিড়িয়াখানা প্রথম দর্শনার্থীদের মাঝে সাড়া ফেলেছিল ১৮২৮ সালে৷ সে বছরই প্রথম নিয়ে আসা হয় জিরাফ৷ শীতের দেশ বলে কোনো প্রাণীকে সারা বছর খোলা জায়গায় রাখা যায় না৷ তাই জিরাফের উপযুক্ত উচ্চতার আবাস গড়তে নিতে হয়েছিল বিশেষ উদ্যোগ৷ জিরাফ দেখতে রীতিমতো দর্শনার্থীর ঢল নেমেছিল তখন৷
ছবি: picture-alliance/imageBROKER/G. Flegar
এডিনবার্গ জু
এডিনবার্গের এই চিড়িয়াখানার বড় আকর্ষণ নানা ধরনের পেঙ্গুইন৷এই চিড়িয়াখানাই প্রথম পেঙ্গুইন রাখা শুরু করে৷ এখনো সেই ঐতিহ্য ধরে রেখেছে তারা৷পেঙ্গুইনদের প্যারেড দেখতে প্রতি বছর প্রচুর দর্শক ভিড় করে সেখানে৷
ছবি: picture-alliance/empics/J. Barlow
লোরো প্রাক টেনেরিফ
স্পেনের টেনেরিফ দ্বীপের এই চিড়িয়াখানার প্রতিষ্ঠাতা জার্মানির ভল্ফগাং কিসলিং৷ শুরুতে সেখানে শুধু তোতা পাখি রাখা হতো৷ বিভিন্ন প্রজাতির তোতা পাখি এখনো এই চিড়িয়াখানার অন্যতম আকর্ষণ৷