তুরস্ক নয়, গ্রিস ও সাইপ্রাসের পাশে দাঁড়ালো জার্মানি। জার্মান বিদেশমন্ত্রী হাইকো মাস বলেছেন, গ্রিসের দ্বীপের কাছে তুরস্কের তেলের খোঁজ বন্ধ করতে হবে।
ছবি: Thomas Imo/photothek/Imago Images
বিজ্ঞাপন
তুরস্ককে সতর্ক করে দিলেন জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাইকো মাস। তিনি বলেছেন, তুরস্ক যেন তেল ও গ্যাস অনুসন্ধান বিতর্কে উসকানি না দেয়। মাস বলেছেন, তুরস্ক সরকার বারবার বলছে, তারা আলোচনা চায়। তা হলে তারা উসকানি দেয়া বন্ধ করুক।
গ্রিস ও সাইপ্রাস সফরের আগে মাস বলেছেন, ''আমরা তুরস্কের কাছে আবেদন জানাচ্ছি, তারা যেন একতরফা ব্যবস্থা নিয়ে গ্রিসের সঙ্গে আলোচনা বন্ধ না করে।'' তিনি স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, ''জার্মানি পুরোপুরি গ্রিস ও সাইপ্রাসের সঙ্গে আছে, তুরস্কের সঙ্গে নয়।''
মাস সে জন্যই গ্রিস ও সাইপ্রাস যাচ্ছেন, কিন্তু তুরস্কে যাচ্ছেন না। মাস বলেছেন, ''আমি এই বিরোধের পরিপ্রেক্ষিতেই সাইপ্রাস ও গ্রিস যাচ্ছি। জার্মানি মনে করে, আলোচনার পরিস্থিতি তৈরির দায় তুরস্কের।''
জার্মানির চ্যান্সেলার ম্যার্কেলের মুখপাত্র জানিয়েছেন, তুরস্ক যে আবার অনুসন্ধানকারী জাহাজ পাঠিয়েছে, তা খুবই অবিবেচক সিদ্ধান্ত। উত্তেজনা কমাবার যে চেষ্টা চলছে, তা এর ফলে ধাক্কা খাবে।
তুরস্কের রেচেপ তাইয়েপ এর্দোয়ান কে?
ইসলামপন্থি তরুণ অ্যাক্টিভিস্ট থেকে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট– রাজনীতিতে নিজের ক্যারিয়ার ভালোভাবেই গড়েছেন রেচেপ তাইয়েপ এর্দোয়ান৷ তবে রাজনৈতিক জীবনে বহুবার বিতর্কে জড়িয়েছেন তিনি৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/E. Morenatti
এর্দোয়ানের উত্থান
তুরস্কে এবং বিদেশে রেচেপ তাইয়েপ এর্দোয়ান সম্পর্কে নানা ধরনের মতামত রয়েছে৷ তাঁকে নব্য-অটোমান ‘সুলতান’ হিসেবে যেমন বিবেচনা করা হয়, তেমনি কারো কারো চোখে তিনি একজন স্বৈরাচারী নেতা৷ রাজনৈতিক জীবনের শুরু থেকেই ইসলামপন্থিদের বিভিন্ন দাবিদাওয়ার ব্যাপারে সচেতন ছিলেন তিনি৷ পাশাপাশি ন্যাটোতে তাঁর নেতৃত্বে বড় ধরনের অবদান রাখছে তুরস্ক৷ এর্দোয়ানের উত্থান নিয়ে এই ছবিঘর৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/E. Morenatti
ইস্তানবুলের কারাবন্দি মেয়র
তুরস্কে ইসলামপন্থিদের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত দল ওয়েলফেয়ার পার্টিতে নিজের অবস্থান দ্রুতই পাকাপোক্ত করেছিলেন এর্দোয়ান৷ ১৯৯৪ সালে তিনি সেই দল থেকে ইস্তানবুলের মেয়রও নির্বাচিত হন৷ কিন্তু এর্দোয়ান মেয়র হওয়ার চার বছরের মাথায় সেই দলটিকে সে দেশের সরকার তুরস্কের ধর্মনিরপেক্ষ নীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয় ঘোষণা দিয়ে নিষিদ্ধ করে৷ এরপর জনসমক্ষে বিতর্কিত কবিতা আবৃত্তির দায়ে জেলে যান এর্দোয়ান৷ চার মাস জেল খাটেন৷
তুরস্কের একেপি পার্টির সহপ্রতিষ্ঠাতা এর্দোয়ান৷ ২০০২ সালের নির্বাচনে দলটি সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন লাভ করে৷ আর ২০০৩ সালে তিনি প্রধানমন্ত্রী হন৷ দায়িত্ব গ্রহণের প্রথম বছরগুলোতে এর্দোয়ান দেশবাসীকে সামাজিক সুযোগ-সুবিধা প্রদান, অর্থনীতির উন্নয়ন এবং বিভিন্ন গণতান্ত্রিক সংস্কারের দিকে মনোযোগী হন৷ তবে কেউ কেউ এটাও মনে করেন যে, প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তিনি রাজনীতিতে ধর্মের মিশ্রণ ঘটানোয় ভূমিকা রেখেছেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/B. Ozbilici
ইসলামপন্থিদের স্বার্থ রক্ষা
