চলছে বইমেলা৷ আসছে বসন্ত উৎসব আর ভ্যালেন্টাইনস ডে৷ সব মিলিয়ে ঢাকা শহরের তরুণ-তরুণীদের জন্য আনন্দের খবর৷ ব্লগ আর ফেসবুকে সেই আমেজ পাওয়া যাচ্ছে এখনই৷
বিজ্ঞাপন
আমারব্লগে মাহবুবুল আলম ‘‘ভ্যালেন্টাইনস ডে এখন আমাদের জীবনেরও অনুষঙ্গ'' শিরোনামে দীর্ঘ একটি পোস্ট দিয়েছেন৷ সেখানে তিনি এই দিবসের ইতিহাস থেকে শুরু করে নানা বিষয় তুলে এনেছেন৷ তিনি মনে করেন, ভ্যালেন্টাইনস ডে এখন আর কেবল পশ্চিমা বিশ্বের কোনো সংস্কৃতি বা ঐতিহ্য নয়৷ এ দিবসটি এখন বাঙালি তথা বাংলাদেশের মানুষের জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ৷ ‘‘...এর গুরুত্ব এখন আর আমাদের দেশের প্রেমিক-প্রেমিকার মধ্যেই সীমাবব্ধ নেই, এটি এখন বিবাহিত প্রৌঢ়-যুবা-নবপরিণীতাদের কাছেও ঘটা করে পালনযোগ্য দিন হিসাবে গণ্য হওয়া শুরু হয়েছে৷... এখন রীতিমতো ক্যালেন্ডারে দাগ কেটে এ দিনটির অপেক্ষায় থাকে মানুষ৷''
মাহবুবুল আলম বলছেন, বাংলাদেশের ক্ষেত্রে ভালোবাসা দিবসের সময়টা একটা নতুন মাত্রা যোগ করেছে৷ কেননা এই দিবসটা এমন সময়ে পালিত হয় যখন বাংলাদেশে বসন্ত ঋতুর আগমন ঘটে৷ বসন্ত ঋতুর ক্ষণগণনা শুরু হয় ১৩ ফেব্রুয়ারি থেকে, যার একদিন পর অর্থাৎ ১৪ ফেব্রুয়ারি ভ্যালেন্টাইনস ডে৷ ‘‘একদিন আগে পরে এই দুইটি দিন উদযাপিত হওয়ায় আমাদের দেশের যুবক-যুবতীদের উৎসব সংস্কৃতিতে মহাউৎসবের রূপ পেয়েছে ভ্যালেন্টাইনস ডে৷ আর আমাদের দেশের রাজধানী ঢাকার যুবক-যুবতীদের কাছে এ দিনটি আরো উৎসবের আমেজ পায় চলমান অমর একুশের বইমেলার কারণে৷''
এই ব্লগার মনে করেন, মোবাইল ফোন বা অবাধ তথ্যপ্রযুক্তির যুগে প্রেম ভালোবাসার ক্ষেত্রে যোগাযোগের বিষয়টি সহজলভ্য হলেও পাল্টে যাচ্ছে ভালোবাসার ধরন ও সংজ্ঞা৷ ‘‘একদার পবিত্র ভালোবাসার ঘরে প্রবেশ করছে যৌনতা৷ প্রেমের বাজারে এখানে প্রতারণা হচ্ছে প্রতিনিয়তই৷ এক একজন প্রেম করছে একাধিক নারী-পুরুষের সাথে৷''
এদিকে সামহয়্যার ইন ব্লগে মঞ্জুর চৌধুরী ‘‘ভালোবাসা দিবসে অতি অবশ্যই যা করবেন'' শিরোনামে একটি পরামর্শমূলক পোস্ট দিয়েছেন৷ তিনি বলতে চেয়েছেন, সবার উচিত নিজেদের নিয়ে সন্তুষ্ট থাকা৷ বিভিন্ন উদাহরণ দিয়ে তিনি বিষয়টা সকলকে বোঝানোর চেষ্টা করেছেন৷ যেমন তিনি লিখেছেন, ‘‘...নারী পুরুষ দুই পক্ষেরই সৌন্দর্য্যের প্রতি আকর্ষণ থাকাটা একটি জন্মগত স্বভাব৷ খুবই স্বাভাবিক এবং তাতে কোনো দোষ নেই৷ ঠোঁটের উপর সুন্দরবন এবং কপালের উপর সাহারা মরুভূমির অধিকারী পুরুষ যেমন জীবনসঙ্গিনী হিসেবে ঐশ্বরিয়া রাইকে চায়, তেমনি মুখে বিশাল বিশাল আচিলওলা, মোটামুটি পর্বতাকার মেয়েটিও ঋত্বিক রোশানের স্ত্রী হতে চায়৷ সমস্যা ঘটে তখন, যখন বিয়ের পরেও তাদের এই আপশোস যেতে চায় না৷''
জার্মানিতে সব উপলক্ষ্যতেই তাজা ফুল
ফুল কিছুক্ষণের জন্য হলেও মন ভালো করে
ছবি: picture alliance/dpa Themendienst
ফুল কে না ভালোবাসে?
