করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের সময়েও ভুল তথ্য এবং প্রোপাগান্ডার প্রচার চলছে বিশ্বজুড়ে৷ বিশ্বনেতারা বলছেন, মানবতা এখন ভয়ানক অদৃশ্য শক্তির বিরুদ্ধে লড়ছে, তবু অন্য লড়াইটা কিন্তু থামেনি৷
বিজ্ঞাপন
ভুল তথ্য এবং প্রোপাগান্ডার সবচেয়ে বড় দুটো লড়াই চলছে চীন আর যুক্তরাষ্ট্র এবং রাশিয়া আর পশ্চিমা বিশ্বের মধ্যে৷ এসব নতুন নয়৷ তবে করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের পর এটা নতুন করে শুরু হয়েছে নতুন মাত্রায়৷
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডিব্লিউএইচও) অবশ্য ব্যক্তিগত এবং রাষ্ট্রীয় পর্যায়ের এমন ক্ষতিকর লড়াই অনুমান করেছিল আগেই৷ সংস্থাটির মহাপরিচালক ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহেই প্যানডেমিক-এর পাশাপাশি 'ইনফোডেমিক', অর্থাৎ তথ্যের মারাত্মক প্রাদুর্ভাব সম্পর্কেও সতর্ক করেছিলেন৷ তিনি বলেছিলেন, ‘‘ভুয়া খবর ভাইরাসের চেয়েও অনেক দ্রুত এবং সহজে ছড়িয়ে পড়ে৷ এটা ভাইরাসের চেয়েও বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে৷’’
ভুল তথ্যের ছড়াছড়ি
ভুয়া খবর সম্পর্কে ডাব্লিউএইচও মহাপরিচালক সতর্ক করার আগেই শুরু হয়েছিল করোনা ভাইরাস নিয়ে ভুল তথ্য এবং প্রপাগণ্ডা প্রচার৷ গত ২২ জানুয়ারি রাশিয়ার স্পুটনিক নিউজ এক খবরে দাবি করে, করোনা ভাইরাস আসলে মানুষের তৈরি৷ সেখানে আরো দাবি করা হয়, ভাইরাসটি তৈরি করেছে ন্যাটো৷
স্পুটনিকের আরবি সংস্করণ প্রকাশ করে আরেকটি খবর৷ সেই খবরে দাবি করা হয়, ভাইরাসটি তৈরি হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের পরীক্ষাগারে৷ যুক্তরাষ্ট্রবিরোধী যে কোনো খবর লুফে নেয় মধ্যপ্রাচ্যের বেশিরভাগ মানুষ৷ যাচাই না করে এই খবরটি তাই প্রচার করল মধ্যপ্রাচ্যের ১০-১৫ টি ওয়েবসাইট৷
রাশিয়ার অপপ্রচার পর্যবেক্ষণ এবং তার জবাব দেয়ার জন্য ইউরোপের গড়ে তোলা ইইউভার্সেসডিসইনফো জানাচ্ছে, রাশিয়ার গণমাধ্যম অনেক সময় পরস্পরবিরোধী খবরও প্রচার করে৷ কখনো বলা হয় করোনাভাইরাস খুব বিপদজনক, আবার এ-ও বলা হয়, ইউরোপের দেশগুলোর ইন্টিগ্রেশনের সমস্যা আছে বলে এ অঞ্চলে ভাইরাসটি বেশি ছড়িয়ে পড়ছে৷
এদিকে ইইউভার্সেসডিহইনফো-র পাল্টা জবাব হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের গড়ে তোলা গ্লোবাল এনগেজমেন্ট সেন্টার (জিইসি) চীন, ইরান এবং অন্যান্য মুসলিমপ্রধান দেশগুলোর অপপ্রচারের দিকে চোখ রাখছে৷ এ বিষয়ে গত সপ্তাহে একটি ভিডিও বার্তা প্রচার করেছেন জিইসি-র লি গাব্রিয়েল৷ সেখানে সাবেক এই সিআইএ এজেন্ট বলেন, ‘‘রাশিয়া কোনো মিথ্যা খবর প্রচার করলে চীনের মিডিয়া তা লুফে নেয়৷ চীনের মিডিয়া খবরটি প্রচার করার পর রাশিয়ার মিডিয়া তা রিটুইট করে৷ এভাবে তারা বোঝাতে চায় খবরটি চীনের গণমাধ্যম থেকে সরাসরি পেয়েছে৷’’
