ভারতে করোনার তথ্য চাপা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ভুল টেস্ট করে রিপোর্ট নেগেটিভ করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ।
বিজ্ঞাপন
ভারতে করোনা সংক্রমণ প্রায় এক কোটিতে গিয়ে পৌঁছেছে। এখনো দিনে প্রায় ৪০ হাজার মানুষ আক্রান্ত হচ্ছেন। তারই মধ্যে, বিশেষজ্ঞদের একাংশ দাবি করছেন, বড় অংশের ভারতীয়ের ঠিক মতো করোনা পরীক্ষাই হয়নি। পরীক্ষা হলে আক্রান্তের সংখ্যা আরো অনেক বেশি হতো।
মূলত দুইটি প্রক্রিয়ায় ভারতে করোনার পরীক্ষা হচ্ছে। আর সেখানেই রয়ে গিয়েছে সর্ষের মধ্যে ভূত। পিসিআর এবং অ্যান্টিজেন টেস্টের মাধ্যমে ভারতে করোনা শনাক্ত করা হচ্ছে। প্রথম যখন করোনার পরীক্ষা শুরু হয়েছিল, তখন দেশ জুড়ে শুধুমাত্র পিসিআর টেস্টই হতো। চিকিৎসকদের বক্তব্য, পিসিআর টেস্টে করোনা সংক্রমণের তথ্য নির্ভুল আসে। প্রথম দিকে ১০০ শতাংশ ক্ষেত্রেই পিসিআর টেস্ট করা হতো। কিন্তু যত দিন গিয়েছে, সংক্রমণ যত বেড়েছে, ততই বিভিন্ন রাজ্য করোনার সংখ্যা কমানোর জন্য অ্যান্টিজেন টেস্ট করতে শুরু করে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই যার রিপোর্ট নির্ভুল নয়। তথ্য বলছে, তুল্যমূল্য বিচারে পিসিআর টেস্টে অ্যান্টিজেন টেস্টের চেয়ে দুই দশমিক পাঁচ শতাংশ থেকে তিন দশমিক পাঁচ শতাংশ বেশি করোনা ধরা পড়ে। উদাহরণ হিসেবে তাঁরা বলছেন, শুধুমাত্র দিল্লিতে পিসিআর টেস্টে করোনা ধরা পড়েছে ১৪ শতাংশ। সেখানে অ্যান্টিজেন টেস্টে করোনা ধরা পড়েছে চার শতাংশ।
জার্মানিতে করোনা ভাইরাসের টিকা আবিষ্কারে মুসলিম দম্পতি
করোনা ভাইরাসের টিকা প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান বায়োনটেকের প্রতিষ্ঠাতা তুরস্ক বংশোদ্ভূত এক দম্পতি৷ ছবিঘরে জানুন বিস্তারিত৷
ছবি: Stefan F. Sämmer/imago images
২০০৮ সালে শুরু
জার্মান শহর মাইনৎসে ১২ বছর আগে বায়োনটেকের পথচলা শুরু হয়৷ এই কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ উগুর জাহিন এবং তাঁর স্ত্রী ইমিউনোলজিস্ট উজলেম টুরেচি৷
ছবি: BioNTech SE 2020, all rights reserved
তুরস্ক বংশোদ্ভূত
তারা দুইজনই তুরস্ক বংশোদ্ভূত জার্মান নাগরিক৷ এই দম্পতির তৈরি বায়োনটেকে এখন কাজ করে ১৫শ’ কর্মী৷ ৫৫ বছর বয়সি জাহিনের জন্ম তুরস্কে৷ বাবা-মা’র সঙ্গে একসময় জার্মানিতে চলে আসেন তিনি৷ মেডিসিন এবং গণিত নিয়ে পড়ালেখা করেন কোলোন বিশ্ববিদ্যালয়ে৷
ছবি: Stefan F. Sämmer/imago images
ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াই
জাহিন কোলোন এবং হামবুর্গে দীর্ঘদিন চিকিৎসক হিসেবে কাজ করেছেন৷ এরপর জারল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দেন৷ ১৯৯২ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত একজন চিকিৎসক ও গবেষক হিসেবে সেখানে কাজ করেন৷ মলিকিউলার মেডিসিন এবং ইমিউনোলজি নিয়ে গবেষণা শুরু করেন৷ ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের ব্যাপারে তিনি সবসময় আগ্রহী ছিলেন আর এ কারণেই ২০০৮ সালে বায়োনটেক প্রতিষ্ঠা করেন৷ ক্যান্সারের ওষুধ আবিষ্কারের জন্য এখানে মনোনিবেশ করেন তিনি৷
