1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‘ভুল' শোধরাতে চায় বিএনপি

২ জানুয়ারি ২০১৯

রাজনৈতিকভাবেই বিএনপি'র কৌশলে ভুল ছিল বলে মনে করেন দলটির নেতা-কর্মীরা৷ তৃণমূল পর্যায়ে অনেকে হতাশ হয়ে পড়লেও এ থেকে বের হবার উপায় খুঁজছে দলটি৷

General Mirza Fakhrul Islam Alamgir
ছবি: Getty Images/AFP/M.U. Zaman

৪০ বছর বয়সি দেবাশীষ থাকেন রাজধানীর মালিবাগ এলাকায়৷ মৌচাক মোড়ের একটি চায়ের দোকানেই তাঁর আড্ডা৷ বন্ধুদের সঙ্গে চায়ের কাপে প্রায়ই ঝড় তোলেন দেশের রাজনীতি নিয়ে তর্কতর্ক করে৷

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর বিএনপির ভবিষ্যৎ খুব একটা উজ্জ্বল দেখছেন না দেবাশীষ৷

‘‘বিএনপির ভবিষ্যৎ খুব একটা ভালো বলে মনে হচ্ছে না'', ডয়চে ভেলেকে বলেন তিনি৷

নেতা-কর্মীদের হতাশা

বিএনপির নেতা-কর্মীদের হতাশ হবার কারণ আছে বলে মনে করেন দেবাশীষ৷‘‘এরই মধ্যে ১২ বছর তারা ক্ষমতায় নেই৷ তার সঙ্গে যোগ হলো আরো পাঁচ বছর৷ একটা প্রজন্ম তো ধানের শীষ প্রতীকই চিনবে না,'' ডয়চে ভেলেকে সরল হিসেব দিলেন এই মিডিয়া কর্মী৷

‘নির্বাচনে বিএনপি’র নেতৃত্ব ছিল ঐক্যফ্রন্টের হাতে, যার ‘অপব্যবহার’ হয়েছে’

This browser does not support the audio element.

দেবাশীষের এই শঙ্কাকে অযৌক্তিক না বললেও, পুরো আশাহত নন বিএনপি কর্মী নাসির উদ্দিন৷ তিনি বসেছিলেন বিএনপির পল্টন অফিসের নীচে বহু পুরোনো ছবি বাঁধাইয়ের একটি দোকানে৷ দোকানটিতে বাঁধাই করা ছবিগুলোর মধ্যে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান ও দণ্ডপ্রাপ্ত চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার ছবিই বেশি৷

 ‘‘মাঠে সক্রিয় না হলেও ফেসবুকে তো দেখি, আমাদের নেতা-কর্মীদের মনোবল এখনো শক্ত,'' ডয়চে ভেলেকে বলেন তিনি৷

নাসির যোগ করেন, ‘‘রাজনীতি এক-দুই দিনের না৷ রাজনীতি লম্বা সময়ের৷ অনেক সময় দেখা যায়, বিশ বছরও ক্ষমতায় আছে কোনো সরকার৷ তারপরও হতাশ হয়নি বলেই অন্য দল টিকে থাকে৷ আওয়ামী লীগও ২১ বছর ক্ষমতায় ছিল না৷ তারা তো ‘অফ' হয়ে যায়নি৷''  

তবে নাসিরের সঙ্গে পুরোপুরি সুর মেলাতে পারছেন না নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির পরিবহণ শ্রমিক দলের নেতা জাহাঙ্গীর আলম৷ ‘‘মাঠ পর্যায়ে নেতা-কর্মীরা কিছুটা হলেও ভেঙে পড়েছে,'' ডয়চে ভেলেকে বলেন জাহাঙ্গীর৷ ‘‘কারণ, আশানুরূপ ফল পাওয়া যায়নি৷ বিএনপির মতো এত বড় দল পেয়েছে মাত্র মাত্র ৫/৭ টা জয়৷ এটি নেতা-কর্মীদের হতাশ করেছে৷''

ব্যর্থ কৌশল

রাজনীতির মাঠে আলোচনা– বিএনপি কেন ব্যর্থ হলো? তাদের নেতাদের কেউ কেউ অভিযোগ করেছেন, রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহার করে সরকার তাদের অবস্থা দূর্বল করেছে৷ কিন্তু বিএনপির নীতিনির্ধারণেও দূর্বলতা ছিল বলে মনে করেন জাহাঙ্গীর আলম৷

তিনি বলেন, ‘‘আমরা যারা জেলা পর্যায়ে আছি, থানা, ওয়ার্ড পর্যায়ের কর্মী আছি, তাদের কথা হলো, যাদের এবার নমিনেশন দেয়া হয়েছে, তাদের অনেকেই এবার নতুন মুখ৷ অথবা দলের বাইরের৷ আমি মনে করি এটা নির্বাচনের জন্য খারাপ দিক৷''

‘আমাদের পুরোনো সব কৌশল ব্যর্থ হয়েছে’

This browser does not support the audio element.

