কোভিড ভ্যাকসিন বাজারে এসে গেছে। তারই সঙ্গে বেড়েছে আশঙ্কা, ভুয়া ভ্যাকসিন চক্র কোভিডের ভ্যাকসিন জাল করছে না তো!
বিজ্ঞাপন
অ্যামেরিকা এবং ইউরোপের বিভিন্ন অঞ্চলে করোনার টিকাকরণ শুরু হয়েছে। এই সুযোগই ব্যবহার করে মানুষের ক্ষতি পারে অপরাধীরা। সতর্ক করল ইউরোপীয় ইউনিয়নের ক্রাইম এজেন্সি ইউরোপোল। তারা জানিয়েছে, ভুয়া ভ্যাকসিন বাজারে ছাড়তে পারে অপরাধীরা। সোমবার তারা একটি অনলাইন বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে। সেখানে বলা হয়েছে, অনলাইনে চোরাই ভ্যাকসিন বিক্রি করার চেষ্টা হতে পারে। সকলে যেন সতর্ক থাকেন।
ইউরোপোলের মুখপাত্র জ্যান ওপ জেন উর্থ ডিডাব্লিউকে বলেছেন, যত দিন যাবে, বাজারে ভ্যাকসিনের চাহিদা তত বাড়বে। আর তারই সুযোগ নেবে চোরাকারবারিরা। কালো-বাজারে তো বটেই, সাধারণ বাজারেও চোরাই ভ্যাকসিন চলে আসার যথেষ্ট সম্ভাবনা আছে। ওই ভ্যাকসিন ভুল ভাবে তৈরি। ব্যবহারের যোগ্য নয়। চোরাকারবারিরা সেই ভ্যাকসিনই বেচার চেষ্টা করবে বলে সতর্ক করা হয়েছে।
গত মার্চেই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সতর্কতা জারি করেছিল। বলা হয়েছিল, বেশ কিছু অনলাইন সাইটে বলা হচ্ছে, কোভিড চিকিৎসার ওষুধ তাদের কাছে আছে। এগুলি সব জাল।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কর্মকর্তা পারনেট বউরডিলোন ডিডাব্লিউকে জানিয়েছেন, ''ভুয়া ওষুধ বিক্রির একটা চক্র তৈরি হয়েছে। অসংখ্য ওয়েবসাইটে এ সব ওষুধ বিক্রি হচ্ছে। নিজেদের চিকিৎসক ঘোষণা করে বহু মানুষ এ সব ওষুধ দিচ্ছেন। এক অদ্ভুত সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে।''
করোনা ভ্যাকসিন: কোন দেশের কী কৌশল
এক বছরেরও কম সময়ে করোনার কার্যকরী একাধিক ভ্যাকসিন আবিস্কার করেছে বিভিন্ন কোম্পানি৷ সেগুলো অনুমোদনও পেতে শুরু করেছে৷ আগেভাগে সংগ্রহে দেশগুলোর মধ্যে তোড়জোড় যেমন চলছে; তেমনি নাগরিকদের টিকা প্রদানে নেয়া হয়েছে বিভিন্ন কৌশল৷
ছবি: Allan Carvalho/NurPhoto/picture-alliance
পথ দেখালো যুক্তরাজ্য
আট ডিসেম্বর বায়োনটেক ও ফাইজারের টিকার প্রথম ডোজ নেন ৯০ বছরের মার্গারেট৷ যুক্তরাজ্যে প্রথম আট লাখ টিকা পাবেন তার মতো প্রবীণ, সামনের সারির স্বাস্থ্যকর্মীসহ বাকি বয়স্ক নাগরিকরা৷ ফাইজারের কাছে মোট চার কোটি ডোজ টিকার অর্ডার দিয়েছে দেশটি; যার মাধ্যমে দুই ডোজ করে দুই কোটি মানুষের ভ্যাকসিনের নিশ্চয়তা মিলছে৷ পাঁচ কোটি ত্রিশ লাখ নাগরিকের সবাইকে টিকা দিতে যুক্তরাজ্যকে নির্ভর করতে হবে অন্য কোম্পানিগুলোর উপরে৷
ছবি: Jacob King/AP Photo/picture alliance
প্রস্তুত যুক্তরাষ্ট্র
