ভিক্টোরিয়া নয়, নেতাজি স্মারক?
২২ জানুয়ারি ২০২১উত্তরপ্রদেশের বিজেপি সরকার যখন ভারতের বিখ্যাত মুঘলসরাই জংশনের নাম বদলে দীনদয়াল উপাধ্যায় জংশন করেছিল, তখন বাঙালিদের মধ্যে রসিকতা চালু হয়েছিল, যে জনপ্রিয় খাবার মোগলাই পরোটার নাম এবার বদলে হয়ে যাবে দীনদয়াল পরোটা!
আদি নামের যে ঐতিহাসিক, সাংস্কৃতিক প্রেক্ষাপট থাকে, তা কখনো বদলে ফেলা যায় না৷ ফলে কলকাতার পার্ক স্ট্রিটের নাম মাদার তেরেসা সরণি হলেও লোকমুখে পুরনো নামই বহাল থাকে৷
কিন্তু ভোট বড় বালাই৷ পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা ভোটের বছরে বাঙালি অস্মিতাকে জাগিয়ে তুলে বিজেপি নিজের প্রভাব বাড়াতে চাইছে৷ ফলে ২৩ জানুয়ারি, নেতাজি সুভাষচন্দ্র বোসের জন্মদিনে এক দিনের ঝটিকা সফরে কলকাতায় আসছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী৷ উপলক্ষ্য, নেতাজির ১২৫–তম জন্মবার্ষিকী উদযাপন৷ পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি চেয়েছিলেন, নেতাজির জন্মদিনটি জাতীয় ছুটি ঘোষণা করা হোক৷ তা না হলেও দিনটি ‘পরাক্রম দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করেছে কেন্দ্র সরকার৷ নেতাজির ১২৫–তম জন্মবার্ষিকী উদযাপনে একটি কেন্দ্রীয় কমিটিও গঠিত হয়েছে৷ যদিও নেতাজির পরিবারের কেউ, বিশেষত ইতিহাসবিদ এবং নেতাজি–বিশেষজ্ঞ সুগত বসু, যিনি সম্পর্কে নেতাজির পৌত্র, তিনি সেই কমিটিতে নেই৷ সেটা সম্ভবত এই কারণে যে সুগতবাবু তৃণমূল কংগ্রেসের নির্বাচিত সাংসদ ছিলেন৷
২৩ জানুয়ারি ভিক্টোরিয়া স্মৃতিসৌধকে নেতাজি স্মারক হিসেবে ঘোষণা করতে পারেন নরেন্দ্র মোদী। কিন্তু এমন এক ঐতিহাসিক স্মারককে কি ইচ্ছেমতো নতুন নামকরণ করা যায়? এশিয়াটিক সোসাইটির প্রাক্তন অধিকর্তা, এখন তৃণমূল কংগ্রেসের সঙ্গে যুক্ত নির্বেদ রায় কটাক্ষ করলেন, ‘‘অক্টোরলনি মনুমেন্টের নাম একসময় শহীদ মিনার করা হয়েছে৷ যারা করেছিলেন, তারা মনুমেন্টের মাথা লাল রং করে দিয়েছিলেন, যাতে বামফ্রন্টের ব্যাপারটা বোঝা যায়৷ কোনো জিনিস নিজে না তৈরি করে, সেটার নাম বদলে দেওয়ার মতো সহজতম কাজ আর কিছু নেই৷ একটা ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল তৈরি করতে গেলে একটা বিপুল কর্মযজ্ঞের ব্যাপার৷ সেই কর্মযজ্ঞের যখন ক্ষমতা নেই, সেই দক্ষতা নেই, সেই স্বপ্ন দেখার ব্যাপার নেই, তখন নামটা বদলে দিলেই হলো!’’
হিন্দু জাগরণ মঞ্চের পশ্চিমবঙ্গ শাখার সাধারণ সম্পাদক তাপস বারিক যদিও মনে করছেন, এটা একটা ঠিক পদক্ষেপ। তার বক্তব্য, ‘‘একটা বিদেশি নাম মুছে যাবে, সেটা ভালোই হবে। এটাই হওয়া উচিত। যেসব বিদেশি নাম আছে, সেই নামগুলো সব, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সংশোধন করা উচিত।’’
নির্বেদ রায় যদিও বলছেন, এভাবে ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটকে নস্যাৎ করার চেষ্টায় নাম বদলালে, সেটা কেউ মানবে না। যারা বলার, তারা ভিক্টোরিয়াই বলবে। আসলে দেশে যখন গড় জাতীয় উৎপাদন ২৪% কমে গেছে, তখন এই কাজগুলো করা ছাড়া উপায় কী! এই মূর্তি বানানো, এই নাম পাল্টে দেওয়া৷ ‘‘ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল কীভাবে তৈরি হয়েছিল, ওরা জানে? সরকারের এক পয়সা খরচা হয়নি৷ লটারির টাকায় তৈরি হয়েছিল৷ কিছুই জানে না, কতগুলো মূর্খ এসে যা করার, তাই করছে!’’