ভিয়েতনামের বনেজঙ্গলে বুনো ভাল্লুক আর খুব নেই৷ শহরে গেলে দেখতে পাওয়া যাবে, ভাল্লুকদের পিত্তাশয়ে নল ঢুকিয়ে রস বার করা হচ্ছে অ্যাফ্রোডিজিয়াক হিসেবে৷ ভিয়েতনামের তরুণ প্রজন্ম এই প্রথার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে চায়৷
বিজ্ঞাপন
বাঘের হাড় থেকে নাকি ওষুধ তৈরি হয়৷ তেমনই ভাল্লুকের পিত্তাশয় থেকে পাচক রস বার করা হয় কামোদ্দীপক হিসেবে৷ অথবা রেস্তোরাঁয় অতিথিদের মনোরঞ্জন করা হয় বাঁদর পুষে৷
হ্যানয়ের একটি সুরক্ষা কেন্দ্রে অন্তত ১৬০টি জীবজন্তু দেখতে পাওয়া যাবে৷ তাদের অনেকে এতোদিন ধরে এখানে রয়েছে যে, তাদের পক্ষে আর মুক্ত প্রকৃতিতে ফিরে যাওয়া সম্ভব নয়৷ ‘এডুকেশন ফর নেচার ভিয়েতনাম' এনজিও-র থাও নিন বলেন, ‘‘ভিয়েতনামে বন্যপ্রাণীদের পণ্য হিসেবে ব্যবহার করার প্রথাটা বহুদিনের৷ সেটা শুধু ওষুধ কিংবা খাদ্য হিসেবে নয়, বরং নিজের সামাজিক মর্যাদা ও প্রতিপত্তি বাড়ানোর প্রচেষ্টাও বটে: যদি তাদের কাছে এমন একটা কিছু থাকে, যা অন্যদের নেই৷''
বুদ্ধিমান প্রাণী
সম্প্রতি বিজ্ঞানীরা ঈশপের গল্পে কাকের কৃতিত্ব প্রমাণ করে ছেড়েছেন৷ আরো অনেক প্রাণী আছে যাদের বুদ্ধিমত্তা আপনাকে অবাক করতে বাধ্য৷ এমন কিছু প্রাণীরই কৃতিত্বের প্রমাণ মিলবে এই ছবিঘরে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
সাক্ষী তোতা
আফ্রিকায় অ্যালেক্স নামের এক প্রজাতির তোতা পাখি আছে, যারা ৫০ ধরনের আকার এবং ছয় পর্যন্ত সংখ্যা গুনতে পারে৷ এমনই এক তোতার মৃত্যুর আগের রাতে তার মনিব বলেছিল, ‘‘আমি তোকে ভালোবাসি’’৷ তোতার জবাব ছিল, ‘‘আমিও’’৷ আর ভারতের আগ্রায় সাংবাদিকের স্ত্রীর রহস্যজনক মৃত্যুর কিনারা করে সবাইকে বিস্মিত করে দিয়েছিল যে তোতা তার কথা নিশ্চয়ই মনে আছে!
