1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ভুতুড়ে বিদ্যুৎ বিলের নেপথ্যে কী?

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
২৩ জুন ২০২০

করোনাকালে ঢাকাবাসীর কাছে ভুতুড়ে বিদ্যুৎ বিল এখন নতুন আপদ হিসেবে দেখা দিয়েছে৷ গ্রাহকদের অভিযোগ, গত তিন মাসে প্রকৃত বিলের চেয়ে সাত-আট গুণ বেশি বিল করা হয়েছে৷

Deutschland | LED-Glühbirne
ছবি: picture-alliance/dpa/P. Brandstädter

এই বিল সংশোধন না করে তা আদায়ের জন্য চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে৷ শুধু তাই নয়, বিল না দিলে ৩০ জুনের পর বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করারও ঘোষণা দেয়া হয়েছে৷

করোনার কারণে মার্চ, এপ্রিল ও মে মাসের বিদ্যুৎ বিল দেয়া হয়েছে অনুমান করে৷ মিটার রিডাররা সরেজমিনে পরিদর্শন করে বিল করেননি৷ সরকার অবশ্য এই তিন মাসের বিদ্যুৎ বিল ঠিক সময়ে পরিশোধ না করার জরিমানা মওকুফ করেছে৷

ঢাকার বনশ্রী এলাকার বাসিন্দা মাহফুজুর রহমান অভিযোগ করেন, ফেব্রুয়ারি মাসে তার বিদ্যুৎ বিল ছিল এক হাজার ৫৪ টাকা৷ কিন্তু পরের তিন মাসে এক সঙ্গে তার বিল দেয়া হয়েছে ১৬ হাজার ১০০ টাকা৷ প্রতি মাসে প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার টাকা৷ মাহফুজুর রহমান বলেন, ‘‘অতীতে কখনোই এরকম বিল আসেনি৷ অভিযোগ করেও কোনো প্রতিকার পাচ্ছিনা৷ পরে ঠিক করে দেয়ার কথা বলছে৷''

এরকম অভিযোগ আরো শত শত গ্রাহকের৷ তারা এখন প্রতিদিন অভিযোগ নিয়ে এই করোনার মধ্যেও বিদ্যুৎ অফিসে ভিড় করছেন৷ কিন্তু প্রতিকার পাচ্ছেন না৷
 

যোগ, বিয়োগ করতেও কিছু ভুল হয়েছে: বিকাশ

This browser does not support the audio element.

নেপথ্যে কী?
অনুসন্ধানে বিদ্যুৎ বিলের এই ভেলকিবাজির আপাতত তিনটি কারণ খুঁজে পাওয়া গেছে৷

১. মার্চ মাস থেকে বিদ্যুতের দাম বাড়া

২. বছর শেষে রাজস্ব আদায়ের হিসাব মেলাতে বিল বেশি দেখানো এবং

৩. বিদ্যুৎ বিলের ধাপ (শ্লট) ভিত্তিক হিসাব৷

ভুতুড়ে বিদ্যুৎ বিলের কাহিনি বুঝতে হলে আবাসিক বিদ্যুৎ বিলের হিসেব কীভাবে হয়, তা আগে বুঝতে হবে৷ ১ মার্চ থেকে বিদ্যুতের নতুন দাম কার্যকর হয়েছে৷ বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) সবশেষ ২৭ ফেব্রুয়ারির প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, বিলের সর্বনিম্ন স্তরের নাম হচ্ছে লাইফ লাইন৷ এই লাইফ লাইন ৫০ ইউনিট পর্যন্ত৷ প্রতি ইউনিটের দাম এখন ৩.৭৫ টাকা৷

মার্চ থেকে বিদ্যুতের দাম ৫ থেকে ১০ ভাগ বেড়েছে৷ যেমন আগে লাইফ লাইনের প্রতি ইউনিটের দাম ছিলো ৩.৫০ টাকা৷ প্রতিটি ধাপেই এভাবে কম বেশি বেড়েছে৷ এখন আবাসিক বিদ্যুতের দাম-

প্রথম ধাপ: ০-৭৫ ইউনিট- ৪.১৯ টাকা
দ্বিতীয় ধাপ: ৭৬-২০০ ইউনিট- ৫.৭২ টাকা
তৃতীয় ধাপ: ২০০-৩০০ ইউনিট-৬.০০ টাকা
চতুর্থ ধাপ: ৩০১-৪০০ ইউনিট- ৬.৩৪ টাকা
পঞ্চম ধাপ: ৪০১-৬০০ ইউনিট- ৯.৯৪ টাকা
ষষ্ঠ ধাপ: ৬০০ ইউনিটের ঊর্ধ্বে- ১১.৪৮ টাকা

বিদ্যুতের লাইফ লাইন সুবিধা পেতে হলে নির্ধারিত ৫০ ইউনিটের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকতে হবে৷ কিন্তু এর বেশি বিদ্যুৎ ব্যবহার করলে ব্যবহৃত বিদ্যুতের দাম প্রথম ধাপ ৪.১৯ টাকা হিসেবেই দিতে হবে৷

এরপর বিদ্যুৎ বিলের হিসাব করা হয় ধাপ অনুযায়ী৷ কত ইউনিট বিদ্যুৎ ব্যবহার করা হলো সেভাবে ধাপগুলো নির্ধারণ করে বিদ্যুতের বিল হিসাব করা হয়৷ এর সঙ্গে আরো কিছু চার্জ যুক্ত হয়৷

এবার মার্চ, এপ্রিল এবং মে এই তিন মাসের বিদ্যুৎ বিল একসঙ্গে দেয়া হয়েছে৷ আর তাও দেয়া হয়েছে অনুমান করে৷ মিটার রিডিং না দেখে৷

