1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ভিন্নমত রুখতে মধ্যপ্রাচ্যের হাতিয়ার সাইবার আইন

১৬ মে ২০২২

ভিন্নমত ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতায় বাধা দিতে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো সাইবার অপরাধ আইনের অপব্যবহার করছে বলে অভিযোগ রয়েছে৷ এমন আইনের আওতায় জেলে নেয়া হচ্ছে শিল্পী, সাংবাদিক ও মানবাধিকারকর্মীদের৷

এক হাজার দিনের বেশি জেলে থাকার পর ২০২১ সালে মুক্ত হন সৌদি ব্লগার লৌজাইন আল-হাথলৌল
এক হাজার দিনের বেশি জেলে থাকার পর ২০২১ সালে মুক্ত হন সৌদি ব্লগার লৌজাইন আল-হাথলৌলছবি: Fayez Nureldine/AFP/Getty Images

বিশ্বজুড়ে সরকার, কর্পোরেট প্রতিষ্ঠান কিংবা সাধারণ মানুষের কাছে এখন সাইবার অপরাধ এক বড় হুমকি৷ জাতিসংঘের বাণিজ্য ও উন্নয়ন বিষয়ক সম্মেলনের তথ্য অনুযায়ী, ৮০ শতাংশ দেশ এখন পর্যন্ত সাইবার আইন কার্যকর করেছে৷ কিন্তু আরব দেশগুলোতে এই আইন ভিন্নমতাবলম্বীদের জন্য ভয়ের কারণ হয়ে উঠেছে৷ মতপ্রকাশের স্বাধীনতায় বাধা দিতে এসব দেশের সরকার সাইবার অপরাধ আইনকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে বলে অভিযোগ আছে৷

সিরিয়ায় নতুন আইন

সবশেষ উদাহরণটি সিরিয়ার৷ এপ্রিলে প্রেসিডেন্ট বাসার আল আসাদ সরকার দেশটির পুরাতন সাইবার অপরাধ আইন সংশোধন করে৷ কিন্তু অনলাইন বা অফলাইনে প্রেসিডেন্ট, রাষ্ট্র ও সংবিধান নিয়ে সমালোচনাকারীদের নতুন এই আইনের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করা হচ্ছে৷

আইনে সাইবার অপরাধের সংজ্ঞাগত অস্পষ্টতা রেখে জরিমানা ও শাস্তি ব্যাপকভাবে বাড়ানো হয়েছে৷ রাখা হয়েছে ১৫ বছর পর্যন্ত জেল ও দেড় কোটি সিরিয়ান পাউন্ড পর্যন্ত জরিমানার বিধান৷

গালফ সেন্টার ফর হিউম্যান রাইটস (জিসিএইচআর) এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘‘এতে কোন সন্দেহ নেই যে আইনটি এমনভাবে সাজানো হয়েছে যাতে অস্বচ্ছ শিরোনামের মাধ্যমে ভিন্ন মত দমন ও যত সম্ভব ডিজিটাল কনটেন্টকে সরকার উৎখাত, পরিবর্তন বা উস্কানি হিসেবে সাব্যস্ত করা যায়৷''

মিশরে একাধিক আইন

একই কৌশল নিয়েছে মিশরও৷ মার্চে আলেক্সান্দ্রিয়া অর্থ আদালত দেশটির সংগীত শিল্পী হামে বিকা ও ওমর কামালকে ইউটিউবে প্রকাশিত ভিডিওর জন্য জরিমানা ও কারাদণ্ড দেয়৷ সাইবার অপরাধ আইনের আওতায় ‘পারিবারিক মূল্যবোধ লঙ্ঘনের' অভিযোগ আনা হয় তাদের বিরুদ্ধে৷ এই রায়কে মত প্রকাশের স্বাধীনতার বরখেলাপ হিসেবে অভিহিত করে নিন্দা জানিয়েছে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ৷

যুক্তরাজ্যের ‘ইন্টারন্যাশনাল ল অ্যাট কিংস কলেজের' অধ্যাপক বার্নহার্ড মায়ার বলেন, ‘‘ভিন্ন মতাবলম্বীদের উপর সাইবার অপরাধ আইন প্রয়োগের মাধ্যমে রাষ্ট্র আইনের শাসনের আড়ালে বাক স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করছে৷''

২০১৮ সালে মিশরের প্রেসিডেন্ট আব্দেল ফাতাহ আল সিসি ‘সাইবার ও প্রযুক্তি অপরাধ আইনের' অনুমোদন দেয়৷ অভিযোগ আছে বাক স্বাধীনতা ও ভিন্ন মত দমনে সরকার এই আইনকে ব্যবহার করছে৷ তার উপর চলতি বছরের জানুয়ারিতে নতুন ‘এনজিও আইন' বাস্তবায়ন শুরু করেছে সরকার৷ এর ফলে মানবাধিকার ও বেসরকারি সংগঠনগুলোর জন্য নিবন্ধন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে, যার মাধ্যমে সরকার তাদের কাজ ও তহবিলের বিষয়ে হস্তক্ষেপ করতে পারবে৷ আইনটির আওতায় ‘অ্যারাবিক নেটওয়ার্ক ফর হিউম্যান রাইটস' এর মতো বেশ কিছু সংগঠন বন্ধ করে দেয়া হয়েছে৷