প্লেগ থেকে করোনা: রোগের ষড়যন্ত্র তত্ত্ব
করোনা ভাইরাস প্রাকৃতিকভাবে নয়, তৈরি হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র কিংবা চীনের গবেষণাগারে, এমন গুজব হরহামেশাই ছড়াচ্ছে৷ শুধু করোনা নয়, যুগে যুগে বিশ্বব্যাপী ছড়ানো সব মরণব্যাধী নিয়েই এমন ষড়যন্ত্র তত্ত্ব বিস্তার লাভ করেছে৷
ছবি: zecken.de
প্লেগের কারণ ইহুদিরা
১৪ শতকে ইউরোপে প্লেগ ছড়িয়ে পড়ে৷ কারো জানা ছিল না কোথা থেকে এর উৎপত্তি৷ একটা সময়ে গুজব ছড়িয়ে পড়ল যে ইহুদিরা পরিকল্পিতভাবে এই রোগ ছড়িয়েছে৷ প্লেগের পেছনে আছে ইহুদিরাই; এমন বিশ্বাস থেকে বিভিন্ন জায়গায় তাদের উপর নির্যাতন শুরু হয়৷ জোরপূর্বক উচ্ছেদও করা হয় অনেককে৷
ছবি: picture-alliance/National Museum of Health and Medicine
স্প্যানিশ ফ্লু জার্মানির অস্ত্র
১৯১৮ থেকে ১৯২০ সালে স্প্যানিশ ফ্লু প্রায় আড়াই কোটি থেকে পাঁচ কোটি মানুষের প্রাণ কেড়ে নেয়৷ ১৯৩০ সাল পর্যন্ত এই ভাইরাসের উদ্ভব রহস্য হয়ে ছিল৷ অনেকে মনে করতেন জার্মান সেনাবাহিনী অস্ত্র হিসেবে ব্যবহারের জন্য এই জীবাণু আবিষ্কার করে৷
ছবি: picture-alliance / akg
এইডস ছড়িয়েছে যুক্তরাষ্ট্র
১৯৮০-র দশকে যুক্তরাষ্ট্রে এইডস ছড়িয়ে পড়ে৷ পরবর্তীতে ১৯৮৩ সালে এ নিয়ে গুজব ছড়াতে শুরু করে সোভিয়েত গোয়েন্দা বাহিনী কেজিবি৷ বলা হয় ফোর্ট ড্রেট্রিক-এ জীবাণু অস্ত্র হিসেবে মার্কিনিরা এইচআইভি উদ্ভাবন করেছিল, যা পরবর্তীতে প্রয়োগ করা হয় বন্দী, সংখ্যালঘু আদিবাসী সম্প্রদায় এবং সমকামীদের উপর৷ এই ষড়যন্ত্র তত্ত্বটি আজও জনপ্রিয়৷
ছবি: Imago Images/ZUMA Press/D. Oliveira
ইবোলার দায় যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেনের
নব্বইর দশকে এইডস অনেকটা নিয়ন্ত্রণে আসতে শুরু করে৷ কিন্তু এ সময় আফ্রিকায় নতুন করে ইবোলা ছড়িয়ে পড়ে৷ যুক্তরাষ্ট্র এইডস ছড়িয়েছে এমন ষড়যন্ত্র তাত্ত্বিকরা এবার দাবি করল ইবোলার জন্যও তারাই দায়ী৷ সঙ্গে অবশ্য ব্রিটেনকেও জড়ানো হল৷
ছবি: picture-alliance/dpa
পেন্টাগনের এঁটেল পোকা প্রকল্প
২০১৯ সালে রিপাবলিকান কংগ্রেসম্যান ক্রিস স্মিথ দাবি করেন পেন্টাগন এঁটেল পোকাসহ বিভিন্ন কীটের মাধ্যমে জীবাণু অস্ত্র তৈরির প্রকল্প চালিয়েছে৷ এই গবেষণা চলেছে ১৯৫০ থেকে ১৯৭৫ সালের মধ্যে৷ স্মিথ সম্প্রতি এ নিয়ে একটি বইও লিখেছেন৷
ছবি: zecken.de
কোভিড-১৯ কৃত্রিমভাবে ছড়ানো
