‘ভূত আমার পুত, পেত্নী আমার ঝি, রাম-লক্ষণ বুকে আছে, করবি আমায় কী?' – আপনি ভূতে বিশ্বাস না করলেও, ছোটবেলায় অন্ধকার রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় এ ছড়া আওড়াননি – বুকে হাত দিয়ে এ কথা বলতে পারবেন? এই ভিডিওটা দেখে সে কথা বলুন দেখি!
বিজ্ঞাপন
কথায় আছে, আস্তিকের ভূত দেখা আর বিড়ালের মাছ বাছা – দু'টোই সমান৷ তাই ‘আপনি ভূতে বিশ্বাস করেন?' – এ কথা জিজ্ঞাসা করলে বেশিরভাগ মানুষই মুখে বলেন, ‘না'৷ কিন্তু তেমন পরিস্থিতিতে পড়লে বহু ডাকাবুকোদেরও গা ছম ছম করে ওঠে৷ আর সোশ্যাল মিডিয়ায় ‘ভাইরাল' হয়ে যাওয়া পাঁচ-পাঁচটি ভূতের এই ভিডিওটি দেখলে আপনার ভূতে বিশ্বাস বাড়বেই৷ তা সে আপনি আস্তিক হন অথবা নাস্তিক৷
তাছাড়া বাঙালির কাছে ভূত মানে আজও সেই মান্ধাতার আমলের ভূতগুলো রয়ে গেছে – শাকচুন্নি, ব্রহ্মদৈত্য, মামদো, গেছো, পেত্নী৷ আর তাদের অশরীরী ঠিকানা? কেন? কেয়ার অফ বেলগাছ, শেওরা গাছ, তাল গাছ অথবা তেঁতুল গাছ৷ তাই না? এই ভিডিওটি অবশ্য আপনাকে দেবে নতুন ভূতের সন্ধান, যাদের দেখে দিনের বেলাতেও আপনার রোমকূপ খাড়া হয়ে উঠবে, উঠবেই৷
তখন আর কখনোই মনে হবে না যে, ভূতের অস্তিত্ব শুধুমাত্র দাদা-নানি, ঠাকুরদা-ঠাকুরমার মুখের বানানো গল্পগুলোর মধ্যেই জীবিত রয়েছে৷ কী বলেন?
ডিজি/জেডএইচ
জীবন, ধর্ম, আচার-অনুষ্ঠানে শুভ-অশুভ শক্তি
‘গুড অ্যান্ড ইভিল পাওয়ার’, শুভ এবং অশুভ শক্তি – তা সে আপনি মানুন আর না মানুন – একে অগ্রাহ্য করার কিন্তু উপায় নেই৷ বৌদ্ধ, হিন্দু, খ্রিষ্টান, এমনকি ইসলাম ধর্মেও আমরা অশুভ শক্তির বিনাশ ও শুভ শক্তির জয়ের কথা পাই৷
ছবি: Reuters/S. Pring
বিশ্বাস-অবিশ্বাসের মাঝে
শুভ শক্তি থাকুক আর না থাকুক, শুভ বোধ, আদর্শ মানবজীবনকে অবশ্যই সত্য ও সুন্দরের পথ দেখায়৷ আর তাই, এর বিপরীতের প্রতি মানুষের আকর্ষণ সৃষ্টির সেই আদি কাল থেকে৷ ভূত-প্রেত, আত্মা বা জিন নিয়ে তাই রয়েছে অসংখ্য গল্প, কল্প-কাহিনি আর তার সঙ্গে সঙ্গে অজস্র আচার-অনুষ্ঠান, অন্ধ বিশ্বাস৷
ছবি: Reuters/S. Pring
আদ্যাশক্তি দেবী দুর্গা
অসুরের অত্যাচার, পাপীদের অনাচার আর অশুভ শক্তির উত্থানে মানবতা যখন ভূলুণ্ঠিত, নিষ্পেষিত, তখন সমস্ত দেবতারা, অর্থাৎ সমস্ত শুভ বুদ্ধিসম্পন্ন মানুষেরা, সব নিপীড়িত-নির্যাতিতরা সংঘবদ্ধ হন৷ তাঁদের আকুল আবেদনেই আবির্ভূতা হন আদ্যাশক্তি দেবী দুর্গা৷ হিন্দুধর্ম অনুসারে, মহিষাসুর বধের মাধ্যমে শুভ শক্তিকে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করেন তিনি৷
ছবি: DW/M. Mamun
বুদ্ধং শরণং গচ্ছামি...