হ্যাঁ, ফুল কম বেশি সবারই পছন্দ, তবে জার্মানিতে সুখ, দুঃখ, পারিবারিক কোনো আচার-অনুষ্ঠান বা রাজনীতির কোনো সাফল্যের খবরে ফুল দিয়ে অভিনন্দন বা সমবেদনা জানানো হয়৷ তবে কি উপলক্ষ্য তার ওপর নির্ভর করে ফুলের রং, তোড়া বা সাজানো৷
ছবি: dpa
জন্ম থেকে মৃত্য – সব অনুষ্ঠানেই ফুল
সুন্দর এই ভুবনে আসার পর থেকেই ফুলের সাথে সম্পর্ক গড়ে ওঠে বাচ্চাদের৷ বাচ্চা বয়স থেকেই এদের শেখানো হয় নিজের বা অন্যের বাগানে ফুল ছেঁড়া নিষেধ৷ তাই কাউকে দেওয়ার জন্য ফুলের দোকান থেকে ফুল কিনতে হয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa
ফুল যেন মেয়েদেরই প্রাপ্য
আজ এই মেয়েটির মায়ের জন্মদিন, বাবা নিশ্চয়ই বাড়ি ফেরার পথে তার প্রিয় মামনির জন্য ফুল নিয়ে আসবে৷ কিন্তু তবু সে যে নিজে ফুল দিতে চায় মাকে৷ মা যে ফুল বড্ড ভালোবাসে! কিন্তু এতটুকু বাচ্চার পক্ষে কী করে তা সম্ভব? উপায় না দেখে বাড়ির সামনে থেকেই নিজে থেকে গজে ওঠা ফুলগুলো সে তুলে নিচ্ছে মায়ের জন্য৷
ছবি: pcture alliance/empics
প্রথমদিন স্কুলে যাওয়া
জার্মানিতে স্কুল শুরুর দিন বাবা, মা সন্তানের জন্য স্কুলের প্রয়োজনীয় নানা সরঞ্জামের পাশাপাশি একটি প্যাকেট দেয়, যাতে চকলেট, ছোটখাটো খেলনা থাকে৷ ছবিতে দেখা যাচ্ছে, ছয় বছরের শিশুটির মা-বাবা বাড়ির বাগানের যে পথ দিয়ে তাদের আদরের সন্তান প্রথমদিন স্কুলে যাবে, সে রাস্তার দুই ধার ফুল দিয়ে সাজিয়ে দিয়েছে৷ যেন শিশুটির স্কুলজীবনও ফুলের মতোই সুন্দর হয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa
ছোটরাও জানে ফুল দিয়ে মন জয় করতে
ছোট তাতে কি? ভালোবাসার মানুষকে পেতে বা তার মন জয় করতে যে ফুল দিতে হয়, সেকথা কিন্তু ভালোভাবেই জানে সে৷ জানে, ফুল দিয়ে সহজেই বন্ধু করা যায়!
ছবি: Fotolia/lu-photo
ভালোবাসা দিবস
ভালোবাসা দিবস মানেই যেন ফুল, ফুল আর ফুল৷ নানা রঙের, নানা আকারের৷ এরা একে অপরকে কত বেশি ভালোবাসে সেটা প্রকাশ করতে বানিয়ে নিয়েছে লাল গোলাপ ফুল দিয়ে বিশাল আকারের হৃদয়৷
ছবি: DW / Mirsad Camdzic
বিশ্ব মা দিবস
গত সপ্তাহেই ছিল বিশ্ব মা দিবস৷ এই দিনে প্রচুর ফুল বিক্রি হয় জার্মানিতে৷ আর ফুলের দোকানগুলোতে থাকে এই বিশেষ দিনের জন্য বিশেষ আয়োজন৷ যারা কাছে থেকে প্রিয় ‘মা জননী’-কে নিজে হাতে ফুল তুলে দিতে পারে না, তারা ফুল পাঠিয়ে দেয় ফুলের বিভিন্ন ‘চেইন শপ’ বা ইন্টারনেট শপের মাধ্যমে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
বিয়ের গাড়ি
নব বর-বধু ফুল দিয়ে সাজানো গাড়িতে করে যাবে – এটাই তো স্বাভাবিক৷ আর এটা তো বাংলাদেশ বা ভারতেও প্রচলিত৷ তবে জার্মানিতে গাড়ি সাজানোর ধরণটা কিন্তু একটু অন্য রকম৷
ছবি: DW/Y.Gebere Egeziabeher
বিয়ের বিশেষ ফুল
বিয়ের জন্য চাই দারুণ সুন্দর একটি ফুলের তোড়া৷ যে তোড়াটি বিয়ে চলাকালীন কনের হাতে থাকে৷ সাধারণত এই তোড়া তৈরি করা হয় সাদা গোলাপ ফুল আর সামান্য সবুজ পাতা দিয়ে, যা বধুর সাদা বা অফ হোয়াইট বিয়ের পোশাকের সাথে দারুণ মানায়৷
ছবি: Fotolia/Marco Scisetti
ফুল, না কি চুমু ?
