প্রাতিষ্ঠানিক গণমাধ্যমের চেয়েও সামাজিক মাধ্যমে ক্রিকেটের খবর দ্রুত ছড়ায়৷ গুজব-গুঞ্জন ডালপালা মেলে ভুল বার্তাও দেয়৷ মিডিয়াতে কোনো নিউজ হলে জাতীয় দলের অনেক ক্রিকেটারই বলেছেন, ‘‘কই ফেসবুকে তো দেখলাম না৷''
বিজ্ঞাপন
ফেসবুককে বার্তা পাওয়ার একটা মাধ্যম হিসেবে নিয়েছেন বেশিরভাগ ক্রিকেটার৷ তবে অনেক সময় সামাজিক মাধ্যম ক্রিকেটারদের জীবন দুর্বিসহ করে তোলে৷ সমালোচনার ঝড় উঠে ফেসবুকে৷ নেতিবাচক লেখা নিয়ে ক্রিকেটাদের বেশিরভাগই বিরক্ত হন৷ ইতিবাচক লেখা নিয়ে কারও কোনো আপত্তি নেই৷
সাকিব আল হাসানের স্ত্রী উম্মে আহমেদ শিশিরের ফেসবুক পোস্ট মুহূর্তের মধ্যে ভাইরাল হয়ে যায়৷ সাধারণ মানুষ থেকে ক্রিকেটার সবাই জেনে গেলেন কী লিখেছেন শিশির৷ পরোক্ষভাবে সাবেক অধিনায়ক মাশরাফি আর ওপেনিং ব্যাটসম্যান তামিম ইকবালকে আক্রমণ করে লেখা পোস্ট৷ আক্রমণ পালটা আক্রমণ চলতে থাকল৷ শিশিরের পোস্ট দেখে সাকিব ভক্তরা খুশি হলেও মাশরাফি ও তামিম অনুসারীরা বেজার৷ মন্তব্যের ঘরে গিয়ে তারাও দুকথা লিখে দেন৷
এক সাংবাদিককে ফোন করে হতাশা প্রকাশ করেন মাশরাফি৷ ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া, লেখা, পালটা লেখা চলে দিনভর৷
সামাজিক মাধ্যমে ক্রিকেট এবং ক্রিকেটারদের নিয়ে এরকম হাজারো লেখা পোস্ট হয়৷ যার বেশিরভাগই ক্রিকেটাররা দেখেন না বা দেখা সম্ভব হয় না৷ তবে ভাইরাল হওয়া পোস্টগুলো ইচ্ছের বিরুদ্ধেও দেখতে হয়৷ বেশিরভাগ ক্ষেত্রে খেলোয়াড়দের পরিবার এবং আত্মীয়-স্বজনরাই ইনবক্স করে সংশ্লিষ্ট মানুষটিকে জানিয়ে দেন৷ পরিবারের সদস্যদের হতাশা অনুভব করে ক্রিকেটাররা আহত হন, প্রতিক্রিয়া জানান গণমাধ্যমের সামনে এসে৷
বেশিরভাগ ক্রিকেটারই সামাজিক মাধ্যমে নেতিবাচক মন্তব্যকে ভালোভাবে নেন না৷ সংবাদ সম্মেলন বা সাক্ষাৎকারে বিষয়টি প্রকাশও করেন তারা৷ সমালোচনায় খেলোয়াড়রা যে মনোক্ষুন্ন এবং হতাশ সেটা উঠে আসে ব্রিফিংয়ে৷
বাংলাদেশ ক্রিকেটে ট্রল
বাংলাদেশের অনেক ক্রিকেটার বিভিন্ন সময়ে ট্রলের শিকার হয়েছেন৷ ক্রিকেট খেলা অনেক জনপ্রিয় হওয়ায় সামাজিক মাধ্যমে এ নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানাতে পছন্দ করেন সমর্থকরা৷
ছবি: Getty Images/J. Mansfield
চিকিৎসকদের ট্রলের শিকার মাশরাফি
২০১৯ সালে নড়াইলের আধুনিক সদর হাসপাতালে গিয়ে মাশরাফি চার চিকিৎসককে অনুপস্থিত পান৷ এরপর রোগী সেজে তিনি এক চিকিৎসককে ফোন করলে ঐ চিকিৎসক পরে এসে চিকিৎসা নিতে বলেন৷ এরপর নিজের পরিচয় দিয়ে ওই চিকিৎসককে মাশরাফি বলেন, ‘‘এখন যদি হাসপাতালে সার্জারির প্রয়োজন হয়, তাহলে সেই রোগী কী করবে?’’ এই ঘটনায় চিকিৎসকদের একটি অংশের ট্রলের শিকার হয়েছিলেন মাশরাফি৷ পারলে তাকে মেডিকেল কলেজে ভর্তি হয়ে দেখাতেও বলেন কেউ কেউ৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. Melville
