মহিলাদের ফ্যাশনেবল ও মহার্ঘ অন্তর্বাস তৈরি করে এই মার্কিন কোম্পানিটি৷ তাদের সর্বাধুনিক পোস্টার অভিযান – ‘দ্য পার্ফেক্ট ‘‘বডি''' – কিন্তু প্রতিবাদের ঝড় তুলেছে৷
বিজ্ঞাপন
ভিক্টোরিয়া'স সিক্রেট-এর সর্বাধুনিক ‘ব্রা কলেকশন'-টির নাম রাখা হয়েছে এক কথায় ‘বডি' – বিজ্ঞাপনে সেটাই গিয়ে দাঁড়িয়েছে ‘দ্য পার্ফেক্ট বডি'-তে৷ সাথে সাথে সোশ্যাল মিডিয়ায় চেঞ্জ.অর্গ ঠিকানায় পিটিশন শুরু হয়ে গিয়েছে ভিক্টোরিয়া'স সিক্রেট-এর কাছ থেকে ক্ষমাপ্রার্থনা দাবি করে৷ ভিক্টোরিয়া'স সিক্রেট-কে ক্ষমা চাইতে হবে এই কারণে যে, তাদের পার্ফেক্ট বডি বিজ্ঞাপন মহিলাদের দেহ এবং মহিলাদের কি চোখে দেখা উচিত, সে' বিষয়ে একটি ‘অসুস্থ ও হানিকর বার্তা' পাঠাচ্ছে৷ টুইটারেও #আইঅ্যামপার্ফেক্ট হ্যাশট্যাগে অনুরূপ ঊষ্মা প্রকাশ পেয়েছে৷
‘বডিশেমিং'
যে তিনজন ব্রিটিশ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী চেঞ্জ.অর্গ পিটিশনটির আয়োজন করেছেন, তাঁদের বক্তব্য হলো এই যে, ভিক্টোরিয়া'স সিক্রেট এই বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে কমবয়সি মহিলাদের তাদের ফিগার পার্ফেক্ট না হওয়ার দরুণ লজ্জা দিচ্ছে: কথাটা হলো ‘বডিশেমিং'৷ ভিক্টোরিয়া'স সিক্রেট-এর সর্বাধুনিক বিজ্ঞাপন অভিযানকে ‘দায়িত্ববিহীন মার্কেটিং' আখ্যা দিয়েছেন ফ্রান্সেস ব্ল্যাক, গাব্রিয়েলা কুনটুরিডেস এবং লরা ফেরিস৷ তাদের যুক্তি, এই বিজ্ঞাপন অভিযান মহিলাদের আত্মমর্যাদার হানি ঘটাচ্ছে; মহিলারা মনে করছেন, তাঁদের দেহ পর্যাপ্ত পরিমাণে আকর্ষণীয় নয়, কেননা সৌন্দর্যের এই সংকীর্ণ সংজ্ঞায় তাদের স্থান নেই৷
ভিক্টোরিয়া'স সিক্রেট-এর পোস্টারে যে তিনজন মডেলকে দেখানো হয়েছে, তাদের প্রচুর পরিমাণে ‘এয়ারব্রাশ' করে তবেই ঐ আকৃতিতে আনা হয়েছে, বলে ফ্রান্সেস ব্ল্যাক-এর ধারণা৷ ডয়চে ভেলের সাক্ষাৎকারে ফ্রান্সেস বলেন, ‘‘পার্ফেক্ট বডি বা নিখুঁত দেহ একটা মরীচিকা, একটা অলীক কল্পনা''৷ ফ্রান্সেস উত্তর ইংল্যান্ডের লিডস বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরিজি সাহিত্য এবং দর্শন নিয়ে পড়াশুনা করেন৷ তাঁর মতে এই ধরনের বিজ্ঞাপন স্ত্রী-পুরুষের সম্পর্কের উপরেও অশুভ প্রভাব ফেলে৷
চিরসবুজ থাকার রহস্য
নিজেকে সুন্দর দেখাক তা কে না চায়? আর এই সৌন্দর্য যদি দীর্ঘদিন ধরে রাখা যায় তাহলে তো কথাই নেই! চলুন জেনে নেয়া যাক চিরসবুজ থাকার কিছু সহজ উপায়৷
ছবি: Fotolia/Fly_dragonfly
অ্যান্টি-এজিং ক্রিম
দেখতে সুন্দর হওয়া বা সুন্দর ত্বক পেতে চাইলে শুধু অ্যান্টি-এজিং ক্রিম ব্যবহারই কি যথেষ্ট? স্বাভাবিকভাবেই উত্তরটি হবে ‘না’৷ দীর্ঘদিন তারুণ্য ধরে রাখার জন্য প্রয়োজন অনেক কিছু৷ সুশৃঙ্খল জীবনযাত্রা, স্বাস্থ্যকর খাবার, হাঁটাচলা, ব্যায়াম, পজিটিভ চিন্তা করা, মনকে প্রফুল্ল রাখা আর এই সব কিছুর পাশাপাশি রূপচর্চা তো রয়েছেই৷