৫৩ বছর বয়সি টুরেচির জন্ম জার্মানিতে৷ কিন্তু তাঁর বাবা-মা তুর্কি৷ হামবুর্গে পড়ালেখা করে, সেখানেই চিকিৎসক হিসেবে কাজ করেছিলেন তিনি৷ ইমিউনোলজিস্ট টুরেচি ক্যান্সার রোগীদের থেরাপি দিয়ে থাকেন৷
ছবি: BioNTech SE 2020, all rights reserved
ভ্যাকসিন তৈরির সিদ্ধান্ত
২০০০ সালের জানুয়ারিতে জাহিন করোনা ভাইরাস সম্পর্কে প্রথম জানতে পারেন৷ তখনই তাঁর আশঙ্কা হয় এটি মহামারি রূপ নেবে৷ সেসময়ই ভ্যাকসিন প্রস্তুতের সিদ্ধান্ত নেন তিনি৷
ছবি: BioNTech SE 2020, all rights reserved
করোনা প্রতিরোধে ভূমিকা
বায়োনটেকের প্রধান নির্বাহী উগুর জাহিন জানিয়েছেন, এই টিকার প্রতিরোধ ক্ষমতা অন্তত এক বছর স্থায়ী হবে৷ যৌথ বিবৃতিতে ফাইজারের চেয়ারম্যান ও তিনি জানিয়েছেন, ‘‘টিকার তৃতীয় পর্যায়ের পরীক্ষার প্রাথমিক ফলে আমরা প্রমাণ পেয়েছি যে এটি কোভিড-১৯ প্রতিরোধ করতে পারে৷’’
ছবি: Andreas Arnold/dpa/picture-alliance
6 ছবি1 | 6
বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, ভারতে পিসিআর টেস্ট কমতে কমতে ষাট শতাংশে গিয়ে দাঁড়িয়েছে। অ্যান্টিজেন টেস্ট হয়ে গিয়েছে প্রায় পাঁচ কোটি মানুষের। এই পাঁচ কোটি মানুষের অধিকাংশের অ্যান্টিজেন টেস্টে করোনার রিপোর্ট নেগেটিভ এসেছে। কিন্তু পরবর্তী কালে দেখা গিয়েছে, তাঁদের করোনা পসিটিভ ছিল।
কেন এই ঘটনা ঘটছে? কেন অ্যান্টিজেন টেস্ট নির্ভুল নয়, এ তথ্য জেনেও রাজ্যগুলি সেই টেস্ট করাচ্ছে? চিকিৎসক দেবাংশু হালদারের বক্তব্য, ''অ্যান্টিজেন টেস্ট করিয়ে করোনা সংক্রমণের তথ্য চাপার চেষ্টা করছে কোনো কোনো রাজ্য সরকার এবং কেন্দ্রীয় সরকার। তারা দেখানোর চেষ্টা করছে, করোনা সংক্রমণ গোষ্ঠীতে সে ভাবে ছড়ায়নি। নির্ভুল পিসিআর টেস্ট করলে আক্রান্তের সংখ্যা কয়েক গুণ বেশি হতো।''
করোনার একেবারে গোড়ার দিকে ভারতে টেস্টই হচ্ছিল কম। টেস্ট না করিয়ে কোনো কোনো রাজ্য দেখানোর চেষ্টা করছিল সেখানে করোনার প্রকোপ তত বেশি নয়। পশ্চিমবঙ্গের বিরুদ্ধে এক সময় এই অভিযোগ উঠেছিল। বিহারের বিরুদ্ধেও একই কথা বলা হয়েছে। পরবর্তী কালে দেখা গিয়েছে, টেস্ট বাড়াতেই ওই রাজ্য গুলিতে করোনার প্রকোপ লাফিয়ে বেড়েছে। গুজরাত, দিল্লির মতো জায়গায় রাজ্য সরকারগুলি দেখানোর চেষ্টা করছিল, সেখানে যথেষ্ট টেস্ট হচ্ছে। কিন্তু সংক্রমণ কম দেখানোর জন্য সেখানে অ্যান্টিজেন টেস্ট করানো হচ্ছিল বলে চিকিৎসকদের একটি বড় অংশের অভিযোগ।
করোনা সংক্রমণে যুক্তরাষ্ট্রের পরেই ভারত
মোট করোনা সংক্রমণে ব্রাজিলকে পেছনে ফেলে দিলো ভারত৷ এখন শুধু যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থাই ভারতের চেয়ে খারাপ৷ বিস্তারিত ছবিঘরে...