তিনি মনে করেন, নির্বাচনে বিএনপি'র নেতৃত্ব ছিল ঐক্যফ্রন্টের হাতে, যার ‘অপব্যবহার' হয়েছে৷‘‘নেতৃত্ব পুরোপুরি ঐক্যফ্রন্টের হাতেই ছিল৷ এখানে কিছুটা অপব্যবহার হয়েছে কিনা তা আমি জানি না, তবে আমার ধারণা, হয়েছে,'' ডয়চে ভেলেকে বলেন নারায়ণগঞ্জ জেলা পরিবহণ শ্রমিক দলের এই যুগ্ম সম্পাদক৷

কেমন অপব্যবহার?প্রশ্ন করা হলে জাহাঙ্গীর বলেন, মাঠ পর্যায়কে দুর্বল করে রাখা হয়েছে৷ ‘‘অপব্যবহার হয়েছে নমিনেশনের ব্যাপারে৷ যেমন, আমি নারায়ণগঞ্জ-৪ এর-ব্যাপারে বলতে পারি৷ মুফতি মনির হোসেন কাসেম নামে একজনকে প্রার্থী দেয়া হয়েছে৷ তিনি আদৌ নির্বাচনের মাঠেই ছিলেন না৷ নির্বাচনে তিনি ৬৭ হাজারের মতো ভোট পেয়েছেন৷ সেখানে তিন তিন বার নির্বাচিত শামীম ওসমান ভোট পেয়েছেন প্রায় চার লাখের কাছাকাছি৷ উনি (কাশেম) প্রচার-প্রচারণা না করেও যে ভোট পেয়েছেন... তিনি আজ পর্যন্ত আমাদের কোনো নেতা-কর্মীর সঙ্গে যোগাযোগ করেননি৷''

কৌশল ব্যর্থ হয়েছে এমনটি মনে করেন, বিএনপি'র যুগ্ম মহাসচিব মোয়াজ্জেম হোসেন আলালও৷ ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেন, ‘‘আমাদের পুরোনো সব কৌশল ব্যর্থ হয়েছে৷ এটাই বাস্তবতা৷ সেই নতুন চিন্তার মধ্যে এই প্রজন্মকে গুরুত্ব দিতে হবে৷ নেতা-কর্মীদের চেয়েও তাঁদের মতামত বেশি গুরুত্ব দিতে হবে৷ এর মাধ্যমে বিশ্লেষণ করে ভবিষ্যতের পথনির্দেশনা তৈরি হবে৷''

ঐক্যফ্রন্টে থাকা নিয়ে ধোঁয়াশা

বিএনপির সাধারণ কর্মীরা ঐক্যফ্রন্টের ভবিষ্যৎ নিয়ে সরাসরি কোনো মন্তব্য করতে না চাইলেও, ঐক্যফ্রন্টে বিএনপির অবস্থান নিয়ে কিছুটা অসন্তোষ দেখা গেছে কারো কারো মধ্যে৷

এমনকি এর ভবিষ্যৎ নিয়ে পরিষ্কার করে কিছু বলতে পারছেন না বিএনপি'র কেন্দ্রীয় নেতারাও৷

ডয়চে ভেলেকে আলাল বলেন, ‘‘ঐক্যফ্রন্টের ভবিষ্যৎ এই মুহূর্তে বলা মুশকিল৷'' তিনি যোগ করেন, ‘‘আমরা যারা একত্রিত হয়েছিলাম একটা পরিবর্তনের লক্ষ্যে, তা আপ্তবাক্য ছিল না, তা আমাদের ইশতাহারের মধ্য দিয়ে প্রমাণিত হয়েছে৷ সেখানে আমরা কিছু গুণগত পরিবর্তনের কথা বলেছি৷ সেগুলোকে সঙ্গে নিয়েই আমাদের এগোতে হবে৷''

এ বিষয়ে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীও কথা বললেন মোটা দাগে৷

'গণতন্ত্রকে হরণ করে ফ্যাসিবাদমূলক রাষ্ট্রব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়েছে'

This browser does not support the audio element.

‘‘গণতন্ত্রের ঘাটতি, ফ্যাসিবাদের উত্থান, তা মোকাবেলা করার জন্য ঐক্য আরো বাড়তে থাকবে,'' ডয়চে ভেলেকে বলেন রিজভী৷ ‘‘মানুষের ঐক্য আরো বেশি দৃঢ় হবে, প্রসারিত হবে, এখন যে ঐক্য আছে, তার সঙ্গে হয়তো যোগ দেবে৷''

নেতৃত্বের সংকট?