জার্মানির নর্থ রাইন ওয়েস্টফালিয়া রাজ্যে কার্নিভালকে পঞ্চম ঋতু হিসেবে ধরা হয়ে থাকে৷ এই কার্নিভালেও থাকে ফুলের মহা সমারোহ৷ রোজেন মোনটাগ বা গোলাপি সোমবার গাড়ি থেকে প্রচুর চকলেট আর ফুল দেওয়া হয় রাস্তার দু’ধারে দাঁড়িয়ে থাকা অসংখ্য মানুষকে৷ সেদিন কোনো সুন্দরী মেয়েকে কোনো পুরুষ ফুল দিলে যেন চুমু দেবার অধিকারও তার হয়ে যায়৷
ছবি: picture alliance/dpa
যার কাছের মানুষ, কাছে নেই
নিজের সন্তান বা নাতি-নাতনিরা কেউ কাছে নেই বা থাকলেও হয়ত খোঁজ নেয় না৷ তাই বলে কি জন্মদিন হবেনা? সেরকম বৃদ্ধ বাবা-মায়ের জন্য রয়েছে বৃদ্ধাশ্রম৷ ছবিতে এক বৃদ্ধাকে তাঁর জন্মদিনে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন বৃদ্ধাশ্রমের সকলে৷ এঁরাই যে এখন তাঁর সবচেয়ে কাছের মানুষ৷
ছবি: Sinisa Bogdanic
রোগীর জন্য ফুল
হাসপাতালে রোগী দেখতে গেলেও জার্মানরা ফুল নিয়ে যায়৷ তাই প্রতিটি হাসপাতালের কাছাকাছি কোনো না কোনো ফুলের দোকান থাকে৷ মনকে প্রফুল্ল রাখতে অবশ্যই ফুলের একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে৷
ডয়চে ভেলের নারী কর্মীদের জন্য ফুল
বিশ্ব নারী দিবসে নারী কর্মীদের একটি করে গোলাপ ফুল দেওয়া হয় ডয়চে ভেলেতে৷ ফুল পেয়ে নারীরা খুশি হলেও অনেকে বলেন যে, ‘‘আমরা চাই সমান অধিকার – মুখে নয়, কাজে৷ অর্থাৎ, পুরুষদের সমান বেতন চাই আমরা৷’’
ছবি: AP
রাজনীতিবিদদের জন্য ফুল
রাজনীতিতেও অভিনন্দন বা আনন্দ প্রকাশ করতে বিজয়ীদের হাতে তুলে দেওয়া হয় ফুলের তোড়া৷ এই ছবিটি ২০০০ সালের, আঙ্গেলা ম্যার্কেল সিডিইউ-এর চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ায় তাঁকে ফুল দিয়ে অভিনন্দন জানানো হচ্ছে৷
ছবি: picture alliance / dpa
ফুল দিয়ে চির বিদায়
মৃত্যুর পর কবরে শোয়ানোর সময় ফুল দিয়ে শেষ বিদায় জানানো হয়৷ তাছাড়া জার্মানির গোরস্থানে প্রায়ই দেখা যায় স্ত্রী, স্বামী বা ছেলে-মেয়েরা প্রিয়জনের কবরের পাশে ফুল দিয়ে যান৷
ছবি: picture alliance/dpa Themendienst
15 ছবি1 | 15
মঞ্জুর চৌধুরী মনে করেন, এটা ঠিক না৷ এমনটা ভাবতে গিয়ে সময় নষ্ট করার পর মানুষের এক সময় মনে হয়, ‘‘ইহা আমি কী করিলাম!'' তাই এই ব্লগারের পরামর্শ, ‘‘নিজের জীবনসঙ্গী/সঙ্গিনীকে নিয়েই সুখী হবার চেষ্টা করুন৷ সুন্দরভাবে কথা বলুন, একসাথে হাসুন, ভাল কোনো রেস্টুরেন্টে খেতে যান; সবার উপরে.....ভালবাসুন! দুজনের আনন্দময় মুহূর্তের ছবি তুলে ফেসবুকে দিন! সুখী দম্পতি দেখতে সবারই ভাল লাগে৷ দেখুন কয়টা লাইক এবং কমেন্ট পান! কে বলতে পারে, আপনার কালো স্ত্রী অথবা ভুড়িওলা স্বামীর মাঝেই হয়তো এমন কোনো গুণ আছে যা শাহরুখ খানেরও নেই৷ জীবনানন্দ দাসকে মোটেও সুদর্শন ব্যক্তি বলা চলে না, অথচ তাঁর মতন রোমান্টিক কবিতা স্বয়ং রবীন্দ্রনাথও কী লিখতে পেরেছিলেন?''