একটা ভিডিও কিভাবে ভাইরাল করতে হয়, চীনে শিক্ষার্থীদেরকে সেই শিক্ষা দেয়া হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে, যাতে তাঁরা এটাকে কাজে লাগিয়ে পেশাগত জীবনে সফল হতে পারেন৷
বিজ্ঞাপন
জিয়াং মেঙ্গা একজন শিক্ষার্থী৷ ২১ বছর বয়সি এই শিক্ষার্থী ক্লাসে শেখা দক্ষতা কাজে লাগিয়ে তাঁর ক্যাম্পাসের এখানে-সেখানে ঘোরাফেরা করেন৷ এ সময় তাঁর হাতে থাকে সেলফি স্টিক, যা প্রায় সব সময় উপরেই উঠানো থাকে৷ তিনি তাঁর তাৎক্ষণিক চিন্তাগুলো ‘লাইভ’ করেন৷ মাঝে মাঝেই ক্যামেরার দিকে শূন্যে চুম্বন ছুড়ে দেন৷
চীনে প্রায় ৭০ কোটি স্মার্টফোন ব্যবহারকারী রয়েছে৷ তাদের সঙ্গে যোগাযোগে ব্যবহার করা হয় এই দক্ষতা৷ এই কাজে নিয়োজিতদের বলা হয় ‘ওয়াংহং’৷ এদেরকে ঘিরে গড়ে উঠেছে বিলিয়ন ডলারের শিল্প৷ সুতরাং এটা প্রভাবিত করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের কারিকুলামকেও৷
ওয়াইআইডাব্লিউইউ ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যান্ড কমার্শিয়াল কলেজে জিয়াং মেঙ্গার আরো ৩৩ জন সহপাঠী রয়েছে৷
কিভাবে আরো কেতাদুরস্ত পোশাক পরা যাবে, মেক-আপ প্রয়োগ করা যাবে, ক্যামেরায় কিভাবে কাজ করতে হবে ইত্যাদি সেখানকার ক্লাসরুমে শেখানো হয়৷ একইসঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয়া হয় বিভিন্ন বিলাসবহুল ব্র্যান্ডের সঙ্গেও৷
জিয়াং বলেন, যে পোশাকে আমাকে সুশ্রী দেখাবে এবং সুন্দর সুন্দর ছবি তুলতে পারবো–আমি তেমন পোশাক পরতে চাই৷ এই শিক্ষা সত্যিই আমার জন্য খুব উপযোগী৷
তিনি সাংহাইয়ের নিকটবর্তী এই কলেজে ‘মডেলিং এবং অ্যাটিকেট’-এ মেজর নিয়ে পড়ছেন৷
নাচের শিক্ষক হুউ শিয়াওনান বলেন, ই-কমার্স ইন্ডাস্ট্রি খুব দ্রুত অগ্রসর হচ্ছে৷ এ কারণে এই বিষয়ে পড়ুয়াদের চাহিদাও বাড়ছে৷
ভাইরাল হওয়া কিছু ভুয়া খবর
আজকাল সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে অনেক তাজা খবর শেয়ার করা হয়৷ কিন্তু সেই খবরগুলোতে অনেক ভুয়া খবরও থাকে৷ অনেক সময় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারকারীরা বিভ্রান্তও হন৷ ছবিঘরে থাকছে ২০১৬ সালে সবচেয়ে বেশি ছড়ানো কয়েকটি ভুয়া খবর৷