ছবি: picture-alliance/dpa
বুদ্ধিমান ডলফিন
সামুদ্রিক প্রাণীদের মধ্যে ডলফিন বা শুশুকদের সবচেয়ে বুদ্ধিমান মনে করা হয়৷ এরা বেশ সামাজিক, কেননা শিষ দিয়ে তারা একে অপরের সাথে ভাব বিনিময় করে৷ এরা দীর্ঘদিন নিজের সন্তানের সাথে সাথে থাকে এবং তাদের জরুরি কাজ শেখায়৷
ছবি: Fotolia/davidpitu
প্রভুভক্ত প্রাণী
প্রাণীদের মধ্যে মানুষের সবচেয়ে বড় বন্ধু বলা হয় কুকুরকে৷ কুকুরকে ভালোমত প্রশিক্ষণ দেয়া হলে তারা ইশারা মেনে সব কায়দা রপ্ত করতে পারে৷ প্রভুর ভালো-মন্দ বোঝার ক্ষমতাও রয়েছে এই প্রাণীর৷
ছবি: picture-alliance/dpa
ধীর কিন্তু বুদ্ধিমান
গ্যালাপাগোস দ্বীপপুঞ্জের এই কচ্ছপের চলন দেখে অনেকেই বিরক্ত হতে পারে৷ কিন্তু এরা ভীষণ চালাক৷ এরা মানুষের কণ্ঠস্বর শুনে দীর্ঘ সময় পর্যন্ত তা মনে রাখতে পারে৷ তবে দুঃখের বিষয় এই প্রাণী দিন দিন বিলুপ্ত হতে চলেছে৷
ছবি: picture alliance/dpa
শিল্পী মন
ঘোড়া এমন একটি প্রাণী যাদের চিন্তা-ভাবনাতেও ভিন্নতা রয়েছে৷ যুক্তরাষ্ট্রের একটি ঘোড়া মুখে তুলি নিয়ে এমন সব ছবি এঁকেছে, যা বিস্মিত করেছে বিশ্ববাসীকে৷ ভেনিস ও রোমের আর্ট গ্যালারিতে ঐ ঘোড়ার আঁকা ছবিগুলোর প্রদর্শনী হয়েছিল৷
ছবি: Fotolia/dozornaya
প্রখর স্মৃতিশক্তি
কুকুরের মতো বিড়ালকেও প্রশিক্ষণ দিলে অনেক খেলা শেখানো যায়৷ ওরা অনেক কিছুই দেখে দেখে শিখতে পারে৷ আর এদের স্মৃতিশক্তিও প্রখর৷
ছবি: picture-alliance/Zoonar
কাকের কৃতিত্ব
সম্প্রতি বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, কাকেদের কয়েকটি প্রজাতি নাকি খুবই বুদ্ধিমান৷ তাদের ঠোঁটে করে পাথর তুলে একটি টিউবে ফেলার প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়৷ প্রশিক্ষণের পর তাদের সামনে কয়েকটি টিউব রাখা হয়৷ তার কয়েকটির মধ্যে পানি, বাকিগুলির মধ্যে বালু ছিল৷ দেখা গেল, কাকেরা বেছে বেছে জলভরা টিউবেই পাথর ফেলছে৷
ছবি: dapd
বুদ্ধিমান শিম্পাঞ্জি
শিম্পাঞ্জি ভীষণ বুদ্ধিমান৷ আর হবে নাই বা কেন? মানুষের সাথে তাদের জীনগত বৈশিষ্ট্য ৯৮ ভাগ মিলে যায়৷ তাই অনেক জটিল সমস্যার সমাধান করতে পারে এই প্রাণী৷
ছবি: picture alliance/dpa
জ্যোতিষী পল
অক্টোপাস পলের কথা মনে আছে? ২০১০ সালের ফুটবল বিশ্বকাপে ভবিষ্যতবাদী করে যে হৈচৈ ফেলে দিয়েছিল৷ বিজ্ঞানীদের মতে, অক্টোপাসের কিছু প্রজাতির বুদ্ধিমত্তা মানব শিশুর সমান৷
ছবি: picture alliance/dpa
9 ছবি1 | 9
বন্যপ্রাণীদের মাংস খাওয়া অথবা ওষুধ হিসেবে ব্যবহার করাটা ভিয়েতনামে সরকারিভাবে নিষিদ্ধ৷ কিন্তু সেই নিষেধ এতোদিনের পুরনো প্রথাকে বন্ধ করতে পারেনি৷ বহু জীবজন্তুই আজকাল আসে ব্রিডিং ফার্ম, অর্থাৎ পশুপালনের খামার থেকে৷ যেমন এই সুরায় জারানো সাপ৷ কিন্তু বড় বড় রেস্তোরাঁয় আজও বন্যপ্রাণীদের মাংস খেতে পাওয়া যায়৷ হ্যানয়-তে বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়স্বজনকে ইমপ্রেস করতে হলে সে ধরনের রেস্তোরাঁয় নিয়ে আসতে হয়, জানালেন থাও নিন৷ তিনি বলেন, ‘‘প্যাঙ্গোলিন, সঁজারু, কচ্ছপ, এ সবই বেআইনি৷ স্থানীয় কর্মকর্তাদের ব্যাপারটা জানানো দরকার৷ আমরা এই সমস্যা সমাধানের জন্য ওদের ওপর চাপ দিই, ওদের সঙ্গে সহযোগিতা করি৷ কর্তৃপক্ষকে রেস্তোরাঁর মেনু থেকে সব বিপন্ন প্রজাতিকে বাদ দিতে হয়৷''
