সদ্যজাত শিশু যদি নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে থাকে তবে ‘ক্যাঙ্গারু কেয়ার’ নেয়া খুব জরুরি৷ অর্থাৎ, শিশুকে কাপড়ের নীচে দিয়ে বুকের সঙ্গে লাগিয়ে রাখা, যাতে শিশু উষ্ণ আর শান্ত থাকে৷
বিজ্ঞাপন
কলম্বিয়ায় গত ৩০ বছর ধরে এভাবেই জরুরি অবস্থার শিশুদের চিকিৎসা করা হয়, যা পরবর্তীতে পুরো বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে৷ এটা শুরু হয়েছিল ইনকিউবেটরের সীমাবদ্ধতার কারণে৷ ‘ক্যাঙ্গারু কেয়ার'-এর অর্থ ত্বকের সাথে ত্বকের সংস্পর্শ৷ এর ফলে শিশু মায়ের দেহের তাপেই গরম থাকে, আর স্তন পান করানোতে কোনো রকম সমস্যা হয় না৷ সাধারণত ‘প্রি-মেচিওর' শিশুদের ক্ষেত্রে এই চিকিৎসা খুব উপকারে আসে৷ দক্ষিণ আমেরিকার দেশগুলোতে এখন স্বাভাবিক নবজাতকদের ক্ষেত্রেও এই অভ্যাস বেশ প্রচলিত৷
‘শিশু কাঁদলে, তাকে কোলে তুলে নিন’
বাচ্চা কাঁদলে কোলে তুলে নেয়াটাই স্বাভাবিক, বিশেষ করে উপ-মহাদেশের বাবা-মা এবং পরিবারের মানুষদের কাছে৷ এ নিয়ে তাঁদের মনে কোনো প্রশ্ন নেই৷ কিন্তু জার্মানিতে? চলুন বিস্তারিত জানা যাক এই ছবিঘর থেকে৷
ছবি: Fotolia/st-fotograf
শিশুরা কাঁদে কেন?
যে কোনো শিশুই চিৎকার করে কেঁদে তার ভূমিষ্ঠ হওয়ার খবর জানিয়ে দেয়৷ তারপরও কারণে-অকারণেই ওরা কাঁদে৷ এই সুন্দর ভুবনের সাথে মানিয়ে নিতে ওদের যেমন কিছুটা সময় লাগে, তেমনই নতুন মা-বাবারও লাগে খানিকটা সময় সব কিছু গুছিয়ে নিতে৷ যা খুবই স্বাভাবিক৷
ছবি: Fotolia/S.Kobold
আমার কান্না কেউ কি শুনছে না?
মাঝে মাঝে শিশুরা চিৎকার করে ওঠে, বিশেষ করে কাছাকাছি অনেকক্ষণ কোনো শব্দ শুনতে না পেলে৷ অন্যের দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্যই হয়ত তখন কাঁদে তারা৷ মজার ব্যাপার, ঐ মুহূর্তে কেউ কাছে গিয়ে কথা বললে বা কোলে তুলে নিলে সাথে সাথেই শিশুদের কান্না থেমে যায়৷
ছবি: picture-alliance/dpa
বাঙালি বাবা-মায়ের সন্তান
দেশে সন্তান জন্মের পর থেকেই সে বাচ্চা কোলে কোলে থাকে৷ বাচ্চা কাঁদুক আর না কাঁদুক৷ নতুন মা সারাক্ষণই তাঁর শিশুটিকে নিয়ে ব্যস্ত আর সেই শিশু সর্বক্ষণই পেয়ে থাকে মায়ের শরীরের উষ্ণতা৷ শিশুকে কোলে নেওয়ার জন্য বাবা-মা ছাড়াও আত্মীয়স্বজন থাকেন৷ এছাড়া, বাচ্চাকে শুধু দেখাশোনা করার জন্য আলাদা লোকও অনেক সময় রাখা হয়৷
ছবি: picture-alliance/Joker
জার্মান শিশু
জার্মানিতে কোনো শিশু কাঁদলেই চট করে কোলো তুলে নেওয়া হতো না কয়েক বছর আগ পর্যন্তও৷ শিশু কাঁদলে ওকে শুইয়ে রাখা হতো৷ এক সময় সেই ছোট্ট শিশু কেঁদে কেঁদে ঘুমিয়ে পরতো৷ কারণ, মা সারাক্ষণ বাচ্চাকে কোলো নিলে বাড়ির অন্য কাজ কে করবে? রাতে প্রতিদিন ঘড়ি ধরে একই সময়ে বাচ্চাকে বিছানায় শুইয়ে দেওয়া হতো ঘর অন্ধকার করে৷ বলা বাহুল্য জার্মানিতে গ্রীষ্মকালে প্রায় ১১টা পর্যন্ত বাইরে সূর্যের আলো থাকে৷
ছবি: Getty Images/Afp/Timothy Clary
