ভুয়া খবরের বিরুদ্ধে ডয়চে ভেলে আর অ্যামনেস্টির লড়াই ঘোষণা
২৪ নভেম্বর ২০১৭
ভুয়া সংবাদ সনাক্ত ও বিতর্কিত কন্টেন্ট যাচাইয়ের প্লাটফর্ম ‘ট্রুলি মিডিয়া’র প্রথম ক্লায়েন্ট বা খদ্দের হয়েছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল৷ প্ল্যাটফর্মটি তৈরি করেছে ডয়চে ভেলে৷
বিজ্ঞাপন
জার্মানির আন্তর্জাতিক সম্প্রচার কেন্দ্র ডয়চে ভেলে এবং গ্রিসের সফটওয়্যার নির্মাতা প্রতিষ্ঠান এথেন্স টেকনোলজি সেন্টার তৈরি করেছে সোশ্যাল মিডিয়া কন্টেন্ট যাচাইয়ের প্রতিষ্ঠান ‘ট্রুলিডটমিডিয়া৷' অনলাইনভিত্তিক এই প্ল্যাটফর্মটি এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে, যাতে সাংবাদিক বা মানবাধিকারকর্মীরা এটি ব্যবহার করে একক বা দলগতভাবে ভিডিও, ছবি বা অন্যান্য কন্টেন্ট দ্রুত যাচাই করতে পারেন৷
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের ক্রাইসিস রেসপন্স ডিরেক্টর তিরানা হাসান এই বিষয়ে বলেন, ‘‘যখন অস্বস্তিকর সত্য প্রকাশ হওয়ার পর সরকারি কর্মকর্তারা সেটিকে ‘ভুয়া খবর' বলে শোরগোল তোলে কিংবা যখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশিত কন্টেন্ট এমন কিছু দেখায় যা আসলে ঠিক নয়, তখন কঠোর, গাণিতিক গবেষণা এবং যাচাই বাছাইয়ের নানা উপায় ব্যবহারের মাধ্যমে অ্যমনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের সাড়া দেয়ার প্রয়োজন পড়ে৷''
ট্রুলি মিডিয়া অ্যামনেস্টির যাচাইবাছাইয়ের প্রক্রিয়াকে আরো সমৃদ্ধ করবে বলে মনে করেন তিরানা হাসান৷ সংগঠনটি গত কয়েকবছর ধরেই অনলাইন কন্টেন্ট যাচাইয়ের বেশ কয়েকটি উদ্যোগের সঙ্গে সম্পৃক্ত রয়েছে৷ এবার তাতে যুক্ত হলো ডয়চে ভেলে৷
ভাইরাল হওয়া কিছু ভুয়া খবর
আজকাল সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে অনেক তাজা খবর শেয়ার করা হয়৷ কিন্তু সেই খবরগুলোতে অনেক ভুয়া খবরও থাকে৷ অনেক সময় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারকারীরা বিভ্রান্তও হন৷ ছবিঘরে থাকছে ২০১৬ সালে সবচেয়ে বেশি ছড়ানো কয়েকটি ভুয়া খবর৷
একটি ফেসবুক লাইভে দেখাচ্ছিল আন্তর্জাতিক মহাকাশ কেন্দ্র থেকে নভোচারীদের স্পেসওয়াক করার দৃশ্য৷ সোশ্যাল মিডিয়ায় তা ভাইরাল হয়ে যায়৷ ইউএনআইএলএডি, ভাইরাল ইউএসএ এবং ইন্টারেসটিনেট- এটি পোস্ট করার পর ফেসবুকে বিপুল পরিমাণ লাইক ও শেয়ার হয়৷ কিন্তু মজার ব্যাপার হলো, ফুটেজের কোথাও নাসা বা ফেসবুকের লাইভ স্ট্রিম কথাটির উল্লেখ ছিল না৷ পরে নাসা’র এক মুখপাত্র জানান, ভিডিওটি ২০১৩ সালে রুশ নভোচারীদের ধারণ করা ভিডিও৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Nasa
করোনা বিয়ারের প্রতিষ্ঠাতার উইল
২০১৬ সালের অন্যতম ভাইরাল খবর এটি-করোনা বিয়ার-এর প্রতিষ্ঠাতা আন্তোনিও ফার্নান্দেজ মৃত্যুর আগে তাঁর জন্মভূমি স্পেনের একটি গ্রামের ৮০টি পরিবারের মধ্যে ২০ কোটি ইউরো দান করার উইল করে গেছেন৷ ডেইলি মেইল প্রথমে খবরটি প্রকাশ করে স্থানীয় পত্রিকার বরাত দিয়ে৷ পরে আরটি, দ্য ইন্ডেপেন্ডেন্ট, দ্য মিররসহ বেশ কয়েকটি সংবাদপত্রও তা প্রকাশ করে৷ পরে ফার্নান্দেজের পরিবার প্রতিবাদ জানানোয় তারা খবরটি সরিয়ে ফেলে৷
ছবি: picture alliance/AP Photo/M. Rourke