বায়োনটেক-ফাইজারের টিকার প্রয়োগ শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্রও৷ দেশব্যাপী ছড়ানো বিতরণ কেন্দ্রগুলোতে ২৯ লাখ ডোজ টিকার প্রথম চালান পৌঁছেছে৷ ফাইজার থেকে আরো ২০ লাখ আর মডার্নার ৫৯ লাখ ডোজের চালান ছাড় হতে পারে আসছে সপ্তাহে৷ এই দুই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গেই ৩০ কোটি ডোজ ভ্যাকসিনের চুক্তি যুক্তরাষ্ট্রের৷ প্রথম ধাপে স্বাস্থ্যকর্মী, নার্সিং হোমে বসবাসরত, জরুরি সেবায় নিয়োজিত এবং দীর্ঘস্থায়ী ব্যধিতে আক্রান্তরা টিকা পাবেন৷
ছবি: Bran Woolston/REUTERS
ক্যানাডার তোড়জোড়
মডার্নার কাছ থেকে এক লাখ ৬৮ হাজার ডোজ ভ্যাকসিন পেতে সম্প্রতি চুক্তি করেছে ক্যানাডা৷ শর্ত অনুযায়ী অনুমোদন পাওয়ার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে এই চালান ছাড় শুরু করবে কোম্পানিটি৷ তবে তার আগেই ফাইজারের টিকা পৌঁছে গেছে দেশটিতে৷ ১৬ ডিসেম্বর থেকে শুরু হয়েছে প্রয়োগও৷
ছবি: Adrian Wyld/REUTERS
দেরি করেনি সৌদি
আরব নিউজের সংবাদ অনুযায়ী, ১৬ ডিসেম্বর সৌদি আরবে বায়োনটেক-ফাইজারের টিকার প্রথম চালান পৌঁছায়৷ পরের দিন থেকেই শুরু হয়েছে প্রয়োগ৷ টিকা পেতে একদিনে মোট দেড় লাখ মানুষ অনলাইনে নিবন্ধন করেছেন৷ সবাইকে বিনামূল্যে দেয়ার কথা থাকলেও অগ্রাধিকারভিত্তিতে পাবেন ৬৫ বছরের বেশি বয়সি, বিভিন্ন ব্যাধিতে আক্রান্ত রোগী আর স্বাস্থ্যকর্মীরা৷
ছবি: Ahmed Yosri/REUTERS
শুরু হচ্ছে ইসরায়েলে
ইসরায়েলের গণমাধ্যম হারিৎস-এর তথ্য অনুযায়ী ১৯ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু প্রথম টিকা নেবেন দেশটিতে৷ এরপর প্রেসিডেন্ট থেকে শুরু করে পাবেন বাকি জ্যেষ্ঠ নেতৃবৃন্দ ও স্বাস্থ্যকর্মীরা৷ সাধারণ নাগরিকদের টিকা প্রদান শুরু হবে আসছে সপ্তাহে৷ শুরুতে অগ্রাধিকার পাবেন বয়স্করা৷ প্রাথমিক পর্যায়ে ফাইজারের কাছ থেকে কয়েক লাখ ভ্যাকসিন নিচ্ছে দেশটি৷ দ্বিতীয় ধাপের ট্রায়ালে রয়েছে নিজেদের উদ্ভাবিত একটি ভ্যাকসিনও৷
ছবি: Abir Sultan/REUTERS
অপেক্ষায় জার্মানি
নভেম্বরের শুরুতেই টিকা কর্মসূচির কৌশল নির্ধারণ করেছে জার্মানির সরকার৷ ইইউর মাধ্যমে ৩০ কোটি টিকার অর্ডার দিয়েছে দেশটি৷ টিকা পাওয়া মাত্র দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ৬০ টি বিতরণ কেন্দ্রে সেগুলো পৌঁছে দেবে সরকার৷ তবে সাধারণ মানুষকে এর আওতায় আসতে বেশ কয়েক মাস অপেক্ষায় থাকতে হবে৷ কেননা, শুরুতে প্রাধান্য পাবেন বয়স্ক ও স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে থাকা নাগরিকরা৷ এই তালিকায় আছেন স্বাস্থ্যকর্মী ও করোনা চিকিৎসায় নিয়োজিতরাও৷
ছবি: Ralph Orlowski/REUTERS
জাপানে মহাযজ্ঞ