সাকিবের অরেঞ্জ জুস মন্তব্য
২০১৪ সালে বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বাংলাদেশ ভালো করতে পারেনি৷ প্রথম আলোকে দেয়া সাক্ষাৎকারে সাকিব পরে বলেছিলেন, ‘‘টি-টোয়েন্টির জন্য সবচেয়ে বেশি টাকা পায় কারা? গেইল, ডি ভিলিয়ার্স—কী পাওয়ার ওদের খেলায়! জাতিগতভাবেই আমরা শারীরিকভাবে ওদের চেয়ে পিছিয়ে৷ জন্মের পর থেকে আমরা খাই সবজি খিচুড়ি...নরম করে রান্না করা৷ আর ওরা ছোটবেলা থেকে অরেঞ্জ জুস খায়৷’’ এই মন্তব্য নিয়ে পরে অনেক ট্রল হয়েছিল৷
ছবি: Munir Uz Zaman/Getty Images/AFP
ট্রলের শিকারও তামিম
২০১৫ বিশ্বকাপটা ভালো কাটেনি তামিমের৷ তাই সেই সময় অনেক ট্রলের শিকার হতে হয়েছে তাকে৷ একটা ট্রল ছিল এরকম, ‘ম্যাগী নুডুলস সিদ্ধ হওয়ার আগেই তামিম আউট’৷ এসব ঘটনায় ভীষণ বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিলেন তামিম৷ এক পর্যায়ে বিশ্বকাপ চলার সময় অ্যাকাউন্ট ডিঅ্যাকটিভেট করে রাখতেও বাধ্য হয়েছিলেন৷ তামিমের স্ত্রীকেও গভীর রাতে ফোন করে গালিগালাজ করা হয়েছিল৷
ছবি: Getty Images/AFP/I. Kington
মুশফিকের আয়না
চলতি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে শ্রীলঙ্কার কাছে হারার পর মুশফিক বলেন, ক্রিকেটারদের সমালোচনা যারা করেন, তাদের উচিত আগে আয়নায় নিজের মুখ দেখে নেওয়া৷ এরপর থেকে সামাজিক মাধ্যমে কেউ তাকে ‘আয়নাবাজ’ আবার কেউ ‘আয়নাপুরুষ’ নামে ডাকা শুরু করে৷ এর আগেও বিভিন্ন সময় মুশফিককে নিয়ে ট্রল হয়েছে৷
ছবি: Munir Uz Zaman/AFP
ক্যাচ মিস করায় তোপের মুখে লিটন
শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে ঐ ম্যাচ দুটো ক্যাচ ধরতে পারেননি লিটন দাস৷ দলের পরাজয়ের অন্যতম কারণ হিসেবে উল্লেখ করে সামাজিক মাধ্যমে সমালোচনা ও ট্রলের শিকার হয়েছেন তিনি৷ এটা করতে গিয়ে অনেকে ধর্মের বিষয়টিও টেনে এনেছেন৷ এছাড়া একদিনের ম্যাচে লিটনের করা চার শতকের তিনটি জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে হওয়ায়ও অতীতে তাকে নিয়ে ট্রল হয়েছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/STR
‘ইমরুল ব্রো’
২০১৯ সালে ভারত সফরে দুই টেস্টে ইমরুল কায়েসের স্কোর ছিল ৬, ৬, ৪ ও ৫৷ সেই সময় ফেসবুকে তাকে নিয়ে অনেকে ট্রল করেছিলেন৷ অবশ্য ঐ সফরের আগে থেকেই তাকে ফেসবুকে ‘ইমরুল ব্রো’ নামে ডাকা হচ্ছিল৷ এ প্রসঙ্গে পরে প্রথম আলোকে তিনি বলেছিলেন, ‘‘অনেক ক্রিকেটার আছে যারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কারণে নষ্ট হয়ে গেছে৷ চাপ নিতে পারেনি৷ আমি বলব, যদি আপনারা দেশের ভালো চান, দয়া করে এসব বন্ধ করুন৷’’
ছবি: Getty Images/M. Lewis
গতিদানব
জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক খালেদ মাহমুদ সুজন মিডিয়াম পেসার ছিলেন৷ কিন্তু সামাজিক মাধ্যমে তাকে ‘গতিদানব’ বলে ট্রল করা হয়৷ এ প্রসঙ্গে গত আগস্ট মাসে কালের কণ্ঠকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, ‘‘আমি মনে করি, যারা এগুলো বলে তারা ক্রিকেটটাই কম বোঝে বেসিক্যালি৷’’
ছবি: Getty Images/R. Kinnaird
‘মি. ইন্টারফেয়ারার’
দলে কাকে রাখা হবে, টসে জিতলে কী নিতে হবে ইত্যাদিসহ বাংলাদেশ ক্রিকেটের প্রায় সব বিষয়েই সিদ্ধান্ত দেন নাজমুল হাসান পাপন৷ সেজন্য সমালোচনার পাশাপাশি তাকে নিয়ে ট্রল হয়েছে৷ তাকে ডাকা হয় মি. ইন্টারফেয়ারার নামে৷ এক পর্যায়ে সেসব কাজ থেকে একটু দূরে সরে গিয়েছিলেন বিসিবি সভাপতি৷ পরে গত ফেব্রুয়ারিতে আবারও আগের রূপে ফেরার কথা জানিয়েছিলেন তিনি৷ তা না হলে নাকি বাংলাদেশের ক্রিকেটের ক্ষতি হচ্ছিল!
ছবি: bdnews24
বিসিবি সভাপতির ভুয়া ফেসবুক অ্যাকাউন্ট
এ বছরের শুরুতে বিসিবি সভাপতির নামে ফেসবুকে কয়েকটি ভুয়া অ্যাকাউন্ট খুলে সেসব থেকে ট্রলের ঝড় বয়ে গিয়েছিল৷ আইপিএল খেলতে সাকিবের ছুটি নেওয়া, নাসির হোসেনের বিয়েসহ কিছু ঘটনায় ঐসব আইডি থেকে নানা রকম স্ট্যাটাস ও মন্তব্য পোস্ট করা হয়েছিল৷ পরে বিষয়টি বিসিবির চোখে পড়লে সেগুলো বন্ধের উদ্যোগ নেয়া হয়৷
ছবি: bdnews24.com
9 ছবি1 | 9
এবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে স্কটল্যান্ডের কাছে বাংলাদেশ দল হেরে গেলে আশাহত হয়ে সমর্থকরা ফেসবুকে নিজেদের মতামত তুলে ধরার পাশাপাশি ক্রিকেটারদেরও আক্রমণ করতে থাকেন৷ মাহমুদউল্লাহদের সেটা ভালো লাগেনি৷ ক্রিকেটাররা পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকেই বিষয়গুলো জেনেছেন৷
বাছাই পর্বে পাপুয়া নিউগিনির বিপক্ষে খেলা শেষের সংবাদ সম্মেলনে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখান অধিনায়ক৷ সমালোচনার জবাবে টাইগার দলপতি বলেছিলেন, ‘‘এভাবে সমালোচনা করা ঠিক না৷ ফেসবুকে মানুষ যেভাবে সমালোচনা করছে সেগুলো আমাদের পরিবারের সদস্যদের আহত করে৷'' তিনিই আবার বলছেন, ‘‘ফেসবুকে যা লেখা হয় সেগুলো আমাদের নিয়ন্ত্রণে নেই৷ খারাপ খেললে মানুষ লেখবেই৷ আমাদের চেষ্টা করতে হবে এসব জিনিস থেকে দূরে থাকার৷''
বাংলাদেশে ফেসবুক খুবই শক্তিশালী একটি মাধ্যম৷ বেশিরভাগ মানুষের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট আছে৷ ক্রিকেটাররা ফেসবুকে ভালোভাবেই আছেন৷ সাকিব, মাশরাফি, তামিমসহ জাতীয় দলের বেশিরভাগ ক্রিকেটারের অফিসিয়াল ফেসবুক পাতা রয়েছে৷ নিজের ভেরিফাইড পেজে ভক্তসমর্থকদের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করেন তারা৷ ফ্যান-ফলোয়ার দেখে বিচার করেন নিজের জনপ্রিয়তা৷ ভক্তরাও প্রিয় খেলোয়াড়ের সমর্থনে পেজ খোলেন৷ সাকিবিয়ান, মাশরাফিয়ান এরকম আরও অনেক নাম পাওয়া যাবে৷