একটি ফেসবুক লাইভে দেখাচ্ছিল আন্তর্জাতিক মহাকাশ কেন্দ্র থেকে নভোচারীদের স্পেসওয়াক করার দৃশ্য৷ সোশ্যাল মিডিয়ায় তা ভাইরাল হয়ে যায়৷ ইউএনআইএলএডি, ভাইরাল ইউএসএ এবং ইন্টারেসটিনেট- এটি পোস্ট করার পর ফেসবুকে বিপুল পরিমাণ লাইক ও শেয়ার হয়৷ কিন্তু মজার ব্যাপার হলো, ফুটেজের কোথাও নাসা বা ফেসবুকের লাইভ স্ট্রিম কথাটির উল্লেখ ছিল না৷ পরে নাসা’র এক মুখপাত্র জানান, ভিডিওটি ২০১৩ সালে রুশ নভোচারীদের ধারণ করা ভিডিও৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Nasa
করোনা বিয়ারের প্রতিষ্ঠাতার উইল
২০১৬ সালের অন্যতম ভাইরাল খবর এটি-করোনা বিয়ার-এর প্রতিষ্ঠাতা আন্তোনিও ফার্নান্দেজ মৃত্যুর আগে তাঁর জন্মভূমি স্পেনের একটি গ্রামের ৮০টি পরিবারের মধ্যে ২০ কোটি ইউরো দান করার উইল করে গেছেন৷ ডেইলি মেইল প্রথমে খবরটি প্রকাশ করে স্থানীয় পত্রিকার বরাত দিয়ে৷ পরে আরটি, দ্য ইন্ডেপেন্ডেন্ট, দ্য মিররসহ বেশ কয়েকটি সংবাদপত্রও তা প্রকাশ করে৷ পরে ফার্নান্দেজের পরিবার প্রতিবাদ জানানোয় তারা খবরটি সরিয়ে ফেলে৷
ছবি: picture alliance/AP Photo/M. Rourke
ধর্ষণের ভুয়া খবর
২০১৬ সালের জানুয়ারিতে বার্লিনে লিজা নামের এক জার্মান কিশোরীকে এক দল অভিবাসীর ধর্ষণ করার খবর ভাইরাল হয়ে যায়৷ বিশেষ করে রুশ মিডিয়ায় খবরটি বিপুল কভারেজ পায়৷ পরে কিশোরীটি জানায়, সে সব কিছু বানিয়ে বলেছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Wuestenhagen
মার্কিন নির্বাচন
মার্কিন নির্বাচনে যে ভুয়া খবরটি সবচেয়ে বেশি ছড়িয়েছিল তাতে ছিল ২০১৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রের অপরাধের মাত্রার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনের ফলাফলের তুলনা৷ এছাড়া নির্বাচনের ফলাফলের এমন একটি মানচিত্র ওয়াশিংটন পোস্ট প্রকাশ করেছিল, যেটির দিকে ভালোভাবে তাকালে বোঝা যায় একেবারে ওপরে ২০১২ সালের উল্লেখ রয়েছে৷
ট্রাম্প এবং সিম্পসন
সিম্পসন কার্টুনে বেশ কিছু ভবিষ্যদ্বাণী থাকে৷ আর এ কারণে ট্রাম্প নির্বাচনে জেতার পর একটি ট্রল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়, যেখানে বলা হয় সিম্পসনে আগেই বলা হয়েছিল, ট্রাম্প নির্বাচনে জিতবেন৷ কিন্তু বাস্তবে এমন কিছু হয়নি৷ অথচ টুইটারে বাস্তব আর পুরোনো ভুয়া সিম্পসনের ছবি দেয়ায় নিউজটি ভাইরাল হয়ে যায়৷
ছবি: INTERTOPICS / Taschen-Verlag
শোকার্ত ক্যাঙ্গারু
