আচ্ছা, ড্রোন কি শুধু পাকিস্তানে জঙ্গি নিধন কিংবা গোয়েন্দা কাজে ব্যবহার হচ্ছে? মোটেই না৷ এখন বলতে গেলে মানুষের হাতে হাতে পৌঁছে যাচ্ছে ড্রোন৷ সেগুলোতে থাকা ক্যামেরা এক ভিন্ন জগতের সন্ধান দিচ্ছে আমাদের৷
বিজ্ঞাপন
ড্রোন দিয়ে ছবি
04:28
অপরিচিত দৃশ্য কিংবা উপর থেকে ছবি তোলা এখন ড্রোন ক্যামেরা দিয়ে সম্ভব৷ এই উড়োযান ব্যবহার করে এখন এমন সব দৃশ্য ধারণ সম্ভব করছে যার জন্য একসময় ক্রেন বা হেলিকপ্টারের দরকার হতো৷
এশিয়া থেকে সস্তা প্রসেসর এবং সেন্সর আমদানি সম্ভব হওয়ায় এখন কম খরচেই ড্রোন তৈরি করা যাচ্ছে৷ হামবুর্গ-ভিত্তিক প্রোডাকশন কোম্পানি কুপারকপ্টারের জন্য এটা এক নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিয়েছে৷ কোম্পানির প্রধান রানিল বায়ার এই বিষয়ে বলেন, ‘‘প্রযুক্তির অগ্রগতি – মানে চীনের সস্তা প্রযুক্তি এবং রাশিয়ার রকেট টেকনোলজি ছাড়া এগুলো তৈরি সম্ভব ছিল না৷ কিংবা এতটা সস্তায়, মানে একেবারে সাধারণের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যেও এগুলো পাওয়া যেতো না৷''
আপনার-আমার ড্রোন
ড্রোন-কে অনেকে কোটি কোটি ডলার মূল্যের যুদ্ধদানব বলে থাকে৷ তবে বহুদিন ধরে বেসামরিক কাজেও চালক-বিহীন বিমান ব্যবহার করা হচ্ছে৷ সাধারণ ইলেকট্রনিক দোকানে ৩০০ ইউরোর কমেও এমন ড্রোন কিনতে পাওয়া যায়৷
ছবি: picture-alliance/dpa
সস্তার ড্রোন
চারটি প্রপেলার, দুটি ক্যামেরা, ব্যাটারিচালিত এই ড্রোনের নাম ‘কোয়াড্রোকপ্টার’৷ প্যারিসের এক কোম্পানি এটি বাজারে এনেছে৷ স্মার্টফোন-কেই রিমোট হিসেবে ব্যবহার করে এই ড্রোন ওড়ানো যায়৷ ক্যামেরায় তোলা ছবিও ফোনের পর্দায় দেখা যায়৷ অতএব বে-আইনি হলেও প্রতিবেশীর জানালায় উঁকি মারা সম্ভব৷
ছবি: picture-alliance/dpa
ডালে-ডালে, পাতায়-পাতায়
ড্রেসডেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা ড্রোন দিয়ে গাছের চূড়া পর্যবেক্ষণ করেন৷ গাছের থ্রিডি মডেলও তৈরি করেন৷ রাজ্যের পরিবেশমন্ত্রীও এই কর্মকাণ্ড দেখতে নিজে এসেছিলেন৷ অর্থাৎ, এখনো এই পদ্ধতি বেশ বিরল৷
ছবি: picture-alliance/dpa
‘আসল’ ড্রোন
আসলে কিন্তু বিশেষ এক জাতের পুরুষ মাছিকেই ‘ড্রোন’ বলা হতো৷ বিশাল চোখ ও হুল ফোটানোর ক্ষমতা রয়েছে সেই মাছির৷ ‘ভোঁ-ভোঁ’ করা থেকেই ‘ড্রোন’ শব্দটি এসেছে৷
ছবি: picture-alliance/Wildlife
মায়ের বিকল্প ড্রোন
মা নেই? ড্রোন তো আছে! মিউনিখ ও বোলোনিয়ার বিজ্ঞানীরা বিভিন্ন প্রজাতির সুরক্ষার জন্য আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করছেন৷ অনাথ পক্ষীশিশুদের বাঁচাতে ড্রোনই হয়ে উঠছে মা-পাখি৷
ছবি: picture alliance/augenklick
দমকল ড্রোন
জার্মানিতে কয়েক বছর ধরেই দমকল ড্রোন ব্যবহার করছে৷ তারা বিশেষ ইনফ্রারেড ক্যামেরা নিয়ে আকাশ থেকে নিখোঁজ মানুষের খোঁজ করে৷ বিপজ্জনক এলাকায় গিয়েও ছবি তুলতে পারে এই যন্ত্র৷
ছবি: picture-alliance/dpa
নিরাপদ দূরত্ব
এক সার কারখানায় আগুন লেগে বিপজ্জনক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল৷ এমনকি বিশেষজ্ঞরাও বিপদের আশঙ্কায় দুই দিন ধারে-কাছে ঘেঁষতে পারেন নি৷ ড্রোন থেকেই প্রাথমিক পরিস্থিতি সম্পর্কে ধারণা পাওয়া গিয়েছিল৷