ডিজিটাল যুগে যেকোন ভুল তথ্য আগের চেয়েও দ্রুত ছড়ায়৷ বিভিন্ন রোগের কারণ হিসেবেই যুক্তরাষ্ট্রের গোপন জীবাণু অস্ত্র কর্মসূচির কথা বারবার সামনে আসে৷ একইভাবে এবার ষড়যন্ত্র তত্ত্বপ্রেমীদের দাবি নভেল করোনা ভাইরাস চীনের কোন গবেষণাগারে কৃত্রিম উপায়ে তৈরি করা হয়েছে৷ সেখান থেকেই তা পরে সারা বিশ্বে ছড়িয়েছে৷ কেউ কেউ দাবি করছেন যুক্তরাষ্ট্রই জীবাণুটি তৈরি করে চীনে পাঠিয়েছে৷ যদিও এসব দাবির পক্ষে কোনো প্রমাণ নেই৷
ছবি: picture-alliance/ZumaPress/Z. Maulana
6 ছবি1 | 6
গত মাসে চীনের কূটনীতিক লিজিয়ন ঝাও টুইটারে লেখেন, ভাইরাসটি ২০১৯ সালের অক্টোবরে অনুষ্ঠিত মিলিটারি ওয়ার্ল্ড গেমসে অংশ নিতে যাওয়া যুক্তরাষ্ট্রের সেনা সদস্যদের মাধ্যমে চীনের উহানে ছড়ানো হয়েছে৷ মন্ট্রিয়লভিত্তিক গ্লোবাল রিসার্চ-কে উদ্ধৃত করে এ তথ্য দেন তিনি৷ নিজেদের থিংকট্যাংক হিসেবে দাবি করা গ্লোবাল রিসার্চ অবশ্য তথ্যটি নিয়েছিল চীনের গ্লোবাল টাইমস থেকে৷
লিজিয়ান ঝাও-এর টুইট করা খবর নানা দেশে দায়িত্বরত চীনের অন্তত ডজনখানেক রাষ্ট্রদূত রিটুইট করেন৷ সব মিলিয়ে ১২ হাজার রিটুইট এবং ২০ হাজার লাইক পেয়েছিল লিজিয়ান এর সেই ভুয়া খবর৷
জিইসি এবং চীনা গণমাধ্যম অবশ্য এখন করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব নিয়ন্ত্রণে চীনের সাফল্য এবং যুক্তরাষ্ট্রের ব্যর্থতা প্রচারে মন দিয়েছে৷
করোনা ভাইরাস, নাকি চীনা ভাইরাস?
ডনাল্ড ট্রাম্প করোনা ভাইরাসকে ‘চীনা ভাইরাস’ বলে শুরু থেকেই চীনকে তাক করে কামান দাগাচ্ছেন৷ যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও ভাইরাসটির নাম দিয়েছেন 'উহান ভাইরাস’৷ যুক্তরাষ্ট্র চেয়েছে প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়ার পরই চীন খবরটি জানায়নি- এমনটি দাবি করে পরিস্থিতি ভয়াবহ হওয়ার জন্য চীনকে দায়ী করতে৷
ইরানে যা হয়েছে
করোনা মোকাবিলায় ইরানকে সহায়তা করতে চেয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র৷ ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি তা প্রত্যাখ্যান করে জাতির উদ্দেশ্যে দেয়া ভাষণে বলেছেন, ‘‘তোমাদের কেউ বিশ্বাস করে না৷’’
এনজিও ডক্টরস উইদাউট বর্ডার্স ইরানের ইসফাহান শহরে ৫০ শয্যার একটি হাসপাতাল খুলেছিল৷ ওই হাসপাতালের ডাক্তারদের পশ্চিমা বিশ্বের গুপ্তচর আখ্যা দিয়ে এর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায় কট্টরপন্থিরা৷ হাসপাতালটি বন্ধ করে দিতে হয়েছে৷
মাটিয়াস ফনহাইম/এসিবি
করোনা: গুজব ও বাস্তবতা
করোনা ভাইরাস নিয়ে ভয় পাওয়াটা অস্বাভাবিক নয়৷ কিন্তু এই ভয়কে কাজে লাগিয়ে অনলাইনে ছড়িয়ে পড়ছে ভুয়া তথ্য, মিথ্যা সংবাদ৷ ডয়চে ভেলে চেষ্টা করছে বিশেষজ্ঞদের মত অনুসারে আপনাদের সঠিক তথ্য জানানোর৷
ছবি: picture-alliance/Photoshot/Xiao Yijiu
শিশুদের আশঙ্কা কি বেশি?
