ভূমধ্যসাগরে আবার তেল অনুসন্ধানকারী জাহাজ পাঠাচ্ছে তুরস্ক। এর্দোয়ান বলেছেন, এজন্য অনুমতির দরকার নেই।
ছবি: Turkish Presidency/AP/picture alliance
বিজ্ঞাপন
তুরস্ক নতুন একটি তেল ও গ্যাস অনুসন্ধানকারী জাহাজ তৈরি করেছে। তারা সেই জাহাজ সাইপ্রাসের উত্তর-পশ্চিম অঞ্চলে পাঠাবে। জাহাজটি সমুদ্রে ড্রিল করবে। এই জাহাজের নাম আব্দুলহামিদ হান। এটাই সমুদ্রতলে তেল ও গ্যাসের খোঁজ করার জন্য তুরস্কের সবচেয়ে বড় জাহাজ।
.তুরস্কের এই মিশন নিয়ে যা জানা গেছে
এর্দোয়ান বলেছেন, তুরস্কের দক্ষিণ-পশ্চিমে গাজিপাসা সৈকত থেকে ৫৫ কিলোমিটার দূরে জাহাজটি তেল ও গ্যাসের খোঁজ করবে।
তুরস্কের অন্য জাহাজগুলি কৃষ্ণসাগরে তেল ও গ্যাসের খোঁজ চালাচ্ছে। তারা সেখানে একটি গ্যাসের ভাণ্ডার পেয়েছে।
যেভাবে তুরস্কের অর্থনৈতিক সংকট কাটাতে চান এর্দোয়ান
১৯ বছর ধরে ক্ষমতায় এর্দোয়ান৷ তবে আগের ১৮ বছরে এত সংকট দেখেনি তুরস্ক৷ প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ১১ বছর, তারপর প্রেসিডেন্ট হিসেবে ৮ বছর পার করা এর্দোয়ান অবশ্য সংকট থেকে উত্তরণের চেষ্টা করছেন৷ ছবিঘরে বিস্তারিত...
ছবি: Dilara Senkaya/REUTERS
যে কারণে সংকট
করোনাকালে বিশ্বের বেশির ভাগ দেশই সংকটে পড়েছে৷ সেই সংকট কাটিয়ে উঠছে অনেক দেশ৷ তুরস্কও বেশ সামলে নিচ্ছিলো৷ কিন্তু গত বছর ব্যাংকে সুদের হার কমানোর সিদ্ধান্ত নিলেন এর্দোয়ান৷ অর্থনীতিবিদরা মনে করেন, এই সিদ্ধান্ত তুরস্কের অর্থনৈতিক বিপর্যয়কে ত্বরান্বিত করেছে৷ গত দু বছরে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তিনজন গভর্নরকে সরিয়েছেন এর্দোয়ান৷ তিনজনই ছিলেন সুদের হার কমানোর বিপক্ষে৷
ছবি: DW/U. Danisman
মুদ্রাস্ফীতি
ইতিমধ্যে তুরস্কে বার্ষিক মুদ্রাস্ফীতি প্রায় ৫০ শতাংশে পৌঁছেছে৷ ডলারের তুলনায় তুর্কি লিরার দাম অতি নিম্নগামী৷ ২০২১-এর শেষ দিকে লিরার দাম ৪৪ শতাংশ কমে যায়৷
ছবি: Getty Images/C. McGrath
দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি
নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য এবং ওষুধের দাম বাড়ছে দ্রুত৷ মূল্যস্ফীতি এখন প্রায় ৩৭ শতাংশ৷ গত ২০ বছরে আর কখনো মূল্যস্ফীতি এ পর্যায়ে যায়নি৷ বিশ্বের অনেক দেশেই মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের জন্য সুদের হার বাড়ানো হয়৷ তাতে মানুষের ঋণ নেয়ার প্রবনতা কমে, হাতে টাকা কমে যায় আর টাকা কম থাকলে কেউ কম প্রয়োজনীয় বা অপ্রয়োজনীয় পণ্য কিনতে চায় না৷ এর ফলে অনেক পণ্যের দাম কমে যায়৷ এর্দোয়ান সুদের হার কমানোয় উলটো ফল হয়েছে৷
ছবি: DW
আমদানি-ব্যয় বৃদ্ধি
তুরস্কের অর্থনীতি প্রধানত আমদানিনির্ভর৷ কিন্তু ডলারের বিপরীতে তুর্কি লিরার দাম কমে যাওয়ায় অনেক পণ্যের আমদানি-ব্যয় বেড়ে গেছে৷ তাতে স্থানীয় বাজারেও বেড়েছে পণ্যের দাম৷ অনেক পণ্যের দামই এখন সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে৷
ছবি: Tolga Ildun/ZUMA/picture alliance
এর্দোয়ানের যুক্তি
