1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান
রাজনীতিকিরগিজস্তান

'ভুয়া তথ্য' ছড়িয়ে বিশকেকে বিদেশি শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা

১৯ মে ২০২৪

অনলাইনে ভুয়া তথ্য ছড়িয়ে স্থানীয়দের খেপিয়ে তোলা হয় বিদেশি শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে। আর এর ফলে এক পর্যায়ে কিরগিজস্তানের রাজধানী বিশকেকে বিভিন্ন হোস্টেলে বিদেশি শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করেন কিছু স্থানীয় তরুণ।

কিরগিজস্তান ইস্যুতে ইসলামাবাদে পড়ুয়াদের প্রতিবাদ
পাকিস্তান শনিবার রাতেই চার্টার্ড ফ্লাইটে ১৪০ জন শিক্ষার্থীকে দেশে ফেরত নিয়ে এসেছে। প্রয়োজনে এখনও কিরগিজস্তানে অবস্থানরত নাগরিকদের ফিরিয়ে আনতে এমন আরো ফ্লাইটের ব্যবস্থা করার কথাও জানিয়েছে দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ছবি: Sohail Shahzad/EPA

একদল স্থানীয় তরুণের হামলায়অন্তত ২৯ জন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। রোববার পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত রয়েছে বলে জানিয়েছেন দেশটির গণমাধ্যম। এরই মধ্যে হামলায় জড়িত বেশ কয়েকজনকে চিহ্নিত করে আটকও করেছে দেশটির পুলিশ।

যেভাবে ঘটনার শুরু

পুরো ঘটনা সম্পর্কে দেশের মানুষকে জানানোর জন্য ১৮ মে কিরগিজস্তানের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতি প্রকাশ করেছে। বিবৃতিটি উদ্ধৃত করে কিরগিজ গণমাধ্যমে বিস্তারিত তুলে ধরা হয়েছে। বিবৃতির সঙ্গে একটি ভিডিও দেয়া হয়েছে, যেখানে পুরো বিষয়টি বোঝা যাচ্ছে।

কিরগিজ বার্তাসংস্থা একেআইপ্রেস জানিয়েছে, ঘটনার সূত্রপাত হয় ১৩ মে বিশকেকের বুদেনোকো সড়কের একটি ক্যাফে থেকে। মিশরীয় বংশোদ্ভূত কয়েকজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে কয়েকজন কিরগিজ তরুণের কথাকাটাকাটি হয়। কী নিয়ে তাদের মধ্যে ঝগড়া হয়েছিল, সে বিষয়ে কিছু জানানো হয়নি। এক পর্যায়ে স্থানীয় তরুণেরা মিশরীয় শিক্ষার্থীদের তাড়া করেন। শিক্ষার্থীরা দৌড়ে নিজেদের হোস্টেলে ঢুকে যান।

এরপর স্থানীয় তরুণেরা হোস্টেলে ঢুকে বেশ কয়েকটি কক্ষে ভাঙচুর করেন, নারী শিক্ষার্থীদের সেকশনে ঢুকে সেখানেও হয়রানি এবং অর্থ লুটপাট করেন। এর এক পর্যায়ে হোস্টেলের কিছু শিক্ষার্থী লাঠিসোঁটা নিয়ে স্থানীয়দের ওপর পাল্টা হামলা চালান।

ঘটনার বিকৃত পরিবেশনা

ঘটনাটি ১৩ তারিখের হলেও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভিডিওটির একটি অংশ ছড়িয়ে পড়ে ১৭ মে। এই ভাইরাল ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে হোস্টেলের শিক্ষার্থীরা স্থানীয়দের ওপর হামলা চালাচ্ছেন। তবে এর আগের অংশটুকু, অর্থাৎ শিক্ষার্থীদের তাড়া করে হোস্টেলে নিয়ে আসা এবং হোস্টেলে ঢুকে হামলা চালানোর অংশটুকু ভিডিওটিতে দেখা যাচ্ছে না।

এই ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পরই মূলত ১৭ মে একদল কিরগিজ তরুণ বিশকেকের চুই অ্যাভিনিউ এবং কুরমানজান দাতকা সড়কে জড়ো হতে থাকেন। তাদের দাবি ছিল 'অবৈধ অভিবাসন' সংকটের সমাধান করা এবং 'বিদেশি অপরাধীদের' আটক করা। বিশকেক শহরের অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা বিষয়ক অধিদপ্তরের পরিচালক আজামাত টোকটোনালিয়েভ সেখানে উপস্থিত হয়ে সন্দেহভাজন তিন বিদেশিকে আটকের তথ্য জানিয়ে বিক্ষুব্ধ তরুণদের শান্ত করার চেষ্টা করেন এবং তাদের সেখান থেকে চলে যাওয়ার আহ্বান জানান।