ডেইলি মেইল এমন একটি ছবি প্রকাশ করে যেখানে দেখানো হয় এক পুরুষ ক্যাঙ্গারু নারী ক্যাঙ্গারুকে দুই হাতে ধরে অশ্রুসজল চোখে তাকিয়ে আছে৷ ইভান সুইৎজারের তোলা ছবিটি এভাবে উপস্থাপনের কারণে ভাইরাল হয়ে যায়৷ তবে ভেটেরিনারি বিশেষজ্ঞরা জানান, নারী ক্যাঙ্গারুর সঙ্গে যৌন মিলনের ইচ্ছে জাগলে পুরুষ ক্যাঙ্গারুর চোখ অশ্রুসজল হয়, তখনই তারা দুই হাত দিয়ে ঝাঁকিয়ে নারী ক্যাঙ্গারুকে উত্তেজিত করার চেষ্টা করে৷
ছবি: DW/C. Atkinson
বিখ্যাত গণমাধ্যমের নকল
ভুয়া খবর প্রচারকারীরা জনপ্রিয় এবং বিখ্যাত ওয়েবসাইটগুলোকে নকল করে ৷ ফলে মানুষ খুব ভালোভাবে লক্ষ্য না করলে বুঝতে পারে না, সেগুলো প্রকৃত ওয়েবসাইট, নাকি ভুয়া৷ যেমন, এবিসি নিউজ ডট কম এর সঙ্গে ডট সিও যুক্ত করে (ABCnews.com.co), ব্লুমবার্গের সঙ্গে ডট এমএ যুক্ত করে, ওয়াশিংটন পোস্ট ডট কম- এর সঙ্গে ডট সিও যুক্ত করে কয়েকটি ভুয়া সংবাদ সাইট তৈরি করা হয়েছে৷ এসব ওয়েবসাইটের কাজই ভুয়া সংবাদ পরিবেশন করা৷
ছবি: Getty Images/S. Platt
7 ছবি1 | 7
২০ বছর বয়সি ওয়াং শিন প্রথমে পড়তে গিয়েছিলেন অ্যাকাউন্টিং৷ সেখান থেকে মেজর বদলে এই বিষয়ে চলে এসেছেন৷
ওয়াং হুউহুউ এবং তাঁর বন্ধু ওয়াং রুহানকে এই শিক্ষার্থীরা অনুসরণ করার চেষ্টা করে৷
ভালো ভালো ফ্যাশন এবং কোথায় সেটা পাওয়া যাবে – তা নিয়ে তাঁরা গত বছর চীনের সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ওই জুটি পোস্ট দেয়া শুরু করেন৷ এই শখ এক সময় উপার্জনের উপায় হয়ে যাবে, শুরুতে তারা এটা ভাবতেও পারেননি৷
তাঁদের এই পোস্ট দ্রুতই লাখ লাখ মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে৷ বিক্রেতারা স্বীকৃতি পেতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে৷ এখন তাঁরা তাঁদের সাইবার-খ্যাতি কাজে লাগিয়ে অর্থ উপার্জন করছেন৷ প্রতিষ্ঠা করেন একটি ই-কমার্স ফ্যাশন ব্যবসা৷
ওয়াং হুউহুউ বলেন, ‘‘আমি এমন একটি আকর্ষণীয় আইটেম খুঁজে বের করি, যেটা আমি পরবো৷ সেটার ছবি তুলে ব্লগে পোস্ট করে দেই৷ এরপর মানুষ সত্যিই সেখানে যাবে এবং সেটা ক্রয় করবে৷’’
ইন্টারনেট কনসালটেন্সি অ্যানালাইসিস ইন্টারন্যাশনালের মতে চীনের ওয়াংহং শিল্পের মূল্য এখন ৭ দশমিক ৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার৷ ২০১৮ সাল নাগাদ তা দ্বিগুন হয়ে যাবে৷
এএফপি/এসএন (এএফপি)
প্রিয় পাঠক, আপনি কিছু বলতে চাইলে লিখুন নীচে মন্তব্যের ঘরে৷
২০১৬ সালে যারা ইউটিউবের কোটিপতি
