1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ভাষা নিয়েও ভোটের রাজনীতি

পায়েল সামন্ত কলকাতা
২৪ সেপ্টেম্বর ২০২০

ভাষা ও ভাষা গোষ্ঠীকে নিয়ে ক্রমশ আলোচনা বাড়ছে পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে৷ এই বাংলার জন্য আলাদা একটি মাতৃভাষা দিবস উদযাপন করেছে বিজেপি৷ তৃণমূল সক্রিয় করেছে তাদের হিন্দি সেলকে৷

ছবি: Payel Samanta/DW

মাতৃভাষার দাবিতে প্রাণ দিয়েছে বাঙালি৷ তৈরি হয়েছে স্বাধীন রাষ্ট্র৷ যদিও অখণ্ড ভারতীয় জাতিসত্তায় মিশে যাওয়া পশ্চিমবঙ্গের মানুষের কাছে মাতৃভাষার আবেদন ততটা জোরালো নয় বলেই অনেকে মনে করেন৷ এপার বাংলায় তাই ভাষা সেভাবে রাজনীতির হাতিয়ার হয়নি৷ ‘আমরা বাঙালি'র মতো সংগঠন গড়ে উঠলেও তা জনপ্রিয় হয়নি৷ কিন্তু ২৬ সেপ্টেম্বর পণ্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের দ্বিশত জন্মবার্ষিকীর মুখে ভাষা ও ভাষা গোষ্ঠী এসে গিয়েছে আলোচনার কেন্দ্রে৷

গত ২০ সেপ্টেম্বর রাজ্য বিজেপি পালন করেছে পশ্চিমবঙ্গ মাতৃভাষা দিবস৷ ২০১৮ সালের এই দিনে উত্তর দিনাজপুরের দাড়িভিট স্কুলে হিংসাত্মক ঘটনায় দুই পড়ুয়া রাজেশ সরকার ও তাপস বর্মনের মৃত্যু হয়৷ তাদের ভাষা শহিদ হিসেবে চিহ্নিত করে গেরুয়া শিবির দিনটি পালন করেছে৷ অথচ পশ্চিমবঙ্গেও সারা পৃথিবীর মতো ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালিত হয়৷ সেই দিনের বহুশ্রুত পংক্তির আদলে বিজেপি স্লোগান তুলেছে, ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো ২০ সেপ্টেম্বর, ভাষাবীর রাজেশ-তাপস তোমরা থাকবে চির অমর৷’ কেন এই উদ্যোগ? বিজেপির রাজ্য কমিটির সদস্য মোহিত রায় বলেন, ‘‘একুশে ফেব্রুয়ারি ভাষা আন্দোলনের সঙ্গে সরাসরি পশ্চিমবঙ্গের যোগ নেই৷ তার সঙ্গে ২০ সেপ্টেম্বর উদযাপনের কোনো বিরোধও নেই৷ বাংলা ভাষার পক্ষে আন্দোলন করতে গিয়ে দাড়িভিটে দুই ছাত্র পুলিশের গুলিতে নিহত হয়৷ তাদের স্মরণ করেই আমরা দিনটি পালন করেছি৷’’

একুশে ফেব্রুয়ারি ভাষা আন্দোলনের সঙ্গে সরাসরি পশ্চিমবঙ্গের যোগ নেই: বিজেপি নেতা মোহিত রায়

This browser does not support the audio element.