বিশেষ করে একটি প্রথার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে চান এই পশুপ্রেমীরা: ভাল্লুকগুলোকে ঠিকমতো অসাড় না করে তাদের পিত্তাশয় থেকে পাচক রস বার করার প্রথাটা তাদের কাছে মর্মান্তিক এবং মারাত্মক৷ সেইই রস খেলে কিংবা মাখলে নাকি ছোটখাটো কাটাছেঁড়া থেকে শুরু করে ক্যানসার পর্যন্ত সারানো যায়৷ থাও নিন জানালেন, ‘‘ভাল্লুকের পিত্তাশয়ে নল ঢোকানো দেখতে বহু মানুষ এসে ভিড় করে৷ তাদের মনে হয়, এটা পুরোপুরি স্বাভাবিক৷ তারা দুঃখ পায় না, জীবটার জন্য দুঃখও বোধ করে না৷ আমি নিজে এটা ভীষণ অপছন্দ করি৷ আমি এ সব দেখতে চাই না৷''
জীব-জন্তুর বসন্ত মানেই বাচ্চা-কাচ্চা
জার্মানির চিড়িয়াখানায় বেশিভাগ পর্যটকদের ভিড় হয় বসন্তকালে৷ কারণ জীব-জন্তুরা তখন সন্তানের জন্ম দেয়৷ আর এই শিশু প্রাণীরা সাধারণত হয় বুদ্ধিমান ও আবেগপ্রবণ৷
ছবি: Lutz Schnier
সত্যিকারের বানর প্রেমী
লাইপসিশ: চিড়িয়াখানায় বানর মা কুমিলিকে দেখে বোঝা যায় যে, মাতৃত্বের আনন্দ তার চোখে-মুখে ফুটে উঠেছে৷ তবে ছোট্ট মেয়ে দিয়ারাকে দেখে মনে হচ্ছে যে, পৃথিবীর আলো দেখে সে এখনো তেমন খুশি হতে পারেনি৷ দিয়ারা যেন খানিকটা ভীত৷
ছবি: Zoo Leipzig
এত উঁচু অবস্থায় কেউ জন্মায় না
বার্লিন: জিরাফের মেয়ে বিনে, দুই মিটার উঁচু হওয়ার কারণে ৩০শে এপ্রিল ওর জন্মের সময় বেশ কষ্ট হয়েছে৷ তবুও বিনে জন্মের মাত্র ৪০ মিনিট পরেই হাঁটতে শুরু করে দেয়৷
ছবি: Tierpark Berlin
এত ছোট্ট প্রাণী !
ফ্রাংকফুর্ট: জীবজন্তুদের মধ্যে এই প্রাণীটিকেই সবচেয়ে ছোট প্রাণী দলের মধ্যে ফেলা হয়৷ অর্থাৎ মাত্র ২০ সেন্টিমিটার৷ দক্ষিণ এশিয়া থেকে আসা এই প্রাণীরা খুবই লাজুক স্বভাবের হয়৷ ওদের পা এতটাই ছোট যে, কোথাও পালিয়ে যেতে চাইলেও ওরা যেতে পারে না৷
ছবি: Zoo Frankfurt/Winfried Faust
মিশ্র দম্পতির সন্তান
ডর্টমুন্ড: কী খুসি, মেয়ে হয়েছে, মেয়ে! ও কিন্তু সত্যিকার অর্থেই মিশ্র দম্পতির বাচ্চা৷ বাবা আমারি এসেছে জার্মানির ইয়ারফুর্ট শহরের চিড়িয়াখানা থেকে আর মা সাকিনা দক্ষিণ আফ্রিকার স্বাধীনতা ভোগ করা মেয়ে৷
ছবি: Stadt Dortmund
চিড়িয়াখানায় বিশেষ শো
কোলন: এ বছর কার্নিভালের সময়, অর্থাৎ গোলাপি সোমবার কোলন চিড়িয়াখানায় দেড় কেজি ওজনের এই ভালুক ছানাটির জন্ম হয়৷ এটাও যেন ছিল কার্নিভালের উৎসবের মতোই আনন্দের৷ কারণ এর আগে কখনো এ চিড়িয়াখানায় এই বিশেষ দিনে কোনো প্রাণীর জন্ম হয়নি৷
ছবি: Kölner Zoo
তুমিই কি আমার ‘মা’?
