২০০৫ সালে ভারতের আসাম রাজ্যের প্রত্যন্ত অঞ্চলে স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে চালু হয় ভাসমান স্বাস্থ্যসেবা৷ সম্প্রতি এতে যোগ হয়েছে সৌরবিদ্যুতের স্বস্তি৷
বিজ্ঞাপন
উত্তরপূর্ব ভারতের আসামের ভেতর বয়ে চলা ব্রহ্মপুত্র নদের দুই পাড়ের প্রায় আড়াই হাজার দ্বীপাঞ্চলের বেশিরভাগ অধিবাসীই দারিদ্র্য সীমার নীচে বাস করে৷ উন্নয়নের ছোঁয়া বঞ্চিত এসব দ্বীপাঞ্চলে প্রায় ২৫ লাখ মানুষের বাস৷ স্বাস্থ্যসেবার দুরবস্থা চরমে ওঠে প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে যখন সেখানকার বেশিরভাগ এলাকা প্লাবিত হয়৷ ২০১৫ সালে ভাসমান ক্লিনিক চালু হওয়ার পর এলাকার মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে যায় স্বাস্থ্যসেবা৷
আসামের১৩ জেলার ৩২টি গ্রামে কাজ করে ১৫টি ভাসমান ক্লিনিক৷ ৩ লাখেরও বেশি মানুষ সরাসরি এসব স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে সেবা পেয়ে থাকে৷ ভারত সরকারের জাতীয় স্বাস্থ্য মিশন ও সেন্টার ফর নর্থ ইস্ট স্টাডিজ অ্যান্ড পলিসি রিসার্চের উদ্যোগে স্থাপিত হয় এসব ক্লিনিক৷
তবে বিদ্যুতের অপার্যপ্ততা এসব ক্লিনিকের জন্য বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ হয়ে ওঠে৷ জেনারেটরের উপর নির্ভর করতে হওয়ায় সন্ধ্যা নামার পরেই বেশিরভাগ সময় বন্ধ রাখতে হতো অস্ত্রোপচারের মতো জরুরি সেবাও৷ তবে এ বছরের মে মাস থেকে পাঁচটি ক্লিনিকে দেয়া হয়েছে সোলার প্যানেল৷ ফলে সৌরবিদ্যুতের ব্যবহার শুরু করায় রোগীদের সেবা দেয়া এখন হয়ে উঠেছে আরো সহজ৷
সোলার প্যানেল লাগানোর ফলে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির ব্যবহার যেমন নিশ্চিন্তে করা যাচ্ছে, তেমনি জেনারেটরের বিকট শব্দ আর ধোঁয়া থেকেও মিলেছে মুক্তি৷ নার্স জুলি ফুকান বলেন, আগে বরফ ঢাকা প্যাকে করে ভ্যাকসিন নিয়ে আসা হতো বলে অনেক সময় ওগুলো নষ্ট হয়ে যেতো, এখন নৌকাতেই রাখা হয়েছে রেফ্রিজারেটর যেখানে অনায়াসেই সংরক্ষণ করা যায় ভ্যাকসিন৷ ল্যাবরেটরিতে রোগ পরীক্ষাও হয়েছে সহজ৷
নাটোরে শিশুদের শিক্ষা দিচ্ছে ভাসমান স্কুল
02:04
এ সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্পের অন্যতম অংশীদার সেলকো ফাউন্ডেশনের বিবেক শাস্ত্রি বলেন, চিকিৎসার অনেক প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির জন্য নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ প্রয়োজন৷ যেমন, বেবি ওয়ার্মাস, ডেন্টাল চেয়ার, এক্স-রে মেশিন- এসবের জন্য প্রচুর বিদ্যুতের প্রয়োজন৷ সৌর বিদ্যুৎ থাকলে প্রয়োজনীয় বিদ্যুৎ পাওয়া সহজ হয়৷
