লিবিয়া ও মরক্কো থেকে ছেড়ে আসা দুটি নৌকা ডুবে যাওয়ার ঘটনায় অন্তত ১৭০ জন অভিবাসনপ্রত্যাশীর মৃত্যুর আশঙ্কা করা হচ্ছে৷ ইটালির প্রেসিডেন্ট সার্জিও মাতারেল্লা এ ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করেছেন৷
বিজ্ঞাপন
ইটালিয়ান নৌবাহিনী শুক্রবারে ডুবে যাওয়া একটি নৌকায় থাকা তিন জনকে উদ্ধার করতে পেরেছে৷ উদ্ধার হওয়াদের কাছ থেকে জানা গেছে, নৌকাটিতে ১২০ জন যাত্রী ছিলেন৷ বিশিরভাগ যাত্রীই পশ্চিম আফ্রিকার বিভিন্ন দেশের অধিবাসী ছিলেন বলে জানিয়েছে ইন্টারন্যাশনাল অরগানাইজেশন ফর মাইগ্রেশন (আইওএম)৷
লিবিয়ার গাসর গারাবুল্লি থেকে বৃহস্পতিবার ছেড়ে আসে নৌকাটি৷ ১০-১২ ঘণ্টা চলার পর ডুবতে শুরু করে নৌকা৷ আইওএমের মুখপাত্র ফ্লাভিও ডি জিয়াচ্চিনো জানিয়েছেন, নৌকায় ১০ জন নারী ও দুই শিশুও ছিল৷
উদ্ধার হওয়া তিনজনকে ইটালির দ্বীপ লাম্পেদুসায় হাইপোথার্মিয়ার চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে৷ দেশটির নৌবাহিনী জানিয়েছে, এই তিন জনকে উদ্ধারের সময় তারা সাগরে তিনটি মরদেহ ভাসতে দেখেছে৷
ব্যর্থ অভিযান
ইটালিয়ান নৌবাহিনীর একটি টহলবিমান শুক্রবার নৌকাটিকে ডুবতে দেখে৷ দেশটির রাইনিউজ টোয়েন্টিফোরকে রিয়ার অ্যাডমিরাল ফাবিও আগোস্টিনি জানিয়েছেন, জ্বালানি একেবারে শেষের দিকে থাকায় বিমানটি উদ্ধার তৎপরতা না চালিয়ে ফেরত আসতে বাধ্য হয়৷
লিবিয়াও উদ্ধারকাজে একটি বাণিজ্যিক জাহাজ পাঠিয়েছিল৷ কিন্তু কাউকে খুঁজে না পেয়ে সেটি ফেরত যায়৷
জার্মান সহায়তা সংস্থা সি ওয়াচ শনিবার ৪৭ শরণার্থীকে উদ্ধারের কথা জানিয়েছে৷ কিন্তু তাঁরা ডুবে যাওয়া নৌকাটিতেই ছিলেন কিনা, তা না জানার কথাও জানিয়েছে সংস্থাটি৷
প্রতি দু’সেকেন্ডে একজন ঘরছাড়া
আজ বিশ্ব শরণার্থী দিবস৷ জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা জানিয়েছে, ২০১৭ সালে প্রতি দু'সেকেন্ডে একজন বাস্তুচ্যূত হয়েছেন৷ মিয়ানমার, কঙ্গো প্রজাতন্ত্র, সিরিয়াসহ কয়েকটি দেশ থেকে অনেক মানুষ বাসভূমি ছাড়তে বাধ্য হয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/AA/E. Omic
গৃহহীন যারা
সহিংসতা, যুদ্ধ ও সংঘাতের ফলে বিশ্বে এখন ৬৮ দশমিক ৫ মিলিয়ন, অর্থাৎ ৬ কোটি ৮৫ লক্ষ মানুষ বাস্তুচ্যুত অবস্থায় আছেন৷ মঙ্গলবার জাতিসংঘের উদ্বাস্তু বিষয়ক সংস্থা ইইএনএইচসিআর এ কথা জানিয়েছে৷ জাতিসংঘের হিসেব মতে, ২০১৬ সালে সারা বিশ্বে ৬ কোটি ৫৬ লাখ মানুষ ঘরছাড়া হয়েছিল৷ সেবছর মূলত মিয়ানমার থেকেই বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছিল৷ .
