ভূমধ্যসাগর থেকে ৩৩৯ অভিবাসীকে উদ্ধার করে ইটালির দক্ষিণের বন্দর ব্রিন্ডিসিতে নিয়ে এসেছে মানবিক সংস্থা ডক্টর্স উইদাউট বর্ডার্স (এমএফএস) পরিচালিত জাহাজ জিও ব্যারেন্টস৷ শুক্রবার সংস্থাটি এই তথ্য জানিয়েছে৷
বিজ্ঞাপন
বুধবার ভূমধ্যসাগরে ১১ ঘণ্টার অভিযান শেষে মোট ৪৪০ অভিবাসীকে উদ্ধার করে জাহাজটি৷ এই অভিবাসীরা ছোট ছোট নৌকায় সমুদ্র পাড়ি দিয়ে ইটালি পৌঁছানোর চেষ্টা করছিলেন৷ এর মধ্যে প্রায় ১০০ জনকে ইটালি কর্তৃপক্ষ তাদের নৌবাহিনীর জাহাজে তুলে নেয়৷ বাকিদের ব্রিন্ডিসিতে পৌঁছে দেয় জিও ব্যারেন্টস৷ অভিবাসীরা সিরিয়া, পাকিস্তান, বাংলাদেশ, মিশর, সোমালিয়া ও শ্রীলংকার নাগরিক বলে জানিয়েছেন এমএফএস৷
অভিবাসীদের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, লিবিয়ার বেনগাজি থেকে কাঠের নৌকায় করে তারা ১ এপ্রিল রওনা করেন৷ উদ্ধারের আগে চারদিন তারা সমুদ্রে ভেসেছেন৷ এর মধ্যে শেষ দুইদিন তাদের কাছে খাবার ছিল না৷
ইটালির বার্তা সংস্থা আনসা জানিয়েছে, উপকূলে পৌঁছানোর আগে এক ব্যক্তিকে জরুরি ভিত্তিতে হেলিকপ্টারে করে মাল্টায় নেয়া হয়৷ তিনি পানিশূন্যতা জনিত সমস্যায় ভুগছিলেন৷ এছাড়াও পুড়ে যাওয়া এবং হাড় ভেঙে যাওয়ার কারণে তিনজনকে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে৷
উন্নত জীবনের আশায় প্রতিবছর বিপুল অভিবাসী বিপজ্জনক উপায়ে সমুদ্র পাড়ি দিয়ে ইউরোপে পৌঁছানোর চেষ্টা করেন৷ ইটালির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের হিসাবে চলতি বছর এই সংখ্যা ১৮ হাজারে পৌঁছেছে, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় চারগুণ বেশি৷ ইটালিতে আসা এই অভিবাসীরা মূলত লিবিয়া ও টিউনিসিয়ার উপকূল থেকে ছোট নৌকায় রওনা দেন, যা উত্তাল সমুদ্রে যাতায়াতের উপযুক্ত নয়৷ যে কারণে প্রায়ই নৌকা ডুবে প্রাণহানি বা নিখোঁজের ঘটনা ঘটছে৷
এফএস/এআই (ডিপিএ, এপি)
সিসিলিতে বাংলাদেশি কৃষকদের দৈনিক মজুরি ৪,০০০ টাকা, জীবন কেমন?