বিজেপিকে বরাবরই হিন্দি বলয়ের দল বলে চিহ্নিত করেছে তৃণমূল থেকে বামেরা৷ মোদী বাহিনীর বিরুদ্ধে হিন্দি ভাষা জোর করে চাপিয়ে দেওয়ার অভিযোগ তুলেছে পশ্চিমবঙ্গের শাসক দল৷ কিন্তু বিধানসভা ভোটের আগে সমাজের সব অংশের সমর্থন পেতে কৌশল বদল করছে তারাও৷ হাওড়ায় হিন্দি বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে৷ হিন্দি অ্যাকাডেমি পুনরুজ্জীবিত হচ্ছে৷ একই সঙ্গে তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দলের হিন্দি সেল পুনর্গঠিত করেছেন৷ দায়িত্ব দিয়েছেন প্রাক্তন রেলমন্ত্রী দীনেশ ত্রিবেদীকে৷ ২০১১ সালে ক্ষমতায় আসার পর এই সেল তৈরি হলেও তা সেভাবে সক্রিয় ছিল না৷ শুধু রাজ্য স্তরে নয়, জেলা ও ব্লক স্তরে এই সেল কাজ করবে৷ মমতার বক্তব্য, ‘‘আমরা কোনো ভাষাকে অবজ্ঞা করি না৷ বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্য খুঁজি৷ রবীন্দ্রনাথ আমাদের এই ভাবনা শিখিয়েছেন৷ তাই বাংলা ছাড়াও অন্যান্য ভাষাকে নিয়ে আমরা কাজ করছি৷’’

ভাষা নিয়ে বাঙালির আবেগ আছে, কিন্তু তা নিয়ে রাজনীতি দানা বাঁধার কথা নয়: ভোট পর্যবেক্ষক বিমলশঙ্কর নন্দ

This browser does not support the audio element.

রাজ্যের প্রধান দু'টি দলের এই সিদ্ধান্ত পশ্চিমবঙ্গে রাজনীতির চরিত্রে কিছুটা পরিবর্তনের ইঙ্গিত করছে কি? হিন্দি আগ্রাসনে অভিযুক্ত দল বাংলা ভাষার পক্ষে কর্মসূচি নিচ্ছে, আবার হিন্দিরাজ প্রতিষ্ঠার অভিযোগ তোলা অন্য দল সেই ভাষার পৃষ্ঠপোষকতা করছে৷ যদিও এতে নির্বাচনি সমীকরণে পরিবর্তনের সম্ভাবনা দেখছেন না ভোট পর্যবেক্ষক বিমলশঙ্কর নন্দ৷ তাঁর বক্তব্য, ‘‘ভাষা নিয়ে বাঙালির আবেগ আছে নিশ্চয়ই৷ কিন্তু তা নিয়ে রাজনীতি দানা বাঁধার কথা নয়৷ দক্ষিণ ভারতে ভাষা বা জাতিসত্তাকে কেন্দ্র করে রাজনীতি আবর্তিত হয়৷ পশ্চিমবঙ্গে তা সম্ভব নয়৷ বরং দুর্নীতির প্রসঙ্গ মানুষকে বেশি টানে৷’’

জাতীয় শিক্ষানীতিতে বাংলা ধ্রুপদী ভাষার মর্যাদা না পাওয়ায় বিজেপির সমালোচনা করেছেন বাংলার বিদ্বজ্জনদের একাংশ৷ সেই বিজেপি হিন্দি পৃষ্ঠপোষকতার তকমা ঝেড়ে ফেলতে এখন বাংলা ভাষার বিরুদ্ধে আগ্রাসনের অভিযোগ তুলছে৷ দলের নেতা শমীক ভট্টাচার্য ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘বাংলার উপর উর্দু চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে৷ তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে বাংলার সংস্কৃতি, পরম্পরা রক্ষা করার পক্ষে আমরা বার্তা দিচ্ছি৷ সেই লক্ষ্যে পশ্চিমবঙ্গ ভাষা দিবস পালন করা হয়েছে৷’’ কিন্তু এই কৌশলে বিজেপির পক্ষে ভাবমূর্তি পরিবর্তন করা কতটা সম্ভব হবে তা নিয়ে সন্দিহান রাজনীতির বিশ্লেষকদের একাংশ৷ একইভাবে তৃণমূলের পদক্ষেপ সম্পর্কে অধ্যাপক নন্দের বক্তব্য, ‘‘হিন্দি ভাষাভাষীর সিংহভাগই বিজেপির সমর্থক৷ মুখ্যমন্ত্রী হিন্দি ভাষার পক্ষে যে উদ্যোগ ঘোষণা করেছেন, তা তাঁদের প্রভাবিত করতে পারবে বলে আমার মনে হয় না৷’’

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