ছবি: DW/M. Mostqfigur Rahman
দু’ সেকেন্ডে একজন
জাতিসংঘের প্রতিবেদনে বলা হয়, গতবছরই ১ কোটি ৬২ লক্ষ মানুষ নতুন করে গৃহহীন হয়েছে৷ এদের মধ্যে যাঁরা প্রথমবার বাধ্য হয়ে ঘর ছেড়েছেন, তাঁরাও যেমন আছেন, তেমনি আছেন যাঁরা আগে থেকেই উদ্বাস্তু, তাঁরাও৷ অর্থাৎ প্রতিদিন ৪৪,৪০০ মানুষ বিতাড়িত হচ্ছেন এবং প্রতি দু'সেকেন্ডে ১ জন করে গৃহহীন হচ্ছেন৷
যুদ্ধ, হিংসা এবং উৎপীড়নের জন্য ৬ কোটি ৮০ লক্ষ মানুষ নিজের ঘরবাড়ি ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছেন৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/M. Swarup
দেশের মধ্যে
অভ্যন্তরীণ যুদ্ধ বা হিংসার জন্য দেশের ভেতরেই অনেক মানুষ বাস্তুভিটা ছেড়ে অন্য জায়গায় যেতে বাধ্য হয়৷ তাঁদের বলা হয় আইডিপি (ইন্টারনালি ডিসপ্লেসড পিপল)৷ তথ্য অনুযায়ী, ২০১৭ সালে বিশ্বে প্রায় ৪কোটি আইডিপি ছিল৷ এই সংখ্যাটা আগের বছরের তুলনায় কমেছে৷ কলম্বিয়া, সিরিয়ায় এদের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি৷
ছবি: picture-alliance/AA/E. Omic
সিরিয়ার দুর্দশা
গত ৭ বছর ধরে যুদ্ধবিধ্বস্ত সিরিয়ার ওপর দিয়ে নানা ঝড় বয়েছে৷ ২০১৭ সালের শেষ অবধি প্রায় ৬৩ লাখ মানুষ ঘর ছাড়তে বাধ্য হয়েছিল৷ এছাডা়ও সিরিয়াতে প্রায় ৬২ লাখ মানুষ দেশের ভেতরেই উদ্বাস্তু জীবন কাটাচ্ছে৷
ছবি: DW/S. Derks
আফগানিস্তান
সিরিয়ার পরেই যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগানিস্তানের স্থান৷ প্রচুর মানুষ ঘরবাড়ি ছেড়ে আফগানিস্তান থেকে পালাচ্ছেন৷ বিশ্বব্যাপী নজিরবিহীনভাবে যুদ্ধ, সহিসংতা ও উৎখাতের কারণে প্রতিদিনই রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থীর সংখ্যা বাড়ছে বলে মনে করা হচ্ছে৷ অন্যান্য দেশে রাজনৈতিক আশ্রয় চেয়ে বিভিন্ন সংস্থার দ্বারে দ্বারে ঘুরছে যুদ্ধবিধ্বস্ত এসব মানুষ৷
ছবি: Getty Images/AFP/A. Paduano
দক্ষিণ সুদানের অবস্থা
দক্ষিণ সুদানে গৃহযুদ্ধ চলছে ২০১৩ সাল থেকে৷ গৃহযুদ্ধের কবলে পড়ে গত কয়েক বছরে দেশটির লাখ লাখ মানুষ ঘরবাড়ি ছেড়ে প্রতিবেশী দেশগুলোতে আশ্রয় নিয়েছে৷ জাতিসংঘের মতে, এই দেশ সবচেয়ে খারাপ অবস্থার মধ্যে আছে৷
ছবি: Reuters/H. Kalis
তুরস্ক
প্রতিবেদন অনুযায়ী, তুরস্কে প্রচুর শরণার্থী রয়েছে৷ ২০১৭ সালের শেষের দিক পর্যন্ত তুরস্কে প্রায় ৩৫ লক্ষ শরণার্থী ছিল৷ তার মধ্যে অধিকাংশই সিরিয়ার মানুষ৷
