লিবিয়ার উপকূলে ভূমধ্যসাগরে নৌকাডুবির ঘটনায় কমপক্ষে ২৪ বাংলাদেশি প্রাণ হারিয়েছে বলে ধারনা করা হচ্ছে৷ ইউরোপের বর্তমান শরণার্থী সংকটে মূলত সিরীয়দের আলোচনা হলেও বাংলাদেশিদের মৃত্যু এই ঘটনায় নতুন মাত্রা যোগ করেছে৷
বিজ্ঞাপন
লিবিয়া থেকে গত ২৮ আগস্ট সমুদ্রপথে ইউরোপে প্রবেশের চেষ্টাকালে নৌকা ডুবে প্রাণ হারিয়েছেন বেশ কয়েকজন শরণার্থী৷ আন্তর্জাতিক বার্তাসংস্থাগুলো নিহতদের মধ্যে বাংলাদেশি থাকার কথা নিশ্চিত করেছে৷ আর ঢাকা থেকে প্রকাশিত ঢাকা ট্রিবিউন জানিয়েছে, নিহতদের মধ্যে কমপক্ষে ২৪ বাংলাদেশি নাগরিক রয়েছেন বলে ধারনা করা হচ্ছে৷
নিহতদের বিস্তারিত পরিচয় জানা না গেলেও বাংলাদেশে ডয়চে ভেলের কন্টেন্ট পার্টনার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম লিবিয়ায় বাংলাদেশ দূতাবাসের বরাতে জানিয়েছে, ‘‘শুক্রবার ডুবে যাওয়া নৌকা দু'টিতে ৭৮ জন বাংলাদেশি ছিলেন৷ তাদের মধ্যে ৫৪ জনকে উদ্ধার করা হয়েছে৷''
উল্লেখ্য, লিবিয়াতে দীর্ঘ সময় ধরে অনেক বাংলাদেশি কাজ করছেন৷ কিন্তু সেদেশে গত কয়েকবছর ধরে চলা গৃহযুদ্ধের কারণে বাংলাদেশিরা অন্যত্র বিশেষ করে ইউরোপে প্রবেশের চেষ্টা করছেন৷ সেখানকার শরণার্থী কেন্দ্রগুলোতেও অনেক বাংলাদেশি রয়েছেন বলে জানা গেছে৷
ওরা সবাই জার্মানি আসতে চায়
প্রাণ বাঁচাতে কিংবা আরও উন্নত জীবনের আশায় যাঁরা ইউরোপে আসার চেষ্টা করছেন তাঁদের অধিকাংশেরই লক্ষ্য জার্মানি৷ ডয়চে ভেলে এমন ছয়জনের কথা জানাচ্ছে যাঁরা জার্মানি আসতে চান৷
ছবি: Reuters/O. Teofilovski
মোহাম্মদ, সিরিয়া
কুর্দি এই মানুষটি সিরিয়ায় ইংরেজির শিক্ষক ছিলেন৷ ম্যাসিডোনিয়ার এক রেল স্টেশনে তাঁর সঙ্গে কথা হয় ডয়চে ভেলের এক প্রতিবেদকের৷ তাঁকে তিনি প্রশ্ন করেন, ‘‘আচ্ছা, জার্মানিতে যাওয়ার পর কি ইংরেজিতে কাজ করা যাবে?’’
ছবি: Nemanja Rujevic
জামান, মরক্কো
হাসিখুশি এই মানুষটি গ্রিসে বৈধ কাগজপত্র ছাড়াই চার বছর কাটিয়েছেন৷ কিন্তু এখন তিনি জার্মানি যেতে চান৷ কারণ গ্রিসের পুলিশ নাকি বর্ণবাদী৷ জার্মানিতে পৌঁছে তিনি সৎভাবে জীবনযাপনের স্বপ্ন দেখছেন৷
ছবি: Nemanja Rujevic
আহমেদ, ইরাক
বেলগ্রেডে ডয়চে ভেলের প্রতিবেদককে ১৭ বছরের এই তরুণ জানান, ইরাকে ইসলামিক স্টেট অনেক বড় সমস্যা তৈরি করছে৷ যাকেই পাচ্ছে তাকেই হত্যা করছে তারা৷ তাই তিনি জার্মানি যেতে চান৷ কারণ সেখানে তিনি নিরাপদ জীবনযাপন করতে পারবেন বলে আশা করছেন৷ বেলগ্রেড আসার পথে বুলগেরিয়ায় তিনি পুলিশের প্রহারের শিকার হয়েছেন বলেও জানিয়েছেন৷
ছবি: Nemanja Rujevic
মোহাম্মদ, আফগানিস্তান
বর্তমানে বেলগ্রেডের একটি সেবাকেন্দ্রে আছেন দুই সন্তানের জনক মোহাম্মদ৷ পরিবারের সবাইকে নিয়ে তুরস্ক থেকে গ্রিস পৌঁছাতে পাচারকারীকে অর্থ দিয়েছিলেন তিনি৷ যে নৌকায় করে তাঁরা গ্রিস যাচ্ছিলেন সেটি ডুবে যায়৷ প্রায় এক ঘণ্টা পর তাঁদের উদ্ধার করে তুরস্কের কোস্টগার্ডের সদস্যরা৷
ছবি: Nemanja Rujevic
মিলাদ, সিরিয়া
২৭ বছরের এই তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞের লক্ষ্য জার্মানির ফ্রাংকফুর্টে পৌঁছানো৷ কারণ সেখানে তাঁর আত্মীয়স্বজন থাকেন৷ কথা বলার সময় তিনি সার্বিয়ার এক শহরে এক ‘পাকিস্তানির’ জন্য অপেক্ষা করছিলেন যাকে তিনি সাড়ে চার হাজার ইউরো দিয়েছেন৷ এর মাধ্যমে মিলাদ তাঁর বাবা-মা সহ সার্বিয়া ও হাঙ্গেরির সীমান্ত পার হতে চান৷
ছবি: Nemanja Rujevic
ফালাত, আফগানিস্তান
২৫ বছরের এই যুবক তাঁর দেশ সম্পর্কে বলেন, ‘‘খারাপ অবস্থা, প্রতিদিন যুদ্ধ৷’’ মিলাদের মতো তিনিও সার্বিয়ার এক শহরে পাচারকারীর জন্য অপেক্ষা করছিলেন যার মাধ্যমে তিনি জার্মানি পৌঁছাতে চান৷ এজন্য তিনি পাচারকারীকে ৫ হাজার ইউরো দিয়েছেন৷ হাঙ্গেরি সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া দেয়া প্রসঙ্গে তিবি বলেন, ‘‘সমস্যা নেই৷ যে করেই হোক আমরা জার্মানি পৌঁছাবোই৷ জার্মানি ভালো দেশ, যারা শরণার্থীদের গ্রহণ করছে৷’’