তবুও ধরে নিই, একজন গ্রাহক মাসে ৭৫ ইউনিট বিদ্যুৎ ব্যবহার করেন৷ মাসে মাসে তিনি বিল পেলে তার বিল হতো প্রতি ইউনিট ৪.১৯ টাকা হিসেবে৷ কিন্তু এবার তিন মাসে তাকে একসঙ্গে বিল দেয়া হয়েছে ২২৫ ইউনিটের৷ তাহলে তার প্রথম ধাপ ৭৫ ইউনিটের বিল হয়েছে ৪.১৯ টাকা হিসেবে৷ দ্বিতীয় ধাপ ৭৬-২০০ ইউনিটের বিল হয়েছে ৫.৭২ টাকা হিসেবে, আর ওই গ্রাহকের তৃতীয় ধাপ ২০০-৩০০ ইউনিট-এ ২৫ ইউনিটের বিল হয়েছে ৬.০০ টাকা হিসেবে৷

যদিও বিদ্যুৎ বিভাগ দাবি করছে, তারা একসঙ্গে তিন মাসের বিল করলেও তা গড় করে প্রতিমাসের ধাপ নির্ধারণ করেছে৷ কিন্তু গ্রাহকদের বিলে সেই ধাপ উল্লেখ করা নেই৷ আর তারা লিখিত অভিযোগ করলেও তাদের ধাপ অনুযায়ী বিল দেখানো হচ্ছেনা৷

এর সঙ্গে বছর শেষে রাজস্বের হিসেব মেলানোর জন্য অতিরিক্ত আরো ১০-১৫ ভাগ বাড়তি বিল করা হয়েছে বলে বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে৷

কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) বিইআরসিকে দেয়া চিঠিতে গ্রাহকের বিদ্যুৎ বিল যৌক্তিক পরিমাণের চেয়ে সর্বোচ্চ ১০ গুণ বা এক হাজার ভাগ বেশি আসার অভিযোগ করেছে৷

মনগড়া বিল দিলে চলবেনা: শামসুল

This browser does not support the audio element.


বিতরণ কর্তৃপক্ষ যা বলছে
ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি বা ডিপিডিসির জেনারেল ম্যানেজার রবিউল হুসাইনের দেয়া তথ্যমতে, করোনার কারণে মার্চ, এপ্রিল ও মে এই তিনমাসের বিল একসঙ্গে করা হয়েছে৷ ফেব্রুয়ারির বিল ঠিক ছিলো৷ তাই মার্চের প্রথম তারিখ এবং মে মাসের শেষ তারিখের রিডিং নিয়ে তিন মাসের মোট বিল একসঙ্গে করা হয়েছে৷ 

তাহলে সাত-আট গুণ বেশি বিল কীভাবে হয়? এই প্রশ্নের জবাবে তিনি দাবি করেন, ‘‘তিন মাসের বিল একসাথে পাওয়ায় গ্রাহকের কাছে বেশি মনে হচ্ছে৷ এছাড়া এই সময়ে গরমের কারণে গ্রাহকরা বেশি বিদ্যুৎ ব্যবহার করেন৷ আর মার্চ মাস থেকে যে বিদ্যুতের দাম বেড়েছে এটা গ্রাহকের মাথায় নেই৷''

কিন্তু তার এইসব ‘যুক্তিতে' সাত-আট গুণ বিদ্যুৎ বিল বেশি হওয়ার যুক্তি মানতে পারছেন না গ্রাহকরা৷ কারণ তাদের কাছে গত বছরের একই সময়ের বিদ্যুৎ বিল আছে৷ তারা তা মিলিয়ে দেখে অভিযোগ করছেন৷ তাদের দাবি, বিদ্যুতের বিল ১০ ভাগ বাড়ার হিসেব ধরলেও এখনকার বিল প্রকৃত হিসেবের চেয়ে পাঁচ-ছয় গুণ বেশি৷

তবে ডিপিডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিকাশ দেওয়ান বিদ্যুৎ বিলের ত্রুটির কথা স্বীকার করেন৷ কিন্তু তিনি দাবি করেন, ‘‘তিন মাসের বিলের ধাপ একসঙ্গে নির্ধারণ করা হয়নি৷ গড় করে প্রতিমাসের বিলে ধাপ আলাদাভাবে নির্ধারণ করা হয়েছে৷''

অবশ্য বিলে কিছু ভুল আছে এবং তা সংশোধন করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বিকাশ দেওয়ান৷ তিনি বলেন, ‘‘ওভার এবং আন্ডার বিলিং, দুই ধরনের ঘটনাই ঘটেছে৷ যোগ, বিয়োগ করতেও কিছু ভুল হয়েছে৷''

তারপরও এত গ্রাহকের সাত-আট গুণ বিল বেশি কীভাবে আসে জানতে চাইলে তিনি কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি৷ এই দুইজন কর্মকর্তা রাজস্ব আদায়ের হিসাব মেলাতে বিদ্যুৎ বিল কিছু বেশি করার অভিযোগও অস্বীকার করেন৷

বিল বাতিলের দাবি
ক্যাবের জ্বালানি উপদেষ্টা প্রকৌশলী শামসুল আলম বলেন, ‘‘তিন মাসের বিল একসঙ্গে করা বেআইনি৷ আর এই বিল একসঙ্গে করার ভিতরেই আছে অনেক জটিলতা৷ মনগড়া বিল করা হয়েছে৷ আমরা মনে করি মাসের বিল মাসে দিতে হবে৷ মনগড়া বিল দিলে চলবেনা৷ আমরা এই বিল বাতিলের দাবি জানিয়েছি৷ প্রতি মাসের বিল প্রতি মাসে দেয়ার দাবি করেছি৷''

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