শিল্পকর্মের মধ্যে প্রকৃতি, ডিজাইন ও প্রযুক্তির মেলবন্ধন ঘটনো মোটাই সহজ কাজ নয়৷ আমস্টারডামের দুই শিল্পী সেই অসাধ্যসাধন করে অভিনব সৃষ্টিকর্মের মাধ্যমে দর্শকদের মুগ্ধ করছেন৷
বিজ্ঞাপন
ওজনহীন অবস্থায় মুক্তির অনুভূতি, প্রকৃতির অনুকরণ, বোধশক্তি আরও সতেজ করা – এমন সব অনুভূতির ভিত্তিতে স্টুডিও ড্রিফট তাদের শিল্পকর্মে প্রকৃতি, ডিজাইন ও প্রযুক্তির মেলবন্ধন ঘটায়৷ আমস্টারডামের দুই শিল্পী এমনকি বিশাল সিমেন্টের ব্লকও শূন্যে ভাসাতে পেরেছেন৷ লনেকে খরডেইন ও রাল্ফ নাউটা ‘স্টুডিও ড্রিফট' গড়ে টিম হিসেবে অভিনব সহযোগিতার নজির গড়েছেন৷
লনেকে বলেন, ‘‘মস্কো থেকে ফিরে রাল্ফ বিমান থেকেই টেলিফোন করে আমাকে জানালো, যে তার মাথায় এক অভিনব আইডিয়া এসেছে৷ বললো, আমাদের কংক্রিটের ভাসমান ব্লক তৈরি করতে হবে৷ ভেবে দেখো, সেটা ভাসছে! কথাটা সঙ্গে সঙ্গে আমার মনে ধরলো৷ ড্রিফটার্স নামের চলচ্চিত্রে স্কটিশ হাইল্যান্ডের প্রেক্ষাপটে ভাসমান পাথর পরিবেশের সঙ্গে বৈসাদৃশ্য তুলে ধরে৷ তারা এমন প্রণালী খুঁজছিল, যা তার সঙ্গে খাপ খায়৷ কারণ প্রাকৃতিক প্রণালীর সঙ্গে তার সামঞ্জস্য নেই৷ কিন্তু মানুষ হিসেবে আমরা পরিবেশেরই প্রাকৃতিক অংশ৷ তাই আমাদের জীবন একেবারে বিপরীত৷''
বিশ্বের দামি কিছু শিল্পকর্ম
বিখ্যাত শিল্পীদের আঁকা ছবি ও ভাষ্কর্যের জন্য সংগ্রাহকরা বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করে থাকেন – ৪০ কোটি ডলারের বেশি দাম ওঠাও আশ্চর্যের কিছু নয়৷ দেখুন ছবিঘরে৷
ছবি: picture alliance/ZUMAPRESS/R.Tang
সালভাদর মুন্ডি
লিওনার্দো দা ভিঞ্চির আঁকা ২০টি অক্ষত ছবির একটি এটি৷ ধারণা করা হয়, ১৫০০ সালে এ ছবিটি আঁকা হয়৷ ১৯৫৮ সালে ছবিটিকে অনুলিপি ভেবে নিলামে মাত্র ৬০ মার্কিন ডলারে এটি বিক্রি হয়৷ যিশুখ্রিষ্টের এ ছবিটি ২০১৭ সালে ১০ কোটি মার্কিন ডলারে বিক্রি হবে ধারণা করা হলেও অজ্ঞাত এক ক্রেতা ৪৫ কোটি ডলার দিয়ে কেনেন এটি৷
ছবি: picture alliance/ZUMAPRESS/R.Tang
ইন্টারচেঞ্জ
ডাচ-অ্যামেরিকান শিল্পী উইলেম ডে কুনিং-এর আঁকা ইন্টারচেঞ্জ নামে একটি তৈলচিত্র ২০১৫ সালে ৩০ কোটি ডলারে বিক্রি হয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa
তাস খেলায় মগ্ন
উত্তর অভিব্যাক্তিবাদ ঘরানার ফরাসি শিল্পী পল সেজানের আঁকা এ ছবিটির নাম ‘দ্যা কার্ড প্লেয়ার’৷ ২০১১ সালে ২৫ কোটি ডলারে ছবিটি বিক্রি হয়৷
ছবি: picture-alliance/akg-images
‘যখন তুমি বিয়ে করবে’
এ ছবিটি আঁকা হয়েছিল ১৮৯২ সালে৷ শিল্পী ফ্রান্সের পল গগাঁ৷ ‘হোয়েন উইল ইউ মেরি’ শিরোনামের এ ছবিটির দাম ২১ কোটি ডলার৷
ছবি: picture-alliance/akg-images/E. Lessing
‘নাম্বার ১৭এ’
অ্যামেরিকান শিল্পী জ্যাকসন পোলোকের আঁকা ‘নাম্বার ১৭এ’ নামের একটি চিত্রকর্ম ২০১৫ সালে ২০ কোটি ডলারে বিক্রি হয়৷ উপরের ছবিটি পোলোকের আঁকা, যার নাম নাম্বার ৭৷