নিজেদের ১২ কোটি জনগোষ্ঠীর সবার জন্য আগামী জুনের মধ্যে করোনার টিকা নিশ্চিত করতে চায় জাপান সরকার৷ এজন্য ফাইজার, আস্ট্রাজেনেকা, মডার্নার কাছ থেকে ২৯ কোটি ডোজ ভ্যাকসিন কেনার চুক্তি হয়েছে৷ জনগণকে বিনা খরচেই এই টিকা দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দেশটির সরকার গত অক্টোবরেই৷ ভ্যাকসিন সংরক্ষণে এরই মধ্যে সাড়ে দশ হাজার ডিপ ফ্রিজার কেনাসহ মহাযজ্ঞ হাতে নেয়া হয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/Kyodo/MAXPPP
শেষ ধাপে চীন
পরীক্ষার শেষ ধাপে রয়েছে চীনের বিভিন্ন কোম্পানির বেশ কয়েকটি টিকা৷ সেগুলো চূড়ান্ত অনুমোদন না পেলেও জরুরি ভিত্তিতে এরই মধ্যে ১০ লাখ স্বাস্থ্যকর্মী ও ঝুঁকিতে থাকা নাগরিককে পরীক্ষামূলক টিকা দেয়া হয়েছে৷ বিভিন্ন প্রদেশের সরকার আগেভাগেই কোম্পানিগুলোর কাছ থেকে জনসংখ্যার হিসাবে টিকার অগ্রিম অর্ডার দিয়ে রেখেছে৷ কারা আগে ভ্যাকসিন পাবেন তার অগ্রাধিকার তালিকাও তৈরি করছে প্রশাসন৷
ছবি: Wang Zhao/AFP/Getty Images
একাধিক টিকার অপেক্ষায় ভারত
আগামী ছয় থেকে আট মাসের মধ্যে ৩০ কোটি নাগরিককে টিকা দেয়ার পরিকল্পনা মোদী সরকারের৷ প্রথম ধাপের এই টিকা কর্মসূচীর আওতায় আসবেন স্বাস্থ্যকর্মী ও পঞ্চাশোর্ধ্বরা৷ এতে খরচ হবে ১৪০ থেকে ১৮০ কোটি ডলার৷ পুরো প্রক্রিয়ায় জড়িত থাকবে ২৩টি মন্ত্রণালয়৷ যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড ও আস্ট্রাজেনেকা, রাশিয়ার স্পুটনিক এবং ভারতীয় জাইডাস কেডিলা ও ভারতী বায়োটেকের টিকা আছে সম্ভাব্য প্রাপ্তির তালিকায়৷
ছবি: Dado Ruvic/REUTERS
চীনে চোখ পাকিস্তানের
চীনের একটি টিকার তৃতীয় পর্যায়ের ট্রায়াল চলছে পাকিস্তানে৷ ভ্যাকসিন কেনার জন্য ইমরান খান সরকারের এখন পর্যন্ত ঘোষিত বাজেট ২৫ কোটি ডলার৷ এই অর্থ দিয়ে একাধিক টিকা কোম্পানির সঙ্গে চুক্তির পরিকল্পনা তাদের৷ প্রথম পর্যায়ে অগ্রাধিকার পাবেন কোভিড চিকিৎসায় নিয়োজিত স্বাস্থকর্মী এবং ৬৫ বছরের বেশি বয়সীরা৷ পরবর্তী ধাপে গুরুত্ব দেয়া হবে বাকি স্বাস্থ্যকর্মী এবং ষাটোর্ধ্বদের৷
ছবি: Aamir Qureshi/AFP/Getty Images
অক্সফোর্ডের ভরসায় বাংলাদেশ
অক্সফোর্ড-আস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিন পেতে ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটের সঙ্গে চুক্তি করেছে বাংলাদেশের বেক্সিমকো৷ যার মাধ্যমে পাওয়া যাবে তিন কোটি টিকা৷ এতে দেড় কোটি মানুষকে টিকার আওতায় আনা যাবে৷ টিকা প্রদানে অগ্রাধিকারের জন্য ১০ ধরনের জনগোষ্ঠীর তালিকা করেছে সরকার৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/J. Cairns
11 ছবি1 | 11