ছবি: picture-alliance/dpa
তেজস্ক্রিয় বিকিরণ
জাপানে ফুকুশিমা পরমাণু দুর্ঘটনার পরেও পরিস্থিতি সম্পর্কে ধারণা পেতে ড্রোন ব্যবহার করা হয়েছিল৷ কোনো ঝুঁকি নিতে হয়নি৷ সেই ছবি থেকে ক্ষয়ক্ষতির সার্বিক চিত্র উঠে এসেছিল৷
ছবি: picture-alliance/dpa
ভারতে তৈরি প্রোটোটাইপ
ভারতেও ড্রোন নিয়ে গবেষণা চলছে৷ ব্যাঙ্গালোরের কাছে অনেক এয়ারোস্পেস সংস্থা মিনি-ড্রোন নিয়ে পরীক্ষা চালাচ্ছে৷ সন্ত্রাসবাদী বা বিদ্রোহীদের সঙ্গে সংঘর্ষের সময় এই ড্রোন আকাশ থেকে এলাকার ছবি তুলতে পারবে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
কোটি কোটি টাকার সহায়তা
জার্মানির বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ড্রোন প্রযুক্তির উন্নতির কাজ চলছে৷ যেমন ইলমেনাউ-এর গবেষকরা এমন এক কোয়াড্রোকপ্টার তৈরির উদ্যোগ নিয়েছেন, যা মোবাইল টাওয়ার মেরামত করতে পারবে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
সাগরতলে ড্রোন
‘ডিপ ড্রোন ৮০০০’ নামের এই যন্ত্র উড়তে পারে না বটে, কিন্তু তাতে কী এসে যায়! সংজ্ঞা অনুযায়ী ড্রোন মানব-বিহীন হলেই চলবে৷ অর্থাৎ ড্রোন ডুবুরিও হতে পারে৷ মার্কিন নৌ-বাহিনীর তৈরি এই ড্রোন ২,৫০০ মিটার গভীরে গিয়ে ডুবোজাহাজ উদ্ধারে সাহায্য করতে পারে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
প্রতিবাদ অব্যাহত
বেসামরিক ব্যবহার বাড়লেও মানুষের মূল নজর সামরিক ড্রোনের দিকে৷ সমালোচকদের চোখে এই সব ড্রোন গোয়েন্দাগিরি ও ধ্বংসের কাজেই ব্যস্ত৷ অবৈধ পথে মানুষ খুন করাও এদের কাজ৷ এই কর্মসূচির প্রতিবাদে জার্মান সংসদের সামনে বিক্ষোভ দেখা গেছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
11 ছবি1 | 11
প্রোডাকশন কোম্পানি বড় এবং ব্যয়বহুল অক্টোকপ্টার নাকি ছোট কেয়াডকপ্টার ব্যবহার করবে, তা ছবির মানের চাহিদার উপর নির্ভর করে৷ ড্রোনগুলো প্রোফেশনাল বড় ক্যামেরা বহন করতে পারেনা৷ তবে এগুলো অনেক নমনীয় এবং গতিসম্পন্ন৷ আর প্রোফেশনাল কিংবা নবীন সবাই এখন ছোট্ট ‘গোপ্রো' ক্যামেরা ব্যবহার করেন৷
কুপারকপ্টার একঘণ্টা উড়তে পারে৷ এরপর সেটিকে পাঁচঘণ্টা ধরে রক্ষণাবেক্ষণ করতে হয়৷ তা সত্ত্বেও এটা লাভজনক ব্যবসা৷ কেননা এ কাজে একটি হেলিকপ্টার ভাড়া করলে ঘণ্টাপ্রতি খরচ হবে হাজার ইউরোর বেশি৷
সস্তা ড্রোনগুলো অনেকে শখ করেও ব্যবহার করেন৷ বার্লিনের বাসিন্দা স্টেফেন ফ্যোর্স্টার তাদের একজন৷ এভাবে তোলা ছবির কোয়ালিটি খুব একটা ভালো হয় না৷ তবে তাঁর মূল উদ্দেশ্য মজা করা৷ তিনি বিভিন্ন বাধা পেরিয়ে ড্রোনটি এগিয়ে নিয়ে যান এবং নিত্য নতুন জায়গা আবিষ্কার করেন৷ স্মার্টফোন কিংবা ট্যাবলেট ব্যবহার করে এগুলো সহজে চালানো যায়৷
ড্রোনের ব্যবসা ক্রমশ গতি পাচ্ছে৷ সস্তা ড্রোন মডেলগুলোর দাম তিনশো ইউরোর কম৷ চীনে তৈরি এসব ড্রোনের দাম একটু বেশি, হাজার ইউরোর মতো৷ এগুলো দিয়ে ভালো ছবি তোলা যায়৷ এমনকি শখের চালকরাও এটি দিয়ে খুব ভালো মানের ছবি তুলতে পারেন৷