ছবি: picture-alliance/dpa
‘বিয়ের ছবি’
নেদারল্যান্ডসের বিখ্যাত মার্টেন ও ওপইয়েন এর ১৬৩৪ সালের অনুষ্ঠিত বিয়ের ছবি এটি৷ চিত্রকর ডাচ শিল্পী রেমব্রান্ট হারমেনসুন ফান রিন৷ ২০১৫ সালে বিক্রি হওয়া এ ছবিটির দাম পড়েছে ১৮ কোটি ডলার৷
ছবি: gemeinfrei/DW Montage
আলজিয়ার্সের মহিলারা
লেডি অব আলজিয়ার্স শিরোনামে ছবিটি স্পেনের জগদ্বিখ্যাত চিত্রকর পাবলো পিকাসোর ১৯৫৫ সালে আঁকা৷ নিলামে ছবিটির দাম উঠে ১৭ কোটি ৯৪ লাখ ডলারে৷
ছবি: Reuters
‘ন্যু কুশে’
ইটালির চিত্রকর আমেদেও মোদিগলিয়ানি এই ছবিটি আঁকেন ১৯১৭ সালে, তার মৃত্যুর তিন বছর আগে৷ ১৭কোটি চার লাখ ডলারে ২০১৫ সালে বিক্রি হয় ছবিটি৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo
‘মাস্টারপিস’
অ্যামেরিকান পপ আর্টিস্ট রয় লিচটেনস্টাইনের ১৯৬২ সালে একেছিলেন বিখ্যাত এ ছবিটি৷ ২০১৭ সালে ১৬ কোটি ৫০ লাখ ডলারে ছবিটি বিক্রি হয়৷
ছবি: Dan Kitwood/Getty Images
লুসিয়ান ফ্রয়েডের তিনটি প্রতিকৃতি
আইরিশ চিত্রকর ফ্রান্সিস বেকন এই তিন খণ্ডের ছবিটি আঁকেন ১৯৬৯ সালে৷ ছবিতে যার আলেখ্য, তিনি হলেন ব্রিটিশ চিত্রকর লুসিয়ান ফ্রয়েড, পক্ষান্তরে মনস্তত্বের জনক সিগমুন্ড ফ্রয়েডের পৌত্র৷ ২০১৩ সালে ক্রিস্টি’স-এর নিলামে ছবিটির দাম ওঠে ১৪ কোটি ২৪ লাখ মার্কিন ডলার৷ রয়েছে মার্কিন শিল্পকলা সংগ্রাহক এলেইন ওয়াইনের সংগ্রহে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
অঙ্গুলিনির্দেশ
সুইস ভাস্কর আলবের্তো জাকোমেত্তির সৃষ্টি এই মানুষ-সমান ব্রোঞ্জ মূর্তিটি নিউ ইয়র্কে ক্রিস্টি’স-এ নিলাম করা হয় ২০১৫ সালে, কেনেন স্টিভ কোহেন নামের এক হেজফান্ড ম্যানেজার৷ মূর্তিটি আজ বিশ্বের সবচেয়ে দামি ক্রয়যোগ্য ভাস্কর্য বলে গণ্য৷ এটি বিক্রি হয়েছেল ১৪ কোটি ১৩ লাখ মার্কিন ডলারে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/V. Hatfield/Christies
সোনার আডেলে
অস্ট্রিয়ার চিত্রকর গুস্তাফ ক্লিম্ট আডেলে ব্লখ-বাউয়ারের এই প্রতিকৃতিটি আঁকেন ১৯০৭ সালে৷ ম্যানহ্যাটানের ‘নয়ে গ্যালেরি’ নামের সংগ্রহশালার জন্য ২০০৬ সালে ছবিটি কেনেন মার্কিন ব্যবসায়ী রোনাল্ড লডার৷ ছবিটি ১৩ কোটি ৫০ লাখ মার্কিন ডলারে কেনার ব্যবস্থা করে ক্রিস্টি’স সংস্থা৷
ছবি: AUSSCHNITT: picture-alliance/Heritage Images
চিৎকার
নরওয়েজীয় চিত্রকর এডভার্ড মুঞ্চ ‘চিৎকার’ ছবিটি এঁকেছেন একাধিক বার ৷ দা ভিঞ্চির মোনালিসা ও ফান গখ-এর সূর্যমুখি ফুলের পরেই মুঞ্চের এই ছবিটিকে বিশ্বের খ্যাততম চিত্রকর্ম বলে গণ্য করা হয়৷ ছবিটির প্যাস্টেল রঙে আঁকা এই সংস্করণ নিলাম করা হয় ২০১২ সালে, নিউ ইয়র্কের সথেবি সংস্থায়৷ মার্কিন শিল্পপতি লিয়ন ব্ল্যাক ১১ কোটি ৯৯ লাখ মার্কিন ডলারে কিনেন এটি৷
ছবি: picture-alliance/dpa
নগ্নমূর্তি, সবুজ পাতা, আবক্ষ