সি-নেস ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, ভাসমান স্বাস্থ্যকেন্দ্রের মাধ্যমে প্রতি মাসে অন্তত ১৮ থেকে ২০ হাজার মানুষ চিকিৎসা সেবা পেয়ে থাকে৷ প্রতিটি নৌকায় একজন জেলা প্রোগাম অফিসারের অধীনে থাকে ১৫ জন সদস্য, যার মধ্যে দুজন ডাক্তার, ৩ জন নার্স ও ১জন ফার্মাসিস্ট৷
সৌর বিদ্যুত ব্যবহার করে দক্ষিণ এশিয়ার অনেক এলাকায় বিদ্যুৎ সংকট মোকাবেলার চেষ্টা চলছে৷ বাংলাদেশে রয়েছে সৌরবিদ্যুৎচালিত ভাসমান স্কুল৷ বিদ্যুৎ সংকট মোকাবেলায় পরিবেশবান্ধব বিকল্প জ্বালানীর ব্যবস্থা এ অঞ্চলের দরিদ্র জনগোষ্ঠির জীবনমান উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা৷
পশ্চিমবঙ্গের চিকিৎসা ব্যবস্থা
ভারতীয় সংবিধান অনুযায়ী জনতাকে চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়ার ভার কেন্দ্রের নয়, রাজ্য সরকারের৷ পশ্চিমবঙ্গে সরকারি চিকিৎসার সমান্তরালে বিকল্প ব্যয়বহুল পরিষেবা থাকলেও, সিংহভাগ মানুষ সরকারি পরিষেবার ওপরই নির্ভরশীল৷
ছবি: The Week/Gunjan Sharma
মাত্র দু’টাকায় চিকিৎসা
দারিদ্র্যসীমার নীচে বসবাসকারী মানুষরা চিকিৎসার জন্য মূলত সরকারি হাসপাতালের ওপরই নির্ভরশীল৷ হাসপাতালের বহির্বিভাগে মাত্র দু’টাকার বিনিময়ে চিকিৎসার পাশাপাশি কম খরচে পেসমেকার স্থাপন, অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টি, আল্ট্রাসাউন্ড বা ইসিজির মতো পরিষেবাও পাওয়া যায়৷
ছবি: DW/P. Samanta
চেতনা বাড়াতে টিভি
প্রসূতির দেখাশোনা বা নবজাতকের প্রতিপালনের নিয়ম সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে হাসপাতালের সরকারি হাসপাতালের ন্যাটাল ওয়ার্ডে এখন হাজির টিভি৷ তাতে মেগা সিরিয়ালের বদলে সচেতনামূলক অনুষ্ঠান দেখানো হয়!
ছবি: DW/P. Samanta
সর্বক্ষণের চিকিৎসক
রাতবিরেতে অসুখ-বিসুখে সরকারি হাসপাতালই ভরসা৷ এখানে আপৎকালীন পরিষেবা ছাড়াও ২৪x৭ চিকিৎসক পাওয়া যায়৷ সারা পশ্চিমবঙ্গেই বেসরকারি হাসপাতালের তুলনায় এই ক্ষেত্রে সরকারি হাসপাতাল অনেকটা এগিয়ে৷
ছবি: DW/P. Samanta
উন্নতমানের পরিষেবা
সম্প্রতি সরকারি হাসপাতালে সংকটাপন্ন রোগী ও শিশুদের বিশেষ পরিচর্যার জন্য এসএনসিইউ, সিসিইউ, এইচডিইউ চালু করা হয়েছে, যা এতদিন ছিল কেবল বেসরকারি হাসপাতাল বা নার্সিংহোমেই৷ উপকৃত হয়েছে দরিদ্র ও নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবার৷