ধর্ষণের ভুয়া খবর
২০১৬ সালের জানুয়ারিতে বার্লিনে লিজা নামের এক জার্মান কিশোরীকে এক দল অভিবাসীর ধর্ষণ করার খবর ভাইরাল হয়ে যায়৷ বিশেষ করে রুশ মিডিয়ায় খবরটি বিপুল কভারেজ পায়৷ পরে কিশোরীটি জানায়, সে সব কিছু বানিয়ে বলেছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Wuestenhagen
মার্কিন নির্বাচন
মার্কিন নির্বাচনে যে ভুয়া খবরটি সবচেয়ে বেশি ছড়িয়েছিল তাতে ছিল ২০১৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রের অপরাধের মাত্রার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনের ফলাফলের তুলনা৷ এছাড়া নির্বাচনের ফলাফলের এমন একটি মানচিত্র ওয়াশিংটন পোস্ট প্রকাশ করেছিল, যেটির দিকে ভালোভাবে তাকালে বোঝা যায় একেবারে ওপরে ২০১২ সালের উল্লেখ রয়েছে৷
ট্রাম্প এবং সিম্পসন
সিম্পসন কার্টুনে বেশ কিছু ভবিষ্যদ্বাণী থাকে৷ আর এ কারণে ট্রাম্প নির্বাচনে জেতার পর একটি ট্রল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়, যেখানে বলা হয় সিম্পসনে আগেই বলা হয়েছিল, ট্রাম্প নির্বাচনে জিতবেন৷ কিন্তু বাস্তবে এমন কিছু হয়নি৷ অথচ টুইটারে বাস্তব আর পুরোনো ভুয়া সিম্পসনের ছবি দেয়ায় নিউজটি ভাইরাল হয়ে যায়৷
ছবি: INTERTOPICS / Taschen-Verlag
শোকার্ত ক্যাঙ্গারু
ডেইলি মেইল এমন একটি ছবি প্রকাশ করে যেখানে দেখানো হয় এক পুরুষ ক্যাঙ্গারু নারী ক্যাঙ্গারুকে দুই হাতে ধরে অশ্রুসজল চোখে তাকিয়ে আছে৷ ইভান সুইৎজারের তোলা ছবিটি এভাবে উপস্থাপনের কারণে ভাইরাল হয়ে যায়৷ তবে ভেটেরিনারি বিশেষজ্ঞরা জানান, নারী ক্যাঙ্গারুর সঙ্গে যৌন মিলনের ইচ্ছে জাগলে পুরুষ ক্যাঙ্গারুর চোখ অশ্রুসজল হয়, তখনই তারা দুই হাত দিয়ে ঝাঁকিয়ে নারী ক্যাঙ্গারুকে উত্তেজিত করার চেষ্টা করে৷
ছবি: DW/C. Atkinson
বিখ্যাত গণমাধ্যমের নকল
ভুয়া খবর প্রচারকারীরা জনপ্রিয় এবং বিখ্যাত ওয়েবসাইটগুলোকে নকল করে ৷ ফলে মানুষ খুব ভালোভাবে লক্ষ্য না করলে বুঝতে পারে না, সেগুলো প্রকৃত ওয়েবসাইট, নাকি ভুয়া৷ যেমন, এবিসি নিউজ ডট কম এর সঙ্গে ডট সিও যুক্ত করে (ABCnews.com.co), ব্লুমবার্গের সঙ্গে ডট এমএ যুক্ত করে, ওয়াশিংটন পোস্ট ডট কম- এর সঙ্গে ডট সিও যুক্ত করে কয়েকটি ভুয়া সংবাদ সাইট তৈরি করা হয়েছে৷ এসব ওয়েবসাইটের কাজই ভুয়া সংবাদ পরিবেশন করা৷
ছবি: Getty Images/S. Platt
7 ছবি1 | 7
জার্মানির আন্তর্জাতিক সম্প্রচারকেন্দ্রটির মহাপরিচালক পেটার লিমবুর্গ এই বিষয়ে বলেন, ‘‘ট্রুলি মিডিয়া ব্যবহার করে আমরা ডিজিটাল মিডিয়ায় প্রকাশিত ভুয়া খবর আরো কার্যকর এবং নির্ভুলভাবে সনাক্তে সক্ষম হবো৷ এই প্রকল্প এ খাতে ডয়চে ভেলের উদ্ভাবনের সক্ষমতারও ইঙ্গিত দিচ্ছে৷ অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এটি ব্যবহার করবে জেনে আমরা গর্বিত৷ এতে এটাই প্রতীয়মান হয় যে, ট্রুলি মিডিয়ার আসলেই চাহিদা রয়েছে৷''
উল্লেখ্য, চলতি মাসে বাণিজ্যিকভাবে চালু হয় ট্রুলি মিডিয়া৷ এর আগে, গত কয়েকমাস ধরে ডয়চে ভেলের অভ্যন্তরে সাংবাদিকরা সেটা ব্যবহার করেছেন৷ প্ল্যাটফর্মটি তৈরিতে গুগল এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নও অবদান রেখেছে৷