ক্ষমতায় আসার পর থেকে এর্দোয়ান বিভিন্ন সময় সুদের হার কমিয়ে মূলত শিল্পপতিদের ঋণ নেয়ায় উৎসাহিত করেছেন৷ এর ফলে অতীতে শিল্পের বিকাশ হয়েছে, প্রবৃদ্ধিও এসেছে৷ এর্দোয়ান মনে করেন, সুদের হার কমালে সাধারণ মানুষও ঋণ নেবে, সেই ঋণের টাকায় তারা খাবার এবং নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য কিনবে, তাতে বাজার চাঙা থাকবে, কর্ম সংস্থান বাড়বে৷ কিন্তু করোনাকালে নানাভাবে ভুগতে থাকা মানুষের জীবনে এমন পরিবর্তন এখনো দেখা যায়নি৷
ছবি: Irina Yakovleva/ITAR-TASS/imago images
দানা বাঁধছে ক্ষোভ
অর্থনৈতিক সংকটে বিপর্যস্ত মানুষেরা ইতিমধ্যে ছোট ছোট মিছিলে বিক্ষোভ জানাতে শুরু করেছে৷ নার্স, খাবার সরবরাহকারীসহ অনেক পেশার মানুষ শরিক হচ্ছেন সেই মিছিলে৷
ছবি: Dilara Senkaya/REUTERS
এর্দোয়ান সরকারের আশা
তবে প্রেসিডেন্ট এর্দোয়ান এবং অর্থমন্ত্রী নুরেদ্দিন নেবাতি মনে করেন, জনগণ আর কয়েকটা মাস ধৈর্য ধরলেই সংকট কেটে যাবে৷ ধারণা করা হচ্ছে, লিরার দরপতন রুখতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ডিসেম্বরে ২০ বিলিয়ন ডলার এবং জানুয়ারিতে ৩ বিলিয়ন ডলার ব্যয় করেছে৷ তাছাড়া আগামী মে নাগাদ তুরস্কে পর্যটকদের ভিড় আবার হয়ত বাড়বে৷ এর্দোয়ানের তাই আশা- সংকট কাটিয়ে উঠতে আর বেশি সময় লাগবে না৷
ছবি: Dilara Senkaya/REUTERS
সামনে নতুন চ্যালেঞ্জ
অর্থনৈতিক সংকট কাটিয়ে ওঠা-না-ওঠার ওপর অনেকটাই নির্ভর করছে এর্দোয়ানের ভবিষ্যৎ৷ ২০২৩ সালে আবার প্রেসিডেন্ট নির্বাচন৷ দেশের অর্থনীতির প্রভাব তো নির্বাচনে পড়তেই পারে!
ছবি: Sertac Kayar/REUTERS
8 ছবি1 | 8
তুরস্ক তাদের প্রয়োজনের তেল ও গ্যাসের প্রায় পুরোটাই আমদানি করে। এখন আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম বেড়ে গেছে। তাই এর্দোয়ানও তেল অনুসন্ধানের উপর জোর দিয়েছেন। গতবছর তারা ৪৫ শতাংশ গ্যাস রাশিয়া থেকে আমদানি করেছিল।
এর্দোয়ান বলেছেন, এই নতুন ড্রিলিং জাহাজ হলো শক্তিক্ষেত্রে তুরস্কের নতুন ভিশন। তিনি জানিয়েছেন, ''যত তাড়াতাড়ি আমরা তেল ও গ্যাস খুঁজে পাব, ততই আমাদের সুবিধা হবে। তেল ও গ্যাসের জন্য অন্য দেশের উপর থেকে নির্ভরতা কমবে।''
অনুমতির দরকার নেই
এর্দোয়ানের দাবি, তিনি যেখানে জাহাজ পাঠাচ্ছেন, তা বিবাদিত এলাকা নয়। তাই এই জাহাজটি যতক্ষণ তেল ও গ্যাস খুঁজে না পাচ্ছে, ততদিন ড্রিলিংয়ের কাজ চালিয়ে যাবে।
কিন্তু সাইপ্রাস এই দাবি মানতে চাইছে না। তাদের দাবি, যে জায়গায় এর্দোয়ান জাহাজ পাঠাচ্ছেন তা বিবাদিত এলাকা।
কিন্তু এর্দোয়ান বলেছেন, তেল ও গ্যাসের সন্ধান চালানো তাদের সার্বভৌম অধিকারের মধ্যে পড়ে। সেজন্য কারো কাছ থেকে অনুমতি নেয়ার প্রশ্নই নেই। তাদের এই ড্রিলিং চালানো থেকে কেউ রুখতে পারবে না।
ন্যাটোর সদস্য দেশ গ্রিসও দাবি করে এর্দোয়ান যে জায়গায় তেল ও গ্যাসের খোঁজ করছেন, সেটা তাদের এলাকা নয়। তারা কথা না বলে, সেখানে এই অনুসন্ধান চালাতে পারে না।
এর আগে ২০২০ সালে ভূমধ্যসাগরে তেল ও গ্যাসের অনুসন্ধান নিয়ে তুরস্কের সঙ্গে গ্রিসের বিরোধ চরমে উঠেছিল।