ছবি: Getty Images/AFP/L. Gouliamik
গরিব দেশেও
অ্যামেরিকা আর ইউরোপ যাঁরা পৌঁছচ্ছেন, তাঁরা ছাড়াও অনেক শরণার্থী কম আয় সম্পন্ন বা মধ্যম আয় সম্পন্ন দেশগুলোতে আশ্রয় নিচ্ছেন৷ জাতিসংঘ শরণার্থী কমিশন (ইউএনএইচসিআর) বলছে, প্রায় ৮৫ শতাংশ শরণার্থী উন্নয়নশীল দেশে আশ্রয় নিচ্ছেন, যাঁরা খুবই দরিদ্র৷ এদের মধ্যে আফগানিস্তান, দক্ষিণ সুদান, মিয়ানমার, সোমালিয়া, সুদান এবং কঙ্গো, উগান্ডার মানুষই বেশি৷
ছবি: Getty Images/AFP/J.C. Magnenet
8 ছবি1 | 8
মরক্কোর নৌকাডুবি
মরক্কো থেকে ছেড়ে আসা আরেকটি নৌকা ডুবে আরো ৫৩ অভিবাসনপ্রত্যাশীর মৃত্যুর শঙ্কা করা হচ্ছে৷ নৌকাটি থেকে উদ্ধার হওয়া এক শরণার্থী এ তথ্য জানিয়েছেন স্পেনের সহায়তা সংস্থা কামিনান্দো ফ্রন্টিয়ার্সকে৷ তিনি জানান, আলবোরান সাগরে অন্য একটি জাহাজের সাথে ধাক্কা লেগে ডুবতে শুরু করে সে নৌকা৷
ইটালির প্রেসিডেন্ট সার্জিও মাতারেল্লা ‘ভূমধ্যসাগরে ঘটে যাওয়া এ ঘটনায় গভীর দুঃখ প্রকাশ' করেছেন৷
তবে ইটালির শরণার্থীবিরোধী স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মাত্তেও সালভিনি বলেছেন, শরণার্থীবাহী নৌকা প্রতিহত করার নীতি যে কাজ করছে, এই মৃত্যুর ঘটনা তার ‘প্রমাণ'৷ তিনি বলেন, ‘‘বন্দরগুলো খুলে দিলে এমন মৃত্যুর ঘটনা আরো বাড়বে৷''
আইওএমের হিসাব মতে, ২০১৯ সালের প্রথম ১৬ দিনে ইউরোপে ৪৪৪৯ জন শরণার্থী প্রবেশ করেছেন৷ গত বছর একই সময়ে এ সংখ্যা ছিল ২৯৬৪ জন৷
সংস্থাটি গত বছর জানিয়েছিল, ১১৬,৯৫৯ জন শরণার্থী সাগর পাড়ি দিয়ে ইউরোপে প্রবেশ করেছিল, আর ভূমধ্যসাগরে নিখোঁজ বা মৃতের সংখ্যা ছিল ২২৯৭ জন৷
মা যখন শরণার্থী
মা যখন জীবন বাঁচাতে শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় খুঁজছিলেন, তখন জন্ম হয় ছেলে আলভিন জুনিয়রের৷ ছবিঘরে থাকছে এই আশ্রয়প্রার্থী শরণার্থী মা ও পথিমধ্যে তাঁর সন্তান জন্মদানের গল্প৷
ছবি: Reuters/C. Garcia Rawlins
এর্লি মার্সিয়াল ও আলভিন জুনিয়র
গর্ভবতী মা আর্লি মার্সিয়াল হন্ডুরাস থেকে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশে পাড়ি জমান৷ পথিমধ্যে জন্ম হলো আলভিনের৷ নির্ধারিত সময়ের ছয় সপ্তাহ আগেই পৃথিবীর আলো দেখে আলভিন জুনিয়র৷
ছবি: Reuters/C. Garcia Rawlins
হন্ডুরাস থেকে হেঁটে যুক্তরাষ্ট্রে?