ছবি: Getty Images/Y. Nazir
দৈনিক সর্বোচ্চ নতুন সংক্রমণ
পরপর তিনদিন মোট সংক্রমণ ৯০ হাজার ছাড়িয়েছে ভারতে, যা বিশ্বে সর্বোচ্চ দৈনিক সংক্রমণ৷ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, গত একমাস ধরেই বিশ্বে সর্বোচ্চ দৈনিক সংক্রমণের রেকর্ড গড়ছে ভারত৷
ছবি: Reuters/A. Dave
গ্রামাঞ্চলেও বাড়ছে সংক্রমণ
এতদিন ভারতে সংক্রমণ বেশি ছিল শহরাঞ্চলে৷ কিন্তু এখন আস্তে আস্তে বদলাচ্ছে চিত্র৷ দিল্লির জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের গণস্বাস্থ্য বিষয়ের অধ্যাপক রাজীব দাশগুপ্ত বলেন, ‘‘বর্তমানে সংকটটা দুই ভাগেই৷ শহরাঞ্চলে সংক্রমণ কমার কোনো লক্ষণ নেই, গ্রামাঞ্চলেও বাড়ছে সংক্রমণ৷’’
ছবি: picture-alliance/AP Photo/R. S. Iyer
মৃত্যু এবং সুস্থ হওয়ার হার
সরকারী পরিসংখ্যান বলছে, ভারতে এ পর্যন্ত ৭১ হাজার ৬৪২ জনের মৃত্যু হয়েছে করোনায়৷ পাশাপাশি, প্রায় ৩৩ লাখ মানুষ সেরে উঠেছেন৷ সরকার বলছে, দেশের ‘টেস্ট-ট্র্যাক-ট্রিট’ নীতির কারণে মৃত্যুহার নিয়ন্ত্রণে রাখা গেছে৷ সারা ভারতে মোট আক্রান্তের ৭৭ শতাংশ সুস্থ হয়েছেন৷
ছবি: Reuters/F. Mascarenhas
পরীক্ষা কত?
গত ২৪ ঘন্টায় সাত লাখ ২০ হাজার মানুষের করোনা পরীক্ষা করা হয়েছে৷ এখন পর্যন্ত, প্রায় পাঁচ কোটি করোনা পরীক্ষা করা হয়েছে ভারতে৷
ছবি: Reuters/F. Mascarenhas
তবুও ‘আনলক’
জুলাই মাস থেকে ধাপে ধাপে লকডাউনের পর ‘আনলক’ শুরু হয়েছে ভারতে৷ দীর্ঘদিন পর দিল্লিতে চালু হয়েছে মেট্রো পরিষেবা, দেশে চালু হয়েছে রেল, বিমান পরিষেবাও৷ খুলে গেছে বেশ কিছু মুক্তমঞ্চ, পাব, শপিংমলও৷ বলা হচ্ছে, থমকে যাওয়া অর্থনীতিকে চাঙ্গা করে তুলতেই এসব পদক্ষেপ৷
ছবি: picture-alliance/NurPhoto/H. Bhatt
অর্থনীতিতে করোনার প্রভাব
করোনা সংকটে বড় ধাক্কা খেয়েছে ভারতের অর্থনীতি৷ দেশের জিডিপি কমেছে প্রায় ২৪ শতাংশ৷ ফিনানশিয়াল টাইমস বলছে, করোনাকালে ভারতে প্রায় দেড় কোটি মানুষ কর্মসংস্থান হারিয়েছেন৷ ফোর্বস মার্শালের চেয়ারম্যান নওশাদ ফোর্বস বর্তমান অবস্থাকে দেশের সবচেয়ে খারাপ অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বলে মনে করছেন৷
ছবি: Imago Images/ZUMA Wire/A. Vaishnav
যুক্তরাষ্ট্রেও বাড়ছে...