সামাজিক মাধ্যমে লেখা এবং দর্শকদের মন্তব্য নিয়ে সাকিবের কোনো প্রতিক্রিয়া নেই৷ যতবারই তার কাছে এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়েছে ঠান্ডা মাথায় বলেছেন, ‘‘সামাজিক মাধ্যম মানুষের মত প্রকাশের জায়গায়৷ স্বল্প শিক্ষিত থেকে উচ্চ শিক্ষিত প্রায় সবার ফেসবুকে আছে৷ তাই ফেসবুকের মন্তব্য বা পোস্ট থেকে কোনো কিছু বিচার করা ঠিক হবে না৷ যে যেভাবে একটি বিষয়কে দেখেন সেভাবে নিজের মত প্রকাশ করেন৷ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কী লেখা হলো সেগুলো আমাকে স্পর্শ করে না৷ মাঠের পারফরম্যান্সেও প্রভাব ফেলতে পারে না৷ বরং এসবকে আমি ভালোভাবেই দেখি৷ আমাদের পারফরম্যান্স নিয়ে মানুষ কী ভাবে সেটা অন্তত জানতে পারি৷''
জাতীয় দলের বেশিরভাগ ক্রিকেটারই সাকিবের মতো নন৷ সামাজিক মাধ্যমের লেখা বা মন্তব্য তাদের স্পর্শ করে৷ পারিবারিক জীবন এবং মাঠের পারফরম্যান্সেও প্রভাব ফেলে৷ ইমরুল কায়েস ভালো না খেলায় ফেসবুকে একটি গ্রপ তৈরি হয়েছিল ‘ইমরুল ব্রো' নামে৷ যেখানে ইমরুলকে নিয়ে রসিকতা করা হতো৷ বিষয়টি এত বেশি বিরক্তির পর্যায়ে চলে গিয়েছিল যে বাঁহাতি এ ওপেনারকে কেউ ব্রো বললেই বিরক্ত হতেন৷ সাংবাদিকদের মুখের ওপর বলেছেনও, ‘‘আমাকে ব্রো বলবেন না৷''
ফেসবুকে ইমরুলের অ্যাকাউন্ট আছে৷ তিনি প্রতিক্রিয়া দেখেন, বিরক্ত হন আবার আবেগেও ভাসেন৷ বাঁহাতি এ ওপেনারের কাছে সামাজিক মাধ্যমের লেখা হলো, ‘‘ভালো, তবে মানুষ বেশি বেশি করে৷ মাঝে মাঝে সীমা ছাড়িয়ে যায়৷ রয়েসয়ে মন্তব্য করলে ভালো হতো৷''
মুশফিকুর রহিম তার ভেরিফাইড পেজে বার্তা দেন৷ ক্রিকেটের বাইরের অনেক বিষয় নিয়ে লেখেনও৷ ফেসবুকে মানুষের প্রতিক্রিয়া দেখে মন খারাপ হলেও প্রকাশ করতে চান না তিনি৷ বরং ফলোয়ার বাড়াতে পছন্দ করেন৷
মাশরাফি নিজেই ফেসবুকের নিয়মিত লেখক৷ শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে বাংলাদেশ দলের হারের কারণ হিসেবে লিটন কুমার দাসের ক্যাচ ফেলা ও মাহমুদউল্লাহর ভুল নেতৃত্ব নিয়ে মানুষের প্রতিক্রিয়া পরখ করে দেখেছেন তিনি৷ অনানুষ্ঠানিক প্ল্যাটফর্মে নড়াইল এক্সপ্রেস লেখা নিয়ে কখনও সখনো অসন্তোষ প্রকাশ করলেও প্রকাশ্যে বিরোধিতা করেননি৷
বৃহস্পতিবার নুরুল হাসানের কাছে ফেসবুকে সমর্থকদের সমালোচনা করা নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে চাওয়া হলে তিনি স্পোর্টিংলি উত্তর দেন এভাবে, ‘‘খারাপ খেললে মানুষ সমালোচনা করবেই৷ ভালো খেললে এই মানুষগুলোই প্রশংসা করে৷ খুশি হয়ে ভালো ভালো পোস্ট দেয়৷ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনাকে অতটা বড় করে দেখার কিছু নেই৷''