সময় পাল্টেছে, বদলেছে চিন্তাধারা
একদিকে যেমন জার্মানির মতো উন্নত দেশগুলিতে প্রযুক্তি দ্রুত গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে, তেমনই অন্যদিকে উন্নয়নশীল দেশেরও কিছু বিষয় গ্রহণ করতে শুরু করেছে তারা৷ শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. গেন কামেদা বলেন, পশ্চিমের সংস্কৃতিটা এমন যে শিশুরা মায়ের শরীরের উষ্ণতা কম পায়, কারণ এ দেশে বাচ্চারা বিছানায় বেশি সময় থাকে আর এটাই হয়ত শিশুদের রাতে কান্নাকটি করার বড় কারণ৷
ছবি: Yuri Arcurs/Fotolia
নতুন বাবা-মা
নতুন মা-বাবার নানা প্রশ্ন, শিশুটির কান্নার কারণ তাঁরা বুঝতে পারেন না৷ ক্ষুধা, শরীর খারাপ, ক্লান্ত নাকি আদর, কি চায় বেবিটি? আসলে শরীরের উষ্ণতা পেলে শিশুরা সব কিছুই ভুলে যায়, যদি না বড় কোনো শারীরিক কষ্ট থেকে থাকে, বলেন ডা. কামেদা৷ তাঁর পরামর্শ, পিতা-মাতা হলে অনেককিছুই বাদ দিতে হয়, তাই বাইরে গেলে শিশুকে কোলে করে সঙ্গে নেবার চেষ্টা করবেন – যাতে শিশুটি শরীরের উষ্ণতা পায়৷
ছবি: Fotolia/detailblick
ডাক্তারের পরামর্শ
নতুন বাবা-মায়ের জন্য ডাক্তার কামেদার আরো পরামর্শ, শিশুর কাছাকাছি থাকুন, শিশুকে সময় দিন, কোলে তুলে নিন৷ অল্প কিছুদিন পরেই দেখবেন, শিশু শুধু কাঁদেই না, বরং খুব শীঘ্রই তারা হাসতে শিখবে, হাসাবে মা-বাবাকেও৷
ছবি: Fotolia/st-fotograf
7 ছবি1 | 7
কলম্বিয়ার বোগোটায় সান ইগনাসিও হাসপাতালে সম্প্রতি প্রি-মেচিওর এক শিশু এসেছিল৷ তার বাবা আলগেসিরাস জানান, জন্মের পর থেকে শিশুটি বাঁচবে কিনা তা নিয়ে শঙ্কা ছিল তাঁদের৷ কিন্তু চিকিৎসকদের পরামর্শে কেবল তাঁর স্ত্রী নন, তিনিও প্রতি দিন ৫ ঘণ্টা শিশুটিকে নিজের বুকের সাথে আঁকড়ে রাখতেন৷ যার ফলে ২৭ সপ্তাহ পর এখন শিশুটি আশঙ্কামুক্ত৷
এই ক্যাঙ্গারু কেয়ার ১৯৭৮ সালে প্রথম শুরু করেছিলেন কলম্বিয়ার চিকিৎসক নাথালি চারপাক৷ তিনি সংবাদ সংস্থা এএফপিকে জানান, নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে একজন নবজাতক একটানা ১৯ মিনিটের বেশি ঘুমাতে পারে না৷ ফলে সেখানে শিশুদের রাখা অমানবিক৷ ইনকিউবেটর এড়াতে হলে ঘরের পরিবেশ কিছুটা বদলাতে হবে বলে জানান তিনি৷ কেননা এখানে পরিবেশ ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ৷ কম উজ্জ্বল আলো জ্বালিয়ে রাখতে হবে এবং শব্দ ৬০ ডেসিবেল এর বেশি হবে না৷ নির্দিষ্ট কিছু নিয়মও মেনে চলতে হয়, যেমন কীভাবে শিশুটিকে বুকের সাথে রাখতে হবে, কীভাবে খাওয়াতে হবে৷
অন্তত ৩০টি দেশে তারা ক্যাঙ্গারু কেয়ার বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকেন বলে জানান চারপাক৷ এশিয়া এবং আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে তারা প্রশিক্ষণ দেন৷ তবে যুক্তরাষ্ট্র,স্পেন ও সুইডেনও বাদ যায়নি৷ এ পদ্ধতি ব্যবহার করে গত ২০ বছরে ব্রাজিলে জন্মের সাথে সাথে শিশু মৃত্যুর হার অনেক কমে গেছে বলে জানিয়েছে ইউনিসেফ৷