সিসিলির ভিটোরিয়া অঞ্চল কৃষিকাজের জন্য বিখ্যাত৷ ডয়চে ভেলে ও ইনফোমাইগ্রেন্টসের সাংবাদিক আরাফাতুল ইসলাম ও এমা ওয়ালিস গত সপ্তাহে সেখানকার এক খামারে একদল বাংলাদেশি কৃষকের দেখা পেয়েছেন৷
ছবি: Arafatul Islam/DW
ভিটোরিয়ায় কৃষিখাতে বাংলাদেশি অভিবাসীরা
কৃষিকাজের জন্য বিখ্যাত সিসিলির ভিটোরিয়া অঞ্চলে চার থেকে পাঁচশত বাংলাদেশি অভিবাসী কৃষক রয়েছেন৷ তাদের একজন মোবারক জানান, ঘণ্টাপ্রতি পাঁচ ইউরো মজুরিতে কাজ করেন বাংলাদেশিরা৷ দিনে আট থেকে নয়ঘণ্টা কাজ করতে হয় তাদের৷
ছবি: Arafatul Islam/DW
২২ হাজার বর্গমিটার এলাকায় চার কৃষক
বাংলাদেশি অভিবাসী মোহাম্মদ আয়নাল হক ২২ হাজার বর্গমিটার কৃষি জমি ইজারা নিয়েছেন এক ইটালীয় কৃষকের কাছ থেকে৷ বাংলাদেশে পরিচিত সব শাক-সবজি চাষ করা হয় এই জমিতে৷
ছবি: Arafatul Islam/DW
কন্টেইনারে বসবাস
ভিটোরিয়ায় বাংলাদেশিরা যে খেতে কাজ করেন তার পাশেই দুইটি সাদা কন্টেইনার এবং পলিথিন দিয়ে গড়ে তোলা হয়েছে একটি ঝুপড়ি ঘর৷ এখানে বাংলাদেশি কৃষিকরা রাত কাটান৷
ছবি: Arafatul Islam/DW
ঝুপড়ির ভেতরে যা আছে
ঝুপড়ির দুইপ্রান্তে দুইটি কন্টেইনার সংযুক্ত৷ আর মাঝখানে রয়েছে রান্নাবান্না ও খাওয়ার আয়োজন৷ এছাড়া খেত থেকে শাকসবজি তোলার পর সাময়িকভাবে তা এই ঝুপড়িতে রাখা হয়৷
ছবি: Arafatul Islam/DW
কন্টেইনারের ভেতরে শোবার ঘর
সাদা কন্টেইনারের ভেতরে রয়েছে অভিবাসী কর্মীদের বিছানা৷ সেখানে গরম থেকে কিছুটা বাঁচতে বৈদ্যুতিক ফ্যানের ব্যবস্থা রয়েছে৷
ছবি: Arafatul Islam/DW
চাষ হচ্ছে বাংলাদেশের সবকিছু
খেতের একটি গ্রিনহাউসের মধ্যে ঝুলছিল এরকম অসংখ্য লাউ৷ এছাড়া ঢেড়শ, ঝিঙ্গা, চিচিঙ্গা, বোম্বাই মরিচসহ দেশি প্রায় সবকিছুই চাষ হয় এই খেতে৷
ছবি: Arafatul Islam/DW
‘ভালো আছেন’ বেলাল হোসেন
বাংলাদেশি কৃষক বেলাল হোসেন একটি খেতের আগাছা পরিষ্কার করছিলেন৷ তিনি জানান, সবকিছু মিলিয়ে ভালোই আছেন তারা৷ তবে প্রতিদিন রোদে পুড়ে আট থেকে নয়ঘণ্টা খামারে কাজ করেন তারা৷ বেশ কঠিন জীবন৷
ছবি: Arafatul Islam/DW
শ্রম শোষণের অভিযোগ
ইনফোমাইগ্রেন্টসের সঙ্গে কথা বলা বাংলাদেশি অভিবাসী কৃষকদের কেউ অবশ্য শ্রম শোষণের শিকার হওয়ার কথা বলেননি৷ তবে সিসিলিতে কৃষিকাজে সম্পৃক্ত বিভিন্ন দেশের অভিবাসীদের ঠিকমতো মজুরি না দেয়া এবং জোর করে কাজ করানোর অভিযোগ রয়েছে৷ ছবিতে একটি গ্রিনহাউস থেকে বরবটি তুলছেন কৃষক সাইদুল ইসলাম৷ তিনি জানান, খামারের পাশেই থাকেন তারা৷
ছবি: Arafatul Islam/DW
সবজি যায় নানা শহরে
বাংলাদেশি অভিবাসী মোহাম্মদ আয়নাল হক তার খেতে ফলা শাকসবজি ট্রাকে তুলে দিচ্ছেন৷ এই ফসল যাবে ইটালির মিলান শহরে৷ প্রতি সপ্তাহে তিন থেকে চারবার এভাবে শাকসবজি বিভিন্ন শহরে, এমনকি জার্মানির বার্লিনেও পাঠান তিনি৷ কৃষিকাজ থেকে বছরে ২৫ থেকে ৩০ লাখ টাকা মুনাফা হয় আয়নাল হকের৷