পাবলো পিকাসো এই তেলরঙের ছবিটি এঁকেছিলেন মাত্র একদিনে – দিনটা ছিল ৮ই মার্চ, ১৯৩২৷ প্রায় অজ্ঞাত ছবিটি নিউ ইয়র্কের নিলামে বিক্রি হয় ১০ কোটি ডলারের বেশি মূল্যে, কেনেন এক অজ্ঞাত ক্রেতা৷ ব্যক্তিগত মালিকানায় থাকলেও, ছবিটি লন্ডনের টেট মডার্ন গ্যালারিকে ধার দেওয়া হয়েছে ২০১১ সালে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
রুপোলি গাড়ি দুর্ঘটনা
মার্কিন চিত্রকর অ্যান্ডি ওয়ারহল ১৯৬৩ সালে এই সিল্ক স্ক্রিন প্রিন্টটি সৃষ্টি করেন – যার বিষয়বস্তু হল একটি গাড়ি দুর্ঘটনা৷ ২০ বছর ধরে ব্যক্তিগত সংগ্রহে থাকার পর ২০১৩ সালে সথেবি-তে ছবিটি নিলাম করা হয়৷ ক্রেতা অজ্ঞাতই থাকেন; তবে ছবিটি পপ আর্ট শিল্পী ওয়ারহলের সবচেয়ে দামী ছবি বলে গণ্য করা হয়৷
ছবি: AUSSCHNITT: picture-alliance/dpa/Sotheby's
15 ছবি1 | 15
এই ভাস্কর্যের নাম ‘ভঙ্গুর ভবিষ্যৎ'৷ অসাধারণ আলোকসজ্জার মাধ্যমে ২০০৭ সাল থেকে স্টুডিও ড্রিফট আন্তর্জাতিক স্তরেও নজর কাড়ছে৷ আসল ফুল দিয়েই এটি তৈরি, ফু দিলে যার পাপড়ি উড়ে যায়৷ এটি প্রকৃতির ভঙ্গুর চরিত্রের প্রতীক৷ ওয়ার্কশপে ড্যান্ডেলিয়ন ফুল শুকিয়ে প্রত্যেকটি পাপড়ি আঠা দিয়ে লাগানো হয়, তারপর এলইডি আলো বসানো হয়৷
একঝাঁক পাখির ওড়ার পথ কীভাবে উপলব্ধি করা সম্ভব? ২০১৭ সালের ডিসেম্বর মাসে প্রথমবার তাদের শিল্পকর্ম ‘ফ্র্যানচাইসি ফ্রিডম' প্রদর্শিত হয়েছিল৷ মায়ামি সৈকতে ৩০০ ড্রোন আকাশ থেকে সেই সৃষ্টি ফুটিয়ে তুলেছিল৷ রাল্ফ নাউটা বলেন, ‘‘একে অপরের অস্তিত্বে প্রতিক্রিয়া দেখায়, এমন ড্রোনের ঝাঁক আনার ক্ষেত্রে আমরাই পথিকৃত হতে চেয়েছিলাম৷ আসল পাখির ঝাঁকের ওড়ার মধ্যে যে কাব্যময় নক্সা ফুটে ওঠে, তা আনতে চেয়েছিলাম৷ মুক্তি আসলে কী, সেই প্রশ্ন উঠে আসে৷ নাকি আমরা মুক্তি সম্পর্কে একটা ভ্রমের মধ্যে রয়েছি! আমরা কি আলাদা অথচ স্বাধীন থাকতে চাই, নাকি এক সামাজিক কাঠামোয় নিজেদের সঁপে দিয়ে তেমন স্বাধীন থাকতে চাই না?''
এই গাছে আলোকসজ্জা দর্শকদের হৃদস্পন্দন ও নাড়াচাড়া অনুযায়ী প্রতিক্রিয়া দেখায়৷ মুগ্ধ দর্শকরা নিজেদের উপলব্ধির কথা বলেন৷ কেউ বলেন, ‘‘মনে হয় আকাশে ছোট ছোট তারা রয়েছে৷ এটা আমাকে আনন্দ দেয়৷ অতি সুন্দর৷'' একজন বললেন, ‘‘খুবই নাড়া দেয়৷ মনে হয় আমি কোথাও নাচতে যাচ্ছি, কারণ খুবই প্রেরণা যোগায়, বেশ প্রাণবন্ত৷''
এই ভাস্কর্যও সেন্সরের মাধ্যমে দর্শকদের নড়াচড়া অনুযায়ী প্রতিক্রিয়া দেখায়৷ যেন জীবন্ত এক সত্ত্বা৷ লনেকে খরডেইন বলেন, ‘‘সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, আপনি কাজকে জীবন্ত করে তুলছেন৷ এমন মুভমেন্ট যোগ করছেন, যা তার নিজস্ব গতিবিধির ভিত্তিতে আপনাকে ছুঁতে পারে৷ ভাবনাচিন্তার প্রয়োজন নেই, আপনি সেটা অনুভব করতে পারবেন৷
দৃষ্টি, বিস্ময়, অনুভূতি, অভিজ্ঞতা৷ ভবিষ্যৎ সম্পর্কে স্বপ্ন ও তা কার্যকর করছে স্টুডিও ড্রিফট৷