ভূমধ্যসাগরের টিউনিশিয়া সমুদ্র অঞ্চল থেকে রোববার ৩৯৪ অভিবাসনপ্রত্যাশীকে উদ্ধার করা হয়েছে৷ জার্মানি ও ফ্রান্সের বেসরকারি সংস্থা পরিচালিত উদ্ধারকারী জাহাজ সি-ওয়াচ ৩ ও ওশান ভাইকিং নৌকায় ভাসতে থাকা এই মানুষদের উদ্ধার করে৷
বিজ্ঞাপন
এর মধ্যে জার্মানির জাহাজ সি-ওয়াচ ১৪১ জনকে উদ্ধার করে৷ আর ফ্রান্সের জাহাজ ওশান ভাইকিং উদ্ধার করে বাকিদের৷ উদ্ধারকৃতরা বাংলাদেশ, মরক্কো, মিশর ও সিরিয়ার নাগরিক বলে বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে জানিয়েছে তাদের প্রতিনিধি৷
জনাকীর্ণ অবস্থায় একটি কাঠের নৌকায় করে তারা সমুদ্র পাড়ি দিচ্ছিলেন৷ ইঞ্জিন বিকল হয়ে নৌকাটি সমুদ্রে ভাসছিল বলে জানা গেছে৷ অভিবাসনের প্রত্যাশায় লিবিয়া ও টিউনিশিয়া হয়ে বিভিন্ন দেশ থেকে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইউরোপে প্রবেশের চেষ্টা বাড়ছে৷ জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচএসিআর তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত ৪৭ হাজার ৪২৫ অভিবাসনপ্রত্যাশী অবৈধ পথে ইউরোপে প্রবেশ করেছেন৷
এদিকে অবৈধভাবে ইউরোপে প্রবেশের তালিকায় শীর্ষে রয়েছে বাংলাদেশিরা৷ সংস্থাটি বলছে, চলতি বছরের মোট অভিবাসনপ্রত্যাশীর ১৪ দশমিক ৫ শতাংশ, অর্থাৎ তিন হাজার ৩৩২ জন বাংলাদেশি৷
আরআর/এফএস (আরটিআরই, ইউএনএইচএসিআর)
ইউরোপে বৈধ অভিবাসন: যে তথ্যগুলো জানা দরকার
উন্নত জীবনযাত্রা, কর্মসংস্থান, উচ্চশিক্ষা, আশ্রয়- নানা কারণেই অনেকের স্বপ্নের গন্তব্য ইউরোপ৷ প্রতিবছর অনেক মানুষ ইইউভুক্ত ২৭টি দেশে বসবাস ও কাজের সুযোগ পান৷ অন্যদিকে অবৈধভাবে আসা বড় একটি অংশকে ফেরতও পাঠানো হয়৷
ছবি: DW/Ani Ruci
অভিবাসীর সংখ্যা
দুই কোটির বেশি অভিবাসী মানুষের বসবাস ইউরোপের ২৭টি দেশে৷ এ অঞ্চলের শ্রমবাজারে নিযুক্ত রয়েছেন ৮৮ লাখ৷ ২০১৯ সালে ইইউ সদস্যভুক্ত দেশগুলোতে প্রথমবার রেসিডেন্স পারমিট বা বসবাসের অনুমতি পাওয়া তৃতীয় দেশের মানুষের সংখ্যা ছিল ৩০ লাখ৷
ছবি: picture-alliance/NurPhoto/N. Economou
কারা অনুমতি পান
৩৮ ভাগ অভিবাসী রেসিডেন্স পারমিট পেয়েছেন পরিবারের কোনো সদস্য ইউরোপে থাকার কারণে৷ কাজের সূত্রে থাকার অনুমতি পেয়েছেন ১৭ ভাগ৷ আশ্রয়াপ্রার্থী ছিলেন নয় ভাগ৷ শিক্ষাগত কারণে সুযোগ পেয়েছেন চার ভাগ৷ বাকি ৩২ ভাগ অন্যান্য৷
ছবি: Wolfgang Kumm/dpa/picture alliance
অভিবাসীদের দেশ
২০১৯ সালে প্রথমবারের মতো রেসিডেন্স পারমিট পাওয়াদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ছিলেন ইউক্রেনের নাগরিক৷ প্রথম দশের মধ্যে বাকিরা যথাক্রমে মরক্কো, চীন, ব্রাজিল, সিরিয়া, রাশিয়া, তুরস্ক, যুক্তরাষ্ট্র ও বেলারুশের নাগরিক৷
ছবি: DW/V. Muscella
কর্মসংস্থান
