শুধু নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন বা সিএএ-র ক্ষেত্রে নয়, ভিসার ক্ষেত্রেও ধর্মীয় বিভেদের অবস্থান নিয়েছে ভারত। সম্প্রতি বাংলাদেশের এক ক্রিকেটারের ভিসা ফুরিয়ে যাওয়ার পরে এমনই তথ্য সামনে এসেছে।
বিজ্ঞাপন
তখনও নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন লোকসভায় পাশ হয়নি। তবে বিলটি নিয়ে দেশ জুড়ে আন্দোলন শুরু হয়েছে। প্রতিবাদ চলছে এনআরসি নিয়ে। তারই মধ্যে গত বছরের শেষ দিকে কলকাতায় আসেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আসে বাংলাদেশের ক্রিকেট দলও। কর্মসূচির শেষে কলকাতায় অবস্থিত বাংলাদেশের ডেপুটি হাই কমিশনারকে ক্রিকেটার সাইফ হাসান জানান, এক দিন আগেই তাঁর ভারতের ভিসার মেয়াদ ফুরিয়ে গিয়েছে। ডেপুটি হাই কমিশনার এর পর ভারতের ভিসা অফিসের সঙ্গে যোগাযোগ করলে জানা যায়, এক দিন বেশি থাকার জন্য সাইফ হাসানকে ৩০০ মার্কিন ডলার বা ২১ হাজার ভারতীয় টাকা জরিমানা দিতে হবে। জরিমানা হতেই পারে। তাতে সমস্যা নেই। কিন্তু জানা যায়, সাইফ না হয়ে যদি লিটন দাসের এই সমস্যা হতো, তা হলে তাঁকে জরিমানা দিতে হতো ১০০ টাকা।
শক্তিশালী পাসপোর্টে বাংলাদেশের উন্নতি
বিশ্বের কোন দেশের পাসপোর্ট কত শক্তিশালী তা নিয়ে প্রতি বছর একটি র্যাংকিং প্রকাশ করে হ্যানলি অ্যান্ড পার্টনার্স৷ তাদের ২০২০ সালের সূচকে বাংলাদেশের এক ধাপ উন্নতি হয়েছে৷
ছবি: https://www.passportindex.org/
যেভাবে সূচকটি তৈরি
একটি দেশের পাসপোর্ট দেখিয়ে কতটি দেশে ভিসা ছাড়া বা অন অ্যারাইভাল ভিসা নিয়ে ভ্রমণ করা যায় তার উপর ভিত্তি করে হ্যানলি পাসপোর্ট ইনডেক্সটি তৈরি করা হয়েছে৷ এই সূচকে মোট ১০৭ টি দেশের পাসপোর্ট রয়েছে৷
ছবি: https://www.passportindex.org/
শীর্ষে জাপান
এই তালিকায় ধারাবাহিকভাবেই শীর্ষে রয়েছে জাপান৷ ১৯১ টি দেশে জাপানের পাসপোর্টধারীরা ভিসাছাড়া ভ্রমণ করতে পারেন৷ গত বছর এই সংখ্যাটি ছিল ১৯০৷
ছবি: imago/AFLO
শীর্ষ তিনে এশিয়া
জাপানের পরেই দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে সিঙ্গাপুরের পাসপোর্ট৷ ১৯০ টি দেশে তাদের অন অ্যারাইভাল ভিসার সুযোগ রয়েছে৷ তৃতীয়তে থাকা দক্ষিণ কোরিয়ার রয়েছে ১৮৯ টি দেশে৷
ছবি: picture-alliance/Yonhap
ইউরোপের ১৩
শক্তিশালী পাসপোর্টের তালিকায় পরবর্তী তেরটি দেশ ইউরোপের৷ ১৮৯ টি দেশে অন অ্যারাইভাল ভিসার সুবিধা নিয়ে জার্মানির পাসপোর্ট দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে যৌথভাবে তৃতীয় অবস্থানে আছে৷ চতুর্থে আছে ইটালি ও ফিনল্যান্ড৷ পঞ্চম শক্তিশালী পাসপোর্ট তিনটি দেশের স্পেন, লুক্সেমবুর্গ ও ডেনমার্ক৷ ষষ্ঠ অবস্থানে সুইডেন ও ফ্রান্স৷ এরপরের অবস্থানে আছে সুইজারল্যান্ড, নেদারল্যান্ডসসহ ৫টি দেশ৷