কমিটি টু প্রটেস্ট জার্নালিস্টের (সিপিজে) তথ্য অনুযায়ী, গত বছর ২৩ জন সাংবাদিক দেশটিতে কারাগারে ছিলেন৷ এই সংখ্যা বিশ্বে তৃতীয়৷

সৌদি আরবের নতুন কৌশল

এদিক থেকে মিশরের প্রতিবেশী সৌদি আরবে পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে৷ জেলবন্দি সাংবাদিকের সংখ্যার দিক থেকে শীর্ষ পাঁচ থেকে আটে নেমে এসেছে তারা৷ তবে স্বাধীন সাংবাদিকতার পথ রুদ্ধ করতে এবং সমালোচনামূলক লেখালেখি প্রকাশ বন্ধে নতুন নতুন কৌশল নিচ্ছে দেশটি৷ 

তথ্যপ্রযুক্তি আইনে জেলে নেয়ার বদলে এখন তারা ইন্টারনেট বন্ধ করে দেয়াসহ স্পাইওয়্যারের মাধ্যমে নজরদারি জোরদার করেছে বলে উল্লেখ করেছে সিপিজে৷ ২০১৮ সালে সাংবাদিক জামাল খাশোগজিকে হত্যার পর সমালোচনার প্রেক্ষিতে দেশটি এখন এমন কৌশল বেছে নিয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে৷ 

গত বছর বন্দি ব্লগার লৌজাইন আল-হাথলৌল অথবা রাইফ বাদাওয়িকে মুক্তি দিলেও সামাজিক মাধ্যম ও বিদেশি গণমাধ্যমে তাদের মতামত দেয়ার উপর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে৷

বদলাচ্ছে আরব আমিরাত?

মধ্যপ্রাচ্যে ভিন্নমত দমনে সাইবার আইন প্রয়োগে এগিয়ে আছে সংযুক্ত আরব আমিরাতও৷ চলতি বছর দেশটির ‘প্রযুক্তি অপরাধ আইন, ২০০৬' সংশোধন করে হ্যাকিং, ক্রিপ্টোকারেন্সি, পরিচয় লুকানো থেকে শুরু করে অনুমতি ছাড়া ছবি তোলা এবং গুজব ছড়ানোর মতো ইস্যুগুলোকে তাতে যুক্ত করে৷ এই আইন মত প্রকাশের স্বাধীনতার জন্য প্রতিবন্ধকতা তৈরি করবে উল্লেখ করে তা বাতিল বা সংশোধনের দাবি জানিয়েছে ‘মেনা রাইট গ্রুপ' ও আরো ১৪টি মানবাধিকার সংগঠন৷

তাদের অভিযোগ নিয়ে গত বছর গঠিত ন্যাশনাল হিউম্যান রাইটস ইনস্টিটিউশন কোনো শুনানি করে কিনা সেটি এখন দেখার বিষয়৷ ওয়েবসাইটে দেয়া তথ্য অনুযায়ী, ‘মানবাধিকার প্রচার ও সুরক্ষায় নেতৃত্বৎ' দেয়া তাদের উদ্দেশ্য৷ নিয়ম অনুযায়ী সংযুক্ত আরব আমিরাতের নাগরিক, বাসিন্দা, পর্যটক অথবা দেশটির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট যেকেউ মানবাধিকার বিষয়ে অভিযোগ বা প্রস্তাব প্রতিষ্ঠানটির কাছে জমা দিতে পারবে৷

তবে সমালোচকরা বলছেন এই উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে যথেষ্ট স্বাধীনতা তাদের দেয়া হয়নি৷  ওয়াশিংটন ভিত্তিক মিডলইস্ট ইনস্টিটিউটের সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ ক্রিস কুবেকা বলেন, ‘‘আমি আশা করছি সংস্থাটি ভিন্ন মতের ইস্যুতে সহায়তা করবে৷ কিন্তু ওয়েবসাইট আর কাগজের বাইরে এসে তাদের স্বচ্ছ কৌশলপত্র ও মানদণ্ড নিয়ে কাজ করতে হবে৷’’

দেশটির মানবাধিকারকর্মী আহমেদ মনসুরের কারাবাস নিয়ে কী ধরনের ব্যবস্থা নেয় সরকারের এই সংস্থা তার দিকে তাকিয়ে আছেন বিশ্লেষকেরা৷

জেনিফার হোলেইস/এফএস

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