তৃতীয় কোনো দেশ থেকে ইউরোপে চাকুরি নিয়ে আসা দক্ষ কর্মীরা পান ব্লু কার্ড৷ এটি নির্ভর করে চাকরির চুক্তিপত্র, পেশাগত যোগ্যতা ও বেতনের উপরে৷ ২০১৯ সালে ৩৭ হাজার বিদেশি নাগরিক ব্লু কার্ড পেয়েছেন ইউরোপে৷ এর বাইরে প্রতি বছর এক লাখের বেশি মানুষ মৌসুমি কর্মী হিসেবে বিভিন্ন খাতে কাজের জন্য আসেন৷ বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান ও কারখানার কর্মী বা স্বনিয়োজিত কাজেও ইউরোপে বসবাসের সুযোগ পান অনেকে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/D. Karmann
পারিবারিক পুনর্মিলন
কোনো অভিবাসী ইউরোপে বৈধভাবে বসবাস ও নির্দিষ্ট কিছু শর্ত পূরণের মাধ্যমে পরিবারের সদস্যদেরও আনতে পারেন৷ স্বামী বা স্ত্রী, অপ্রাপ্তবয়স্ক সন্তান এবং কিছু ক্ষেত্রে অবিবাহিত সঙ্গী, প্রাপ্তবয়স্ক নির্ভরশীল সন্তান, নির্ভরশীল বাবা-মা, দাদা-দাদি কিংবা নানা-নানিও অনুমতি পেয়ে থাকেন৷ নির্দিষ্ট দেশে পৌঁছানোর পর তাদেরকে রেসিডেন্স পারমিট নিতে হয়৷ শিক্ষা, কর্মসংস্থানের সুযোগ কিংবা প্রশিক্ষণও নিতে পারেন তারা৷
ছবি: picture-alliance/W. Rothermel
উচ্চশিক্ষা ও গবেষণা
এজন্য আগ্রহীরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভর্তির অনুমতি, হেলথ ইন্সুরেন্স, অপ্রাপ্তবয়স্ক হলে অভিভাবকের অনুমতি, কিছু ক্ষেত্রে ভাষাগত দক্ষতার প্রমাণসহ প্রয়োজনীয় শর্তগুলো পূরণ করে ইউরোপের কোনো দেশে আসার আবেদন করতে পারেন৷ কিছু দেশে পড়াশোনার টিউশন ফি নেই, আছে বৃত্তির সুযোগও৷ এছাড়াও খরচ মেটানোর জন্য শিক্ষার্থীদের সপ্তাহে ১৫ ঘণ্টা কাজের সুযোগ রয়েছে৷ পড়াশোনা বা গবেষণা শেষে কর্মসংস্থানের জন্য মেলে নয় মাস সময়৷
ছবি: Getty Images/J. Juinen
দীর্ঘমেয়াদী রেসিডেন্স
ইউরোপের কোনো দেশে টানা পাঁচ বছর অবস্থানের পর নির্দিষ্ট কিছু শর্ত পূরণ সাপেক্ষে অভিবাসীরা দীর্ঘ মেয়াদে বসবাসের অনুমতি পেতে পারেন৷ এর ফলে কর্মসংস্থান, শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ, সামাজিক নিরাপত্তা ও সহায়তা এবং পণ্য ও সেবাপ্রাপ্তির মতো কিছু ক্ষেত্রে ইউরোপের নাগরিকদের মতোই অধিকার ভোগ করতে পারবেন৷ তবে এক্ষেত্রে আলাদা অভিবাসন ও আশ্রয় নীতি অনুসরণ করে আয়ারল্যান্ড ও ডেনমার্ক৷
ছবি: picture-alliance/Geisler-Fotopress
আশ্রয়প্রার্থী
২০১৯ সালে প্রায় সাত লাখ মানুষ ইউরোপে আশ্রয়ের আবেদন জানিয়েছেন৷ প্রথমবারের মতো যারা এমন আবেদন করেছেন, তাদের ১২ ভাগই সিরিয়ার নাগরিক৷ আফগানিস্তানের আট দশমিক ছয় ভাগ, ভেনেজুয়েলার সাত দশমিক এক ভাগ, কলম্বিয়ার পাঁচ ভাগ, পাকিস্তানের ছিলেন প্রায় চার ভাগ৷ ঐ বছর দুই দশমিক এক ভাগ বা ১৩ হাজার ১৯০টি আবেদন পড়েছিল বাংলাদেশিদের৷ ২০২০ সালে প্রথম দশ মাসে ইউরোপে মোট তিন লাখ ৯০ হাজার মানুষ আশ্রয়ের আবেদন জানিয়েছেন৷
ছবি: AFP
অবৈধদের ফেরত
২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত এক লাখ ১৪ হাজার ৩০০ জন অবৈধভাবে ইউরোপে প্রবেশ করেছেন৷ এটি তার আগের বছরের একই সময়ে চেয়ে ১০ ভাগ কম৷ যারা এভাবে আসেন, তাদের একটি বড় অংশকে এক পর্যায়ে ফেরত পাঠানো হয়৷ ২০১৯ সালে চার লাখ ৯১ হাজার জনকে ইউরোপ ছাড়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছিল৷ এক লাখ ৪২ জনকে ফেরত পাঠানো হয়েছিল৷