যদিও তুরস্কের সংবিধান দেশটির ধর্মনিরপেক্ষ অবস্থানকে সমর্থন করে, তারপরও এর্দোয়ান কট্টর ইসলামপন্থিদের মন জয়ের নানা চেষ্টা করেছেন৷ তুরস্কের এই শীর্ষনেতা একসময় বলেছিলেন যে, তাঁর লক্ষ্যগুলোর একটি হচ্ছে এক ‘ধার্মিক প্রজন্ম’ গড়ে তোলা৷ এর্দোয়ানের সমর্থকরা এই লক্ষ্যের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন, কেননা, তাঁরা মনে করেন, ধর্মচর্চা করা মুসলমানরা তুরস্কে নানাভাবে বঞ্চিত হচ্ছিল৷
ছবি: picture-alliance/AA/C. Ozdel
ক্যু থেকে রক্ষা
২০১৬ সালের জুলাইয়ে এর্দোয়ানের বিরুদ্ধে সে দেশের সেনাবাহিনীর এক অভ্যুত্থান ব্যর্থ হয়৷ তবে সেই ঘটনায় দু’শ’র বেশি বেসামরিক নাগরিক এবং সেনা সদস্য নিহত হন৷ সেই ব্যর্থ সেনা অভ্যুত্থানের পর এর্দোয়ান আরো ক্ষমতাশালী হয়ে ওঠেন এবং জরুরি অবস্থা ঘোষণার পাশাপাশি সেনাবাহিনীতে ‘শুদ্ধি অভিযান’ শুরু করেন৷
ছবি: picture-alliance/AA/K. Ozer
দেশজুড়ে অভিযান
ব্যর্থ সেই সেনা অভ্যুত্থানের পর দেশজুড়ে অভিযান পরিচালনা করে তুর্কি কর্তৃপক্ষ৷ এতে সেনাবাহিনী, পুলিশ, বিচার ব্যবস্থা, স্কুল এবং গণমাধ্যম থেকে পঞ্চাশ হাজারের বেশি মানুষকে গ্রেপ্তার করা হয়৷ এর্দোয়ান সেই সেনা অভ্যুত্থানের পেছনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নির্বাসিত ধর্মীয় নেতা এবং তাঁর প্রাক্তন সঙ্গী ফেতুল্লাহ গুলেনের হাত রয়েছে বলে দাবি করেন৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/E. Gurel
বিভেদ সৃষ্টিকারী রাজনীতিবিদ
যদিও নিজের দেশে এবং বিদেশে বসবাসরত তুর্কিদের একটি বড় অংশের সমর্থন রয়েছে এর্দোয়ানের প্রতি, তা সত্ত্বেও তিনি তাঁর কঠোর নীতি এবং কুর্দিদের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান চালানোয় কড়া সমালোচনার মুখে পড়েছেন৷ চলতি বছরের জানুয়ারিতে আফরিনে মারাত্মক আক্রমণ পরিচালনা করেন এর্দোয়ান, যার সমালোচনা করে মানবাধিকা সংস্থাগুলো৷
ছবি: picture- alliance/ZUMAPRESS/Brais G. Rouco
ব্যাপক ক্ষমতাধর
২০১৭ সালে এক গণভোটের মাধ্যমে দেশটির সংবিধান সংশোধন করা হয়৷ সংসদীয় গণতন্ত্র থেকে রাষ্ট্রপতি শাসিত প্রজাতন্ত্রে পরিণত হয় তুরস্ক৷ ২০১৮ সালের ২৪ জুন নতুন করে ৫ বছরের জন্য প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন তিনি৷ দেশটির ইতিহাসে এতো ক্ষমতাবান প্রেসিডেন্ট এর আগে আসেননি৷ শপথ নেয়ার দিন নিজের জাস্টিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টি- একেপির সদস্যদের এর্দোয়ান বলেন, ‘তুরস্ক নতুন যুগে প্রবেশ করেছে’৷
ছবি: picture-alliance/abaca
8 ছবি1 | 8
তুরস্ক সোমবারই আবার তেল ও গ্যাস অনুসন্ধানকারী জাহাজ পূর্ব ভূমধ্যসাগরে পাঠিয়ে দিয়েছে। তা নিয়ে ইউরোপের দেশগুলিতে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। তুরস্ককে সতর্ক করে দিয়ে মাস বলেছেন, ''তুরস্ক যেন এমন কোনো কাজ না করে, যাতে দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা বাড়ে। সে ক্ষেত্রে ইইউ-র সঙ্গে তুরস্কের সম্পর্ক আরো খারাপ হবে।''
তুরস্ক পূর্ব ভূমধ্যসাগরে আবার অনুসন্ধানকারী জাহাজ পাঠাবার পর সে দেশের জ্বালানিমন্ত্রী বলেছেন, ''আমরা অনুসন্ধানের কাজ করব। আমাদের অধিকার রক্ষার জন্যই এই কাজ করতে হবে।''
তুরস্কের এই পদক্ষেপে গ্রিস ক্ষুব্ধ। তারা জানিয়েছে, ''তুরস্ক পরিকল্পনামাফিক এই এলাকার শান্তি ও নিরাপত্তা বিঘ্নিত করছে। তুরস্ক যেন অবিলম্বে জাহাজ নিজেদের দেশে ফিরিয়ে নেয়। কারণ, তারা বেআইনি কাজ করছে। এর থেকে বোঝা যাচ্ছে, তুরস্ক আলোচনাচালাতে ইচ্ছুক নয়।''