রুবলে হোসেন তার পেজে সুন্দর সুন্দর স্ট্যাটাস দেন৷ বিশাল সংখ্যক ফলোয়ার তার৷ ফেসবুকের সমালোচনা খারাপ লাগে না তার কাছে, ‘‘কেউ তো ভুল লেখে না৷ আমরা খারাপ খেললে সেটা লেখে৷ ভুল করলে তা নিয়েও লেখে৷ তবে সমস্যা হলো আমাদের দেশের মানুষ ব্যক্তিগত আক্রমণ বেশি করে৷ ওই জায়গায় আমার আপত্তি আছে৷ আমরা তো জেতার জন্যই খেলি৷ ক্রিকেট ১১ জনের খেলা৷ একজন বোলার বা ব্যাটসম্যান ইচ্ছে করে তো খারাপ করে না৷ কিন্তু মানুষ সেটা বুঝতে চেষ্টা করে না৷ তারা মনে করে রুবেলের কারণে হারছে৷ এভাবে লেখা হলে কিছু করারও নেই৷ পাবলিক ফিগার হলে তো লেখা হবেই৷ সবাইকে নিয়ে তো মানুষ লেখে না৷ ঠান্ডা মাথায় একটু চিন্তা করলে নেতিবাচক লেখা হলেও খারাপ লাগবে না৷''
একটা জিনিস পরিষ্কার ক্রিকেটাররাও অনুসারীদের মাধ্যমে নিজেকে যাচাই করার চেষ্টা করেন৷ ফেসবুক ফলোয়ারদের সমর্থন থেকে কেউ কেউ নিজেকে জাতীয় দলে দেখতে চান৷ জাতীয় দল নির্বাচকদের সঙ্গে এনিয়ে কথাও বলেন৷ কিছুদিন আগেই একজন ক্রিকেটার এক নির্বাচককে বলেছিলেন, ‘‘ফেসবুকে দেখেন সবাই আমাকে জাতীয় দলে দেখতে চায়৷ আমি পারফর্ম না করলে তারা তো লিখত না৷ আমাকে দলে নিতে আপনাদের আপত্তি কোথায়৷'' এ থেকে বোঝা যায় ক্রিকেটারদের বেশিরভাগই ফেসবুকের লেখা নিয়ে সিদ্ধান্তহীনতায় থাকেন৷ মাঠের পারফরম্যান্সের মতোই ভালো লেখা হলে তারা খুশি হন, সমালোচনা হলে বিরক্ত৷
বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টি পরিসংখ্যান
রোববার শুরু হচ্ছে বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ মিশন৷ প্রথম পর্বের বাধা পেরোতে পারলে বিশ্বকাপের মূল পর্বে খেলতে পারবে টাইগাররা৷ তার আগে চলুন টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের বিভিন্ন পরিসংখ্যান জেনে নিই৷
ছবি: DIBYANGSHU SARKAR/AFP/Getty Images
জয়, পরাজয়ের হিসাব
২০০৬ সালে প্রথম টি-টোয়েন্টি খেলেছিল বাংলাদেশ৷ এখন পর্যন্ত ১১২টি ম্যাচ খেলে ৪১টিতে জিতেছে টাইগাররা৷ সবচেয়ে বেশি ১১টি জিতেছে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে৷ এরপর ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে পাঁচটি এবং অস্ট্রেলিয়া ও শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে চারটি করে ম্যাচ জিতেছে টাইগাররা৷ ভারত ও পাকিস্তানের সঙ্গে যথাক্রমে ১১ ও ১২টি ম্যাচ খেলে দশটিতেই হেরেছে তারা৷
ছবি: DIBYANGSHU SARKAR/AFP/Getty Images
দলীয় সর্বোচ্চ রান
২০১৮ সালের মার্চে কলম্বোতে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে ২১৪ রান তুলেছিল স্বাগতিকরা৷ দুই বল বাকি থাকতে পাঁচ উইকেট হারিয়ে সেই রান তাড়া করে ফেলেছিল টাইগাররা৷ সেদিনে সংগ্রহ ২১৫ রানই টি-টোয়েন্টিতে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের সর্বোচ্চ সংগ্রহ৷ মুশফিক ৩৫ বলে ৭২ রান করে অপরাজিত ছিলেন৷ এছাড়া আরও দুবার দুশ রান পেরিয়েছে টাইগাররা৷ দুবারই দেশের মাটিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও জিম্বাবোয়ের বিরুদ্ধে৷
