সিরিয়া ও ইরাকে খিলাফত প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ব্যর্থ হলেও তথাকথিত ইসলামিক স্টেট বা আইএস যে এখনো ফুরিয়ে যায়নি, শ্রীলঙ্কায় ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার ফলে তা স্পষ্ট হয়ে গেছে৷ এমন ‘সাফল্য' জাহির করতে প্রায় ৫ বছর পর আবার উদয় হলেন আইএস নেতা আবু বকর আল বাগদাদি৷ সোমবার প্রকাশিত একটি ভিডিও বার্তায় যে ব্যক্তি নিজেকে আল বাগদাদি হিসেবে দাবি করছেন, নিশ্চিতভাবে তার পরিচয় জানার চেষ্টা চলছে৷
বিশ্বের ‘মোস্ট ওয়ান্টেড' তালিকার শীর্ষে তার নাম থাকলেও ২০১৪ সালে ইরাকের মোসুল শহরে তাকে শেষবার প্রকাশ্যে দেখা গিয়েছিল৷ সে সময়ে তিনি খিলাফতের ঘোষণা করেছিলেন৷ ২০১৮ সালের আগস্ট মাসে আইএস নেতার এক অডিও বার্তা প্রকাশ করা হয়েছিল৷ সোমবার আইএস-এর সংবাদ মাধ্যম হিসেবে পরিচিত আল-ফুরকান ১৮ মিনিটের এই ভিডিও প্রকাশ করেছে৷ উল্লেখ্য, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তার মাথার দাম আড়াই কোটি ডলার ধার্য করেছে৷
ভিডিও বার্তায় আল বাগদাদি সিরিয়ার বাগুজ শহরে আইএস-এর পরাজয় মেনে নিলেও প্রতিশোধের হুমকি দিয়েছেন৷ অন্যান্য জায়গাও যে আইএস-এর হাতছাড়া হয়ে গেছে, সেই সত্যও মেনে নিয়ে তিনি বলেন, ঈশ্বর আইএস-কে জিহাদ চালিয়ে যাবার নির্দেশ দিয়েছেন, জয়ের নির্দেশ দেননি৷ পশ্চিমা বিশ্বের বিরুদ্ধে দীর্ঘ সংগ্রামের উল্লেখ করেন আল বাগদাদি৷ এ প্রসঙ্গে তিনি বাংলাদেশে পুলিশের উপর বিস্ফোরক হামলারও উল্লেখ করেন৷ ২১শে এপ্রিল শ্রীলঙ্কায় একাধিক হামলাকে তিনি বাগুজ হারানোর প্রতিশোধ হিসেবে তুলে ধরেন৷ সুদান ও আলজেরিয়ায় সাম্প্রতিক প্রতিবাদ-বিক্ষোভেরও উল্লেখ করেন আল বাগদাদি৷ পশ্চিম আফ্রিকার প্রেক্ষাপটে ফ্রান্স ও সে দেশের সহযোগী দেশগুলিকে শত্রু হিসেবে উল্লেখ করেন তিনি৷ পরাজয়ের প্রতিশোধ নিতে আইএস ৮টি দেশে ৯২টি অভিযান চালিয়েছে বলেও দাবি করেছেন আল বাগদাদি৷
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সবার আগে সোমবার প্রকাশিত এই ভিডিও যাচাই করবে বলে জানিয়েছে৷ সেই সঙ্গে আইএস-এর বিরুদ্ধে সংগ্রাম চালিয়ে যাবারও অঙ্গীকার করেছে ওয়াশিংটন৷ মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র বলেন, এই সন্ত্রাসবাদী ও তাদের সব নেতার স্থায়ী পরাজয় ও তাদের বিচার নিশ্চিত করা হবে৷ তাঁর মতে, আল বাগদাদি বেঁচে থাকলেও ইরাক ও সিরিয়ায় তাদের পরাজয় এই গোষ্ঠীকে তছনছ করে দিয়েছে৷ মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ এখনো এই ভিডিও বার্তা সম্পর্কে প্রকাশ্যে কোনো মন্তব্য করেনি৷
ধর্ম, বর্ণ, স্বাধীনতা নানা নামে উগ্রবাদ ছড়ায় বিশ্বে৷ বিভিন্ন মতাদর্শের উপর ভর করে গড়ে ওঠে জঙ্গি সংগঠন কিংবা সশস্ত্র বাহিনীও, যা অনেক সময় রূপ নেয় সন্ত্রাসে৷
ছবি: Reutersএকসময় পোশাকি নাম ছিল ‘ইসলামিক স্টেট অব ইরাক অ্যান্ড দি লিভ্যান্ট’৷ সংক্ষেপে আইএসআইএল কিংবা আইএসআইএস৷ তবে বেশি পরিচিত আইএস বা দায়েশ নামে৷ বিশ্বজুড়ে ইসলামি খেলাফত প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দিয়ে ২০১৪ সালে তারা আত্মপ্রকাশ করে৷ ২০১৫ সালের শেষ পর্যন্ত বিশ্বের ৮৫টি দেশ থেকে প্রায় ৩০ হাজার যোদ্ধা জঙ্গি গোষ্ঠীটিতে যোগ দেয়৷ সিরিয়া, ইরাকের একটি বড় অংশ দখল করে নিয়েছিল তারা৷ তবে সম্প্রতি শেষ ঘাঁটিটিও হারিয়েছে আইএস৷