কোভিডের ওষুধ বলে এ ধরনের একাধিক প্রোডাক্ট বাজারে ঘুরছে বলে ডাব্লিউএইচও আধিকারিক জানিয়েছেন। বেশ কিছু ওষুধ বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে এবং কোম্পানির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
এই সমস্ত ভুয়া ওষুধ নিয়ে ইউরোপের মানুষের ভাবনার কারণ নেই। রেজিস্টার্ড ওষুধের দোকান থেকে জিনিস কিনলে ভুয়া ওষুধ পাওয়ার সম্ভাবনা নেই বলে আশ্বস্ত করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।
ভুয়া ওষুধ সব দেশেই
কেউ কেউ মনে করেন, শুধুমাত্র গরিব দেশেই ভুয়া ওষুধের চক্র গড়ে ওঠে। কিন্তু বাস্তবে দেখা গেছে, গোটা বিশ্বেই এই সমস্যা আছে। ডাব্লিউএইচও-র বক্তব্য, পৃথিবীর প্রায় সব দেশেই ভুয়া ওষুধের চক্র আছে। এক সময় যা অপেক্ষাকৃত পিছিয়ে পড়া দেশের সমস্যা ছিল, এখন তা সকলকে গ্রাস করেছে।
এই ওষুধগুলো থেকে কী ধরনের সমস্যা হতে পারে? বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, অধিকাংশ সময়েই এই ওষুধগুলি কোনোরকম কাজ করে না। তবে কখনো কখনো এগুলি বিরূপ প্রতিক্রিয়া তৈরি করে। ভুয়া ওষুধ খেয়ে মানুষের মৃত্যুও হতে পারে।
তবে সব চেয়ে বড় কথা, ভুয়া ওষুধ খেয়ে গণস্বাস্থ্য ব্যবস্থার উপর থেকে মানুষের আস্থা চলে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। ডাব্লিউএইচও-র বক্তব্য, রেজিস্টার্ড বাজারে যে ভ্যাকসিন ছাড়া হয়েছে, তা পরীক্ষার পরেই সকলের ব্যবহারের জন্য বিক্রি করা হচ্ছে। এর সঙ্গে ভুয়া ভ্যাকসিন গুলিয়ে ফেললে মুশকিল। সকলকে মনে রাখতে হবে, ভ্যাকসিন কিনতে হলে রেজিস্টার্ড দোকান থেকেই কিনতে হবে। সেই ভ্যাকসিন অবশ্যই কাজ করবে।
করোনার টিকা বিতরণে জার্মানির পরিকল্পনা
করোনা ভাইরাসের টিকা পাওয়ার পর তা কীভাবে দেয়া হবে সেই পরিকল্পনা একটা বড় চ্যালেঞ্জ৷ এখনো কোনো টিকার কার্যকারিতা পুরোপুরি প্রমাণ হয়নি৷ কিন্তু জার্মানিতে কাদের, কখন এবং কীভাবে তা দেয়া হবে এরই মধ্যে সেই প্রস্তুতি শুরু হয়েছে৷
ছবি: Getty Images/P. Vilela
‘ন্যাশনাল ভ্যাকসিনেশন স্ট্র্যাটেজি’
জার্মানির কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকার নভেম্বরের শুরুতেই সারাদেশে কীভাবে ভ্যাকসিন দেয়া হবে সেই পরিকল্পনা নিয়েছে৷ ‘ন্যাশনাল ভ্যাকসিনেশন স্ট্র্যাটেজি’তে ১৫ পাতার পরিকল্পনা লেখা হয়েছে৷ যদিও টিকা পাওয়ার পর তা বিতরণের পরিকল্পনাকে একটা চ্যালেঞ্জ হিসেবেই দেখছেন তারা৷ তারপরও চেষ্টা করছেন ভ্যাকসিন হাতে পাওয়ার সাথে সাথে বিশাল জনগোষ্ঠীকে যাতে এর আওতায় আনা যায়৷
ছবি: Joel Saget/AFP/Getty Images
পরিকল্পনার লক্ষ্য