শিশুদের নিয়ে আলাদা করে কোনো আশঙ্কা নাই৷ যে কোনো বয়সের মানুষ আক্রান্ত হতে পারেন৷ আক্রান্তদের পাঁচ জনের চারজনের ওপর এই ভাইরাস সাধারণ ঠান্ডা-জ্বরের মতোই প্রভাব ফেলবে৷ এখন পর্যন্ত আক্রান্ত হওয়া রোগীদের বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে শিশু ও তরুণ বয়সিরা স্বাভাবিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দিয়েই সংক্রমণ কাটিয়ে উঠতে পারেন৷ মধ্যবয়সিরা এতে আক্রান্ত হলেও পর্যাপ্ত সেবা ও চিকিৎসায় তাদেরও সেরে ওঠার সম্ভাবনা প্রায় শতভাগ৷
ছবি: Reuters/A. Jalal
কী খেলে ঠেকানো যাবে করোনা?
কোনো কিছু খেয়েই করোনা ঠেকানো যাবে না৷ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ঠিক রাখার জন্য সুষম খাবার এমনিতেই প্রয়োজন৷ অনলাইনে গুজব ছড়াচ্ছে৷ কেউ রসুন খাওয়ার কথা বলছেন, কেউ ব্লিচিং বা অন্য রাসায়নিক দ্রব্যের কথা বলছেন৷ রসুনে নানা উপাদান রয়েছে যা শরীরের জন্য ভালো৷ রসুন খেলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ বাড়াতে তা ভূমিকা রাখতে পারে৷ তবে ব্লিচিং বা অন্য রাসায়নিক শরীরে গেলে তা করোনা ভাইরাসের চেয়েও মারাত্মক পরিণতি ডেকে আনতে পারে৷
ছবি: AFP/C. De Souza
গরম বা ঠান্ডা পানি পান করা উচিত?
নিয়মিত পানি পান করলে শরীরের জন্য ভালো৷ কিন্তু ১৫ মিনিট পর পর গরম পানি পান করলে ভাইরাস মারা যাবে, এমন তথ্য সঠিক নয়৷ মুখে বা শরীরে একবার ভাইরাস প্রবেশ করলে কোনো খাবার বা পানীয় দিয়েই তা আটকানো যাবে না৷ শরীরের স্বাভাবিক রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা নিজেই এই ভাইরাসের সঙ্গে লড়াই করতে সক্ষম৷
ছবি: Colourbox/Haivoronska_Y
অ্যান্টিবায়োটিক বা কোনো ওষুধে কাজ হবে?
অ্যান্টিবায়োটিক ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণের জন্য কার্যকর, ভাইরাসের জন্য নয়৷ কোনো কোনো ক্ষেত্রে অসুস্থ শরীরে ভাইরাসের পাশাপাশি ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণও হতে পারে৷ সেসব ক্ষেত্রে চিকিৎসক অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের পরামর্শ দিতে পারেন৷ এখনো নভেল করোনা ভাইরাসের ভ্যাকসিন বা প্রতিষেধক আবিষ্কার হয়নি৷ বিভিন্ন সংস্থা প্রতিষেধক আবিষ্কারের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে৷ শিগগিরই হয়তো আসবে সুখবর৷
ছবি: imago/Science Photo Library
আবহাওয়া ও তাপমাত্রার কোনো প্রভাব রয়েছে?
এ বিষয়ে এখনো বিজ্ঞানীরা নিশ্চিত নন৷ পরীক্ষাগারে দেখা গেছে ৬০ থেকে ৭০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় ভাইরাস মারা যায়৷ কিন্তু এত উচ্চ তাপমাত্রা কোনো দেশেই থাকে না৷ অনেকে মনে করছেন গরম পানি দিয়ে স্নান করলে ভাইরাস থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে৷ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকা সবসময় জরুরি৷ কিন্তু প্রচণ্ড গরম পানি দিয়ে স্নান করলেই তা করোনা ভাইরাস থেকে বাঁচাবে, এমন তথ্য সঠিক নয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/D. Lipinski
থার্মাল স্ক্যানার দিয়ে কি করোনা ভাইরাস শনাক্ত সম্ভব?