ছবি: Imago/Zuma/S. Babbar
যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান
তালিকায় যুক্তরাষ্ট্র রয়েছে অষ্টম অবস্থানে৷ দেশটির পাসপোর্টে ভিসা ছাড়া যাওয়া যায় ১৮৪ টি দেশে৷ যুক্তরাজ্যও আছে একই অবস্থানে৷
ছবি: Fotolia/Greg Blomberg
দক্ষিণ এশিয়া
দক্ষিণ এশিয়ায় শীর্ষে রয়েছে মালদ্বীপ৷ র্যাংকিংয়ে যাদের অবস্থান ৬১৷ দেশটির পাসপোর্ট ৮৫ টি দেশে ভিসাবিহীন প্রবেশের সুযোগ দেয়৷ এই অঞ্চলে তাদের পরে ৮৪তম অবস্থানে রয়েছে ভারতের পাসপোর্ট৷ তাদের রয়েছে ৫৮ টি দেশে ভিসাবিহীন ভ্রমণের সুযোগ৷ শ্রীলঙ্কার পাসপোর্ট ৯৭তম, নেপাল ১০১ তম আর পাকিস্তান রয়েছে ১০৪ তম অবস্থানে৷
ছবি: picture-alliance/AP/A. Solanki
বাংলাদেশের পাসপোর্ট
শক্তিশালী পাসপোর্টের তালিকায় বাংলাদেশ রয়েছে ৯৮ তম অবস্থানে৷ ২০০৬ সালেও র্যাংকিংয়ে বাংলাদেশের পাসপোর্ট ছিল ৬৮- তে৷ এরপর থেকে ক্রমাগত অবনতি ঘটেছে৷ ২০১৮ সালে নেমে আসে ১০০তম অবস্থানে৷ তবে টানা তিন বছর এক ধাপ করে এগিয়ে এবার ৯৮তম অবস্থানে উঠে এসেছে৷
ছবি: Imago Images/Zuma/M. Hasan
ভিসা ফ্রি ৪১ দেশে
র্যাংকিংয়ে উন্নতি হলেও বাংলাদেশকে ‘ভিসা ফ্রি’ সুবিধা দেয়া দেশের সংখ্যা একই রয়েছে৷ এশিয়ায় এই সুবিধা দেয় ভূটান, ইন্দোনেশিয়া, মালদ্বীপ, নেপাল, শ্রীলঙ্কা৷ এছাড়াও আফ্রিকার ১৬টি, ওশেনিয়া অঞ্চলের ৭টি ও ক্যারিবীয় অঞ্চলের ১১ টি দেশে বাংলাদেশের পাসপোর্টে ‘ভিসা ফ্রি’ সুবিধা মেলে৷
ছবি: Brand USA/Steve Simonsen
8 ছবি1 | 8
২০১৮ সালে ভারতের ভিসার নিয়মে বেশ কিছু পরিবর্তন করা হয়েছে। সেখানে বাংলাদেশ, পাকিস্তান এবং আফগানিস্তানের ক্ষেত্রে এক অদ্ভুত নিয়ম তৈরি করা হয়েছে। বলা হয়েছে, ওই সমস্ত দেশ থেকে সংখ্যালঘু হিন্দুরা ভারতে এসে ভিসার মেয়াদের বেশি সময় কাটিয়ে ফেললে একরকম জরিমানার অঙ্ক। কিন্তু ওই সমস্ত দেশ থেকে সংখ্যাগুরু মুসলিমরা সেই একই কাজ করলে তাঁদের ২০০ গুণেরও বেশি অর্থ দিতে হবে। নিয়মটা কী? ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার পরে সে দেশের সংখ্যালঘু হিন্দু যদি ভারতে ২ বছরের বেশি সময় থাকেন, তাহলে তাঁকে জরিমানা দিতে হবে ৫০০ টাকা। ৯১ দিন থেকে দুই বছর পর্যন্ত হলে ২০০ টাকা। ৯০ দিনের ভিতরে হলে ১০০ টাকা। কিন্তু একই কাজ মুসলিম করলে জরিমানা হবে যথাক্রমে ৫০০ ডলার বা ৩৫ হাজার টাকা, ৪০০ ডলার বা ২৮ হাজার টাকা এবং ৩০০ ডলার বা ২১ হাজার টাকা।
জার্মান ভিসা: সবচেয়ে বেশি নামঞ্জুর বাংলাদেশিদের আবেদন!