টিকা কবে নাগাদ আবিষ্কার হবে এবং কী পরিমাণ উৎপাদন হবে, সেটা এখনও জানা যায়নি৷ কিন্তু টিকা হাতে আসার পর যাতে অন্য কোনো কারণে বিতরণ কর্মসূচি বাধাগ্রস্ত না হয় সেটাই এই পরিকল্পনার লক্ষ্য৷
ছবি: picture-alliance/dpa/C. Schmidt
কর্মপরিকল্পনা
টিকা দেয়ার জন্য কর্মপদ্ধতি এবং কাজের ধরন এরইমধ্যে বাস্তবায়ন করা হয়েছে৷ ইউরোপীয় ইউনিয়ন ভ্যাকসিনের জন্য ছয়টি কোম্পানির সাথে চুক্তি করেছে৷ এই কোম্পানিগুলোর কোনো ভ্যাকসিন বের করলে ইইউ-এর মাধ্যমে তা পাবে জার্মানি৷ তারপর কেন্দ্রীয় সরকার দেশের ৬০টি ভ্যাকসিন বিতরণ কেন্দ্রে তা পৌঁছে দেবে৷
ছবি: Getty Images/P. Vilela
সাধারণ চিকিৎসকদের নাগালের বাইরে
পুরো ব্যাপারটি ঠিক করবে কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকার৷ সাধারণ চিকিৎসকরা এটা বিতরণ করতে পারবেন না৷ ফলে ধরেই নেয়া যায়, প্রথম দফায় সবাই এই ভ্যাকসিন পাচ্ছেন না৷ এছাড়া সাধারণ চিকিৎসকদের অফিসে এই ভ্যাকসিন সংরক্ষণের সুবিধা নেই৷
ছবি: picture alliance/dpa
যারা প্রাধান্য পাবেন
বয়স্ক মানুষ এবং যাদের স্বাস্থ্য ঝুঁকি রয়েছে তারা এক্ষেত্রে প্রাধান্য পাবেন৷ এছাড়া স্বাস্থ্যকর্মী এবং করোনা চিকিৎসার সাথে জড়িতরাও থাকছেন এই তালিকায়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/S. Gollnow
বার্লিন
বার্লিনের স্থানীয় সরকার ছয়টি টিকাদান কেন্দ্র স্থাপন করছে৷ ফাইজার এবং বায়োনটেকের তথ্য অনুযায়ী, বার্লিনে প্রথম দফায় ৯ লাখ টিকা দেয়ার পরিকল্পনা করা হচ্ছে৷ সে হিসেবে প্রথম দফায় বার্লিনের প্রতি ১০ জনের একজন টিকা পাবেন৷ একেকটা কেন্দ্রে দিনে তিন হাজার ৪০০ টিকা দেয়ার পরিকল্পনা করছে বার্লিন৷ এক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জ হলো, ভ্যাকসিন যারা নিতে আসবেন তাদের লাইন এবং সময় নিয়ন্ত্রণ করা৷
ছবি: picture-alliance/Zoonar
চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত টিকা আসার পর
জার্মানির রবার্ট কখ ইনস্টিটিউটের ইনফেকশাস ডিজিজ সম্প্রতি জানিয়েছে, ভ্যাকসিন বিতরণের চূড়ান্ত পরিকল্পনা, টিকা হাতে পাওয়ার পরই করা সম্ভব৷ যখন এটা নিশ্চিত হওয়া যাবে এটা বিভিন্ন বয়সে কীভাবে কাজ করে, কতটা কার্যকর ও নিরাপদ৷
ছবি: picture-alliance/ANE
৩০ কোটি ভ্যাকসিন
জার্মানির স্বাস্থ্যমন্ত্রী ইয়েনস স্পান জানিয়েছেন, তারা চেষ্টা করছেন ভ্যাকসিন বিতরণের জন্য সবচেয়ে সেরা পরিকল্পনা করতে৷ ইইউ-এর মাধ্যমে ৩০ কোটি ডোজ ভ্যাকসিনের অর্ডার দিয়ে রেখেছেন তারা৷
ছবি: Tobias Schwarz/AFP
পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া