ছবি: Fotolia/Photo_Ma
প্রকৃতির নিয়ম
প্রতিদিনই মানুষের একটু একটু করে বয়স বাড়ে, বিশেষ করে ২৫ বছর বয়সের পর থেকে ত্বকে তার প্রভাব পরতে শুরু করে৷ তবে এটা কিন্তু কোনো দুঃসংবাদ নয়৷ পরিবর্তন এবং বিকাশ – এটাই প্রকৃতির নিয়ম৷ শরীর, ত্বক, মন, অর্থাৎ পুরো মানুষটিই বদলায় ধীরে ধীরে৷
ছবি: Fotolia/Pavel Losevsky
শুধু জীন দায়ী নয়
মোটা মানুষ বা যাঁদের মোটা হওয়ার কারণে নানা অসুখ-বিসুখ রয়েছে, তাঁদের অনেককেই বলতে শোনা যায় যে জেনেটিক কারণেই নাকি তাঁদের এ অবস্থা৷ ব্যাপারটা পুরোপুরি ঠিক নয়, কারণ দেখা গেছে একই পরিবারে দুই ভাই বা দুই বোনের মধ্যে খাদ্যাভাস ও লাইফ স্টাইলের কারণে দু’রকম হয়ে থাকে৷ কাজেই সচেতনতার কোনো বিকল্প নেই!
ছবি: privat
বেশি গুরুত্ব দেওয়া
‘‘বয়স বাড়া মানেই কোনো কিছু পরিত্যাগ করা নয়’’, বলেন ভিটেন-হ্যার্ডেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ত্বক বিশেষজ্ঞ উলরিকে হাইনরিশ৷ ‘‘বয়সের সাথে পরিবর্তন হওয়া স্বাভাবিক, তবে তাতে সৌন্দর্য হারাতে হবে – এমন কোনো কথা নেই৷’’ বয়সের সাথে ত্বক পাতলা এবং শুস্ক হয়৷ তাই এমন ক্রিম বা কসমেটিক ব্যবহার করতে হবে যাতে ভিটামিন এ, সি এবং ই-থাকে৷
ছবি: Fotolia/sweetok
অতিরিক্ত রোদ থেকে দূরে
চর্ম বিশেষজ্ঞদের মতে, সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি থেকে নিজেকে দূরে রাখা প্রয়োজন৷ এতে যে ত্বক সহজে বুড়িয়ে যায় – তা নয়, এর ফলে ত্বকে ক্যানসারও হতে পারে৷ তাছাড়া আজকাল পরিবেশ দূষণও ত্বকে বিশেষভাবে প্রভাব ফেলে৷ তাই যতটা সম্ভব দূষণ থেকে নিজেকে দূরে রাখা এবং বাইরে থেকে ফিরে গোসল বা ভালো করে হাত-মুখ ধোয়া উচিত৷
ছবি: picture-alliance/dpa
কসমেটিক
বর্তমানে সৌন্দর্য চর্চায় আবার আগের ট্রেন্ড ফিরে এসেছে, অর্থাৎ গাছগাছালির পাতা, রস, শেকড় ইত্যাদির তৈরি ভেষজ ক্রিম, পাউডার, তেল নানা কিছু এসে গেছে বাজারে৷ সৌন্দর্য পিপাসু অনেকেই আজকাল তাই সেদিকেই ঝুঁকছেন৷
ছবি: DW
সৌন্দর্য চর্চায় ছেলেরা
যৌবন ধরে রাখতে, সুন্দর দেখাতে আজকের যুগে নারী-পুরুষ সবাই সমান আগ্রহী৷ কাজেই পোশাক, চুল এবং দাড়ির স্টাইল সময়ের সাথে মিলিয়ে চলতে এবং নিজেকে তরুণ ভাবতে অনেক পুরুষই নিয়মিত বিউটি পার্লারে যাতায়াত করে থাকেন৷ ছবিতে দেখুন, কেমন স্মার্ট লাগছে৷ তবে আসল তারুণ্য কিন্তু ফোটে ওঠে অন্তর থেকে৷
ছবি: Fotolia/auremar
খাওয়া-দাওয়া