সম্প্রতি জার্মানিতে বিদেশিদের আগমন বেড়েছে৷ কিন্তু সবাই কি আবেদন করলেই ভিসা পায়? চলুন একনজরে দেখে নেই এশিয়ার কোন দেশগুলোর মানুষদের জার্মান ভিসা না পাওয়ার হার বেশি৷
ছবি: Sergei Supinsky/AFP/Getty Images
বাংলাদেশ
ডয়চে ভেলের একদল সাংবাদিক ২০১৪ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে জার্মান দূতাবাসগুলিতে ভিসা সংক্রান্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখেছেন যে, এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের আবেদনকারীদের প্রত্যাখ্যাত হওয়ার হার সবচেয়ে বেশি৷ এই চার বছরে ৪,০৩৭ জনের ভিসা আবেদন বিবেচনা করা হয়েছে৷ তবে শেষ পর্যন্ত ২৭ শতাংশের আবেদন নামঞ্জুর হয়েছে৷ অবশ্য এক্ষেত্রে শুধু দীর্ঘমেয়াদী ভিসার আবেদন বিবেচিত হয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
নেপাল
জার্মান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, নেপালে জার্মান ভিসার ২৩ শতাংশ আবেদন প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে৷
ছবি: Reuters/W. Rattay
ভিয়েতনাম
২০১৪ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত ভিয়েতনামের জার্মান দূতাবাসে আবেদন পড়ে ১৬ হাজার ৪৭৪টি, যার মধ্যে ১৮ শতাংশ আবেদন নাকচ হয়ে গেছে৷
ছবি: Colourbox/T. Tomasevic
পাকিস্তান
পাকিস্তানে দীর্ঘমেয়াদী জার্মান ভিসা আবেদন প্রত্যাখ্যানের হার ১৭ শতাংশ৷ ২০১৪ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত ভিসা আবেদন পড়েছিল ১৫ হাজার ৩১৮টি৷
ছবি: picture alliance/NurPhoto/N. Economou
ইরান
২০১৪ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত ইরানের জার্মান দূতাবাসে দীর্ঘমেয়াদি ভিসার জন্য আবেদন পড়েছিল ১৮ হাজারেরও বেশি৷ এর মধ্যে ১৬ শতাংশ আবেদন প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে৷
ছবি: Getty Images/S. Gallup
আফগানিস্তান
একই সময়ে আফগানিস্তানে আবেদন পড়েছে ৮ হাজার ৭৪৬ টি৷ এর মধ্যে ১০ শতাংশ আবেদন নামঞ্জুর হয়েছে৷
ছবি: DW/K. Hakimi/R.S. Mohammadi
ইন্দোনেশিয়া
ইন্দোনেশিয়ায় জার্মান ভিসা আবেদন প্রত্যাখ্যানের হার ৭ শতাংশ৷ জার্মান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৪ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত জার্মান দূতাবাসে আবেদন পড়েছিল ১৩ হাজার ১৯৯টি৷
ছবি: Anggy Pradita
ভারত