জার্মানির এথিক্স কাউন্সিলের প্রধান আলেনা বুইক্স জানিয়েছেন, কোন কোম্পানির ভ্যাকসিনে কী ধরনের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হবে, কোন বয়সের মানুষের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া বেশি হবে, সেটা আগে থেকে জানা সম্ভব নয়৷ আশা করা হচ্ছে, দ্বিতীয় দফায় সাধারণ চিকিৎসকদের কাছে এই ভ্যাকসিন পৌঁছানো যাবে, তবে এরজন্য বিশেষ ফ্রিজের প্রয়োজন হবে৷
ছবি: picture-alliance/Sven Simon
প্রয়োজন কর্মী
এই কাজে কেবল চিকিৎসক না, প্রয়োজন নিরাপত্তারক্ষী, গাড়িচালকসহ অন্যান্য কর্মী৷ সেজন্য সেনাবাহিনী এবং ত্রাণ সংস্থাগুলোর কাছে কর্মী চেয়ে আবেদন করা হয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/M. Meissner
গ্রামগুলোতে টিকা সরবরাহের চ্যালেঞ্জ
শহরে যাতায়াত ও অন্য সুবিধা থাকলেও শহর থেকে যারা অনেক দূরে থাকেন, সেসব এলাকায় প্রবীণ মানুষ কীভাবে টিকা দান কেন্দ্রে পৌঁছাবেন সেটা একটা চিন্তার বিষয়৷
ছবি: picture-alliance/EibnerT. Hahn
11 ছবি1 | 11
চার দশমিক চার বিলিয়ন ডলারের বাজার
২০১৬ সালে বিশ্বের ২৭টি উন্নত দেশে ভুয়া ওষুধের বাজার মূল্য ছিল চার দশমিক চার বিলিয়ন ডলার। এ ছাড়াও বহু দেশে ঘরোয়া ভাবে ভুয়া ওষুধ তৈরি হয়। যা দেশের বাইরে রপ্তানি করা হয় না। সেই সব ওষুধের বাজার মূল্য ধরলে সংখ্যাটা আরো বাড়বে বলে জানিয়েছে ডাব্লিউএইচও।
বিশ্বের প্রায় দুই বিলিয়ন মানুষ ঠিক ওষুধের নাগাল পান না। ভ্যাকসিন, মেডিক্যাল ডিভাইস কোনো কিছুই তাঁরা হাতের কাছে পান না। এই সুযোগটাকেই কাজে লাগায় ভুয়া ওষুধের চক্র।
গোটা বিশ্বে বছরে ৭২ থেকে এক লাখ ৬৯ হাজার শিশু নিউমোনিয়ায় মারা যায় কেবলমাত্র ওষুধ না পেয়ে। মূলত ভুয়া ওষুধে চিকিৎসা হয় তাদের। যে ওষুধ কোনো কাজই করে না। আরো এক লাখ ৬০ হাজার শিশুর মৃত্যু হয় ভুয়া ম্যালেরিয়ার ওষুধ খেয়ে।
কখনো কখনো ঠিক ভাবে তৈরি হওয়া ভ্যাকসিনও খারাপ হয়ে যায়, ভুয়া সরঞ্জাম ব্যবহারের জন্য অথবা পরিবহনের সময় তাপমাত্রা ঠিক না থাকার জন্য। ওই ভ্যাকসিনগুলিকে ফেলে দেওয়া হয়। ভুয়া ওষুধের চক্র সেই ফেলে দেওয়া ভ্যাকসিনও বিক্রি করে।
বায়োনটেক ফাইজারের কোভিড ভ্যাকসিন মাইনাস ৭০ ডিগ্রিরও কম তাপমাত্রায় স্টোর করতে হয়। বাভারিয়া অঞ্চল থেকে এমন ১০০০টি ভ্যাকসিন ফেরত পাঠানো হয়েছে। কারণ, তাপমাত্রার গণ্ডগোল হয়েছিল। জার্মানির অন্য প্রদেশগুলি থেকেও এমন বহু খবর মিলেছে। যারা ভ্যাকসিন ফেরত পাঠিয়েছে তাপমাত্রার হেরফেরের জন্য।
করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের বিরুদ্ধে লড়াই
ভ্যাকসিন আসার সঙ্গে সঙ্গেই শুরু হয়েছে কোভিড-১৯-এর দ্বিতীয় ঢেউ৷ ভাইরাসের আগ্রাসন ঠেকাতে তাই দেশে দেশে দ্রুততর হয়েছে ভ্যাকসিন দেয়ার কর্মসূচি৷ ছবিঘরে বিস্তারিত...