ব্রাজিলকে পেছনে ফেলে সংক্রমণের দিক থেকে দ্বিতীয় স্থানে ভারত৷ যুক্তরাষ্ট্রে সংক্রমণ ৬২ লাখ, মৃত্যু এক লাখ ৯৩ হাজারের কাছাকাছি৷ ৪১ লাখ জন সংক্রমিত নিয়ে ব্রাজিল ভারতের চেয়ে পিছিয়ে থাকলেও সেখানে এ পর্যন্ত করোনায় মৃত্যু হয়েছে এক লাখ ২৬ হাজার জনের৷ অন্যদিকে রয়টার্সের জানাচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রের ২২টি রাজ্যে নতুন করে সংক্রমণ বাড়ছে৷ ফলে সেখানেও পরিস্থিতি আরো খারাপের দিকে যেতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/K. Willens
7 ছবি1 | 7
সম্প্রতি বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলে এনডিটিভি একটি রিপোর্ট তৈরি করেছে। সরকারি তথ্য ব্যবহার করে সেই রিপোর্টে বলা হয়েছে, ভারতে অন্তত ৩৫ লাখ আক্রান্ত মানুষের রিপোর্ট নেগেটিভ এসেছে। কিন্তু পরবর্তীকালে দেখা গিয়েছে তাঁদের সংক্রমণ হয়েছিল। এই ব্যক্তিদের করোনার চিকিৎসা হলেও করোনা রোগীর তালিকায় তাঁরা স্থান পাননি। অর্থাৎ, সরকার এই রোগীদের করোনার তালিকায় রেখে সংখ্যা বাড়াতে চায়নি।
চিকিৎসক সাত্যকি হালদারের বক্তব্য, এটাও এক ধরনের স্ক্যাম। রাজ্য সরকার তো বটেই, কেন্দ্রীয় সরকারও বিভিন্ন সময় এ ভাবেই করোনা সংক্রমণের তথ্য চাপার চেষ্টা করেছে। লকডাউন যে ফলপ্রসূ হয়নি। তা যে ভুল সময় করা হয়েছিল, এই বিষয়গুলি ধামা চাপা দেওয়ার চেষ্টা করছে সরকার। অর্থনীতির কারণে এখন সব কিছু খুলে দেওয়া হয়েছে। এবং সে কারণেই সংক্রমণের তথ্য চাপা দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে।
এ দিকে মঙ্গলবার বিভিন্ন রাজ্যের সঙ্গে বৈঠকে বসেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সেখানে কী ভাবে করোনার সংক্রমণ কমানো যায় এবং ভ্যাকসিন এলে তা কী ভাবে দেওয়া হবে, তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী সেখানে মোদীর কাছে অভিযোগ করেছেন, কেন্দ্র করোনা মোকাবিলার জন্য রাজ্যগুলিকে যথেষ্ট সাহায্য করছে না। যে পরিমাণ অর্থ কেন্দ্রের কাছে চাওয়া হয়েছিল, সে পরিমাণ টাকা কেন্দ্র রাজ্যকে দেয়নি। বৈঠকে যথেষ্ট উষ্মা প্রকাশ করেন মমতা।