তীব্র অর্থকষ্ট ও রাজনৈতিক সহিংসতা এড়াতে হন্ডুরাস থেকে হেঁটে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশে রওয়ানা হন আর্লি মার্সিয়াল৷ এ সময় তিনি ছিলেন আট মাসের গর্ভবতী৷ সেই অবস্থায় মার্সিয়াল তার অন্য দুই সন্তানকেও ছোট ঠেলাগাড়িতে চড়িয়ে ধরে রেখেছেন শক্ত হাতে৷
ছবি: Reuters/C. Garcia Rawlins
রাস্তায় বিশ্রাম
পথিমধ্যে ক্লান্ত হয়ে পড়লে বিশ্রাম নিতেন খোলা আকাশের নীচে, রাস্তার উপর৷ দুই সন্তানকে দুপাশে শুইয়ে দিয়ে ঘুমানোর চেষ্টা করতেন মার্সিয়াল৷ অনিশ্চিত যাত্রা আর সেই সাথে অনাগত সন্তানকে নিরাপদ রাখার উদ্বেগ৷
ছবি: Reuters/C. Garcia Rawlins
নদীতে গোসল
হন্ডুরাস থেকে মেক্সিকো হয়ে যুক্তরাষ্ট্র যাওয়ার এ লম্বা পথে সন্তান ও নিজের দায়িত্ব নিতে হয়েছে নিজেকেই৷ পথিমধ্যে যাত্রাবিরতি দিয়ে সেরে নিতেন দৈনন্দিন কর্যক্রম৷ ছবিতে দেখা যাচ্ছে দক্ষিণ মেক্সিকোর একটি নদীতে বাচ্চাদের গোসল করাচ্ছেন মার্সিয়াল৷
ছবি: Reuters/C. Garcia Rawlins
শরণার্থী দলের সাথে ট্রাকে
দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে গিয়ে মার্সিয়াল তাঁর সন্তানদের নিয়ে মিশে গেলেন একটি শরণার্থী দলের সাথে৷ লম্বা এ পথের কিছুটা অংশ একটি ট্রাকে করে পাড়ি দেয় শরণার্থী দলটি৷
ছবি: Reuters/C. Garcia Rawlins
রেড ক্রসের সঙ্গে
মেক্সিকোর পুয়েব্লা এলাকায় পৌঁছালে স্থানীয় একটি রেড ক্রস দলের সন্ধান পান মার্সিয়াল৷ রেড ক্রসের এ দলটি শরণার্থীদের স্বাস্থ্যসেবা দিয়ে থাকে৷ অনাগত সন্তানের বিষয়ে কিছুটা শঙ্কামুক্ত হন তিনি৷
ছবি: Reuters/C. Garcia Rawlins
অবশেষে শুভক্ষণ
রেড ক্রসের কর্মীরা মার্সিয়াকে নিয়ে যান হাসপাতালে৷ সেখানেই জন্ম হয় আলভিন জুনিয়রের৷ সন্তানকে কোলে নিয়েই মার্সিয়া ভুলে যান লম্বা পথ পাড়ি দেয়ার কষ্ট৷
ছবি: Reuters/C. Garcia Rawlins
যদি মন গলে ট্রাম্পের
মেক্সিকো সীমান্তের বেড়া থামিয়ে দিলো এ পরিবারটিসহ অন্য শরণার্থীদের যুক্তরাষ্ট্র যাত্রা৷ কিন্তু মা মার্সিয়াল বিশ্বাস করেন আলভিনের জন্ম তাঁর জন্য শুভ আর এতেই মন গলতে পারে ডোনাল্ড ট্রাম্পের৷ ট্রাম্প হয়তো শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় দেবেন তাঁদের৷