ছবি: Bran Woolston/REUTERS
রাশিয়া
গত আগস্টে বিশ্বের প্রথম কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন নিবন্ধনের ঘোষণা দিয়েছিল রাশিয়া৷ সার্বিক পরীক্ষার আগেই নিবন্ধনের ঘোষণায় স্পুটনিক ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা নিয়ে সংশয় জেগেছিল৷ তবে নির্বিঘ্নেই শুরু হয়েছে ভ্যাকসিন দেয়া৷ ছবিতে রস্তভ-অন-দনে ভ্যাকসিন নিচ্ছেন এক সেনা সদস্য৷
ছবি: Sergey Pivovarov/REUTERS
সৌদি আরব
করোনা ভাইরাসের ভ্যাকসিন দেয়া শুরু হয়েছে সৌদি আরবেও৷ ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজ নিয়ে খুশি মনে রিয়াদের ক্লিনিক থেকে বেরিয়ে আসছেন এক নারী৷
নতুন ধরনের করোনা ভাইরাস আসার খবরে ব্রিটেন এখন আগের চেয়েও সতর্ক৷ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নতুন ভাইরাস অনেক দ্রুত সংক্রমণ ছড়ালেও ফাইজার-বায়োনটেক ভ্যাকসিন দিয়েই তাকে রোখা যাবে৷ ছবিতে গাড়িতে বসেই এক নারীর ভ্যাকসিন নেয়ার দৃশ্য৷
ছবি: Phil Noble/REUTERS
ইসরায়েল
তেল আবিবের সৌরাস্কি মেডিকেল সেন্টারে ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজ নিচ্ছেন একজন৷
ছবি: Ronen Zvulun/REUTERS
যুক্তরাষ্ট্র
ভ্যাকসিন আসার খবরে ইন্ডিয়ানাপোলিসের ইন্ডিয়ানা ইউনিভার্সিটি হেল্থ, মেথডিস্ট হাসপাতালের এক ডাক্তারের উচ্ছাস৷
ছবি: Bran Woolston/REUTERS
জার্মানি
জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট শহরের ফেস্টহালে ভ্যাকসিন কর্মসূচি শুরু করার জন্য প্রস্তুত৷
ছবি: Boris Roessler/dpa/picture alliance
সৌদি আরব
সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদে ভ্যাকসিন দেয়ার দৃশ্য৷
ছবি: Ahmed Yosri/REUTERS
8 ছবি1 | 8
সমস্যার বহু দিক
হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক প্রশান্ত যাদব ডিডাব্লিউকে জানিয়েছেন, খারাপ ভ্যাকসিন অথবা ভুয়া ভ্যাকসিন যে কোনো সময় সাপ্লাই চেনে ঢুকে পড়তে পারে। ভ্যাকসিন যখন এক দেশ থেকে অন্য দেশে ফ্লাইটে অথবা জাহাজে পাঠানো হচ্ছে তখন থেকে তার মধ্যে ভুয়া ভ্যাকসিন মিশিয়ে দেওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়। সেই ভ্যাকসিন যখন অন্য দেশে পৌঁছায় এবং দিকে দিকে বিলি করা হয়, এমনকী, ভ্যাকসিন ক্লিনিকে পৌঁছানোর পরেও ভুয়া ভ্যাকসিন তার মধ্যে মিশিয়া দেওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
