যারা হাইওয়েতে ভুল করে উলটো দিকে গাড়ি চালায়, জার্মানিতে তাদের ‘গোস্ট ড্রাইভার’ বলা হয়৷ তাদের ভুলের জের ধরে দুর্ঘটনা এড়াতে এবার নতুন ইলেকট্রনিক সতর্কতা ব্যবস্থা চালু করার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে৷
বিজ্ঞাপন
হাইওয়েতে প্রায় রকেটের গতিতে গাড়ি চলছে, এমন সময় সামনে দেখা গেলো হেডলাইট৷ উলটো দিক থেকে ধেয়ে আসছে আরেকটি গাড়ি৷ মুখোমুখি সংঘর্ষ প্রায় অনিবার্য৷ কারণ সে ভুল লেনে ঢুকে পড়েছে৷ এমন দুঃস্বপ্ন অনেকের কাছেই বাস্তব৷ অন্তত জার্মানিতে৷ একে তো জার্মানি দুনিয়ার একমাত্র দেশ, যেখানে ‘আউটোবান' বা হাইওয়ের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশয় গতির কোনো ঊর্ধ্বসীমা নেই৷ সেখানে আইন না ভেঙেও ঘণ্টায় ১৯০ বা ২০০ কিলোমিটার বেগে গাড়ি চালানো যেতে পারে৷ ফলে উলটো দিকে গাড়ি এলে তার পরিণাম যে কী হতে পারে, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না৷
জার্মানির বিখ্যাত রাস্তাগুলো
জার্মানিতে ক্যালিফোর্নিয়ার হাইওয়ে ১-এর মতো নামকরা কোনো রাস্তা নেই, তবে এখানেও রয়েছে কিছু বিখ্যাত রাস্তা৷ যে রাস্তাগুলোর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য পর্যটকদের দৃষ্টি কাড়ে সর্বদাই৷
ছবি: Aarni Kuoppmäki
জার্মান ওয়াইন স্ট্রিট
জার্মানির সবচেয়ে পুরনো রাস্তা, যেটা জার্মানির ওয়াইন উৎপাদন এলাকা অবধি গেছে, সেটা ফ্রান্সের সীমান্তের কাছে অবস্থিত৷ ৮৫ কিলোমিটার লম্বা এই রাস্তাটির পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় পর্যটকরা জার্মানির ওয়াইন সংস্কৃতি উপভোগ করতে পারেন৷ মার্চ মাস থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত চলে সেখানে ওয়াইন উৎসব, যার মধ্য দিয়ে জার্মানদের আতিথেয়তা বোঝার সুযোগ রয়েছে পর্যটকদের৷
ছবি: picture-alliance/dpa
জার্মানির রূপকথার রাস্তা
বিশ্বজুড়ে জনপ্রিয় বহু রূপকথারই জন্ম জার্মানিতে৷ ইয়াকব আর ভিলহেল্ম গ্রিম – জার্মানির বিখ্যাত এই গ্রিম ভাতৃদ্বয় ছিলেন হানাউ শহরের বাসিন্দা৷ সেখানে, ঠিক যেখানে তাঁদের স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করে হয়েছে, সেখান থেকেই শুরু হয়েছে রূপকথার রাস্তাটি৷ এছাড়াও রয়েছে আটটি প্রাকৃতিক পার্ক এবং অসংখ্য গ্রাম, যেখানে রূপকথার গল্প বলার ব্যবস্থা রয়েছে, রয়েছে একটি মিউজিয়ামও৷
ছবি: picture-alliance/dpa
ব্ল্যাক ফরেস্ট হাই স্ট্রিট
ব্ল্যাক ফরেস্টের ‘ফ্রয়ডেনস্টাট’, যার বাংলা করলে বলা যায় – ‘আনন্দের শহর’৷ আর এই শহর থেকে শুরু হয়েই বাডেন বাডেন এবং গ্যার্বিগ্সব়্যুকেনের ওপর দিয়ে চলে গেছে এই লম্বা রাস্তাটি৷ এই রাস্তার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখা যায় রাইন উপত্যকা ও ফ্রান্সের এলসাস পর্যন্ত৷ সূর্যাস্তের সময় জার্মানির মুমেল হ্রদের কাছাকাছি তোলা ছবিটির এমন সুন্দর দৃশ্য পর্যটকদের কাছে খুবই আকর্ষণীয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa
জার্মানির ফুটবল রুট
জার্মানির সবচেয়ে বড় রাজ্য নর্থ রাইন ওয়েস্টফেলিয়ার বেশ কিছু রাস্তা ১৫টি শহরকে সংযুক্ত করেছে৷ সেখানকার স্টেডিয়ামগুলো যে গির্জার মতো পবিত্র৷ মানে ফুটবলের একেবারে আসল ‘হাব’ এটি৷ প্রতিটি শহরেই একটি করে ফুটবল স্টেডিয়াম আছে৷ তাই দ্রুত সাইকেল চালিয়ে সহজেই জার্মানির বিখ্যাত ফুটবল রুটে পৌঁছে যাওয়া যায়৷ বিয়ারের মতো জার্মানরা যে ফুটবল পাগলও!
