মাদি ভাল্লুক লুলা আর মদ্দা সিংহ সিম্বা ছিল মোসুলের চিড়িয়াখানায় শেষ দু’টি জীবিত প্রাণী৷ আইএস যোদ্ধারা মোসুল দখল করার পর যে যুদ্ধ শুরু হয়, বেসরকারি মালিকানার মোসুল জু-র প্রাণীদেরও তার দাম দিতে হয়েছে৷

চিড়িয়াখানাটি মোসুলের পূর্বাংশে৷ চার মাস ধরে অভিযান চালানোর পর ইরাকি সৈন্যরা এলাকাটি পুরোপুরি মুক্ত করেছে, যদিও নদীর ওপারে এখনও যুদ্ধ চলেছে৷

‘ফোর প’জ ইন্টারন্যাশনাল’ নামের একটি প্রাণী কল্যাণ সংস্থা সিম্বা আর লুলাকে মোসুল থেকে উদ্ধার করে অন্যত্র নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করে৷

ক্ষুধিত, নোংরা, নিঃসঙ্গ – পশুরাজ আর মাদি ভাল্লুক তখন শুধু মৃত্যুর অপেক্ষায়, চিড়িয়াখানার অন্যান্য বহু প্রাণীর ভাগ্যে যা ইতিমধ্যেই জুটেছে৷

মোসুল ছিল ইরাকের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর৷ ২০১৪ সালের জুন মাসে আইএস মোসুল দখল করে৷ তারপর একটানা লড়াই আর বোমাবর্ষণের মাঝে চিড়িয়াখানার খাঁচায় বন্দি জীবজন্তুদের কথা কে ভাববে?

প্রথমে আশেপাশের লোকজন দয়া করে যে খাবার দিত, তাই খেয়ে৷ পরে যুদ্ধের তীব্রতা বাড়লে তাও বন্ধ হয়ে যায়৷

এলাকার মানুষজন শোনান, কীভাবে চিড়িয়াখানার উপর একবার একটি বোমা এসে পড়ার পর ক্ষুধার্ত বানরেরা ছাড়া পেয়ে সেখান থেকে পালায় – অন্যদিকে বহু জীবজন্তু না খেতে পেয়ে মরে৷

‘ফোর প’জ ইন্টারন্যাশনাল’-এর পশুচিকিৎসকরা সিম্বা আর লুলাকে মোসুল থেকে বার করে নিয়ে যেতে সমর্থ হন৷ লালফিতের দরুণ বহু বিলম্বের পর ইরাকের কুর্দি রাজধানী আরবিল থেকে তাদের বিমানযোগে জর্ডানে নিয়ে যাওয়া হয়৷

ডাক্তাররা যখন সিম্বা আর লুলার কাছে পৌঁছান, তখন তাদের মরণাপন্ন অবস্থা৷ তবে জর্ডানে তাদের চিকিৎসা ও দেখাশোনা চলেছে, ফলে তারা ভালো হওয়ার পথে৷

মোসুলে ‘ফোর প’জ ইন্টারন্যাশনাল’ সংস্থার প্রেরিত গোষ্ঠীর প্রধান ছিলেন মিশরীয়-অস্ট্রিয়ান পশুচিকিৎসক, ৫২ বছর বয়সি আমীর খলিল৷ সংস্থাটি গাজা স্ট্রিপ, আরব বসন্তের সময় মিশর এবং লিবিয়াতেও এ ধরনের কাজ করেছে৷

খলিল নিজেকে বলেন ‘‘যুদ্ধপীড়িত এলাকার ভ্রাম্যমান পশুচিকিৎসক’’৷ তাঁর চোখে লুলা আর সিম্বাও ‘‘উদ্বাস্তু’’৷ বিমান আকাশে ওড়ার আগে খলিল মন্তব্য করলেন, ‘‘এই দু’টি প্রাণীর নতুন জীবন শুরু হচ্ছে; এখন থেকে ওরা আর এই যুদ্ধের অংশ থাকবে না৷’’