যে ভাবে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় ভ্যাকসিন পাঠানো হয়, তাতে এ কাজ করা খুব কঠিন কিছু নয়। কোভিড ভ্যাকসিনের চাহিদা যেহেতু বেশি, সেখানে ভুয়া ভ্যাকসিন মিশিয়ে দেওয়ার সম্ভাবনাও বেশি। যত বেশি জায়গায় ভ্যাকসিন স্টোর করা হবে, ভুয়া ভ্যাকসিন মিশে যাওয়ার সম্ভাবনাও তত বাড়বে বলে মনে করেন যাদব। যাদবের মতে, ভুয়া ভ্যাকসিন মিশিয়ে দিলে তা ধরা পড়াও খুব কঠিন।
যাদবের মতে, বিভিন্ন মানুষের উপর ভ্যাকসিন সরবরাহের দায়িত্ব থাকে। ফলে সহজেই দায়িত্ব এড়িয়ে যাওয়াও সম্ভব। যিনি ভ্যাকসিন ফ্লাইটে তুললেন আর যিনি নামালেন তাঁরা দুজনেই মধ্যবর্তী সময়ে ভ্যাকসিনের বাক্সে ভুয়া ভ্যাকসিন মিশিয়ে দেওয়ার দায় এড়িয়ে যেতে পারেন। সাধারণত, যে সংস্থা ভ্যাকসিন বানাচ্ছে, দায় তাদের। সরকারের হাতে ভ্যাকসিন পৌঁছানো পর্যন্ত দায়িত্ব সংস্থার থাকে। ডেলিভারি হয়ে গেলে দায়িত্ব সরকারের। ফলে মধ্যবর্তী সময়ে ভুয়া ভ্যাকসিন মিশিয়ে দিলেও কারো কিছু বলার থাকে না।
তবে কোভিড ভ্যাকসিন জাল হচ্ছে কি না, তা বোঝার একটি সহজ ব্যবস্থা আছে। যে কাচের বোতলে কোভিড ভ্যাকসিন ভরা হচ্ছে, বাজারে সেই বোতল প্রায় শেষ। কেউ যদি ওই বোতল বড় সংখ্যায় কিনতে চায়, তাহলেই সতর্ক হতে হবে। দেখতে হবে, ওই ব্যক্তি কেন এত সংখ্যক বোতল কিনছেন। বায়োনটেকের ক্ষেত্রে ভ্যাকসিন খুবই কম তাপমাত্রায় স্টোর করতে হয়। এটাও ভুয়া ভ্যাকসিনের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার একটি সহজ উপায়। বিশেষ ফ্রিজার ছাড়া এই ভ্যাকসিন সাপ্লাই করা সম্ভব নয়।
শাস্তির সম্ভাবনা কম
সাধারণত ভুয়া ওষুধ চেনা যায় তা দোকানে পৌঁছে যাওয়ার পরে। কখনো গ্রাহকের হাতে চলে যাওয়ার পরে। ফলে অধিকাংশ সময়েই প্রস্তুতকারক সংস্থাগুলিকে চিহ্নিত করা যায় না। করা গেলেও প্রমাণের অভাবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যায় না। সংস্থাগুলি যথেষ্ট গোপনীয়তা মেনে এ কাজ চালায়।
ব্রাজিল, ক্যানাডা, ফ্রান্স, অ্যামেরিকা কিংবা যুক্তরাজ্যে ভুয়া ওষুধ তৈরির সর্বাধিক সাজা ছয় বছর। যেখানে নারকোটিকসের জন্য ২৫ বছর পর্যন্ত সাজা দেওয়া হয়।