সাধারণ নেতা-কর্মীরা একটা বিষয় স্পষ্ট করেই বললেন যে,  বিএনপির পক্ষে নেতৃত্বের সংকট দেখা গেছে নির্বাচনে৷

প্রতিবেদকের কাছে হতাশা প্রকাশ করে জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘‘খালেদা জিয়ার মুক্তি ছাড়া আর কোনো ভালো সিদ্ধান্ত আসবে বলে মনে হচ্ছে না৷ তাঁর শূন্যস্থানে দলের এই পরস্থিতি তৈরি হয়েছে৷''

বিএনপির নেতৃত্বের সংকটের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে আলাল এর জন্য দোষারোপ করেন সরকারি দলের নেতৃত্বকে৷‘‘প্রধানমন্ত্রীই অনেক পরিকল্পনা করে বেগম খালেদা জিয়াকে বন্দি করে রেখেছেন,'' অভিযোগ করেন বিএনপি যুগ্ম মহাসচিব৷ ‘‘বাংলাদেশের রাজনীতিতে খালেদা জিয়া যেমন সূর্যের আলো, বিএনপিতেও তিনি আলোদানকারী শক্তি৷ খালেদা জিয়াকে যখন আমাদের কাছ থেকে পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হলো, তখনই আমি ব্যক্তিগতভাবে বুঝেছি যে, এই নির্বাচনটা আমাদেরকে অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে নিকৃষ্ট পর্যায়ে নিয়ে যাবে৷''

করণীয় নির্ধারণ করা হচ্ছে

নির্বাচনে এতটা ব্যাকফুটে চলে যাবার পর এখন বিএনপি'র নীতিনির্ধারণী পর্যায় বসেছে তাদের করণীয় ঠিক করতে৷

তবে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার কথা বললেন রিজভী৷

‘‘আমরা আগের অবস্থানেই আছি৷ আমরা যে গণতান্ত্রিক সংগ্রাম করছি, গণতন্ত্রকে হরণ করে ফ্যাসিবাদমূলক রাষ্ট্রব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়েছে, তার বিরুদ্ধে আমরা লড়াই করছি৷ আমাদের লড়াই অব্যাহত আছে,'' বলেন তিনি৷

তবে আলাল মনে করেন, কৌশল ব্যর্থ হবার কারণ বের করার জন্য বিস্তর গবেষণা করতে হবে বিএনপিকে৷

‘জামায়াত যেন না থাকে, বছর দুই আগে আমিই বলেছিলাম’

This browser does not support the audio element.

‘‘বিএনপির বিস্তর গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে৷ এই পরিস্থিতি তৈরির প্রেক্ষাপট হলো কেন? স্বৈরাচারী সরকার আরো স্বৈরাচারী হবার সুযোগ পেলো কেন? সে জায়গায় আমাদের লুপহোল বা ঘাটতি বের করতে হবে,'' বলেন আলাল৷

তিনি মনে করেন, সংগঠনের মধ্যে রাজনৈতিক চরিত্রের লোকদের কাজে লাগাতে হবে৷

‘‘সংগঠনের মধ্যে রাজনৈতিক বিশ্লেষণ এবং রাজনৈতিক চরিত্রের লোকগুলোকে দিয়ে সংগঠনকে আবার পুনর্বিন্যাস করা, তারপর ধীরে ধীরে এগোতে হবে,'' মনে করেন বিএনপির এই নেতা৷ তিনি যোগ করেন, ‘‘ছোট্ট একটা আলাদা প্লাটফর্ম করতে হবে দলের মধ্যেই৷ তারা এসব নিযেই কাজ করবে৷ তারা বিশ্লেষণ করে নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে পৌঁছে দেবে৷ নীতিনির্ধারণী পর্যায় যদি সেটা গ্রহণ করে তো ভালো, না হলে কোনো পরিবর্তন আমি দেখছি না৷''

জামায়াত বিষয়ে আলোচনা

এদিকে, জামায়াত বিষয়ে বিএনপিকে আলোচনা করার তাগিদ দিয়েছেন রাষ্ট্রবিজ্ঞানী এমাজউদ্দিন আহমেদ৷ তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘জামায়াত যেন না থাকে, বছর দুই আগে আমিই বলেছিলাম৷ দে হ্যাভ নো রাইট টু স্টে উইথ আস৷''

তবে জামায়াতের তরুণ প্রজন্মের কোনো দোষ নেই বলেও মন্তব্য করেন তিনি৷ এসব বিষয়ে বসে সিদ্ধান্ত নেয়ার পরামর্শ দেন তিনি৷

‘‘আমি চাই যে, ওরা মিটিংয়ে বসুক৷ একাধিকবার বসুক৷ নির্বাচনের সময়ে যে দুর্বলতা প্রকাশিত হয়েছে, তা আলোচনা করুক৷ উত্তরণ ঘটানোর উপায় বের করুক,'' বলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক এই উপাচার্য৷

তিনি যোগ করেন,‘‘জামায়াত সম্পর্কে এখনো তেমন কোনো বিষয় থাকে, লেট দেম টেক ডিসিশন৷ জামায়াতের জন্য বিএনপি এত বড় একটা দল, ক্ষতিগ্রস্ত করা যাবে না৷''

এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. শাহাদুজ্জামান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘বিএনপি আমার মতে সবচেয়ে বড় ভুল করেছে জামায়াতের সঙ্গে জোট করে৷ অন্যদের সুযোগ করে দিয়েছে৷''

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