ছবি: Reutersজর্ডান-প্যালেস্টেনিয়ান মুসলিম ধর্মীয় গুরু আব্দুল্লাহ আজম৷ একটি জিহাদি জার্নালে আফগানিস্তানে লড়াইয়ের জন্য মুজাহিদিন বা বিদেশি যোদ্ধাদের বাহিনী গড়ার ধারণা দেন তিনি৷ ১৯৮৯ সালে মারা গেলেও তাঁর মতবাদই বৈশ্বিক জিহাদি ধারণার জন্ম দেয়৷ যার উপর ভিত্তি করে ১৯৮৮ সালে আল-কায়েদা প্রতিষ্ঠা করেন ওসামা বিন লাদেন৷ আফগানিস্তান থেকে রাশিয়ার সৈন্য প্রত্যাহারের পরে আল-কায়দার শাখা ছড়িয়ে পড়ে অনেক মুসলিম দেশে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Ausafবিভিন্ন দেশে ভিন্ন ভিন্ন নামেও আল-কায়দার জিহাদি মতাদর্শের উপর ভিত্তি করে জঙ্গি সংগঠন গড়ে ওঠে৷ তারই একটি আল শাবাব৷ সোমালিয়ায় শরিয়া আইন প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য নিয়ে ২০০৬ সালে গোষ্ঠীটি প্রতিষ্ঠিত হয়৷ দেশটিতে বহু বিদেশি নাগরিক হত্যার জন্য দায়ী তারা৷ আফ্রিকার এমন আরেকটি জঙ্গি গোষ্ঠী নাইজেরিয়ার বোকো হারাম৷ ২০১৪ সালে ৩০০ স্কুল ছাত্রী অপহরণের ঘটনায় গোষ্ঠীটি আন্তর্জাতিকভাবে আলোচনায় আসে৷
ছবি: Reuters/J. Penneyবর্ণবাদী মতবাদের উপর ভিত্তি করে বিশ্বে যুগে যুগে নানা গোষ্ঠীর উত্থান হয়েছে৷ বিংশ শতকে ‘হোয়াইট সুপ্রিমেসি’ বা সাদাদের শ্রেষ্ঠত্বের ধারণার উপর ভিত্তি করে অ্যামেরিকায় গড়ে ওঠে ‘কু ক্লুক্স ক্ল্যান’ নামের কট্টর বর্ণবাদী গোষ্ঠী৷ বর্ণবাদের উপর ভর করে ইউরোপে উত্থান হয় ফ্যাসিবাদের৷
ছবি: picture alliance / ZUMAPRESS.comসাম্প্রতিক সময়ে নতুন করে পশ্চিমা দুনিয়ায় উগ্র ডানপন্থার প্রকটতা বাড়ছে৷ অ্যামেরিকা, ইউরোপ থেকে শুরু করে অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড পর্যন্ত এই মতাদর্শ ছড়িয়ে পড়ছে৷ ভিন্ন ধর্ম, বর্ণ, জাতি ও সংস্কৃতির মানুষের প্রতি এর অনুসারীরা রক্ষণশীল৷ সবশেষ নিউজিল্যান্ডে হামলা করে ৫০ জনকে হত্যায় অভিযুক্তও তেমনই একজন৷
ছবি: Reuters/M. Mitchellসমাজতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থা কিংবা কমিউনিস্ট রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য সশস্ত্র সংগ্রামের পথ বেছে নেয় বিশ্বের অনেক উগ্র বামপন্থি সংগঠন৷ রাষ্ট্রের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী থেকে শুরু করে, সরকারি কর্মকর্তা, সম্পদশালী মানুষদের তারা শত্রু বিবেচনা করে৷ ফিলিপিন্সের কমিউনিস্ট পার্টি নিও পিপলস আর্মি বা ভারতের মাওবাদী কমিউনিস্ট পার্টি তারই উদাহরণ - যাদেরকে সন্ত্রাসী গোষ্ঠী হিসেবে অভিহিত করে আসছে দেশগুলোর সরকার৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/M. Quraishiইসরায়েলের দখলদারিত্বের অবসান ঘটিয়ে একটি স্বাধীন প্যালেস্টাইন রাষ্ট্রের জন্য দীর্ঘদিন ধরে সংগ্রাম করে আসছে ফিলিস্তিনিরা৷ এজন্য সশস্ত্র যুদ্ধের পথ বেছে নিয়েছে হামাস, প্যালেস্টাইন লিবারেশন ফ্রন্ট, প্যালেস্টাইন ইসলামিক জিহাদ৷ উগ্রতার কারণে এই দলগুলোকে সন্ত্রাসী হিসেবে অভিহিত করে আসছে যুক্তরাষ্ট্র৷ এমন স্বাধিনতাকামী সংগঠন আছে আয়ারল্যান্ড, রাশিয়া, পাকিস্তান ভারতসহ বিশ্বের নানা দেশে৷
ছবি: picture-alliance এসবি/এসিবি (এএফপি, রয়টার্স)