1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ভাস্কর্য অপসারণের পেছনে ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্য'

সুলাইমান নিলয়
২৬ মে ২০১৭

বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালতে স্থাপিত গ্রিক দেবীর ভাস্কর্য অপসারণ করা হয়েছে৷ অনেকে মনে করছেন, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ রাজনৈতিক ফায়দা হাসিল করতেই ভাস্কর্যটি অপসারণ করেছে৷

আন্দোলনকারী ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক লিটন নন্দীকে নিয়ে যাচ্ছে পুলিশ
ছবি: Bdnews24.com

বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে ভাস্কর্যটি অপসারণের পর বিষয়টি নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা চলছে বাংলাদেশ জুড়ে৷ রাস্তায়ও নেমেছেন অনেকে৷

এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের সাধারণ সম্পাদক স্নেহাদ্রী চক্রবর্ত্তী রিন্টু বলেন, ‘‘নির্বাচনী রাজনীতির সাথে মিলিয়ে আওয়ামী লীগ ভাস্কর্য সরানোর কাজটা করল৷ প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, তিনিও চান না, এই ভাস্কর্য এখানে থাকুক৷ এই কথাটাই যথেষ্ট৷ মৌলবাদী শক্তির সাথে সম্পর্ক রেখে, তাদেরকে কাজে লাগানোর অংশ হিসাবে প্রধানমন্ত্রী এই কাজ করেছেন৷''

এটা বাংলাদেশের স্বাধীনতার চেতনার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা৷

This browser does not support the audio element.

বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের সদ্য সাবেক সভাপতি সৈকত মল্লিক বলেন, ‘‘যারা এটা অপসারণের দাবি করেছেন, তারা সম্ভবত জানেন না, মূর্তি ও ভাস্কর্য এক বিষয় না৷'' তিনি মনে করেন, ‘‘হেফাজতে ইসলামের দাবির প্রেক্ষিতে এটা অপসারণ, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের আকাঙ্ক্ষার সাথে সাংঘর্ষিক৷ সরকার এখানে নিরাপদ দূরত্বে থাকছেন৷ একদিকে হেফাজতে ইসলাম, অন্যদিকে প্রগতিশীলরা৷''

ছাত্র ইউনিয়ন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সংসদের সভাপতি তুহিন কান্তি দাস বলেন, ‘‘কাল রাতে ভাস্কর্য অপসারণ করা হয়েছে, এটা নতুন কোনো ঘটনা নয়৷ এর আগে আমরা দেখেছি, হেফাজতের দাবির প্রেক্ষিতে পাঠ্যপুস্তকে সাম্প্রদায়িকীকরণ করা হয়৷ কোনো ধরণের বিচার বিশ্লেষণ ছাড়া মাস্টার্সের মান দিয়ে দিলেন৷ তাছাড়া প্রধানমন্ত্রী যখন নিজেই বলেন, হাই কোর্টে ভাস্কর্য থাকা তার পছন্দ না৷ তখন বোঝা যায়, সরকার হেফাজতের সাথে আপোশ করে ক্ষমতায় থাকতে চায়৷ এটা বাংলাদেশের স্বাধীনতার চেতনার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা৷''

রাজনীতিতে বিরোধিতা থাকলেও একই সুরে বিষয়টিকে আদালতের উপরেই ছেড়ে দেয়ার পক্ষে ছাত্রলীগ ও ছাত্রদল৷ সংসদের বাইরে থাকা বিরোধী দল বিএনপির অঙ্গ সংগঠন জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সভাপতি রাজীব আহসান বলেন, ‘‘এটা সরকার ও সুপ্রিম কোর্টের সিদ্ধান্ত৷ সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি এবং অন্যরা যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তার প্রেক্ষিতে ভাস্কর্যটি অপসারণ করা হয়েছে৷

আমাদের কথা হচ্ছে, এই ভাস্কর্য স্থাপনের সময়ই এই বিষয়গুলো চিন্তা করা উচিত ছিল৷ অপসারণের বিষয়ে আমাদের মন্তব্যের কী আছে৷''

বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এসএম জাকির হোসেন বলেন, ‘‘এটা আদালতের বিষয়৷ অপসারণের জন্য আদালত যদি রায় দিয়ে থাকে, তাহলে করে ফেলবে৷ আমরা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল৷ আদালত যে রায় দেবে, সেটার প্রতিও আমাদের শ্রদ্ধা আছে৷''

অপরাজেয় বাংলার মতো ভাস্কর্যগুলোও অপসারণের দাবি উঠলে আপনাদের অবস্থান কী হবে– জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘এটা কোনো দাবি হতে পারে না৷ এ রকম কোনো দাবি এলে ছাত্রলীগ অতীতের মতো করে সেটাকে প্রতিহত করবে৷'' 

Comment Jyotirmoy Barua - MP3-Stereo

This browser does not support the audio element.

ভাস্কর্য অপসারণ প্রসঙ্গে গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ইমরান এইচ সরকার বলেন, ‘‘সম্পূর্ণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে এই ভাস্কর্যকে ব্যবহার করা হয়েছে৷ এটা তৈরি বা ভাঙা কোনোটার সাথেই বাংলাদেশের জনগণ অবহিত নয়৷ মানুষ জানেও না কবে এটা তৈরি করা হয়েছে৷ উদ্দেশ্যমূলকভাবে এই পরিস্থিতি তৈরি করা হয়েছে৷''

ইমরান এইচ সরকার আরো বলেন, ‘‘আপনি জানেন, দেশে নানানকরম সমস্যা৷ দেশে হত্যা-গুম থেকে শুরু করে প্রতিদিন ধর্ষণ হচ্ছে৷ মানুষ কথা বলতে পারছে না৷ সামগ্রিক এই বিষয়গুলোকে আড়াল করতে এটাকে একটা ইস্যু বানানো হয়েছে৷ এখন আবার সেটাকে ভাঙা হয়েছে, মৌলবাদীদের কাছাকাছি নেয়ার জন্য৷''

উচ্চ আদালতের আইনজীবী ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়াও বিষয়টি নিয়ে ক্ষুব্ধ৷ তিনি বলেন, ‘‘এটা বসানোর ফলে আইন অঙ্গনে বিরাট কোনো পরিবর্তন হয়েছে বলে আমার মনে হয়নি৷ এটাকে ন্যায় বিচারের প্রতীক হিসাবে বসানো একটা প্রতীকী বিষয়৷ বিচার অঙ্গনে সৌন্দর্য্য বর্ধনের অংশ হিসাবে হয়ত এটা বসানো হয়েছে৷ এটাতে বাংলাদেশে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা হয়ে যায় নাই৷ তবে এটা নিয়ে আইন বিভাগ ও শাসন বিভাগের মধ্যে দ্বন্দ্ব দেখেছি৷ ধর্মীয়ভাবেও ব্যবহারের অপচেষ্টা হয়েছে৷''

‘সম্পূর্ণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে এই ভাস্কর্যকে ব্যবহার করা হয়েছে’

This browser does not support the audio element.

তিনি বলেন, ‘‘এই ভাস্কর্য স্থাপন বা অপসারণে দেশে বড় কোনো পরিবর্তন হয়ে গেছে বলে অধিকাংশ মানুষ মনেই করে না৷ সেখানে তাদের সম্পর্কেই একটা ভুল বার্তা যায়, মনে হয় যেন বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষই ধর্মান্ধ৷ ব্যাপারটা এতটা সরলীকরণ করা ঠিক না৷''

প্রতিবেদনটি নিয়ে কোনো মন্তব্য থাকলে আমাদের জানান নীচের ঘরে৷

 

সুলাইমান নিলয় বর্তমানে উন্নয়ন পেশাজীবী হিসেবে কাজ করছেন৷ তার আগে দীর্ঘদিন আইন সাংবাদিকতায় যুক্ত ছিলেন৷
স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