ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের সাবেক ভিপি নুরুল হক নূরকে রবিবার সন্ধ্যার পর বাড্ডা এলাকা থেকে ডিবি পরিচয়ে তুলে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে৷ তবে, ডিবি পুলিশ এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে৷
বিজ্ঞাপন
রবিবার রাত ৮টার দিকে স্বল্পসময়ের জন্য নিজের ফেসবুকে লাইভে এসে নুরুল হক নূর জানান, গুলশানে আইনজীবীদের সঙ্গে বৈঠক করে বাড্ডার দিকে ফিরছিলেন তিনি৷ এসময় যানজটে গাড়ি খুব আস্তে আস্তে চলছিল৷ তখন একজন ড্রাইভারকে নামিয়ে দিয়ে গাড়ির সিটে বসে তাকে অপহরণের চেষ্টা করে৷ তখন দ্রুত তিনি গাড়ি থেকে নেমে প্রাণ আরএফএলের শো-রুমে আশ্রয় নেন৷
ফেসবুক লাইভে দেয়া যায়, সেই শোরুমের মধ্যেও তাকে টানা হেঁচড়া করছেন কয়েকজন ব্যক্তি৷ নুর তাদের কাছে পরিচয়পত্র দেখতে চান৷ কিছুক্ষণ ওই ব্যক্তিদের প্রাণ আরএফএলের শো-রুমে ঘুরতেও দেখা গেছে৷ নূর লাইভে দাবি করেন যে ‘ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বিরুদ্ধে আন্দোলন করায় তাকে গুম করার চেষ্টা' করা হচ্ছে৷ গোয়েন্দাদের কাছ থেকেই তিনি এই তথ্য জেনেছেন৷ রবিবারের ঘটনা সেই প্রক্রিয়ারই অংশ বলেও দাবি করেন তিনি৷
নুরকে আটক বা গ্রেফতারের কোন নির্দেশনা নেই: ডিবি প্রধান
নূরকে গ্রেফতার বা আটকের কোন চেষ্টা করা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে ডিবি প্রধান ঢাকা মেট্টোপলিটন পুলিশের যুগ্ম কমিশনার মাহবুব আলম ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘নূরকে আটক বা গ্রেফতারের কোন নির্দেশনা তাদের নেই৷''
তবে তিনি দাবি করেন যে নূর বিভিন্ন আসামিকে নিয়ে ঘুরে বেড়ায়৷ তাদের অনেক সময় গ্রেফতার করতে গেলে নূর লাইভে এসে এসব কথা বলেন৷
রবিবার সন্ধ্যায় এমন কোন চেষ্টা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘ডিবির অনেক টিম এখন বিভিন্ন জায়গায় কাজ করছে, ফলে সুনির্দিষ্ট করে বলা মুশকিল৷''
স্বৈরাচারী সরকারের ১০ লক্ষণ
গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নির্বাচিত হওয়ায় অনেক ক্ষেত্রে ‘গণতান্ত্রিক’ ও স্বৈরাচারী’ সরকারের মধ্যে তফাত করাটা কষ্টসাধ্য হয়ে যায়৷ ফরেন পলিসি ম্যাগাজিনের তথ্য অনুসারে এই ছবিঘরে থাকছে স্বৈরাচারী সরকারের ১০টি লক্ষণ৷
ছবি: DW/S. Elkin
গণমাধ্যমকে ভয় দেখানো
গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রগুলোতে গণমাধ্যম বিরোধী দলের ভূমিকায় থাকে৷ সরকারের সমালোচনা ও ভুল ধরিয়ে দেয়ার মাধ্যমে সুশাসন নিশ্চিত করতে গণমাধ্যমের ভূমিকা অনেক৷ ফলে সমালোচনার দৃষ্টিভঙ্গি থেকে সাংবাদিকদের দূরে রাখতে স্বৈরাচারী শাসকরা পত্রিকা, টেলিভিশনকে ভয় দেখিয়ে কোণঠাসা করতে চান৷
ছবি: DW/S. Elkin
সরকারপন্থি গণমাধ্যম সৃষ্টি
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের প্রভাব ক্রমশ বাড়ছে৷ ফলে গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রণ করা সবক্ষেত্রে সম্ভব হয় না৷ পালটা ব্যবস্থা হিসেবে স্বৈরশাসকরা সরকারপন্থি গণমাধ্যম নেটওয়ার্ক গড়ে তোলেন৷ এর ফলে ব্যাপক হারে সরকারের নানা প্রোপাগান্ডা ছড়ানো সহজ হয়৷
