দু'হাত তুলে দর্শকদের কাছে কিছু খেতে চাইছে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিখ্যাত ‘সান বেয়ার'৷ এই হাড় জিরজিরে ভাল্লুকগুলো থাকে ইন্দোনেশিয়ার পশ্চিম জাভা প্রদেশের রাজধানী বান্দুং-এর একটি বেসরকারি চিড়িয়াখানায়৷
বিজ্ঞাপন
ইন্দোনেশিয়ায় যে বন্যপ্রাণী নিয়ে ব্যাপক বেআইনি ব্যবসা চলে, এ অভিযোগ অনেকদিনের৷ জীবজন্তুর প্রতি নির্মম আচরণও বিরল নয়৷ এছাড়া আছে আইন-শৃঙ্খলা বিভাগের গাফিলতি৷ এই পরিস্থিতিতে গত সপ্তাহে একটি ভিডিও ভাইরাল হয়ে যায়৷
স্কর্পিয়ন ওয়াইল্ডলাইফ ট্রেড মনিটরিং গ্রুপের রিলিজ করা ভিডিওতে ক্ষুধিত, হাড় বের করা ভাল্লুকরা দু'হাত তুলে দর্শকদের কাছ থেকে আজেবাজে খাবার যা পাওয়া যায়, তাই ভিক্ষে করে খাচ্ছে৷
কংক্রিটের এনক্লোজারে তাদের বাস, সবুজের চিহ্নমাত্র নেই৷ সামনের পরিখায় পানি৷ ২০১৬ সালের মাঝামাঝি এই ক্ষুধার্ত ভাল্লুকগুলোকে আবিষ্কার করে স্কর্পিয়ন গোষ্ঠী৷ ভিডিওটি প্রকাশিত হবার পর সাড়ে পাঁচ হাজারের বেশি মানুষ একটি পিটিশনে স্বাক্ষর করেছেন – পিটিশনে কর্তৃপক্ষের প্রতি সংশ্লিষ্ট চিড়িয়াখানাটির বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেবার দাবি জানানো হয়েছে৷ বান্দুং-এর মেয়র রিদওয়ান কামিল বলেছেন যে, বেসরকারি পার্কটির বিরুদ্ধে তাঁর কোনো ধরনের পদক্ষেপ নেওয়ার অধিকার নেই, কেননা চিড়িয়াখানা পরিদর্শনের দায়িত্ব পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের উপর ন্যস্ত৷
চিড়িয়াখানার প্রশাসনের তরফ থেকে বলা হয়েছে যে, ভাল্লুকগুলো রোগা বলেই তারা ক্ষুধিত বা রুগ্ন নয়৷ মনে করা যেতে পারে, হৃদযন্ত্র ও ফুসফুসের রোগে আক্রান্ত একটি সুমাত্রার হাতি গত বছর এই চিড়িয়াখানায় বিনা চিকিৎসায় এক সপ্তাহ কাটানোর পর মারা যায়৷
এসি/ডিজি
পান্ডা বেয়ারও কিন্তু মানুষের মতোই সঙ্গী চায়
এতদিন পর্যন্ত গবেষকরা মনে করতেন পান্ডা বেয়ার বা পান্ডা ভল্লুক বেশিরভাগ সময়ই একা থাকতে ভালোবাসে৷ কিন্তু নতুন গবেষণায় দেখা গেছে যে, এই প্রাণীরাও অন্য প্রাণীদের সাথে মিলে মিশে থাকতেই বেশি পছন্দ৷
ছবি: picture alliance/dpa/Chinafotopress/Li Wei
ভুল ধারণা!
পান্ডা বেয়াররা চীনের পর্বত অরণ্যে একাকী ঘুরে বেড়ায়৷ ওদের মূল আগ্রহ ছোট বাঁশের পাতা বা বাঁশের কোঁড় খাওয়া৷ ওরা কিন্তু দিনে ১০ থেকে ২০ কেজি বাঁশ খেয়ে ফেলতে পারে৷ তবে এতদিন যে মনে করা হতো, ওরা একা থাকতে বেশি পছন্দ করে, সে ধারণা ভুল! অ্যামেকরিকান এবং চীনাদের গবেষণায় জানা গেছে যে, ওরাও মানুষদের মতো একসাথে থাকতেই ভালোবাসে৷
ছবি: Fotolia/xiaoma
সম্ভোগে অলসতা
নতুন গবেষণা অবশ্য বলছে, পান্ডাদের যেমন ভাবা হতো, তার চেয়ে অনেক বেশি মিশুক ওরা৷ তবে ওরা একে-অপরের কাছাকাছি যায় শুধুমাত্র প্রজনন ঋতু বা সন্তান উৎপাদনের সময়৷ আসলে পান্ডারা সেক্স বা যৌন সম্ভোগের ব্যাপারে তেমন আগ্রহী নয়৷ খোলা জায়গায় বাচ্চা হতে দেখা গেলেও, চিড়িয়াখানাগুলোতে পান্ডা বেয়ার সন্তানের জন্ম দিচ্ছে – এমনটা খুব কম দেখা যায়৷
ছবি: picture alliance/dpa/Xu Kangping
বছরে মাত্র দু’দিন সেক্স
নারী পান্ডা বেয়ার পুরুষ ভল্লুককে বছরে মাত্র একবার কাছে যাবার অনুমতি দেয়, সেটাও আবার মাত্র দু’দিনের জন্য৷ এরপরেও যখন সন্তান হয়, তখন সেই বেবি পান্ডারা হয় সত্যিই দেখার মতো!
ছবি: picture-alliance/dpa
নগ্ন বেয়ার
জন্মের ঠিক পরেই বেবি পান্ডা বেয়ার দেখতে ঠিক এরকমই হয়৷ সে’সময় খুব ছোট্ট থাকে ওরা আর ওজন হয় মাত্র ৯০ থেকে ১২০ গ্রামের মধ্যে৷ লেজটা অবশ্য বেশ লম্বা আর কালো হয়৷ জন্মের সময় যেহেতু ওদের গায়ে কোনো পশম থাকে না, তাই তখন ওদের দেখতে লাগে অনেকটা ইঁদুরছানার মতো৷
ছবি: Reuters
বংশবৃদ্ধি করা
বিলুপ্ত হতে বসা এই পান্ডা ভল্লুককে রক্ষা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে চীন৷ এরই মধ্যে গবেষকরা পান্ডার বংশবৃদ্ধির ব্যাপারে নিখুঁতভাবে চিন্তা-ভাবনা করছেন নারী পান্ডাদের শরীরের ভাষা বোঝার জন্য৷ কখন তাদের প্রজনন হয়, তখন তাদের শরীরের ভাষা, ভাবসাব কেমন হয় – এই সব নিয়ে চলছে গবেষণা৷ তবে বাকি কাজটা করছেন রিপ্রোডাকটিভ মেডিসিন-এর ডাক্তাররা, কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে৷
ছবি: Reuters
সাফল্য
কৃত্রিম প্রজনন থেকে জন্ম নেওয়া ভল্লুকগুলোকে রাখা হয় সাধারণত চিড়িয়াখানায়৷ চীনে তো পান্ডা বেয়ারকে রক্ষা করা অনেকটা জাতীয় দায়িত্বের মতো হয়ে গেছে৷ আর এতে সাফল্যও দেখা গেছে ইতিমধ্যে৷ গত দশ বছরে পান্ডা ভল্লুকের জন্মের সংখ্যা ২৬৮ থেকে বেড়ে হয়েছে ১৮৬৪৷