একই সময়কালে ভারতে আবেদন পড়েছে ৯৪ হাজার ৪৬০টি৷ এর মধ্যে মাত্র ৬ শতাংশ আবেদন নামঞ্জুর হয়েছে৷ ভারতে রাজধানী দিল্লি ছাড়াও মুম্বই, চেন্নাই, কলকাতা আর বেঙ্গালুরুতে জার্মান দূতাবাস রয়েছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/S. Hussain
চীন
বিশ্বের সবচেয়ে বেশি জনসংখ্যার দেশ চীনে দীর্ঘমেয়াদি জার্মান ভিসার জন্য ঐ চার বছরে আবেদন পড়েছিল ৯৫ হাজার ৬৯০টি৷ এর মধ্যে নাকচ হয়েছে মাত্র ৫ শতাংশ আবেদন৷
ছবি: Reuters//Courtesy of Bundesregierung/G. Bergmann
সিঙ্গাপুর
সিঙ্গাপুরে এই চার বছরে জার্মান ভিসা আবেদন পড়েছিল ৪ হাজার ৩০৬টি৷ এর মধ্যে নাকচ হয়েছে মাত্র তিন শতাংশ৷
ছবি: picture-alliance/robertharding/G. Hellier
কোরিয়া
দক্ষিণ কোরিয়ায় দীর্ঘমেয়াদী জার্মান ভিসার আবেদন পড়েছিল ১০ হাজার ৫০১টি৷ এর মধ্যে আবেদন নামঞ্জুর হয়েছে মাত্র দশমিক ৫ শতাংশ৷
ছবি: CC/stuck in customs
জাপান
জাপানে খুব বেশি মানুষ দীর্ঘমেয়াদি জার্মান ভিসার জন্য আবেদন করেন না৷ আর যাঁরা করেন, তাঁদের প্রায় সবাই ভিসা পেয়ে যান৷ ২০১৪ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত ভিসা আবেদন পড়েছিল ৩ হাজার ৮৩১টি৷ এর মধ্যে নামঞ্জুর হয়েছে মাত্র দশমিক ৪ শতাংশ৷
ছবি: Imago/Kyodo News
12 ছবি1 | 12
বাংলাদেশ ডেপুটি হাই কমিশনের সূত্র জানাচ্ছে, সম্প্রতি এক গরিব বাংলাদেশি মহিলাকে দেশে ফেরানোর জন্য তাঁদের তহবিল তৈরি করতে হয়েছিল। কারণ এই বিপুল পরিমাণ অর্থ তাঁর কাছে ছিল না।
স্বাভাবিক ভাবেই ভারতের এই ভিসার নিয়মের প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশ সরকার একে 'ধর্মীয় বিভেদমূলক' বলে অভিহিতও করেছে। সূত্র জানাচ্ছে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বাংলাদেশে গেলে এ বিষয়ে তাঁদের ক্ষোভও জানাতে পারে হাসিনার প্রশাসন।
দীর্ঘ দিন ধরে যাঁরা এনআরসি এবং সিএএ নিয়ে আন্দোলন করছেন, তাঁদের অনেকেই ভিসার এই নতুন নিয়ম শুনে আশ্চর্য হচ্ছেন না। তাঁদের বক্তব্য, মোদীর সরকার এ ভাবেই ধর্মীয় বিভেদ তৈরি করে ভারতের ধর্মনিরপেক্ষ সংবিধানের অবমাননা করছে। সিএএ আইনের ক্ষেত্রেও তা করা হয়েছে, ভিসার নিয়মের ক্ষেত্রেও তা করা হয়েছে। সিপিএম নেতা মহম্মদ সেলিম এ বিষয়ে ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, ''সরকার ন্যায় প্রতিষ্ঠার জন্য নিয়ম তৈরি করে। এই সরকার অন্যায় প্রতিষ্ঠার জন্য সব রকম ব্যবস্থা করছে। বরাবর ভারতের বিদেশনীতি স্বচ্ছ। সেখানে বিভেদের কোনও জায়গা নেই। কিন্তু এই সরকার সেখানেও বিভেদ তৈরি করে দিচ্ছে। যা ভারতের স্পিরিটের সঙ্গে খাপ খায় না। আমরা আগেও এর প্রতিবাদ করেছি, ভবিষ্যতেও করব।''