ছবি: picture alliance/dpa/J. Büttner
রাষ্ট্রীয় সংস্থার দলীয়করণ
রাষ্ট্রের সকল স্তরে নিজের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে স্বৈরাচারী শাসকরা পুলিশ, সেনাবাহিনী থেকে শুরু করে সরকারি আমলাদের মধ্যেও দলীয়করণ প্রতিষ্ঠা করে থাকেন৷ এর ফলে রাষ্ট্রের ভেতর থেকে ক্ষোভ দেখা দিলে তা নিয়ন্ত্রণ করতে সুবিধা হয়৷
ছবি: Getty Images/AFP
বিরোধীদের ওপর রাষ্ট্রীয় নজরদারি
রাষ্ট্রের বিভিন্ন সংস্থাকে সরকারের রাজনৈতিক বিরোধীতাকারীদের ওপর নজরদারির কাজে লাগানো হয়৷ গোয়েন্দা মারফত পাওয়া তথ্য কাজে লাগিয়ে প্রতিপক্ষকে নানাভাবে হেয় করা ও কোণঠাসা করতে অপব্যবহার করা হয় রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা৷
ছবি: picture alliance/dpa/Chromorange
বিশেষ সুবিধা ও দমনপীড়ণ
স্বৈরাচারী সরকার বা সরকারপ্রধানকে যেসব কর্পোরেট সংস্থা বা ব্যক্তি নানাভাবে সহায়তা করে থাকেন, তাদের বিশেষ রাষ্ট্রীয় সুবিধা দেয়া হয়৷ বেআইনি উপায়ে কাজ পাইয়ে দেয়া থেকে শুরু করে নানাভাবে সহায়তা করা হয়৷ অন্যদিকে, যেসব সংস্থা সহায়তা করে না, তাদের ক্ষেত্রে চলে যে-কোনো উপায়ে দেউলিয়া বানানোর প্রক্রিয়া৷
ছবি: Imago/blickwinkel
বিচার বিভাগে হস্তক্ষেপ
আদালত স্বাধীন থাকলে স্বৈরাচারী শাসকদের নানা সময়ে আইনি চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হয়৷ ফলে শুরু থেকেই স্বৈরাচারী শাসকরা সুপ্রিম কোর্টকে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নেয়ার চেষ্টা করেন৷ অনুগত বিচারক নিয়োগ দেয়া, বিরোধীদের ছাঁটাই করা থেকে শুরু করে, নানাভাবে চেষ্টা চলে এ নিয়ন্ত্রণের৷
ছবি: Fotolia/Sebastian Duda
একপাক্ষিক আইন প্রয়োগ
স্বৈরাচারী শাসকদের শাসনামলে ‘আইন সবার জন্য সমান’ বাক্যটি থাকে শুধু কাগজে-কলমে৷ বাস্তবে প্রতিপক্ষকে দমনের জন্য পাস করা হয় নতুন নতুন আইন৷ বিরোধীদের নানা উছিলায় গ্রেপ্তার নির্যাতন করা হলেও, নিজের সমর্থকদের রাখা হয় আইনের আওতার বাইরে৷
ছবি: Fotolia/axentevlad
‘জুজুর ভয়’ দেখানো
বিরোধীরা ক্ষমতায় এলে ভয়াবহ অবস্থা হবে, দেশ রসাতলে যাবে, বিরোধীরা কত খারাপ, ক্রমাগত সে প্রচার চালানো হয়৷ এর ফলে এমন অবস্থা তৈরির চেষ্টা হয় যাতে জনগণের মনে প্রতিপক্ষ সম্পর্কে একটা নেতিবাচক প্রভাব সৃষ্টি করা যায়৷
ছবি: picture alliance/dpa/P. Pleul
দৃষ্টি সরাতে ভীতি সৃষ্টি
ভিন্ন পরিস্থিতিতে ভিন্ন ধরনের ভীতি তৈরি করে থাকেন স্বৈরাচারী শাসকরা৷ অভ্যন্তরীণ রাজনীতি, গণতন্ত্রহীনতা ও দুঃখ-দুর্দশা থেকে জনগণের দৃষ্টি সরিয়ে রাখতে কোথাও জঙ্গি সংকট, কোথাও মাদকবিরোধী যুদ্ধ, কোথাও অন্য দেশের সঙ্গে যুদ্ধ পরিস্থিতি তৈরি করা হয়৷
ছবি: Fotolia/lassedesignen
নির্বাচনে কারচুপি
আগে জোর করে ক্ষমতায় থাকার উদাহরণ থাকলেও, এখন স্বৈরাচারী শাসকরাও নিয়মিত বিরতিতে নির্বাচন দিয়ে থাকেন৷ ‘গণতন্ত্র আছে’ জনগণ ও আন্তর্জাতিক মহলে এমন ধারণা দেয়ার জন্য তারা নির্বাচন দেন৷ কিন্তু সে নির্বাচনে বিজয় নিশ্চিত করার জন্য সব ধরনের আয়োজন আগে থেকেই করা থাকে৷