সুস্থ আর সুন্দর থাকতে খাওয়া-দাওয়ার ভূমিকা অনেক৷ মানুষের শরীরে প্রোটিন, ভিটামিন, শর্করা, মিনারেল – এগুলির দরকার৷ সব কিছুই খাওয়া উচিত, তবে একটা পরিমিতিবোধ থাকতে হবে৷ প্রচুর শাক-সবজি, ফল-মূল খাবার তালিকায় থাকা প্রয়োজন৷ মুখ হচ্ছে শরীরের আয়না৷ অর্থাৎ শরীরের ভেতরটা ভালো থাকলে চোখে-মুখে তার প্রভাব তো পরবেই৷
ছবি: picture-alliance/dpa
নিয়মিত ব্যায়াম
শুধু সুন্দর মুখ আর টানটান ত্বকই তারুণ্যের চাবিকাঠি নয়৷ শরীরটাও থাকতে হবে টানটান আর সেজন্য চাই নিয়মিত কিছুক্ষণ শরীরচর্চা বা ব্যায়াম এবং মুক্ত বাতাস সেবন৷ শারীরিক এবং মানসিকভাবে ফিট থাকার জন্য বছরে অন্তত একবার ‘মেডিকেল চেকআপ’ করিয়ে নেওয়াও অত্যন্ত দরকারি৷
ছবি: picture-alliance/dpa
সময়ের সাথে চলা
বয়স যতই হোক না কেন সময়ের সাথে কিছুটা তাল মিলিয়ে চলা বেশ প্রয়োজন৷ তবেই তো সমাজে সব বয়সিদের সাথে মিলেমিশে, একসঙ্গে চলা সম্ভব৷ নিজেকে তরুণ ভাবা এবং সব বিষয়ে আপডেট থাকা অবশ্যই এক্ষেত্রে একটা বড় ব্যাপার৷
ছবি: Fotolia/Woodapple
গ্রিন-টি
সৌন্দর্য চর্চা বা তারুণ্য ধরে রাখতে গ্রিন-টি বা সবুজ চায়ের জুড়ি নেই৷ এতে রয়েছে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট৷ নিয়মিত গ্রিন-টি পান শরীরে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে৷ ডাক্তার হাইনরিশ বলেন, ‘‘১২ সপ্তাহ ধরে ৬০ জন মানুষকে প্রতিদিন গ্রিন-টি পান করিয়ে একটি সমীক্ষা চালানো হয়৷ যাতে বেরিয়ে আসা যে, তাঁদের চামড়া বা ত্বক অনেক টানটান হয়েছে৷’’
ছবি: Fotolia/gaai
পজিটিভ চিন্তা
যথেষ্ট ঘুম, অপ্রয়োজনীয় স্ট্রেস এড়িয়ে চলুন৷ অ্যালকোহল, ধূমপান পুরোপুরি ছেড়ে দিন আর দিনে অন্তত একবার প্রাণ খুলে হাসুন৷ ভালো বই পড়ুন, গান শুনুন৷ প্রকৃতির সাথে সম্পর্ক রাখুন, হিংসা, বিদ্বেষ ভুলে গিয়ে পারলে অন্যের উপকার করার চেষ্টা করুন৷ তবে সেজন্য চাই সুন্দর একটি মন৷ সুন্দর মনের অধিকারী হতে পারলে তারুণ্য যে আপনার হাতের মুঠোয়!
ছবি: Fotolia/Fly_dragonfly
12 ছবি1 | 12
সৌন্দর্যের সংকীর্ণ সংজ্ঞা
ভিক্টোরিয়া'স সিক্রেট-এর পোস্টারটি পুরুষদের বলে, মহিলাদের তাদের চেহারা অনুযায়ী বিচার করতে, যার ফলে পুরুষদের সুস্থ, স্বাভাবিক নারী-পুরুষ সম্পর্ক স্থাপনের ক্ষমতার হানি হয়৷ অপরদিকে যে সব মহিলা সৌন্দর্যের এই সংকীর্ণ সংজ্ঞার মধ্যে পড়েন না, তাদের প্রতি পুরুষদের অশ্রদ্ধা জন্মায়৷
নয়ত ২২ বছর বয়সি ফ্রান্সেস-এর মূল আপত্তি হলো ‘দ্য পার্ফেক্ট বডি', এই স্লোগানটি নিয়ে৷ এখানে বিজ্ঞাপনের জগৎ স্ত্রী-পুরুষ কাউকেই রেয়াত করে না – মহিলাদের মতো পুরুষদেরও নিখুঁত দেহসৌষ্ঠবের অধিকারী হবার জন্য উৎসাহ প্রদান করা হয়, সেই অলীক দেহসৌষ্ঠবের নানা ছবি দেখিয়ে৷ কাজেই স্ত্রী-পুরুষ দু'পক্ষই ‘নেগেটিভ বডি ইমেজ' বা নিজের দেহ সম্পর্কে খারাপ ধারণায় ভোগেন, যার ফলে তাদের আত্মমর্যাদাবোধ কমে যায়৷