ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাক্রোঁ প্রেসিডেন্ট হিসেবে দেয়া তাঁর নববর্ষের প্রথম ভাষণে বলেছেন, অনলাইনে ভুয়া খবর রোধে নতুন আইন করা হবে৷ শুধু নির্বাচনের সময় সেই আইন কার্যকর থাকবে৷
বিজ্ঞাপন
‘‘ভুয়া খবর থেকে গণতন্ত্রকে বাঁচাতে আমাদের আইনি ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে,'' বলেন মাক্রোঁ৷ ৪০ বছর বয়সি ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘‘আমরা যদি উদার গণতন্ত্রকে বাঁচাতে চাই, তাহলে আমাদের অবশ্যই কঠোর আইন থাকতে হবে৷''
এমন আইন তৈরির সময় গণমাধ্যমের সঙ্গে আলোচনা করা হবে বলেও নিশ্চিত করেন তিনি৷ শুধু নির্বাচনের আগে এই আইন প্রয়োগ করা হবে বলে এর ফলে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ক্ষতিগ্রস্ত হবে না বলে মন্তব্য করেন মাক্রোঁ৷
নতুন আইনের কারণে বিচারকরা ভুয়া অনলাইন তথ্যের ব্যাপারে তাড়াতাড়ি সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন৷ এক্ষেত্রে তাঁরা সংশ্লিষ্ট তথ্য ও অ্যাকাউন্ট মুছে দেয়া, মূল ওয়েবসাইটে প্রবেশ বন্ধ করা ইত্যাদি ব্যবস্থা নিতে পারবেন৷
এছাড়া প্রচারমাধ্যম নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থার ক্ষমতাও বাড়ানো হবে, যেন তারা বিদেশি রাষ্ট্র কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত কিংবা পরিচালিত টেলিভিশন চ্যানেলের অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরির চেষ্টার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারে৷
উল্লেখ্য, গত বছর ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে ভুল তথ্য প্রচারের জন্য রাশিয়ার গণমাধ্যমের কঠোর সমালোচনা করেছিলেন মাক্রোঁ৷ প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুটিনের সঙ্গে এক যৌথ সম্মেলনে মাক্রোঁ বলেছিলেন, রুশ গণমাধ্যম আরটি ও স্পুটনিক ‘মানহানিকর অসত্য' এবং ‘প্রতারণাপূর্ণ প্রোপাগান্ডা' প্রচার করেছিল৷
গত বছরের অক্টোবরে জার্মান সংসদে ভুয়া খবর নিয়ন্ত্রণে একটি আইন পাস হয়৷ ফলে ভুল ও ঘৃণাপূর্ণ তথ্য তাড়াতাড়ি মুছে ফেলতে ব্যর্থ হলে সংশ্লিষ্ট সামাজিক মাধ্যমের বিরুদ্ধে ৫০ মিলিয়ন ইউরো পর্যন্ত জরিমানা করতে পারবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ৷
ফ্রান্সের সন্ত্রাসবিরোধী আইনে যা আছে
ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাক্রোঁ ২০১৭ সালে জরুরি অবস্থায় প্রযোজ্য আইনের বেশ কিছু ধারা স্বাভাবিক অবস্থায়ও প্রয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন৷
ছবি: REUTERS/Youssef Boudlal
চলাফেরায় নিষেধাজ্ঞা
সন্ত্রাসী সংগঠনের সঙ্গে জড়িত বলে সন্দিহান ব্যক্তিরা নিজেদের শহর ছেড়ে অন্যত্র যেতে পারবে না এবং প্রয়োজন হলে তাদের নিয়মিত পুলিশের কাছে হাজিরা দিতে হবে৷ এরকম মানুষদের নির্দিষ্ট কিছু জায়গায় নিষিদ্ধও করা যাবে৷ বলাবাহুল্য, আগে সাধারণত জরুরি অবস্থায় এমন আইন প্রয়োগ করতে পারতো ফরাসি সরকার, যার অর্থ হচ্ছে, একজনকে কার্যত গৃহবন্দি করে রাখা৷
ছবি: Reuters/Ch. Platiau
ঘরতল্লাশি
শুধুমাত্র সন্ত্রাসবাদ প্রতিরোধের স্বার্থে যে-কারো ঘর তল্লাশি করতে পারবে কর্তৃপক্ষ৷ আগে জরুরি অবস্থার বাইরে এ ধরনের তল্লাশি অভিযান একজন বিচারকের আদেশক্রমে করা যেতো৷ এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে যে, ফ্রান্সে জরুরি অবস্থা জারির পর প্রথম সাত মাসে ৩,৬০০ বাড়িতে তল্লাশি অভিযান পরিচালনা করা হয়৷ এর মধ্যে শুধুমাত্র ছয়টি তল্লাশির সময় সন্ত্রাসবাদের প্রমাণ পাওয়া গিয়েছিল৷
ছবি: picture alliance/AP Photo/L. Notarianni
উপসনালয় বন্ধের ক্ষমতা
উগ্রবাদ বা বিদ্বেষ ছড়ানো হচ্ছে এমন অভিযোগ পাওয়া গেলে যে কোনো উপসনালয় বন্ধ করে দিতে পারবে কর্তৃপক্ষ৷ এর আগে ফ্রান্সের উগ্র ডানপন্থি ন্যাশনাল ফ্রন্টের নেতা মারিঁ ল্য পেন অভিযোগ করেছিলেন যে, তাঁদের উপর যুদ্ধ ঘোষণা করা উগ্র ইসলামপন্থার মোকাবিলায় ফ্রান্সের প্রচলিত আইন যথেষ্ট ভূমিকা রাখতে পারছে না৷
ছবি: REUTERS/Christian Hartmann
বন্দর এবং বিমানবন্দরে পরিচয়পত্র পরীক্ষা
বন্দর এবং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের দশ বর্গকিলোমিটার এলাকার মধ্যে যে কারো পরিচয়পত্র পরীক্ষা করতে পারবে নিরাপত্তা বাহিনী৷ সরকারের প্রস্তাবিত ড্রাফটে অবশ্য বিশ বর্গকিলোমিটারের মধ্যে এ ধরনের পরীক্ষা চালুর প্রস্তাব করা হয়েছিল৷ কিন্তু অনুমোদিত আইনে সেটা কমিয়ে দশ বর্গকিলোমিটার করা হয়েছে৷
ছবি: Reuters/B. Tessier
পাবলিক ইভেন্ট ঘিরে নিরাপত্তা
সন্ত্রাসী হামলার কবলে পড়ার ঝুঁকি আছে এমন বড় পাবলিক ইভেন্টের নিরাপত্তা প্রদানের ক্ষেত্রে জরুরি অবস্থার মতো আইনি অধিকার পাবে নিরাপত্তা সংস্থাগুলো৷ এই অধিকারের আওতায় তারা ভেন্যুর কাছাকাছি যে কোনো প্রপার্টিতে এবং সন্দেহভাজন যে কোনো মানুষকে তল্লাশি করতে পারবে৷ এছাড়া নিরাপত্তা এবং প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে কর্মরত কোনো সরকারি কর্মী যদি উগ্র মতামত ধারণ করে, তাহলে তাকে বদলি বা চাকুরিচ্যুত করা যাবে৷