মিউনিখ: লম্বা লেজওয়ালা ‘কাটা’ প্রজাতির মা বানর তার শিশুটিকে সাথে নিয়ে ‘হেলাব্রুন’-এর পশু পার্ক থেকে মিউনিখ শহরে এসেছে৷ এই প্রজাতি বানরের আসল বাড়ি কিন্তু মাদাগাস্কারে৷
ছবি: Münchener Tierpark Hellabrunn AG
বিদেশিদের সাথে যোগাযোগ
বার্লিন: পূর্ব আফ্রিকার এই জেব্রাদের অন্য পশুদের কাছাকাছি যেতে বা থাকতে কোনো ভয় নেই৷ যে কোনো জায়গাতেই ওরা নিজেদের মানিয়ে নিতে পারে৷
ছবি: Zoo Berlin
খেলনা নয়, আসল ভাল্লুক
হামবুর্গ: হামবুর্গের হাগেনবেক চিড়িয়াখানার প্রধান আকর্ষণ এখন ইগোর আর ইভান৷ এরা দু’জনই জানুয়ারি মাসের মাঝামাঝি পৃথিবীর আলো দেখেছে৷
ছবি: Lutz Schnier
8 ছবি1 | 8
হ্যানয়ের উপকণ্ঠে একটি রাস্তার ধারে একটার পর একটা ভাল্লুকের খামার৷ ভাল্লুক পোষায় কোনো দোষ নেই, কিন্তু তাদের পিত্ত থেকে পাচক রস সংগ্রহ করা নিষিদ্ধ৷ কিন্তু তার খোঁজই বা রাখবে কে, আর নিয়ন্ত্রণই বা করবে কে? যেখানে এই পরিমাণ ভাল্লুক পোষা হয়, সেখানে তার পিত্তির রসের চাহিদাও সে রকম হবে৷ পুরনো প্রথা বদলাতে যে সময় লাগে, তাও জানেন থাও নিন৷ সেই কারণেই তিনি প্রতি মাসে এখানে আসেন৷ লোকজনকে বোঝান বীভৎস সব ছবি দেখিয়ে; কখনো-সখনো ভয় দেখিয়ে; কখনো বা বৈজ্ঞানিক যুক্তি দেখিয়ে৷ তিনি বলেন, ‘‘আমি নিজে একবার পরখ করে দেখেছি, এক বোতল রসও কিনেছিলাম৷ ও সব ফাঁকি, ওতে কোনো কাজই হয় না৷ অন্তত আমি যে ধরনের জিনিস কিনেছি, তা দিয়ে নয়৷''
ভিয়েতনামের বনে-জঙ্গলে আর মাত্র ১০০টি বুনো ভাল্লুক জীবিত৷ অন্যান্য অনেক প্রাণী ইতিমধ্যেই বিলুপ্ত হয়েছে৷ একটি বাজারকে থাও নিন তাঁদের বিশেষ সাফল্য বলে গণ্য করেন৷ থাও ও তাঁর দলবল এখানে মাসের পর মাস হানা দিয়েছেন, ব্যবসায়ীদের ত্যক্ত করেছেন, প্রতিটি বন্যপ্রাণীর খবর দিয়েছেন সরকারি কর্মকর্তাদের কাছে৷ ফলে এই বাজারে আজ শুধু খামারে পোষা জীবজন্তু বিক্রি হয়৷ থাও নিন বললেন, ‘‘আমি তরুণ প্রজন্মে বিশ্বাস করি৷ তারা নিজেদের প্রেস্টিজ বাড়ানোর জন্য বুনো জীবজন্তুর মাংস খায় না, কিংবা বুনো জীবজন্তুকে ওষুধ হিসেবে ব্যবহার করে না৷''
পরিবর্তন একদিনে আসে না৷ কিন্তু এই তরুণ ভিয়েতনামিরা হয়তো সেই অচলায়তন ভাঙতে পারবে৷