ইউটিউবে চ্যানেল খুলে কতো টাকা রোজগার করা যায়, বলে আপনার ধারণা? ফোর্বসের তালিকায় এ ধরনের কোটিপতিদের নাম পাবেন৷
ছবি: Roslan Rahman/AFP/Getty Images
১০. কলিন ব্যালিঙ্গার, ৫০ লাখ ডলার
২০১৫ সালে তাঁর স্মৃতিকথা ‘‘সেল্ফ-হেল্প’’ বিরাট হিট হয়৷ সেখানে কলিনের অল্টার ইগো ছিলেন অপটু মিরান্ডা সিংস৷
ছবি: Getty Images/M. Kovac
৯. রেট অ্যান্ট লিংক, ৫০ লাখ ডলার
দু’জনে মিলে একটি মর্নিং টক শো হোস্ট করেন৷ শো’র নাম ‘‘গুড মিথিক্যাল মর্নিং’’৷
ছবি: picture-alliance/AP Images
৮. জার্মান জার্মেন্ডিয়া, ৫৫ লাখ ডলার
ল্যাটিন অ্যামেরিকার সবচেয়ে বড় ইউটিউব হিট হলেন চিলির এই কমেডিয়ান৷ তিনটি চ্যানেল মিলে এঁর সাবস্ক্রাইবারের সংখ্যা চার কোটি আশি লাখ৷
ছবি: Getty Images/M. Windle
৭. মার্কিপ্লায়ার, ৫৫ লাখ ডলার
আসল নাম মার্ক ফিশবাখ৷ সাবস্ক্রাইবারের সংখ্যা এক কোটি সাতান্ন লাখ৷
ছবি: Getty Images/T. Boddi
৬. টাইলার ওকলি, ৬০ লাখ ডলার
এলজিবিটি আন্দোলনকারী, ২০১৫ সালে ‘‘বিঞ্জ’’ নামের বেস্টসেলারটি তাঁকে খ্যাতি এনে দেয়৷ ইউটিউবে তাঁর ভিডিওগুলো অনেকটা দিনলিপির মতো৷
ছবি: picture-alliance/PictureGroup
৫. রোজানা প্যানসিনো, ৬০ লাখ ডলার
নিজেই নিজেকে বেকিং শিখিয়েছেন৷ এখন তাঁর ‘‘নার্ডি নামিস’’ শো’তে অন্যদের কাপ-কেক তৈরি করতে শেখান৷
ছবি: Getty Images/T. Robinson
৪. স্মশ, ৭০ লাখ ডলার
অ্যান্টনি প্যাডিল্লা ও আয়ান হিকক্স ইউটিউবের পথিকৃৎ৷ ২০০৫ সালে ‘‘স্মশ’’ কমেডি চ্যানেল খোলেন৷ আজ তাঁদের ‘‘স্মশ গেমস’’ থেকে শুরু করে ‘‘শাট আপ! কার্টুনস’’ অবধি সাতটি ইউটিউব চ্যানেল আছে৷
ছবি: Getty Images/K. Winter
৩. লিলি সিং, ৭৫ লাখ ডলার
ক্যানাডা প্রবাসী পাঞ্জাবি বাবা-মায়ের সন্তান লিলি ব়্যাপার ও ড্যান্সার৷ তাঁর কমিক প্রধানত প্রবাসীদের নিয়ে৷ ২০১৫ সালে বিশ্বের ২৭টি শহরে গানের জলসা করেছেন, নাম ছিল ‘‘ট্রিপ টু ইউনিকর্ন আইল্যান্ড’’৷
ছবি: imago/ZUMA Press
২. রোমান অ্যাটউড, ৮০ লাখ ডলার
‘‘পানক’ড’’ সিরিজ থেকে নাম করার পর অ্যাটউড অনলাইনেও একই কাজ করছেন - এবার অবশ্য লোকজনকে ভুয়ো ‘গন্ধভোঁদড়ের’ দুর্গন্ধ মাখিয়ে এবং ঐ জাতীয় নানা ভাঁড়ামো করে৷ অনুগামীর সংখ্যা সত্তর লাখ৷ অনলাইন স্টোরও আছে৷
ছবি: Getty Images/C. Barritt
১. পিউডিপাই, ৮০ লাখ ডলার
সুইডেনের মানুষ, আসল নাম ফেলিক্স কিয়েলবার্গ৷ ভিডিও-য় গেমস খেলেন বটে, কিন্তু সাথে অশ্লীল ভাষার কমেন্টারি থাকে৷