‘ব্রেক্সিট' নিয়ে শুধু ব্রিটেন নয়, দ্বিধাবিভক্ত গোটা ইউরোপ৷ তবে গণভোটের ফলাফল যা-ই হোক না কেন, যুক্তরাজ্যে বসবাসরত অধিকাংশ ইউরোপীয়ই চান, ব্রিটেন ইইউ-তে থাকুক৷ আর এ কথাটা বোঝাতে তাঁরা বেছে নিয়েছেন এক অভিনব পন্থা৷
বিজ্ঞাপন
সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে একটা হ্যাশট্যাগ চালু করেছেন তাঁরা৷ নাম – #হাগএব্রিট, অর্থাৎ ব্রিটেনের একজন নাগরিককে আলিঙ্গন করুন, একজন ব্রিটিশকে দিন ভালোবাসা৷ তাই লন্ডনের রাস্তায় চোখ রাখলেই দেখা যাবে আলিঙ্গনরত মানুষ৷
চাকরি সূত্রে অথবা ব্যক্তিগত কারণে ইউরোপের অন্যান্য অঞ্চলের নাগরিকদের মধ্যে যাঁরা ব্রিটেনে থাকেন, তাঁরা আজ এগিয়ে এসেছেন ভালোবাসার এই মন্ত্র নিয়ে৷ আবালবৃদ্ধবনিতা সকলকেই জড়িয়ে ধরছেন তাঁরা, বলছেন গণভোটে যেন ‘না' ভোটই দেন৷ কিন্তু ব্রিটেনের মানুষও কি ইউরোপীয়দের মতো করেই ভাবছেন? ডয়চে ভেলের ইয়ান ব্রুক খুঁজে এনেছেন তার উত্তর৷
#HugaBrit: Can love keep Brits in the EU?
02:39
যা ভাবছেন ব্রিটেনে বসবাসরত বাঙালিরা
আসলে ব্রিটেন ইউরোপীয় ইউনিয়নে আদৌ থাকবে কিনা – তা নিয়ে আলোচনার শেষ নেই৷ ব্রিটেনে বসবাসরত বাঙালিরাও এ নিয়ে চিন্তিত, কারণ ‘ব্রেক্সিট' সফল হলে বাংলাদেশিরাও ক্ষতিগ্রস্ত হবেন৷ সেখানকার বাঙালি এমপি রুশনারা আলী বলেন, ব্রিটেন ইইউ ত্যাগ করলে ব্রিটিশদের চেয়ে বাঙালিসহ অন্য অভিবাসীরাই চাকরি হারাবে বেশি৷
তাঁর কথায়, ‘‘ইইউ থেকে বেরিয়ে গেলে ইংল্যান্ডকে এক ভয়ানক অর্থনীতির চাপে পড়তে হবে, মন্দার ঝুঁকিতে থাকতে হবে৷ এ কারণে ৫ লাখ মানুষের চাকরি হারানোর আশংকা রয়েছে৷ তাছাড়া একক বাজারের অংশ হিসেবে ইইউ-তে ব্রিটেনের অবস্থান সবচেয়ে শক্তিশালী ও নিরাপদ৷ তাই সেই অবস্থানকে আরও সুদৃঢ় করতে আমাদেরকে ইইউ জোটের মধ্যেই থাকতে হবে৷''
সে কারণেই #হাগএব্রিট অভিযানটি প্রবাসী বাঙালিদের জন্য হয়ে উঠেছে আরো তাৎপর্যপূর্ণ, আরো প্রাসঙ্গিক৷
ঐতিহাসিক সিদ্ধান্তের মুখে ব্রিটেন
ব্রিটিশ ভোটাররা এমন এক সিদ্ধান্ত নিতে চলেছে, যার পরিণতি হবে সুদূরপ্রসারী৷ ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্যপদ ছেড়ে দেবার পক্ষে-বিপক্ষে জোরালো অভিযান চালাচ্ছে দুই শিবির৷ দাঁড়িপাল্লায় সমর্থনের মাত্রা প্রায় সমান-সমান৷
ছবি: Reuters/T. Melville
যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত
একক বাজার ও শুল্কমুক্ত বাণিজ্যের মতো লাভজনক সুবিধার প্রশ্নে ইউরোপীয় ইউনিয়ন নিয়ে ব্রিটেনের কোনো আপত্তি নেই৷ কিন্তু শুধু পণ্য ও পরিষেবা নয়, নাগরিকদের অবাধ প্রবেশের অধিকার, অভিন্ন মুদ্রা, শরণার্থীদের আশ্রয়ের মতো বিষয় তাদের পছন্দ নয়৷ এই ভাবমূর্তি কতটা ঠিক, গণভোটে তার প্রমাণ পাওয়া যবে৷
ছবি: Reuters/T. Melville
ব্রেক্সিট-এর প্রবক্তাদের যুক্তি
‘লিভ’ ক্যাম্পেন ভোটারদের উদ্দেশ্য ইইউ-র আমলাতান্ত্রিক নিয়ন্ত্রণ ও নিয়মের বেড়াজাল থেকে ব্রিটেনকে মুক্ত করার আহ্বান জানাচ্ছে৷ তাদের যুক্তি, নিজস্ব সিদ্ধান্ত গ্রহণের ‘স্বাধীনতা’ ফিরে পেলে ব্রিটেন আরও সমৃদ্ধ হয়ে উঠবে, বিশ্বে তাদের মর্যাদা বাড়বে৷
ছবি: Imago
‘ব্রেক্সিট অর্থনৈতিক বিপর্যয় ডেকে আনবে’
ইইউ থেকে বিচ্ছিন্ন হলে প্রবল অনিশ্চয়তা ও আর্থিক ক্ষতির আশঙ্কা করছে ব্রিটেনের ব্যবসা-বাণিজ্য জগত৷ তাদের মতে, ভবিষ্যতে ইইউ-র সঙ্গে সুবিধাজনক বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষর করা সম্ভব হলেও প্রথম কয়েক বছরে চরম অচলাবস্থা বিরাজ করবে৷
ছবি: Getty Images/AFP/N. Halle'n
মিথ্যা প্রচারণার অভিযোগ
ব্রেক্সিট শিবির ব্রিটিশ ভোটারদের সামনে ভয়াবহ চিত্র তুলে ধরছে বলে অভিযোগ করা হচ্ছে৷ যেমন তাদের দাবি, তুরস্কের নাগরিকরা নাকি অদূর ভবিষ্যতে দলে দলে ব্রিটেনে বসবাস করতে আসছে৷ ‘রিমেন’ শিবিরের বিরুদ্ধেও আতঙ্ক ছড়ানোর অভিযোগ উঠছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/C. J. Ratcliffe
ব্রেক্সিট-পরবর্তী যুগের রূপরেখা
ইইউ-র বাইরে ব্রিটেনের বিকল্প সম্পর্কে স্পষ্ট চালচিত্র দিতে ব্যর্থ হচ্ছে ব্রেক্সিট শিবির৷ নরওয়ে ও সুইজারল্যান্ডের মতো দেশকে আদর্শ হিসেবে তুলে ধরলেও এই দুই দেশকে যে বাধ্যতামূলকভাবে ইইউ-র অনেক নীতি কার্যকর করতে হয়, সেই সত্যটা গোপন রাখা হচ্ছে৷
ছবি: DW/B.Riegert
ইউরোপে ব্রিটেনের ভবিষ্যৎ
ভোটাররা ব্রেক্সিট-এর বিরুদ্ধে রায় দিলেও ব্রিটেন-এর সঙ্গে ইইউ-র সম্পর্ক আগের মতোই থাকবে কি না, তা নিয়েও জল্পনা-কল্পনা চলছে৷ সংহতি দেখানোর বদলে প্রায় প্রতিটি বিষয়ে আলাদা ছাড় দাবি করার ব্রিটিশ অভ্যাস নিয়ে বিরক্ত ইইউ-র বেশিরভাগ দেশ৷
ছবি: Reuters/Y. Herman
6 ছবি1 | 6
বন্ধু, আপনি ‘ব্রিক্সিট’-এর পক্ষে না বিপক্ষে? জানান মতামত, লিখুন নীচের ঘরে৷