ছবি: picture-alliance/dpa
জার্মান আল্পস স্ট্রিট
এই রাস্তাটি পর্বতমালা আল্পসকে উৎসর্গ করা হয়েছে৷ ৪৫০ কিলোমিটার লম্বা এই পথ জার্মানির দক্ষিণাঞ্চল থেকে শুরু হয়ে পাহাড়, বোডেন লেকসহ বিভিন্ন ছোট-বড় হ্রদ, লিন্ডাও দ্বীপ – এ সব পার হয়ে একেবারে ক্যোনিগ লেক পর্যন্ত গেছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
শিল্প-সংস্কৃতির রাস্তা
যাঁরা এর আগে প্রাসদ, দূর্গ বা যথেষ্ট প্রকৃতি দেখেছেন তাঁদের জন্য এই শিল্প-সংস্কৃতির রাস্তা অবশ্যই কিছুটা বৈচিত্র আনবে৷ ৪০০ কিলোমিটার লম্বা এই রাস্তায় জার্মানির রূঢ় অঞ্চলের ভগ্নাবশেষ রয়েছে, যা গোটা এলাকাকে একটি সাংস্কতিক অঞ্চলে রূপান্তরিত করেছে৷ এ অঞ্চলের প্রাচীন কয়লা খনি ইউনেস্কোর বিশ্ব সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে৷
ছবি: Aarni Kuoppmäki
6 ছবি1 | 6
অথচ এমন ভুল বিরল ঘটনা নয়৷ চালকদের সতর্ক করতে সাইনবোর্ড থাকা সত্ত্বেও অনেকে ভুল করে বসেন৷ তারপর আরও ঘাবড়ে গিয়ে নতুন ভুল করতে থাকেন৷ প্রায়ই বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটে৷ না ঘটলেও গাড়ি চলাচল বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে৷ পুলিশকে পরিস্থিতি সামলাতে হয়৷ এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে মূল্যবান কাজ করে স্থানীয় রেডিও স্টেশনগুলি৷ তারা অনুষ্ঠান থামিয়ে চালকদের সতর্ক করে দেয়৷ হাইওয়ের ঠিক কোন অংশে বিপদ হতে পারে, তাও জানিয়ে দেয়৷ বিপদ কেটে যাওয়ার পর ঘোষক চালকদের আবার আস্বস্তও করেন৷ তবে রেডিও বন্ধ থাকলে মুশকিল৷ বিদেশি চালক হলে আবার ভাষা না বোঝার সমস্যাও রয়েছে৷
এমন ভুল ও তার পরিণাম এড়াতে জার্মানিতে নতুন ধরনের সতর্কতা ব্যবস্থা চালু করার উদ্যোগ চলছে৷ উচ্চ প্রযুক্তির নানা রকম ইলেকট্রনিক সিস্টেম পরীক্ষামূলকভাবে কার্যকর করার পর দেশের পরিবহন মন্ত্রীকে একটি বেছে নিতে হবে৷
কোনো চালক ভুল করে হাইওয়ের ভুল লেনে ঢুকে পড়লে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো যত দ্রুত সম্ভব সবাইকে সতর্ক করে দেওয়া৷ সে ক্ষেত্রে দুর্ঘটনা প্রতিরোধ করতে প্রতিটি সেকেন্ড জরুরি হতে পারে৷ অনেক সময় চালক নিজেই নিজের ভুল বুঝতে সময় নিতে পারেন৷ সেটা আরও মারাত্মক৷ ইলেকট্রনিক ব্যবস্থা তখন আলো ও শব্দের সমন্বয়ে সিগনাল দিতে পারবে৷ তার জন্য রাস্তার মধ্যে বিশেষ তার বসাতে হবে৷ ওয়ার্নিং লাইট-এরও ব্যবস্থা করতে হবে৷ এর জন্য প্রায় আড়াই কোটি ইউরো ব্যয় হবে বলে দাবি করছে জার্মানির এক অটোমোবাইল ক্লাব৷