বৌদ্ধ ধর্ম অনুযায়ী, চিন্তা জগতে অশুভ ভাবনার নাম হলো ‘মার’৷ অবশ্য শব্দটি রবীন্দ্রনাথের চিত্রাঙ্গদা এবং মাইকেল মধুসূদনের মেঘনাদবধ কাব্যেও চোখে পড়ে৷ মহাযান বৌদ্ধধর্ম বলে, অশুভ শক্তি ধ্বংস হলে পৃথিবী স্বর্গীয় হয়৷ বুদ্ধদেবের কথায়, ‘‘কাম, ক্ষুধা, পিপাসা থেকে বিরত থাকে ‘মার’-কে দূরে রাখতে পারলে প্রত্যেক জীব ‘বুদ্ধ’ হয়ে উঠতে হতে পারে৷’’
ছবি: Getty Images/AFP/E. Jones
রূপকথা আর ইতিহাসের পাতায়
এশিয়া বা আফ্রিকার মতো ইউরোপেও অশুভ ও শুভ শক্তি নিয়ে নানা লৌকিক আচার-অনুষ্ঠান রয়েছে৷ একটা সময় ইউরোপে ‘ডাইনি’-দের পুড়িয়ে মারার চল ছিল৷ আবার রূপকথাগুলিতেও ছিল আশ্চর্য সব জাদুর গন্ধ৷ গ্রিম ভ্রাতৃদ্বয়ের ‘স্নো হোয়াইট’ বা ‘স্লিপিং বিউটি’-তেও আমরা ডাইনি, এঞ্জেল এবং শুভ-অশুভ শক্তির সংঘাতের নজির পাই৷
ছবি: picture-alliance / akg-images
জিন-পরীর অস্তিত্ব
বৌদ্ধ, হিন্দু আর খ্রিষ্টধর্মের পাশাপাশি ইসলামেও রয়েছে জিন-পরীর উল্লেখ, আছে ‘ইবলিশ’ বা শয়তানের কথা৷ এই ‘ইবলিশ’, ‘সিলা’ বা ‘ইফরিত’-রা নাকি সব দুষ্টপ্রকৃতির জিন বা আত্মা, যারা কবরস্থানে থাকে আর যে কোনো আকার ধারণ করতে পারে৷ অবশ্য শুধু অশুভ জিন নয়, আলাদিনের মতো শুভ জিন বা ফেরেশতার কথাও রয়েছে ‘সহস্র এক আরব্য রজনি’ -তে৷
ছবি: Fotolia/ThorstenSchmitt
‘প্রিং কা-এক’ উৎসব
আধুনিক সমাজেও কিন্তু এমন হাজারো আচার-অনুষ্ঠান চোখে পড়ে৷ কম্বোডিয়ার মানুষদের যেমন আজও বিশ্বাস, অশুভ শক্তি অসুখ-বিসুখ নিয়ে আসে, মানুষের ক্ষতি করে৷ তাই ‘প্রিং কা-এক’ উৎসবে সারা গায়ে কালি মেখে, অশুভ আত্মাকে দূর করার কাজে নেমে পড়ে সহজ-সরল গ্রামবাসী৷ উৎসবের শেষ হয় ভূরিভোজ দিয়ে৷