ছবি: DW/P. Samanta
ন্যায্য মূল্যে ওষুধ
ব্র্যান্ডের থাবা থেকে ওষুধ মুক্তি পেতেই মানুষের মুখে হাসি ফুটেছে৷ চিকিৎসক জেনেরিক নামে ওষুধ লেখার ফলে ন্যায্য মূল্যের ওষুধের দোকানে মানুষের যাতায়াত বেড়েছে৷ এ সব দোকানে ৭৭ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় মেলে৷
ছবি: DW/P. Samanta
নাগালে আধুনিক পরিষেবা
সরকারি হাসপাতালে ডিজিটাল এক্স-রে, ইউএসজি, সিটি স্ক্যানের মতো আধুনিক পরিষেবা পাওয়া যায়৷ তবে রোগীর চাপে অনেক সময়েই এসব যন্ত্রপাতি দীর্ঘদিন বিকল হয়ে পড়ে থাকে৷
ছবি: DW/P. Samanta
নানারকম প্রকল্প
পশ্চিমবঙ্গে সরকারি স্তরে স্বাস্থ্য পরিষেবায় নানা প্রকল্প নেওয়া হয়েছে৷ জননী শিশু সুরক্ষার মতো প্রকল্প এখন বেশ জনপ্রিয়৷ এর সাহায্যে মায়ের প্রসবকালীন মৃত্যুর হারও কমিয়ে ফেলা গেছে৷
ছবি: DW/P. Samanta
সরকারি হাসপাতাল প্রাঙ্গণ
বেশিরভাগ সময়েই তিল ধারণের জায়গা থাকে না৷ তবুও পরিষেবার খোঁজে দৈনিক কত না মানুষের জমায়েত হয় সরকারি হাসপাতালে! তৃতীয় বিশ্বের জনবহুল দেশে এটাই দস্তুর৷
ছবি: DW/P. Samanta
অতিথি দেবঃ ভব
সরকারি হাসপাতাল আগের থেকে পরিচ্ছন্ন হয়েছে, সুলভে মিলছে পরিষেবা: কিন্তু কিছু ছবি এখনও বদলায়নি: যেমন বিভিন্ন ওয়ার্ডে চারপেয়েদের অবাধ বিচরণ৷
ছবি: DW/P. Samanta
স্বাস্থ্য যখন পণ্য
যাঁদের হাতে টাকা রয়েছে, তাঁরা সরকারি হাসপাতালে ভিড় এড়াতে বেসরকারি পরিষেবার সুযোগ নেন৷ যদিও কলকাতার এমন বেসরকারি ক্লিনিকেও এখন ভালো ভিড় নজরে পড়ে৷
ছবি: DW/P. Samanta
যেখানে বিশ্বাস
অ্যালোপ্যাথির পাশাপাশি এ রাজ্যে হৈ হৈ করে হোমিওপ্যাথি বা আয়ুর্বেদ চিকিৎসাও চলছে৷ এর খরচ কম, তাছাড়া ব্যয়সাপেক্ষ পরীক্ষার ঝামেলা থাকে না বলে অনেকেই এ সবের উপর আস্থা রাখেন৷
ছবি: DW/P. Samanta
নার্সিংহোম দিকে দিকে
এখন পশ্চিমবঙ্গে সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল চালু হয়েছে৷ তবুও নার্সিংহোমের রমরমা কিন্তু কমেনি৷ সার্জারি, ডায়ালিসিস ইত্যাদির জন্য মানুষ এখনও এদের ওপর নির্ভরশীল৷
ছবি: DW/P. Samanta
বহুরূপে সম্মুখে
কলকাতা সহ সর্বত্রই রক্তসহ নানা পরীক্ষাগার বা প্যাথোলজি ল্যাব গজিয়ে উঠেছে৷ গুণগত মান নিয়ে প্রশ্ন থাকলেও দিব্যি তারা লাভজনক ব্যবসা করছে৷ উল্টোদিকে গ্রামীণ এলাকায় অনেক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে কোনো ল্যাবরেটরি টেকনিশিয়ান নেই৷