ছবি: ISHARA S. KODIKARA/AFP/Getty Images
দলীয় সর্বনিম্ন রান
২০১৬ সালের ২৬ মার্চ কলকাতায় টি-টোয়েন্ট বিশ্বকাপের এক ম্যাচে নিউজিল্যান্ডের ১৪৫ রানের জবাবে খেলতে নেমে ৭০ রানে অলআউট হয়ে গিয়েছিল বাংলাদেশ৷ টাইগারদের পক্ষে শুভাগত হোম সর্বোচ্চ ১৬ রান করেছিলেন৷ তামিম তিন, সাকিব দুই, মাহমুদুল্লাহ পাঁচ রান করেছিলেন৷ রানের খাতা খোলার আগেই আউট হয়েছিলেন মুশফিক৷
ছবি: DIBYANGSHU SARKAR/AFP/Getty Images
সবচেয়ে বড় জয়
এখন পর্যন্ত রানের হিসেবে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় জয়টি এসেছে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে৷ ২০১২ সালের ১৮ জুলাই বেলফাস্টে আইরিশদের ৭১ রানে হারিয়েছিল বাংলাদেশ৷ এর পরেই তালিকায় আছে গত ৯ আগস্ট ঢাকায় অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ৬০ রানের জয়৷ আর উইকেট বিচারে বাংলাদেশ সবচেয়ে বড় জয় আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে৷ ২০১৪ সালে নয় উইকেটে আফগানদের হারিয়েছিল টাইগাররা৷ আফগানরা মাত্র ৭৩ রানের টার্গেট দিয়েছিল৷
ছবি: AFP/Getty Images
সবচেয়ে কম ব্যবধানে জয়
রানের বিচারে এই জয়টিও এসেছিল ২০১২ সালের ২০ জুলাই বেলফাস্টে আয়ারল্যান্ডের বিরুদ্ধে৷ ১৪৭ রানের টার্গেট দিয়ে মাত্র এক রানে জিতেছিল টাইগাররা৷ এর পরদিন আইরিশদের দুই উইকেটে হারিয়েছিল বাংলাদেশ৷ উইকেটের বিচারে সেটা টাইগারদের সবচেয়ে কম ব্যবধানে জয়৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. Uz Zaman
সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত রান সংগ্রহ
৯৪ ইনিংসে এক হাজার ৭৭১ রান করে এই তালিকায় সবার উপরে আছেন মাহমুদুল্লাহ৷ তার চেয়ে সাত ইনিংস কম খেলা সাকিবের সংগ্রহ মাহমুদুল্লাহর চেয়ে মাত্র আট রান কম (১,৭৬৩)৷ এরপর আছেন তামিম (১,৭০১), মুশফিক (১,৩২১) ও সৌম্য সরকার (১,১০৯)৷
ছবি: MUNIR UZ ZAMAN/AFP/Getty Images
একমাত্র শতক তামিমের
২০১৬ সালে ওমানের বিপক্ষে অপরাজিত ১০৩ রান করেছিলেন তামিম৷ সেটিই এখন পর্যন্ত টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের একমাত্র শতক৷ দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রানটিও এসেছে তামিমের ব্যাট থেকে৷ ২০১২ সালে ঢাকায় ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে অপরাজিত ৮৮ রান করেছিলেন তিনি৷
ছবি: Randy Brooks/AFP/Getty Images
সর্বোচ্চ অর্ধশতক
এখন পর্যন্ত সাকিব ৯ বার অর্ধশতকের বেশি রান করেছেন৷ তার সর্বোচ্চ রান ৮৪৷ এছাড়া তামিম আটবার এবং সৌম্য সরকার, মুশফিক ও মাহমুদুল্লাহ পাঁচবার করে অর্ধশতক করেছেন৷
ছবি: Munir Uz Zaman/AFP
সবচেয়ে বেশি উইকেট
সাকিবের সংগ্রহ ১০৬ উইকেট৷ ৩২৫.৩ ওভার বল করে এই উইকেট পান তিনি৷ এরপর আছেন মুস্তাফিজুর রহমান৷ ১৮৯.৩ ওভারে তিনি ৭৬টি উইকেট পেয়েছেন৷