থার্মাল স্ক্যানার দিয়ে শরীরে তাপমাত্রা বোঝা সম্ভব, ভাইরাসের উপস্থিতি নিশ্চত করা সম্ভব না৷ সেক্ষেত্রে কারো শরীরে জ্বর বা অন্য উপসর্গ দেখা দেয়ার আগ পর্যন্ত তার শরীরে ভাইরাসের উপস্থিতি বোঝা যাবে না৷ সাধারণত ভাইরাস শরীরে ঢোকার ১ থেকে ১৪ দিনের মধ্যে করোনা ভাইরাসের উপসর্গ দেখা দেয়৷ বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ৫ দিনের মধ্যেই তা টের পাওয়া যায়৷ তবে কোনো কোনো ক্ষেত্রে ১৪ দিনের পরও ভাইরাস শরীরে কর্মক্ষম থাকতে পারে৷
ছবি: Reuters/P. Mikheyev
টাকার মাধ্যমে কী করোনা ছড়ায়?
শরীরের বাইরে করোনা ভাইরাস কয়েক মিনিট থেকে কয়েক ঘণ্টা বেঁচে থাকতে পারে৷ ফলে আমদানি করা কোনো পণ্য বা চিঠির মাধ্যমে করোনা ভাইরাস ছড়ানোর আশঙ্কা নেই বললেই চলে৷ ময়লা টাকা থেকে যেকোনো জীবাণুই ছড়াতে পারে৷ ফলে টাকা লেনদেনের পর ভালো করে হাত ধুয়ে নেয়া উচিত৷ যত বেশি সম্ভব হাত-মুখ-নাক-কানে হাত নেয়া থেকে বিরত থাকতে হবে৷
ছবি: DW
মশা বা অন্য পশুর মাধ্যমে ছড়াতে পারে?
সার্স ভাইরাস ছড়িয়েছিল এক ধরনের বেড়াল থেকে৷ মার্স ছড়িয়েছিল উট থেকে৷ নভেল করোনা ভাইরাস কিভাবে ছড়ালো বিজ্ঞানীরা নিশ্চিত নন৷ ধারণা করা হচ্ছে, বাদুড় থেকে অন্য কোনো মাধ্যম হয়ে মানুষের মধ্যে এটি ছড়িয়েছে৷ তবে মশা বা অন্য কোনো প্রাণীর মাধ্যমে এটি আপনার মধ্যে ছড়াবে না৷ সতর্কতা হিসেবে মাছ-মাংস খাওয়ার আগে ভালোভাবে রান্না করতে হবে৷ অর্ধেক সিদ্ধ মাছ-মাংস বা পোচ করা ডিম থেকে যেকোনো জীবাণুই ছড়াতে পারে৷
ছবি: picture-alliance/blickwinkel/A. Rose
কিভাবে থাকবো নিরাপদ?
সবচেয়ে জরুরি হাত পরিষ্কার রাখা৷ সাবান দিয়ে হাত ভালো করে ২০ সেকেন্ড পরিষ্কার করতে হবে৷ যদি সাবান না থাকে, ব্যবহার করতে পারেন অ্যালকোহলযুক্ত হ্যান্ড স্যানিটাইজার৷ হাঁচি-কাশি দেয়ার সময় টিস্যু ব্যবহার করে তা ডাস্টবিনে ফেলুন, হাত ধুয়ে নিন৷ অথবা হাতের কনুইয়ে মুখ ঢাকুন৷ হাতের তালুতে হাঁচি-কাশি দিলে সেখান থেকে ভাইরাস ছড়িয়ে আক্রান্ত হতে পারেন অন্য়রা৷ হ্যান্ডশেক বা হাত মেলানো ও কোলাকুলি থেকেও বিরত থাকুন৷
ছবি: AFP/N. Almeida
আমি কী মারা যাবো?
করোনায় আক্রান্ত হলেই আপনি মারা যাবেন, এমন আশঙ্কা একেবারেই কম৷ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকার চেষ্টা করুন৷ চিকিৎসক ও বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ মেনে চলুন৷ অনলাইনে যা দেখবেন, সব বিশ্বাস না করে নির্ভরযোগ্য তথ্যের সন্ধান করুন৷ সাবান, স্যানিটাইজার নিজে কিনে জমিয়ে রাখবেন না৷ আপনি নিরাপদ থাকলেও আপনার আশেপাশের মানুষ নিরাপদ না থাকলে সহজেই তার কাছ থেকে ছড়াবে ভাইরাস৷ ফলে নিজে নিরাপদ থাকুন, অন্যদেরও থাকার সুযোগ দিন৷