তখন নতুন করে গুজব ছড়ায়, আটকদের মধ্যে কিরগিজ নাগরিকও রয়েছেন। এই গুজব ছড়িয়ে পড়ায় আরো বেশি সংখ্যায় কিরগিজ বিক্ষোভে যোগ দিতে থাকেন। বাধ্য হয়ে পুলিশ আটক তিন ব্যক্তির ক্ষমা চাওয়ার ভিডিও অনলাইনে প্রকাশ করে। কিন্তু তাতেও বিক্ষোভ শান্ত করা যায়নি। এক পর্যায়ে হাজারখানেক মানুষ জড়ো হন বিক্ষোভে।

বিদেশি শিক্ষার্থী এবং কর্মীরা বাস করেন এমন বিভিন্ন স্থানে বাসায় ঢুকে হামলার তথ্য আসতে থাকে। এসব হামলায় জড়িত সন্দেহে বেশ কয়েকজন কিরগিজকে আটকের তথ্য জানিয়েছে দেশটির গণমাধ্যম।

পুলিশ খুব ধীরে উদ্যোগ নিচ্ছে, এটা উদ্বেগের: ডা. আসাদুল ইসলাম

This browser does not support the audio element.

পরিস্থিতি শান্ত হলেও উদ্বেগজনক

এখন আগের তুলনায় পরিস্থিতি শান্ত হলেও বিভিন্ন স্থানে বিচ্ছিন্ন হামলা বা হয়রানির ঘটনা ঘটছে বলে জানিয়েছেন বিশকেকের রয়েল মেট্রোপলিটান ইউনিভার্সিটির বাংলাদেশি শিক্ষার্থী ডা. আসাদুল ইসলাম।

ডয়চে ভেলেকে আসাদুল বলেন, যেসব জায়গায় সংঘাতের ঘটনা ঘটেছিল, সেসব জায়গায় এখনও শিক্ষার্থীরা গৃহবন্দি অবস্থাতেই আছে। কাল পর্যন্ত (১৮ মে) খাবারদাবারের সমস্যাও ছিল। আজ খাবারের সমস্যা অনেকটা দূর হয়েছে। একটু বাইরের দিকে যারা ফ্ল্যাট ভাড়া করে থাকে, তাদের আমরা খোঁজখবর নিচ্ছি, পাকিস্তান-ভারত-বাংলাদেশের কমিউনিটির স্টুডেন্টরাও সহযোগিতা করছি। কিন্তু পুলিশ খুব ধীরে উদ্যোগ নিচ্ছে, এটাই উদ্বেগের বিষয়।''

হামলার সময়ও পুলিশ যথাসময়ে শিক্ষার্থীদের রক্ষায় এগিয়ে আসেনি বলে জানিয়েছেন আসাদুল। অনলাইনে যে ভুয়া তথ্য ছড়িয়ে পড়েছিল, সে বিষয়ে দেশটির মূল গণমাধ্যমেই কোনো সংবাদ প্রকাশিত হয়নি। এর ফলে সাধারণ মানুষ আসল খবর জানতে না পারাতেই বিদেশি শিক্ষার্থীদের প্রতি একধরনের ক্ষোভ তৈরি হয়েছে বলেও মনে করেন তিনি।

আসাদুল বলেন, ''মিডিয়া একপ্রকার নিশ্চুপ ছিল। মিডিয়া কোনো ধরনের ভূমিকাই নেয় নাই। মিডিয়া যদি দ্রুত সত্য ঘটনা অনলাইনে প্রচার করতো, তাহলে সাধারণ জনগণ এই ঘটনা (শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার) সমর্থন করতো না। বিকেলের পর (১৮ মে) থেকে যখন পুরো ভিডিও প্রকাশ হলো, তখন দেখা গেল হামলাকারীরা ঘটনা বিকৃত উপস্থাপন করে সেটাকে একটা দাঙ্গার দিকে নিয়ে গেছে।''

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বিশকেকে আড়াই হাজারের বেশি পুলিশ সদস্য এবং আরো এক হাজার নিরাপত্তাকর্মী মোতায়েন করা হয়েছে বলে জানিয়েছে দেশটির গণমাধ্যম।

আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া

হামলায় বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানের বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী আহত হওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়ার পর দেশগুলোর সরকার কিরগিজস্তানে অবস্থানরত তাদের নাগরিকদের আপাতত পরিস্থিতি শান্ত হওয়া পর্যন্ত বাসা বা হোস্টেলের ভেতরে অবস্থান করার আহ্বান জানিয়েছে।

পাকিস্তান শনিবার রাতেই চার্টার্ড ফ্লাইটে ১৪০ জন শিক্ষার্থীকে দেশে ফেরত নিয়ে এসেছে। প্রয়োজনে এখনও কিরগিজস্তানে অবস্থানরত নাগরিকদের ফিরিয়ে আনতে এমন আরো ফ্লাইটের ব্যবস্থা করার কথাও জানিয়েছে দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

'পরিস্থিতি এখন তুলনামূলক শান্ত' বলে জানিয়েছে ভারতের দূতাবাস। শিক্ষার্থীদের জন্য চালু করা হয়েছে একটি সার্বক্ষণিক হটলাইন।

কিরগিজস্তানে বাংলাদেশের স্থায়ী দূতাবাস নেই। পার্শ্ববর্তী দেশ উজবেকিস্তানে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসই বিশকেকের ঘটনা নিয়ে সার্বক্ষণিক নজর রাখছে। তাসখন্দে অবস্থিত দূতাবাসও বিশকেকে অবস্থিত বাংলাদেশিদের জন্য একটি হটলাইন চালু করেছে।

বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় হামলার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যম প্রথম আলো জানিয়েছে, রোববার ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে এ নিয়ে বাংলাদেশের উদ্যোগের কথা জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ। তিনি বলেছেন, ''কিরগিজস্তানে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনায় সে দেশের সরকারকে উদ্বেগ জানানো হয়েছে। কোনো বাংলাদেশি ছাত্র খুব জখম হয়েছে এমন খবর নেই, রাষ্ট্রদূতকে দেশটিতে (কিরগিজস্তান) গিয়ে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে বলেছি।''

অনিয়মিত অভিবাসন নিয়ে ক্ষোভ

অনিয়মিত অভিবাসন বেড়ে যাওয়া এবং নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে অভিবাসীদের জড়িত থাকার তথ্য প্রকাশ পাওয়ার পর মধ্য এশিয়ার দেশটিতে বিদেশি বিদ্বেষ বেড়ে গেছে বলে দেশটির গণমাধ্যমে তথ্য প্রকাশ হয়েছে।

কিরগিজস্তানের প্রথম স্বাধীন বার্তাসংস্থা একেআইপ্রেস এ নিয়ে উদ্ধৃত করেছে দেশটির জাতীয় নিরাপত্তা বিষয়ক কমিটির চেয়ারম্যান কামচিবেক তাশিয়েভকে। তাশিয়েভ বিক্ষোভকারীদের দাবির সঙ্গে একমত পোষণ করে একটি পরিসংখ্যানও প্রকাশ করেছেন।

একেআইপ্রেসকে তাশিয়েভ বলেছেন, ''আমাদের কাছে থাকা তথ্য অনুযায়ী অনেক অভিবাসীই অনিয়মের সঙ্গে জড়িত। এইসব অপরাধে মূলত পাকিস্তানি এবং বাংলাদেশি নাগরিকেরা জড়িত। দেড় হাজারের বেশি পাকিস্তানি এবং এক হাজারের বেশি বাংলাদেশিকে এরই মধ্যে দেশ (কিরগিজস্তান) থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। আমাদের তথ্য অনুযায়ী প্রায় পাঁচ হাজার অভিবাসী আমাদের আইন ভঙ্গ করেছে, যার মধ্যে ১৩শ ৬০ জন পাকিস্তানি এবং ১৩শ বাংলাদেশি। বাকিরা অন্যান্য দেশের নাগরিক।''

তবে কিরগিজ শ্রম মন্ত্রণালয়ের দেযা বিবৃতিতে জানিয়েছে, শ্রম কোটায় দেশটিতে আসা কোনো বিদেশি কর্মীই সবশেষ হামলা ও সংঘর্ষের ঘটনায় জড়িত ছিলেন না।

সবশেষ পরিস্থিতি এবং বাংলাদেশের নাগরিকদের কিরগিজ আইন অমান্য করার বিষয়ে বাংলাদেশের অবস্থান জানতে উজবেকিস্তানে বাংলাদেশ দূতাবাসের দেয়া হটলাইনে বেশ কয়েকবার যোগাযোগ করা হলেও কোনো উত্তর পাওয়া যায়নি।

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